১৫শ পর্ব | ২৬শ অধ্যায়: ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ২৭শ অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)

    নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন 
  • এই পর্বে থাকছে ইমাম মুহাম্মাদ ফাক্বী এবং ইমাম গুদাইয়্যান (রাহিমাহুমাল্লাহ)’র ফাতাওয়া
  • ▌২৬শ অধ্যায়: ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ)
  • ·
  • শাইখ পরিচিতি:
  • ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, মুহাক্বক্বিক্ব ও ফাক্বীহ ছিলেন। তিনি ১৩১০ হিজরী মোতাবেক ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের বুহাইরাহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পড়াশুনা মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে। আল্লাহ’র ইচ্ছায় তিনি তাওহীদের দিশা পান একজন আহলেহাদীস চাষির মাধ্যমে। তিনি মিশরে ‘আনসারুস সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়্যাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই সংগঠনের মাধ্যমে মিশরে সালাফী দা‘ওয়াত প্রচার করেন। তিনি ত্রিশটিরও বেশি কিতাব তাহক্বীক্ব করেছেন এবং অনেক কিতাবে টীকা প্রণয়ন করেছেন।
  • বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] ইমাম ফাক্বীর টীকা সংবলিত ফাতহুল মাজীদের ভূমিকায় বলেছেন, “আমি এই টীকাগুলো দেখেছি, যেগুলো প্রণয়ন করেছেন আল-উস্তায আল-‘আল্লামাহ আশ-শাইখ মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী। তাঁর লিখন প্রচুর ফায়দাবিশিষ্ট, তাঁর লেখা বেশ ভালো এবং ফায়দাসমৃদ্ধ।” [ফাতহুল মাজীদ শারহু কিতাবিত তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ১১; দারুল গাদ্দিল জাদীদ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৭ হিজরী/২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ]
  • ইমাম ফাক্বী’র ছাত্র প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৮ হি.] বলেছেন, “আমি যখন তাঁকে মক্কায় ‘আলী গেইটের নিকটে দারস দিতে দেখলাম, তখন আমি বললাম, ইনিই তো আমার কাংঙ্ক্ষিত ব্যক্তি! হারামে তাঁর বৈঠকই আমার প্রথম বৈঠক ছিল। আর এটা ১৩৬৭ হিজরী সনের কথা।” [sahab.net]
  • আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রাহমান আল-ওয়াকীল (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৯০ হি./১৯৭১ খ্রি.] বলেছেন, “মুসলিম বিশ্বে তাওহীদের ইমাম আমাদের পিতা আশ-শাইখ মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আল্লাহ’র রাস্তায় মুজাহিদ হিসেবে রয়েছেন।” [sahab.net]
  • তিনি ১৩৭৮ হিজরী মোতাবেক ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। আল্লাহ এই নির্ভীক সিপাহসালারকে উত্তম প্রতিদান দান করুন এবং তাঁকে সর্বোচ্চ জান্নাতে স্থান দান করুন। আমীন। সংগৃহীত: fb.com/SunniSalafiAthari (সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)।
  • ·
  • ইমাম ফাক্বী’র বক্তব্য:
  • প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ ‘আনসারুস সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়্যাহ’-র প্রতিষ্ঠাতা আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৭৮ হি./১৯৫৯ খ্রি.] ১৩৬৫ হিজরীতে “মুসলিম ব্রাদারহুড তথা ইজিপশিয়ান ব্রাদারহুড: অতীত ও বর্তমান” শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন। যে প্রবন্ধটি তৎকালীন আনসারুস সুন্নাহ’র মুখপাত্র ‘মাজাল্লাতুল হুদা আন-নাবাউয়ী’ ম্যাগাজিনের ৫ম সংখ্যায় (জুমাদাল উলা, ১৩৬৫ হিজরী) প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে হাসান আল-বান্না কর্তৃক স্বীয় দল ব্রাদারহুডকে বিজয়ী করার জন্য খ্রিষ্টানদের সাথে তাঁর পারস্পরিক সহযোগিতা এবং খ্রিষ্টানদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রদর্শনের বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছে। প্রবন্ধটির একাংশের আরবি টেক্সট অনুবাদ-সহ পেশ করা হল।
  • ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
  • الله غايتنا-الرسول زعيمنا-القرآن دستورنا: تلك مبادئهم التي كانوا بالأمس يملأون بها الدنيا صياحًا، غدوًا ورواحًا ظاهرها حق لا شبهة فيه، والله أعلم بالقلوب وما تخفيه، فانظر كيف استحالت هذه المبادئ اليوم إلى تطورات ثلاث تناهض هذه المبادئ تمامًا: أولاها: تصريح المرشد العام لمجلة المصور ونشر في عددها الصادر يوم الجمعة ٥ إبريل ١٩٤٦ نثبته بنصه ليكون مصداقًا لقوله عز وجل: ﴿واعلموا أن الله يحول بين المرء وقلبه وأنه إليه ترجعون﴾:
  • مريت بك غالي والشيخ لويس فانوس و...أعضاء عاملون في جماعة الإخوان المسلمين!
