এই পর্বে থাকছে ইমাম ‘উবাইদ আল-জাবিরী, ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ এবং ‘আল্লামাহ রমাযান আল-হাজিরী’র ফাতাওয়া।
▌১৫শ অধ্যায়: ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)
·
শাইখ পরিচিতি:
ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) বর্তমান যুগের বয়োজ্যেষ্ঠ ‘আলিমদের একজন। তিনি হলেন একাধারে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ। তিনি ১৩৫৭ হিজরী সনে মাদীনাহ’র ওয়াদিউল ফারা‘ নামক উপত্যকার আল-ফাক্বীরাহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন—ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী (রাহিমাহুল্লাহ), ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) প্রমুখ। তিনি কর্মজীবনে মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি ছোটোবড়ো বিভিন্ন মৌলিক গ্রন্থের ব্যাখ্যা লিখেছেন এবং নিজেও স্বতন্ত্রভাবে বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন।
ইমাম আহমাদ আন-নাজমী (রাহিমাহুল্লাহ)’র কাছে কতিপয় ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়, যারা ইমাম ‘উবাইদের ব্যাপারে বলছে যে, তিনি ‘আলিম নন। তখন ইমাম নাজমী জবাবে বলেন যে, “এটা গোঁড়া জিদকারী ব্যক্তির কথা।” এরপর তিনি এই কথার কঠিন প্রতিবাদ করেন। [sahab.net]
অনুরূপভাবে ইমাম সালিহ আল-লুহাইদান (হাফিযাহুল্লাহ)’র কাছে কতিপয় ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হয়, যারা ইন্টারনেটে ইমাম ‘উবাইদের নিন্দা করে। ইমাম লুহাইদান জবাবে বলেন, “তাদের প্রতি আমার নসিহত থাকবে, তারা যেন আল্লাহ’র কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও তাওবাহ করে এবং নিন্দা-সমালোচনা করা থেকে বিরত হয়।” [bayenahsalaf.com]
ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.] ইমাম ‘উবাইদের ব্যাপারে বলেছেন, “যে ব্যক্তি তাঁর নিন্দা করে এবং বলে যে, তিনি অজ্ঞ, সে শয়তানদের রাস্তা অবলম্বন করছে এবং সালাফী মানহাজের ‘আলিমদের নিন্দা করার ক্ষেত্রে হিযবীদের রাস্তা অবলম্বন করছে। শাইখ ‘উবাইদ ওই শ্রেষ্ঠ সালাফী ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা পরহেজগারিতা, দুনিয়াবিমুখতা ও সত্যকথনের ব্যাপারে সুপরিচিত।” [sahab.net]
ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “আল্লাহ’র কসম! ‘উবাইদ সালাফিয়্যাহ’য় একজন ইমাম।” [প্রাগুক্ত]
উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য অধ্যাপক ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বাযমূল (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “শাইখ ‘উবাইদ (হাফিযাহুল্লাহ) এই যুগের সুন্নাহ’র ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বিদ‘আতী ও শরিয়ত বিরোধীদের রদ করার ক্ষেত্রে একজন মুজাহিদ। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘ইলম প্রচারে তাঁর প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা ও শ্রম রয়েছে।” [প্রাগুক্ত]
মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক ‘আল্লামাহ ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘আব্দুর রহমান আল-বুখারী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “নিশ্চয় শাইখ ‘উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) আহলুস সুন্নাহ’র একজন অন্যতম ‘আলিম।” [প্রাগুক্ত]
আল্লাহ তাঁর অমূল্য খেদমতকে কবুল করুন এবং তাঁকে উত্তমরূপে হেফাজত করুন। আমীন। সংগৃহীত:bayenahsalaf.com ও sahab.net।
·
১ম বক্তব্য:
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: فضيلة الشيخ :ما رأيكم فيمن يقول: نجتمع فيما اتفقنا عليه، ويعذر بعضنا بعضا فيما اختلفنا فيه؟
الجواب: أقول ليعبروا ما شاءوا، فهذه العبارة التي تضمنها السؤال وما يرادفها من العبارات، هي من عبارات أهل الأهواء، من إخوانيةٍ وغيرها؛ وهي قاعدة المعذرة والتعاون التي كانت قاعدة للمنار أولاً،ثم صارت من بعد قاعدة للإخوان المسلمين –جماعة الإخوان التي أسسها حسن البنا، قبل نحو ٧٠ أو ٨٠ سنة في مصر– وتكلمت على هذه القاعدة بتفصيل في عدة جلسات،ومنها في دورة جدة المنعقدة هذا العام –أعني دورة الإمام محمد بن إبراهيم رحمه الله– فليرجع إلى ذلك الشريط.
প্রশ্ন: “সম্মানিত শাইখ, যে ব্যক্তি বলে, ‘আমরা যে ব্যাপারে একমত, সে ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, আর যে ব্যাপারে আমরা একমত নই, সে ব্যাপারে আমরা একে অপরকে মার্জনা করব’, তার ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?”
উত্তর: “আমি বলি, তারা যা বলতে চায় বলুক। প্রশ্নে উল্লিখিত কথা এবং এর সমার্থবোধক কথা বিদ‘আতীদের কথাবার্তার অন্তর্ভুক্ত। যেমন: ইখওয়ানী ও অন্যান্যরা। এটা মার্জনা ও সহযোগিতার মূলনীতি, যা প্রথমে (রাশীদ রিদ্বা প্রণীত) আল-মানারের মূলনীতি ছিল। পরবর্তীতে এটা মুসলিম ব্রাদারহুডের মূলনীতিতে পরিণত হয়। মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেছেন হাসান আল-বান্না, প্রায় ৭০ বা ৮০ বছর আগে। আমি অনেক বৈঠকে এই মূলনীতির উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তন্মধ্যে এই বছর জেদ্দায় অনুষ্ঠিত অধিবেশন –অর্থাৎ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ)’র অধিবেশন– অন্যতম। সুতরাং কেউ চাইলে ওই অধিবেশনের অডিয়ো ক্লিপ শুনতে পারে।” [দ্র.: “আল-ঈদ্বাহু ওয়াল বায়ান ফী কাশফি বা‘দ্বি ত্বারাইক্বিল ইখওয়ান”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ; ফাতওয়া’র অডিয়ো লিংক: https://ar.alnahj.net/audio/767.]
·
২য় বক্তব্য:
ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,
حينما نشئت جماعة الإخوان المسلمين –التي أنشئها حسن البنا في مصر، أظن في منتصف القرن العشرين الميلادي، هذا على تاريخهم هم ونحن لا نؤرخ بالميلادي، كيف أظهر حسن البنا هذه القافلة، وأسَّسَ لها، ودعا بها؟–
فأولا: أنشأ (دار التقريب بين السنة والشيعة) في مصر، وقال كلمات منها : أن مراكز الإخوان وبيوت الإخوان مفتوحة للشيعة، وكان يستضيف كبار الرافضة مثل نواف صفوي، وكان يَتَّصلُ بهم في الحج ويُدغدغ عواطفهم ويليِّنهم بمقولات منها : «ليس بيننا وبينكم اختلاف، وبيننا وبينكم أمور بسيطة يمكن حلها كالمتعة». فأين سبُّ أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، بل أين تكفيرهم إلا ثلاثة أو عشرة أو سبعة؟ أين قولهم إن القرآن محرّف؟ فهم يتعاملون معه حتى يظهر المهدي المنتظر، وأين قولهم على عائشة –رضي الله عنها– أم المؤمنين زوج سيد الخلْق –صلى الله عليه وسلم– بالبهتان؟ هذه كلها من مقولات الرافضة تغافل عنها حسن البنا، ولم يَرَها شيئا؛ لأنه يجمع ويُقَمِّش ويُلَفِّق.
وثانيا: قال مقولة هي كفرية في الحقيقة –ولا تنقلوا عنِّي أني أكفر البنا–، لكن المقالة كفرية، قال : «ليس بيننا وبين اليهود خصومة دينيّة، وإنما بيننا وبينهم خصومة اقتصادية، واللهُ أمرنا بمودتهم ومصافتهم»، واستدل بقوله بهذه الآية : «ولا تجادلوا أهل الكتاب إلا بالتي هي أحسن»، وهذه رواها عنه محمود عبد الحليم –وهو من خواصه– في كتابه «الإخوان أحداث صنعت التاريخ».