  • كنا قد علمنا أن الإخوان المسلمين يساعدون الأستاذ لويس فانوس في ترشيحه لمجلس الشيوخ باعتباره عضوًا في الجماعة! فرجعنا في ذلك إلى فضيلة الأستاذ حسن البنا المرشد العام للإخوان فكتب يقول:
  • لهيئة الإخوان المسلمين أصدقاء كثيرون من غير المسلمين، والإخوان يعتبرون هؤلاء الأصدقاء: -أعضاء عاملين- معهم في كل الشؤون الاجتماعية التي تتفق مع مؤهلاتهم ويفسحون لهم المجال للإفادة بآرائهم وأفكارهم.
  • وقد اشترك (الأخ) الأستاذ نصيف ميخائيل في التحضير لمؤتمر الإخوان بالغربية اشتراكًا فعليًّا بل لن أكون مبالغًا إذا قلت أنه هو الذي أعد المؤتمر.
  • ولا أنس ما (للأخ) الشيخ المحترم لويس فانوس بكالجولات في مؤتمرات الإخوان المسلمين، وما يقوم به من دعاية للجمعية في أنحاء مصر.
  • كما أن (الأخ) مريت بك غالييساهم في أعمال الإخوان، ولا تنس تبرعه في شراء الدار، ومساعداته الأدبية بتبادل الآراء والأفكار حول الإصلاحات الاجتماعية فضلاً عن أنه عضو في لجنتنا الاقتصادية كما يتعاون معنا في المشروعات الاجتماعية النافعة.
  • ولقد ذكرت هذه الأسماء على سبيل المثال لا الحصر، فإننا لا نجد أبدًا ما يحول بيننا وبين التعاون مع الوطنيين العاملين –مسيحيين كانوا أو مسلمين- ويتجلى هذا في جوالة الإخوان أكثر من ثلاثين جوالاً من إخواننا المسيحيين، أما في الانتخابات فالقاعدة العامة عندنا مساعدة مرشحي الإخوان أولاً وهم لا يرشحون إلا الأكفاء من المصريين، ويوم ينشر الإخوان قوائمهم للانتخابات سيجد الجميع أننا لا نعرف إلا المصلحة العامة، وسيجدون ضمن هذه القوائم أسماءإخواننا المسيحيين الذين يشتركون معنا في الجمعية.
  • وبعد مرشحي الإخوان نساعد أصلح المرشحين وأقدرهم على خدمة المصلحة العامةبغير نظر إلى اعتبار آخر دينيأو حزبي إلا مصلحة مصر والمصريين. اهـ
  • وثاني هذه التطورات ما نشرته مجلة آخر ساعة في عددها الصادر كذلك يوم الجمعة ٥ إبريل ١٩٤٦ وهو اقتراح قبطي على الأستاذ حسن البنا –المرشد العام للإخوان المسلمين– أن يسمى الإخوان المسلمين (الإخوان المصريين) حتى يتمكن كثير من الأقباط من الانضمام إليهم، وهذا الاقتراح هو وليد التطور الأول، ولا شك، وما الوقت الذي نفذ فيه اسمًا بعد أن تنفذ فعلاً ببعيد.
  • وأي صبغة بقيت للإخوان المسلمين بعد أن أصبح في ميسور كل إنسان –أيا كان دينه– أن يكون أخًا لهم فإذا اعترضهم قوله تعالى ﴿إنما المؤمنون إخوة﴾، أوَّلوا المؤمنين بالمؤمنين بفكرتهم!
  • وأما النصوص المحكمة التي وردت في التحذير من اتخاذ غير المؤمنين أولياء كقوله تعالى ﴿يا أيها الذين آمنوا لا تتخذوا اليهود والنصارى أولياء من دون المؤمنين ومن يتولهم منكم فإنه منهم﴾، فلعلَّ الأستاذ المرشد لا يعدم لها تأويلاً يستخدمها به لصالحه بما أوتيه من سعة الحيلة وقوة العارضة، وفوق كل ذي علم عليم.