ثم بعد ذلك كلّ مَن كان على منهج البنّا ومنهج الإخوان المسلمين في الدعوة هو على هذه القاعدة؛ فانطلقت منها الدعوة إلى وحدة الأديان، والحوار بين الأديان؛ فلا تجد إخوانيـًّا جَلْدا إلاَّ وهو على التقريب؛ وأجلد من عرفنا في هذه الدعوة : حسن بن عبد الله الترابي السوداني، ويوسف القرضاوي المصري؛ فيوسف القرضاوي –وعندي وثائق على ما أنقله عنه– يُسمي هذه القاعدة بالقاعدة الذهبية، ويعلِّلُ بالدعوة إلى وحدة الأديان بأنَّ الحياة تتسع لأكثر من حضارة، وتتَّسع لأكثر من دين، بل الدين الواحد يتسع لأكثر من اتجاه؛ فهي مطَّاطية يعني دين مطّاط يتسع لعدة مشاريع ينشئها القرضاوي ومَن على شاكلته، ليس هو دين الإسلام الذي جاءت به الرسل عليهم الصلاة والسلام وهو «الاستسلام لله بالتوحيد، والانقياد له بالطاعة، والبراءة من الشرك وأهله» لا، الإسلام مجرد دعوة تجميعية تلفيقية تضم مَن تضم. هكذا عند القرضاوي؛ فالرافضة، والصوفية أصحاب وحدة الوجود، والباطنية، والحلولية، والقبورية هم مسلمون حقـًّا بناء على هذه القاعدة؛ لأنهم مجتمعون مع سائر أهل الإسلام وأهل السنة على قول لا إله إلا الله، ومختلفون فيما عدا ذلك؛ إذًا كلٌّ اجتهد فوصل إلى ما أدَّى به اجتهادُه.
“যখন মুসলিম ব্রাদারহুডের জন্ম হলো –মিশরে যে দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন হাসান আল-বান্না। সম্ভবত খ্রিষ্টীয় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। এটা তাদের ইতিহাসে রয়েছে। আমরা খ্রিষ্টীয় তারিখ অনুযায়ী ইতিহাস গণনা করি না। (তাদের ইতিহাসে আছে) কীভাবে হাসান আল-বান্না এই কাফেলা উদ্ভাবন করলেন, এটাকে প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং এর দা‘ওয়াত দিলেন?– তখন তিনি মিশরে “সুন্নী ও শী‘আ সম্প্রদায়কে নিকটবর্তীকরণের কার্যালয়” প্রতিষ্ঠা করলেন। তিনি কিছু কথা বললেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো—ব্রাদারহুডের কার্যালয় এবং বাড়িঘর শী‘আদের জন্য উন্মুক্ত।
তিনি রাফিদ্বী শী‘আদের নেতাদের নিমন্ত্রণ করতেন। যেমন: নাওয়াফ সাফাউয়ী। তিনি হাজ্বে গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করতেন, তাদের আবেগে সুড়সুড়ি দিতেন এবং বেশ কিছু কথাবার্তা বলে তাদেরকে শিথিল করতেন। সেসকল কথাবার্তার মধ্যে অন্যতম হলো—আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই, আমাদের এবং তোমাদের মধ্যে কিছু ছোটোখাটো মতবিরোধ আছে, যা সমাধান করা সম্ভব; যেমন: মুত‘আহ বিবাহ। [মু‘জামুল ওয়াসীত্ব প্রণেতা বলেছেন, মুত‘আহ বিবাহ মানে কোনো নারীকে তুমি বিবাহ করে একটি (নির্দিষ্ট) সময়ের জন্য উপভোগ করবে, কিন্তু তুমি নিজের জন্য তাকে স্থায়ী করতে চাইবে না। – সংকলক]
কিন্তু কোথায় গেল নাবী ﷺ এর সাহাবীদেরকে গালি দেওয়ার মতো বিষয়? বরং কোথায় গেল তিনজন বা দশজন বা সাতজন ছাড়া বাকি সাহাবীদেরকে কাফির বলার মতো বিষয়? কোথায় গেল শী‘আদের এই কথা—‘নিশ্চয় ক্বুরআন বিকৃত’? তারা তাঁর (বান্না’র) সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল, এমনকি (শী‘আদের বিশ্বাস অনুযায়ী) প্রতীক্ষিত মাহদী’র আবির্ভাব ঘটল! কোথায় গেল সৃষ্টিকুলের নেতার ﷺ স্ত্রী মু’মিনদের জননী ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা)’র প্রতি তাদের মিথ্যা অপবাদ প্রদান? এগুলো সবই রাফিদ্বী শী‘আদের কথা, যা থেকে হাসান আল-বান্না গাফিল হয়েছেন। তিনি এগুলোকে কিছুই মনে করেন না। কেননা তিনি ঐক্যবদ্ধ করছেন, জমা করছেন, জোড়া লাগাচ্ছেন!
দ্বিতীয়ত, তিনি এমন একটি কথা বলেছেন যা মূলত কুফরি কথা। তোমরা আবার আমার নিকট থেকে এরকম বর্ণনা কোরো না যে, আমি বান্নাকে কাফির বলি। কিন্তু তাঁর বলা কথাটি কুফরি কথা। তিনি বলেছেন, “আমাদের এবং ইহুদিদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় বিরোধ নেই। বরং আমাদের এবং তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক বিরোধ রয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের প্রতি ভালোবাসার এবং তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি এই আয়াত থেকে তার কথার দলিল গ্রহণ করেছেন—“আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সাথে বিতর্ক কোরো না।” (সূরাহ ‘আনকাবূত: ৪৬)
এই কথা তাঁর নিকট থেকে বর্ণনা করেছে তাঁরই খাস লোক মাহমূদ ‘আব্দুল হালীম, তার লেখা “আল-ইখওয়ান: আহদাসুন সানা‘আতিত তারীখ” গ্রন্থে।
তারপর দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে যারাই বান্না ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মানহাজের উপর রয়েছে, তারাই এই মূলনীতি অনুসরণ করে। এরপর এই দা‘ওয়াত বিভিন্ন ধর্মকে এক করার এবং বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে মতাদর্শ বিনিময়ের দা‘ওয়াতের দিকে অগ্রসর হয়েছে। সুতরাং তুমি এমন কোনো পাক্কা ইখওয়ানীকে পাবে না, যে বিভিন্ন ধর্মকে নিকটবর্তীকরণের আদর্শের উপর নেই। এই দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে আমরা যাদেরকে চিনি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় হলো—হাসান বিন ‘আব্দুল্লাহ আত-তুরাবী আস-সূদানী এবং ইউসুফ আল-ক্বারদ্বাউয়ী আল-মিসরী।
ইউসুফ আল-ক্বারদ্বাউয়ী –আমি তার নিকট থেকে যা বর্ণনা করছি, তার প্রমাণ আছে আমার কাছে– এই মূলনীতিকে সোনালী মূলনীতি বলেছে। আর সে বিভিন্ন ধর্মকে এক করার কারণ হিসেবে বলেছে, “জীবন একাধিক সংস্কৃতিকে ধারণ করে, একাধিক দ্বীনকে ধারণ করে। বরং একটি দ্বীন একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে।” এটা হলো রাবারের মতো ব্যাপার। অর্থাৎ, রাবারের মতো প্রসারণযোগ্য দ্বীন, যা অনেকগুলো শরিয়ত ধারণ করে, যে শরিয়তগুলো ক্বারদ্বাউয়ী এবং তার মতো ব্যক্তিরা তৈরি করছে। এটা দ্বীনে ইসলাম নয়, যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন রাসূলগণ (‘আলাইহিমুস সালাতু ওয়াস সালাম)। আর তা হলো তাওহীদ-সহ আল্লাহ’র কাছে আত্মসমর্পন করা, আনুগত্য-সহ তাঁর অনুসরণ করা এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে মুক্ত হওয়া।
ক্বারদ্বাউয়ীর নিকট ইসলাম হচ্ছে স্রেফ ঐক্য প্রতিষ্ঠাকারী নবউদ্ভাবিত দা‘ওয়াত, যা সবাইকে নিজের মধ্যে শামিল করে। তাহলে রাফিদ্বী শী‘আ সম্প্রদায়, সূফী সম্প্রদায়, সর্বেশ্বরবাদী সম্প্রদায়, বাত্বিনী শী‘আ সম্প্রদায়, কবরপূজারী সম্প্রদায়—এরা সবাই এই মূলনীতি অনুযায়ী প্রকৃত মুসলিম! কেননা তারা সকল মুসলিম এবং আহলুস সুন্নাহ’র সাথে এই কথার ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তবে তারা অন্য বিষয়ে একমত নয়। সুতরাং সবাই ইজতিহাদ করেছে। তারপর প্রত্যেকের ইজতিহাদ যা সম্পাদন করেছে, তারা সেই পর্যন্ত পৌঁছেছে।” [ইমাম ‘উবাইদ প্রণীত “উসূল ওয়া ক্বাওয়া‘ইদ ফিল মানহাজিস সালাফী”– এর দ্বিতীয় অডিয়ো ক্লিপ; গৃহীত: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=27409.]
·
৩য় বক্তব্য:
ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন,
وجماعةُ الإخوان إحدى الجماعات الدَّعوية الحديثة التي كُلُّها ضالة مُضلة، وقد تكلمتُ في هذه الجماعة وذكرتُ ما تيسر لي من السرد التاريخي عنها، منهجياً وعقدياً، فليُرجع إلى تلك الأشرطة ومنها ما حدَّثتُ به الحاضرين وعبر الشبكة في دورة جدة الأخيرة، دورة الإمام محمد بن إبراهيم رحمه الله.