  • أما التطور الثالث فهو ذلك الإعلان الذي نشرته مجلة الإخوان عن تمثيل رواية باسم المعز لدين الله الفاطمي منشئ القاهرة، وباني الجامع الأزهر، تأليف الأستاذ عبد الرحمن الساعاتي –شقيق المرشد العام– المسرحية التي تصور الفكرة، وتجمع إلى روعة الفن جلال الدين تمثل على مسرح الأوبرا يوم الأربعاء أول مايو سنة ١٩٤٦، إخراج منير، وألحان أحمد عبد القادر.
  • “আল্লাহ আমাদের লক্ষ্য, রাসূল আমাদের নেতা, ক্বুরআন আমাদের সংবিধান—এগুলো তাদের মূলনীতি। গতকালও তারা সকাল-সন্ধ্যায় এই মূলনীতিগুলো চিৎকার করে বলে দুনিয়া ভরপুর করে তুলছিল। এগুলোর বাহ্যিক দিক হক, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্তর ও তার লুকায়িত বিষয় সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন। কিন্তু দেখুন, কীভাবে এই মূলনীতিগুলো আজ তিনটি বিবর্তনে রূপান্তরিত হলো, যে বিবর্তনগুলো বিলকুল এই মূলনীতিগুলোর বিরোধী।
  • প্রথম বিবর্তন: তাদের প্রধান নেতা ‘আল-মুসাওয়্যির’ পত্রিকায় স্পষ্টভাবে একটি কথা ব্যক্ত করেছেন। পত্রিকার সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই এপ্রিল শুক্রবার। আমরা এই বিষয়টি তাঁর (প্রধান নেতা) বলা কথার মাধ্যমেই প্রমাণ করব, যাতে করে এটা মহান আল্লাহ’র এই বাণীর সত্যায়ন হয়—“জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।” (সূরাহ আনফাল: ২৪) প্রধান নেতা বলেছেন,
  • “মেরিট বেক গ্যালি, সিনেট-সদস্য লুইস ফানুস এবং...মুসলিম ব্রাদারহুডের কর্মরত সদস্য!”
  • আমরা জেনেছি যে, অধ্যাপক লুইস ফানুস মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য হওয়ার কারণে সিনেট কমিটিতে তাঁর মনোয়নের ক্ষেত্রে ব্রাদারহুড তাঁকে সাহায্য করেছে! এ ব্যাপারে আমরা ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা সম্মানিত অধ্যাপক হাসান আল-বান্না’র দিকে ফিরে যাই। তিনি লিখেছেন, “মুসলিম ব্রাদারহুডের অনেক অমুসলিম বন্ধু রয়েছে। ব্রাদারহুড সেই বন্ধুদেরকে তাদের উপযুক্ততার সাথে মিলে এমন যাবতীয় সামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্রাদারহুডের কর্মী ও সদস্য গণ্য করে এবং তাদের মনন ও দর্শন থেকে ফায়দা গ্রহণের জন্য নিজেদের পরিধিকে প্রশস্ত করে।
  • পশ্চিম ইউরোপে ব্রাদারহুডের কনফারেন্সে অধ্যাপক নাসিফ মিখাইল ভাই অংশগ্রহণ করেছেন। বরং আমি যদি বলি, তিনিই কনফারেন্সের আয়োজন করেছেন, তাহলে এতটুকু বাড়াবাড়ি হবে না।
  • আর মুহতারাম সিনেট-সদস্য ভাই লুইস ফানুস বেক মুসলিম ব্রাদারহুডের কনফারেন্সগুলোতে যেভাবে ভ্রমণ করেছেন এবং মিশরের আনাচে-কানাচে সংগঠনের প্রচার করেছেন তা আমি কখনো ভুলব না।
  • অনুরূপভাবে ভাই মেরিট বেক গ্যালি ব্রাদারহুডের কর্মকাণ্ডে অবদান রেখেছেন। বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে তাঁর অনুদান এবং সামাজিক সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তা ও দর্শনের পারস্পরিক বিনিময়ে তাঁর সাহিত্য-বিষয়ক সহযোগিতা ভুলার মতো নয়। অধিকন্তু তিনি আমাদের অর্থনীতি বিভাগের সদস্য। এছাড়াও তিনি আমাদেরকে বিভিন্ন কল্যাণমূলক সামাজিক কাজে সহযোগিতা করেছেন।
  • আমি এই নামগুলো উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করলাম মাত্র, সকল নাম নয়। কেননা আমরা আমাদের মধ্যে এবং নাগরিক কর্মীদের সাথে –চাই তারা খ্রিষ্টান হোক বা মুসলিম হোক– পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে কী অতিবাহিত হচ্ছে তা খুঁজে বেড়াই না। আর এটা ব্রাদারহুডের স্কাউটদের ক্ষেত্রে বেশি স্পষ্ট হয়। আমাদের খ্রিষ্টানী ভাইদের মধ্য থেকে ত্রিশেরও অধিক স্কাউট রয়েছে ব্রাদারহুডের।
  • নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের সার্বজনিক নীতি রয়েছে, আর তা হলো—সর্বাগ্রে ব্রাদারহুডের প্রার্থীদের সহযোগিতা করা। মিশরীয়দের মধ্যে যারা যোগ্য, তারা কেবল তাদেরকেই মনোনীত করে। আজকে ব্রাদারহুড তাদের নির্বাচনী ফর্দ প্রকাশ করেছে। সবাই দেখতে পাবে যে, আমরা শুধু সার্বজনিক কল্যাণই বিবেচনা করি। তারা এই ফর্দগুলোতে আমাদের খ্রিষ্টানী ভাইদের নামও দেখতে পাবে, যে ভাইয়েরা আমাদের সাথে সংগঠনে কাজ করেন।
  • ব্রাদারহুডের প্রার্থী মনোয়নের পর সার্বজনিক কল্যাণের নিমিত্তে কোনো ধর্মীয় বা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নজর না দিয়ে, স্রেফ মিশর ও মিশরবাসীদের কল্যাণের জন্য আমরা সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে সাহায্য করব।...” হাসান আল-বান্না’র কথা এখানে সমাপ্ত।
  • দ্বিতীয় বিবর্তন: এটা ‘আখিরু সা‘আহ’ নামক পত্রিকা প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই এপ্রিল শুক্রবার। বিষয়টি হলো—মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রধান নেতা অধ্যাপক হাসান আল-বান্না’র কাছে মিশরীয় খ্রিষ্টানদের এই প্রস্তাব উত্থাপন করা যে, তিনি যেন মুসলিম ব্রাদারহুডের নাম ‘ইজিপশিয়ান ব্রাদারহুড’ রাখেন। যাতে করে অসংখ্য মিশরীয় খ্রিষ্টান এতে যোগদান করতে পারে। নিঃসন্দেহে এই প্রস্তাব প্রথম বিবর্তনের ফসল। সেই দিন খুব দূরে নয়, যেদিন কর্মে বাস্তবায়ন করার পর তা নামেও বাস্তবায়ন করা হবে।
  • প্রত্যেক মানুষের জন্য –সে যে ধর্মেরই হোক না কেন– সহজসাধ্য করে সেই মানুষ মুসলিম ব্রাদারহুডের ভাইয়ে পরিণত হবার পর তাদের আর কী বৈশিষ্ট্য অবশিষ্ট থাকল? যখন মহান আল্লাহ’র এই বাণীটি তাদের বিরোধী হলো, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় মু’মিনরা পরস্পর ভাই ভাই” (সূরাহ হুজুরাত: ১০), তখন তারা আয়াতে উল্লিখিত মু’মিন (বিশ্বাসী) শব্দের অপব্যাখ্যা করে বলল, তারাও (খ্রিষ্টানরা) তাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী তথা মু’মিন!
  • অথচ অমুসলিমদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে সতর্ক থাকার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন দলিল বর্ণিত হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, “হে মু’মিনগণ, ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। তারা একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে নিশ্চিতভাবে তাদেরই একজন।” (সূরাহ মাইদাহ: ৫১) হয়তো নেতা সাহেব তাঁর চাতুরির প্রাচুর্যতা এবং ভিন্ন ব্যাখ্যা উপস্থাপনের ক্ষমতার মাধ্যমে এই আয়াতটিরও অপব্যাখ্যা করে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা থেকে পিছপা হবেন না। আর সকল জ্ঞানীর উপরেই রয়েছেন সর্বজ্ঞ।
  • তৃতীয় বিবর্তন: ‘আল-ইখওয়ান’ ম্যাগাজিন একটি ঘোষণা প্রচার করেছে যে, কায়রোর কারিগর এবং আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আল-মু‘ইয লিদীনিল্লাহ আল-ফাত্বিমীর নামে হাসান আল-বান্না’র সহোদর অধ্যাপক ‘আব্দুর রহমান আস-সা‘আতীর লেখা উপন্যাসকে নাটক হিসেবে অভিনয় করা হবে। যে নাটক চিন্তা ও দর্শনকে চিত্রায়িত করবে এবং ১লা মে, ১৯৪৬ ইং তারিখ বুধাবার ‘আল-আওবিরা’ নাট্যমঞ্চে শিল্পের বিস্ময় জালালুদ্দীন এতে অভিনয় করবে। প্রযোজনায় মুনীর এবং সুরসংযোজনে আহমাদ ‘আব্দুল ক্বাদির।...” [আল-হুদা আন-নাবাউয়ী ম্যাগাজিন, ৫ম সংখ্যা; গৃহীত: শাইখ আবূ ‘আব্দিল আ‘লা খালিদ বিন মুহাম্মাদ বিন ‘উসমান আল-মিসরী (হাফিযাহুল্লাহ) প্রণীত “ফাতাওয়া নাদিরাহ লি সালাসাতিম মিন কিবারি ‘উলামাই মিসর ফী শা’নি হাসানিল বান্না ওয়া হিযবিল ইখওয়ানিল মুসলিমীন”– শীর্ষক প্রবন্ধ; প্রবন্ধের লিংক: www.sahab.net/forums/index.php….]