“আর মুসলিম ব্রাদারহুড ওই সকল আধুনিক দা‘ওয়াতী দলের অন্তর্ভুক্ত, যেসকল দলের সবই ভ্রষ্ট এবং ভ্রষ্টকারী। আমি এই দলের ব্যাপারে কথা বলেছি এবং যতদূর সম্ভব ‘আক্বীদাহ ও মানহাজগত দিক থেকে এর ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণনা করেছি। সুতরাং যে চায়, সে যেন ওই অডিয়ো ক্লিপগুলো শোনে। সেই ক্লিপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সেই ক্লিপ, যাতে আমি জেদ্দার সর্বশেষ অধিবেশনে –ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম (রাহিমাহুল্লাহ)’র অধিবেশন– উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সাথে এবং ইন্টারনেটে কথা বলেছি।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/705 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
·
৪র্থ বক্তব্য:
ইমাম ‘উবাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: يقول سائلنا الكريم أنه يرجو من فضيلتكم التوجيه للإخوة السلفيين الذين يحوم حولهم الإخوان المسلمون والجهاديوون وغيرهم من الفرق، وقد انخرط بعض إخواننا معهم؟
الجواب: أولًا أرجو من السائل وغيره أن يراجعوا لقاءً كان معى قبل عدة سنوات، وأظنه منشورًا في السحاب بعنوان «الحد الفاصل» خلاصة ما فيه أن الإخوان المسلمين وجماعة التبليغ من الفرق الضالة الملتدعة المضلة، فلا يجوز الإنخراط معهم في أعمالهم.
প্রশ্ন: “আমাদের সম্মানিত প্রশ্নকারী বলছেন যে, তিনি আপনার নিকট থেকে সেসব সালাফী ভাইদের জন্য দিকনির্দেশনা চাচ্ছেন, যাদের আশেপাশে মুসলিম ব্রাদারহুড, জিহাদিস্ট এবং অন্যান্য দল ঘোরাফেরা করে। আমাদের কিছু ভাই তাদের দলে যোগ দিয়েছে।”
উত্তর: “প্রথমত, আমি প্রশ্নকারী এবং অন্যান্যদের কাছে আশা করব, তারা যেন কয়েক বছর আগে আমার দেওয়া সাক্ষাৎকারটি নিরীক্ষা করে। সম্ভবত সাক্ষাৎকারটি সাহাব ডট নেটে ‘আল-হাদ্দুল ফাসিল’ শিরোনামে পোস্ট করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে যা আছে তার সারসংক্ষেপ হলো—মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তাবলীগ জামা‘আত ভ্রষ্ট ও ভ্রষ্টকারী বিদ‘আতী দলসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তাদের কাজকর্মের ক্ষেত্রে তাদের সাথে সংযুক্ত হওয়া বৈধ নয়।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/622.]
▌১৬শ অধ্যায়: ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ)
·
শাইখ পরিচিতি:
ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন বিন হামাদ আল-‘আব্বাদ আল-বদর (হাফিযাহুল্লাহ) বর্তমান যুগের একজন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিনি ১৩৫৩ হিজরী মোতাবেক ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে সৌদি আরবের যুলফা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রখ্যাত ‘আলিমগণের সান্নিধ্যে থেকে ‘ইলম হাসিল করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলুশ শাইখ, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায, ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী, ইমাম ‘আব্দুর রাযযাক্ব ‘আফীফী, ‘আল্লামাহ ‘আব্দুর রহমান আল-আফরীক্বী (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
তিনি মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন ইমাম ইবনু বায। ইমাম ইবনু বাযের মৃত্যুর পর তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হয়েছিলেন। তিনি মাসজিদে নাবাউয়ীতে ১৪০৬ হিজরী থেকে দারস দিয়ে আসছেন। তিনি এখানে সম্পূর্ণ ‘কুতুবুস সিত্তাহ’-সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের দারস দিয়েছেন।
শাইখ ‘আব্বাদ ইমাম মাহদীর ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ’র ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে একটি তথ্যসমৃদ্ধ লেকচার প্রদান করলে শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] তাঁর প্রশংসা করে বলেন, “আমরা আমাদের লেকচারার সম্মানিত উস্তায আশ-শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন বিন হামাদ আল-‘আব্বাদকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি এই ব্যাপক ও মূল্যবান লেকচার প্রদান করার জন্য। নিশ্চয় তিনি সুন্দরভাবে বলেছেন এবং লোকদেরকে ভালোভাবে অবহিত করেছেন।” [sahab.net]
ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.] কে প্রশ্ন করা হয়, “সৌদি আরবের ‘আলিমগণের মধ্যে আপনি কাদের থেকে ‘ইলম গ্রহণের নসিহত করেন? আর খুব ভালো হতো, যদি আপনি আমাদের কাছে কিছু (‘আলিমের) নাম বলেন।” তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) জবাবে বলেন, “আমি যাঁদের কাছ থেকে ‘ইলম গ্রহণের নসিহত করি এবং আমি যাঁদেরকে চিনি, তাঁরা হলেন—শাইখ ‘আব্দুল ‘আযীয বিন বায (হাফিযাহুল্লাহ), শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ বিন ‘উসাইমীন (হাফিযাহুল্লাহ), শাইখ রাবী‘ বিন হাদী (হাফিযাহুল্লাহ), শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ)।” [ইমাম মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ), তুহফাতুল মুজীব ‘আলা আসইলাতিল হাদ্বিরি ওয়াল গারীব; পৃষ্ঠা: ১৬৭; দারুল আসার, সানা (ইয়েমেন) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৮ হি.] বলেছেন, “নিশ্চয় পরহেজগারিতার ক্ষেত্রে শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদের মতো আর কাউকে আমার দুচোখ দেখেনি।” [sahab.net]
ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (মাদীনাহ) হচ্ছে আল-‘আব্বাদ, আয-যাইদ এবং শাইখ ইবনু বাযের বিশ্ববিদ্যালয়।” [sahab.net] এই তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন।
ইমাম আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি.] সালাফদের কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করার পর বর্তমান যুগের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ ‘আলিমের কিতাবের কথা বলেন। সেখানে তিনি শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদের কিতাবের কথা বলেছেন। [sahab.net]
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন, “অনুরূপভাবে দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, এমন শীর্ষ ‘আলিমদের অন্তর্ভুক্ত হলেন—সম্মানিত শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ, সম্মানিত শাইখ রাবী‘ বিন হাদী, সম্মানিত শাইখ সালিহ আস-সুহাইমী, সম্মানিত শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী। দা‘ওয়াত, ইখলাস এবং যারা দা‘ওয়াহর সঠিক পথে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় তাদেরকে রদ করার ক্ষেত্রে তাঁদের অনেক চেষ্টাপ্রচেষ্টা রয়েছে। তাঁদের অভিজ্ঞতা আছে, কথাবার্তা তলিয়ে দেখার যোগ্যতা এবং দুর্বল (ভুল) থেকে সঠিককে পার্থক্য করার জ্ঞান আছে। তাদের লেকচার ক্লিপস এবং দারসসমূহ প্রচার করা এবং তা থেকে উপকৃত হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা তাতে মুসলিমদের জন্য বিশাল ফায়দা আছে।” [শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), আস-সানাউল বাদী‘ মিনাল ‘উলামা-ই ‘আলাশ শাইখ রাবী‘; পৃষ্ঠা: ১৯-২০; ২য় প্রকাশ (ছাপা ও সন বিহীন)]
মাদীনাহ’র প্রখ্যাত ‘আলিমে দ্বীন ইমাম ‘উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৭ হি.] বলেছেন, “শাইখ ‘আব্দুল মুহসিন এবং আমাদের অন্যান্য ‘আলিমগণ যদি বিদ‘আতীর ব্যাপারে জানতেন, তাহলে কখনোই তাকে তার বিদ‘আতের ওপর সমর্থন করতেন না। বিদ‘আতীদের বিরুদ্ধে তাঁদের কঠোর অবস্থান রয়েছে।” [sahab.net]
এই মহান ‘আলিমের অমূল্য খেদমতকে আল্লাহ কবুল করুন এবং তাঁকে উত্তমরূপে হেফাজত করুন। আমীন। সংগৃহীত: sahab.net।
·
১ম বক্তব্য:
বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, মুসলিম ব্রাদারহুড মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, ইমাম ‘আব্বাদের মতে মুসলিম ব্রাদারহুড পথভ্রষ্ট ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ‘আব্বাদের ফাতওয়াটি নিম্নরূপ—
السؤال: هذان سؤالان عن الإخوان المسلمين، هل هم من الفرقة الناجية وهل هم من الخوارج؟
الجواب: الإخوان المسلمون، عندهم انحرافات، ويرون أنهم أهل الحق وغيرهم ليس كذلك... عندهم انحراف، عندهم بدع وعندهم حرص على السلطة، ونهم في حصولها، أهل السنة والجماعة الذين هم الفرقة الناجية، ليسوا منها.