  • ·
  • ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী’র সাথে ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’র ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারের বিবরণ:
  • শাইখ আবূ ‘আব্দিল আ‘লা খালিদ বিন মুহাম্মাদ বিন ‘উসমান আল-মিসরী (হাফিযাহুল্লাহ) তাঁর লেখা “ফাতাওয়া নাদিরাহ লি সালাসাতিম মিন কিবারি ‘উলামা-ই মিসর ফী শা’নি হাসানিল বান্না ওয়া হিযবিল ইখওয়ানিল মুসলিমীন (হাসান আল-বান্না এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে মিশরের তিনজন কিবার ‘উলামার দুর্লভ ফাতাওয়া)” প্রবন্ধে বলেছেন,
  • روى الشيخان الشقيقان: محمد وحسن بن عبد الوهاب –حفظهما الله– قصة لقاء الشيخ محمد حامد الفقي –مؤسس جماعة أنصار السنة– بحسن البنا –مؤسس حزب الإخوان–، وقد سمعت القصة من كليهما مباشرة، وأسوق هنا رواية الشيخ حسن كما سجَّلها بنفسه في تقديمه لكتابي: التفجيرات والأعمال الإرهابية والمظاهرات من منهج الخوارج والبغاة وليست من منهج السلف الصالح.
  • “দুই সহোদর শাইখ মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব এবং শাইখ হাসান বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী’র সাথে ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্না’র সাক্ষাৎকারের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমি ঘটনাটি সরাসরি দুজনের নিকট থেকেই শুনেছি। আমি এখানে শাইখ হাসানের বর্ণনাটি উল্লেখ করছি। যে বর্ণনা তিনি আমার লেখা “আত-তাফজীরাত ওয়াল আ‘মালুল ইরহাবিয়্যাতু ওয়াল মুযাহারাত মিন মানহাজিল খাওয়ারিজি ওয়াল বুগাত ওয়া লাইসাত মিন মানহাজিস সালাফিস সালিহ (বোমাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং বিক্ষোভ-আন্দোলন খারিজী ও বিদ্রোহীদের মানহাজ, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের মানহাজ নয়)” গ্রন্থে তাঁর ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।” [প্রাগুক্ত]
  • ·
  • আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ হাসান বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব বিন মারযূক্ব আল-বান্না (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৯২৫ খ্রি.] বলেছেন,
  • وقد حدث لقاء تاريخي هام بين الشيخ محمد حامد الفقي –مؤسس جَماعة أنصار السنة المحمدية–، وحسن البنا يظهر لنا حقيقة منهج الإخوان، وذلك لَما زار حسن البنا الشيخ حامد الفقي في مقر جماعة أنصار السنة المحمدية الكائن في حارة الدمالشة بعابدين رقم (10)، منذ ما يقرب من ستين سنة، وعرض حسن البنا على الشيخ حامد التعاون معه على الدعوة إلى الله، فسأله الشيخ حامد: على أي أساس وعلى أي منهج نتعاون؟ فأجاب البنا: ندعو الناس إلى الإسلام، فقال الشيخ حامد: الكُلُّ يدَّعي الدعوة للإسلام، ولكن نحن أُمرنا أن ندعو إلى العقيدة الإسلامية الصحيحة المبنية على التوحيد الخالص والبراءة من الشرك، والتي دعا إليها الرسل جميعًا عليهم السلام، وعلى رأٍسهم خاتمهم محمد صلى الله عليه وآله وسلم، فقال البنا: نجمع الناس أولاً على الإسلام الذي يعرفه الجميع ثم ندعوهم إلى التوحيد، فقال الشيخ حامد: بل ندعوهم إلى التوحيد أولاً كما فعل النبي صلى الله عليه وآله وسلم في بدء الدعوة في مكة، فرد البنا: لو دعونا الناس إلى التوحيد لانفض الناس عنا، فقال الشيخ حامد: ليس عليك هداهم ولكن الله يهدي من يشاء.