প্রশ্ন: “এই দুটি প্রশ্ন মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে। তারা কি মুক্তিপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত? আর তারা কি খারিজীদের অন্তর্ভুক্ত?”
উত্তর: “মুসলিম ব্রাদারহুডের ভ্রষ্টতা আছে। তারা নিজেদেরকে হকপন্থি মনে করে। আর অন্যদেরকে হকপন্থি মনে করে না।... তাদের ভ্রষ্টতা আছে, তাদের নিকট বিদ‘আত আছে, শাসনক্ষমতার প্রতি লালসা আছে, ক্ষমতা অর্জনের লোভ রয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্ত দল হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত, তারা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।” [দ্র.: www.sahab.net/forums/index.php?app=forums&module=forums&controller=topic&id=154534 (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
২য় বক্তব্য:
ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ আল-বাদর (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] কে তাবলীগ জামা‘আত এবং মুসলিম ব্রাদারহুড প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,
هذه الفرق المختلفة الجديدة أولاً هي محدثة ميلادها في القرن الرابع عشر، قبل القرن الرابع عشر ما كانت موجودة وما كانت مولودة هي في عالم الأموات وولدت في القرن الرابع عشر.
أما المنهج القويم والصراط المستقيم فميلاده أو أصله من بعثة الرسول الكريم صلى الله عليه وسلم ما كان عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم وأصحابه من حين بعثته عليه الصلاة والسلام فمن اقتدى بهذا الحق والهدى فهذا هو الذي سلم ونجى، ومن حاد عنه فإنه منحرف.
تلك الفرق أو تلك الجماعات من المعلوم إن عندها صواب وعندها خطأ لكن أخطاؤها كبيرة وعظيمة فيحذر منها ويحرص على إتباع الجماعة الذين هم أهل السنة والجماعة والذين هم على منهج سلف هذه الأمة والذين التعويل عندهم إنما هو على ما جاء عن الله وعن رسوله عليه الصلاة والسلام وليس التعويل على أمور جاءت عن فلان وفلان ، وعلى طرق ومناهج أحدثت في القرن الرابع عشر الهجري الذي انفرط.
فإن تلك الجماعات أو الجماعتين اللتين أشير إليهما إنما وجدتا وولدتا في القرن الرابع عشر على هذا المنهج وعلى هذه الطريقة المعروفة التي هي الالتزام بما كانوا عليه مما أحدثه من أحدث تلك المناهج وأوجد تلك المناهج، فالاعتماد ليس على الأدلة على أدلة الكتاب والسنة وإنما هو على آراء وأفكار ومناهج جديدة محدثة يبنون عليها سيرهم ومنهجهم، ومن أوضح ما في ذلك أن الولاء والبراء عندهم إنما يكون لمن دخل معهم ومن كان معهم.
فمثلاً جماعة الإخوان من دخل معهم فهو صاحبهم يوالونه ومن لم يكن معهم فإنهم يكونون على خلاف معه، أما لو كان معهم ولو كان من أخبث خلق الله ولو كان من الرافضة فإنه يكون أخاهم ويكون صاحبهم، ولهذا من مناهجهم أنهم يجمعون من هب ودب حتى الرافضي الذي هو يبغض الصحابة، ويكره الصحابة، ولا يأخذ بالحق الذي جاء عن الصحابة إذا دخل معهم في جماعتهم فهو صاحبهم ويعتبر واحد منهم له مالهم وعليه ما عليهم.