  • فلم يوافق أحدهما الآخر وافترقا على هذا، وهذه فحوى اللقاء كما سمعتها من أكثر من واحد من إخواني من أنصار السنة القُدامى، وعلى رأسهم شقيقي الشيخ محمد، والأستاذ أحمد الغريب؛ فالخبر ثابت عن أكثر من واحد من الثقات.
  • “আনসারুস সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়্যাহ’র প্রতিষ্ঠাতা শাইখ মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী এবং হাসান আল-বান্না’র মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার সংঘটিত হয়, যা আমাদের কাছে ব্রাদারহুডের মানহাজের প্রকৃতত্ব স্পষ্ট করবে। ঘটনাটি হলো—হাসান আল-বান্না প্রায় ৬০ বছর আগে ‘আবেদীন-১০’ এর হার্রাতুদ দিমালিশাহ’য় অবস্থিত আনসারুস সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়্যাহ’র সদরদপ্তরে শাইখ মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী’র সাথে সাক্ষাৎ করেন। হাসান আল-বান্না শাইখ হামিদের কাছে তাঁর সাথে আল্লাহ’র দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রস্তাব পেশ করেন। শাইখ হামিদ বলেন, “কোন বুনিয়াদ ও মানহাজের ভিত্তিতে আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করব?” বান্না জবাব দেন, “আমরা মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করব।”
  • শাইখ হামিদ বলেন, “সবাই ইসলামের দিকে আহ্বানের দাবি করে। কিন্তু আমরা তো একনিষ্ঠ তাওহীদ ও শির্ক থেকে বিচ্ছিন্নতার উপর প্রতিষ্ঠিত বিশুদ্ধ ইসলামী ‘আক্বীদাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করতে আদিষ্ট হয়েছি। যেই বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর দিকে আহ্বান করেছিলেন সমস্ত রাসূল (‘আলাইহিমুস সালাম)। আর তাঁদের শীর্ষে ছিলেন সর্বশেষ রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ।” তখন বান্না বলেন, “সবাই যে ইসলামকে চিনে আমরা তার উপর মানুষকে একত্রিত করব, তারপর তাদেরকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করব।”
  • শাইখ হামিদ বললেন, “বরং আমরা তাদেরকে সর্বাগ্রে তাওহীদের দিকে আহ্বান করব, যেমনটি নাবী ﷺ মক্কায় তাঁর দা‘ওয়াতের প্রারম্ভে করেছিলেন।” বান্না জবাব দেন, “আমরা যদি মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করি, তাহলে মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।” তখন শাইখ হামিদ বলেন, “তাদেরকে হিদায়াত দেওয়ার দায়িত্ব আপনার নয়, বস্তুত আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সুপথপ্রদর্শন করেন।”
  • তাঁদের দুজনের কেউই অপরজনের সাথে একমত হতে পারেননি এবং এর উপরই তাঁরা আলাদা হয়ে যান। এটাই এই সাক্ষাৎকারের সারমর্ম, যা আমি তৎকালীন আনসারুস সুন্নাহ’র একাধিক ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছি। আর তাঁদের শীর্ষে ছিলেন আমার সহোদর শাইখ মুহাম্মাদ ও অধ্যাপক আহমাদ আল-গারীব। এই সংবাদ একাধিক বিশ্বস্ত ব্যক্তির নিকট থেকে সাব্যস্ত হয়েছে।” [শাইখ আবূ ‘আব্দিল আ‘লা খালিদ বিন মুহাম্মাদ বিন ‘উসমান আল-মিসরী (হাফিযাহুল্লাহ), আত-তাফজীরাত ওয়াল আ‘মালুল ইরহাবিয়্যাতু ওয়াল মুযাহারাত মিন মানহাজিল খাওয়ারিজি ওয়াল বুগাত ওয়া লাইসাত মিন মানহাজিস সালাফিস সালিহ; পৃষ্ঠা: ১২; সন ও প্রকাশনার নামবিহীন সফট কপি; গ্রন্থটি সম্পাদনা করে তাতে ভূমিকা লিখে দিয়েছেন আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব বিন মারযূক্ব আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ) এবং আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ হাসান বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব বিন মারযূক্ব আল-বান্না (হাফিযাহুল্লাহ)]
  • ·
  • প্রিয় পাঠক, এখানে একটি কথা না বলে পারছি না। কিছু বিবেকহীন মানুষ লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে এমন মূর্খতাসুলভ কথা বলে, যা শুনলে তাদের ‘ইলম ও ‘আক্বলের দৈনতাই প্রকটভাবে প্রকাশিত হয়। তারা ওই ব্যক্তিদেরকে ‘মাদখালী’ বলে গালি দেয়, যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘আক্বীদাহ ও মানহাজগত ভুল তুলে ধরেন। তারা বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস জারাহ ও তা‘দীলের ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ আল-ফাক্বীহুন নাক্বিদ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)’র দিকে নিসবত করে সালাফীদেরকে ‘মাদখালী’ বলে গালি দেয়। এই বেহায়া লোকগুলো ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াকে মানুষের কাছে শাইখ রাবী‘ আল-মাদখালী’র ব্যক্তিগত মানহাজ হিসেবে দেখায় এবং শাইখকে গালি দিয়ে বলে যে, ড. রাবী‘ আল-মাদখালী হলো ‘মাদখালী’ ফের্কার জনক!
  • অথচ আপনি দেখেছেন, ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) কত হিজরীতে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি আবারও বলছি, ইমাম ফাক্বী ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে যে প্রবন্ধ লিখেছেন সেটা প্রকাশিত হয়েছে ১৩৬৫ হিজরীর জুমাদাল উলা’য়। আর শাইখ রাবী‘ জন্মগ্রহণ করেছেন ১৩৫১ হিজরীর শেষে। অর্থাৎ, ইমাম ফাক্বী যখন ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রবন্ধটি লিখেছেন, তখন শাইখ রাবী‘ ১৪ বছরের বালক। তাহলে কীভাবে বলা যায় যে, ইমাম ফাক্বী’র মতো এত বড় বিদ্বান ১৪ বছর বয়সী বালকের তথাকথিত ‘মাদখালী’ মতাদর্শে দীক্ষিত হয়ে ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লিখেছেন?!
  • বিদ‘আতীদের চাতুরি কতইনা নিকৃষ্ট, কতইনা জঘন্য! আল্লাহ’র কাছে এমন চাতুরি, প্রতারণা ও মিথ্যা রটনা থেকে পানাহ চাই। তবে আফসোস লাগে তখন, যখন দেখি আহলেহাদীস ঘরের সন্তানরাও বিদ‘আতীদের সুরে সুর মিলিয়ে সালাফীদেরকে ‘মাদখালী’ বলে গালি দিচ্ছে। আল্লাহ এই বিপথগামী যুবাদের হিদায়াত দান করুন। আমীন।
  • ·
  • ▌২৭শ অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান আল-গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)
  • ·
  • শাইখ পরিচিতি:
  • ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান বিন ‘আব্দুর রাযযাক্ব বিন ক্বাসিম আলে গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ) একজন প্রখ্যাত ফাক্বীহ ছিলেন। তিনি ১৩৪৫ হিজরী মোতাবেক ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরবের যুলফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো ‘আলিমের কাছ থেকে ‘ইলম হাসিল করে ধন্য হয়েছেন। তাঁর কয়েকজন প্রখ্যাত শিক্ষক হলেন—ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায, ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী, ইমাম ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রাহমান আল-আফরীক্বী (রাহিমাহুমুল্লাহ)। তিনি শারী‘আহ কলেজের শিক্ষক এবং সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) সদস্য ছিলেন।
  • ইমাম আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি.] বলেছেন, “যেসব সালাফী ‘আলিমের দারস শোনা বাঞ্ছনীয়, তাঁরা হলেন—শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায, শাইখ সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান, শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ, শাইখ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান আল-গুদাইয়্যান প্রমুখ।” [sahab.net]
  • বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) শাইখ গুদাইয়্যানের মৃত্যুর পর বলেন, “যেন একটি পর্বত ধসে পড়ল!” এছাড়াও তিনি শাইখকে “আল-ইমাম” বলে সম্বোধন করেন। [sahab.net]
  • তিনি ১৪৩১ হিজরী মোতাবেক ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। আমীন। সংগৃহীত: fb.com/SunniSalafiAthari (সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)।
  • ·
  • ইমাম গুদাইয়্যানের বক্তব্য:
  • বিগত শতাব্দীর প্রখ্যাত ফাক্বীহ সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক সদস্য আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রাহমান আল-গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ) [১৪৩১ হি./২০১০ খ্রি.] বলেছেন,
  • البلاد هذه كانت تعرف اسم جماعات، لكن وفد علينا ناس من الخارج وكل ناس يؤسسون ما كان موجودًا في بلدهم فعندنا مثلًا ما يسموهم بجماعة الإخوان المسلمين، وعندنا مثلًا جماعة التبليغ، وفي جماعات كثيرة كل واحد يرأس له جماعة يريد أن الناس يتبعون هذه الجماعة، يحرم ويمنع إتباع غير جماعته، ويعتقد أن جماعته هي التي على الحق، وأن الجماعات الأخرى على ضلالة، فكم في حق في الدنيا، الحق واحد، كما ذكرت لكم أن الرسول ﷺ بين افتراق الأمم، وأن هذه الأمة ستفترق على ثلاث وسبعين فرقة كلها في النار إلا واحدة قالوا: من هي يا رسول الله؟ قال ﷺ : «من كان على مثل ما أنا عليه اليوم وأصحابي».
  • فكل جماعة تضع لها نظامًا ويكون لها رئيس، وكل جماعة من هذه الجماعات يعلمون بيعة ويريدون الولاء لهم، وهكذا فيفرقون الناس.
  • البلد واحد أن أهلها يتفرقون فرقًا وكل فرقة تنشأ بينها وبين الفرقة الأخرى عداوة، فهل هذا من الدين؟ لا، ليس هذا من الدين؛ لأن الدين واحد والحق واحد والأمة واحدة، الله جل وعلا يقول: «كنتم خير أمة» ما قال: كنتم أقسامًا، لا، قال: «كنتم خير أمة أخرجت للناس» [آل عمران: ١١٠] في الحقيقة أن الجماعات هذه جاءتنا وعملت حركات في البلد، حركات سيئة؛ لأنها تستقطب وبخاصة الشباب.
  • “এই দেশ বিভিন্ন দলের নাম জানত না। কিন্তু বাহির থেকে আমাদের কাছে কিছু লোক আসল। আর সবাই তাদের দেশে যা রয়েছে তা এখানে প্রতিষ্ঠিত করতে লাগল। যেমন আমাদের এখানে রয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড, তাবলীগ জামা‘আত প্রভৃতি। যারা দলের নেতৃত্ব দেয়, তাদের প্রত্যেকেই চায় যে, মানুষ (তার) এই দলের অনুসরণ করুক। সে তার দল ব্যতীত অন্য যে কোনো দলের অনুসরণ করা হারাম ঘোষণা করে এবং নিষেধ করে। সে বিশ্বাস করে যে, তার দলই হকের উপর রয়েছে, আর অন্যান্য দল ভ্রষ্টতার উপর রয়েছে। তাহলে দুনিয়াতে কতগুলো হক রয়েছে? হক একটাই।
  • যেমন আমি তোমাদের কাছে বললাম যে, রাসূল ﷺ উম্মাহ’র বিভক্তি বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, উম্মাহ ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, কেবল একটি দল ব্যতীত প্রত্যেকটি দল জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহ’র রাসূল, সেই দলটি কোনটি?’ তিনি ﷺ বললেন, “আজকের দিনে আমি ও আমার সাহাবীরা যে মতাদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি, সে মতাদর্শের উপর যারা প্রতিষ্ঠিত থাকবে (তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী, হা/২৬৪১; সনদ: সাহীহ)
  • প্রত্যেক দলের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন আছে, দলের প্রধান আছে। এই দলগুলোর প্রত্যেকটিই বাই‘আত করে এবং তাদের জন্য মিত্রতা (ওয়ালা) পোষণ করে। আর এভাবে তারা মানুষকে বিভক্ত করে।
  • দেশ একটি। অথচ দেশবাসী বিভিন্ন দলে বিভক্ত। আর প্রত্যেকটি দল তার ও অন্যের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে। এটা কি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত? না, এটা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা দ্বীন একটি, হক একটি, আর উম্মাহও একটি। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মাহ”। তিনি বলেননি, তোমরা আলাদা আলাদা দলে বিভক্ত। তিনি বলেছেন, “তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মাহ, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে।” (সূরাহ আলে ‘ইমরান: ১১০)
  • প্রকৃতপক্ষে এই দলগুলো আমাদের নিকট এসেছে এবং দেশে সংগঠন তৈরি করেছে, নিকৃষ্ট সংগঠন। কেননা এরা লোকদেরকে একত্রিত করে, বিশেষ করে যুবকদেরকে।” [দ্র.: আবুল হাসান ‘আলী বিন আহমাদ আর-রাযিহী, আর-রিসালাতুস সুগরা ইলা আখী আল-মুনতাযিম ফী জামা‘আতিল ইখওয়ানিল মুসলিমীন; পৃষ্ঠা: ৮০; দারু ‘উমার ইবনিল খাত্বত্বাব, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ); ইউটিউব লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=TLbjBxb8HTA(অডিয়ো ক্লিপ)]
  • ·
  • অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
  • পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari (সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)
  • ১৫শ পর্ব | ২৬শ অধ্যায়: ইমাম মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাক্বী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ২৭শ অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল্লাহ আল-গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)

Post a Comment

0 Comments