“এগুলো নতুন সৃষ্ট ফিরক্বাহ (দল)। প্রথমত, এগুলো নব উদ্ভাবিত। এগুলোর জন্ম চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীতে। যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের সময়ে এগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। এগুলোর জন্ম হয়েছে চতুর্দশ শতাব্দীতে।
পক্ষান্তরে বিশুদ্ধ মানহাজ ও সঠিক পথের জন্ম হয়েছে রাসূল ﷺ এর রিসালাত লাভের সময় থেকে। রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ তাঁর রিসালাত পাওয়ার সময় থেকে যে আদর্শের উপর ছিলেন সেটাই বিশুদ্ধ মানহাজ। যে ব্যক্তি এই সত্য পথ ও আদর্শের অনুসরণ করে, সেই নিরাপত্তা লাভ করে এবং মুক্তি পায়। আর যে ব্যক্তি এই পথের বিরুদ্ধাচারণ করে, সেই বিপথগামী।
এ সমস্ত দল ও জামা‘আতের ব্যাপারে এটা সুবিদিত যে, এগুলোর সঠিকতা আছে, আবার ভুলও আছে। কিন্তু এদের ভুলগুলো অনেক বড়ো ও ভয়াবহ। সুতরাং তাদের থেকে সতর্ক করতে হবে এবং আল-জামা‘আহ তথা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসরণ করার অভিলাষী হতে হবে, যেই আহলুস সুন্নাহ এই উম্মাহ’র সালাফদের মানহাজের উপর রয়েছে। তাদের কাছে এই নির্ভরতা আছে যে, তাদের আদর্শ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ এর নিকট থেকে আগত। কিন্তু সেসব বিষয়ের উপর কোনো নির্ভরতা নেই, যেসব বিষয় এসেছে অমুক-তমুকের নিকট থেকে এবং ওইসব পথ ও মানহাজ থেকে, যেগুলো উদ্ভাবিত হয়েছে হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীতে।
কেননা এসব দলের বা এই দুটি দলের আবির্ভাব ও জন্ম হয়েছে চতুর্দশ শতাব্দীতে, এই (নব্য) মানহাজ এবং এই সুপরিচিত পন্থার উপর। আর সেই পন্থা হলো—এই নতুন মানহাজ যারা তৈরি করেছে, তাদের সৃষ্ট মতাদর্শকে আঁকড়ে ধরা। ক্বুরআন ও সুন্নাহ’র দলিলসমূহের উপর নির্ভরতা নয়, বরং তাদের নির্ভরতা বিভিন্ন নতুন মতবাদ ও নয়া মানহাজের উপর, যেই মতবাদগুলোর উপর ভিত্তি করে তারা তাদের চলার পথ ও মানহাজ তৈরি করে। এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় এর মাধ্যমে যে, তাদের নিকট ওয়ালা (মিত্রতা) ও বারা (বৈরিতা)’র নিক্তি হলো—‘কে তাদের দলে প্রবেশ করল, আর কে প্রবেশ করল না’।
উদাহরণস্বরূপ যে ব্যক্তি ব্রাদারহুডে প্রবেশ করল, সে তাদের বন্ধু, তারা তার প্রতি মিত্রতা পোষণ করবে। আর যারা তাদের সাথে নেই, তাদের প্রতি তারা বৈরিতা পোষণ করবে। যে ব্যক্তি তাদের সাথে রয়েছে, সে যদি আল্লাহ’র সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টি হয়, সে যদি রাফিদ্বী শী‘আও হয়, তবুও সে তাদের ভাই এবং বন্ধু। একারণে তাদের মানহাজ হলো—তারা সবাইকে জমা করে। এমনকি একজন রাফিদ্বী শী‘আকেও, যে সাহাবীদেরকে ঘৃণা করে এবং সাহাবীদের ব্যাপারে যে সত্য এসেছে তা গ্রহণ করে না। এই রকম ব্যক্তিও যদি তাদের দলে যোগ দেয়, তবুও সে তাদের বন্ধু এবং তাদেরই একজন বলে গণ্য। তাদের জন্য যা রয়েছে, তার জন্যও তাই রয়েছে, আর তাদের উপর যে দায়িত্ব রয়েছে, তার উপরও তাই রয়েছে।” [“ফাতাওয়াল ‘উলামা ফিল জামা‘আত ওয়া আসারুহা ‘আলা বিলাদিল হারামাইন”– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ, রিয়াদের “তাসজীলাতু মিনহাজিস সুন্নাহ আস-সাম‘ইয়্যাহ” কর্তৃক প্রকাশিত; গৃহীত: শাইখ ‘আব্দুস সালাম বিন সালিম আস-সুহাইমী (হাফিযাহুল্লাহ), ফিকরুত তাকফীর ক্বাদীমাও ওয়া হাদীসা; পৃষ্ঠা: ২৭৯-২৮১; দারুল ইমাম আহমাদ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
▌১৭শ অধ্যায়: ‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন রমাযান আল-হাজিরী (হাফিযাহুল্লাহ)
·
শাইখ পরিচিতি:
‘আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন রমাযান আল-হাজিরী (হাফিযাহুল্লাহ) সৌদি আরবের জুবাইল শহরের প্রখ্যাত সালাফী দা‘ঈ ও ‘আলিমে দ্বীন। তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বিন সা‘ঊদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিক্বহের উপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি আহলুস সুন্নাহ’র অনেক বড়ো বড়ো ‘আলিমের কাছে পড়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন—ইমাম ইবনু বায (ইমাম ইবনু বাযের কাছে ১২ বছর পড়েছেন), ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন, ইমাম মুহাম্মাদ আমান আল-জামী, ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী, ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী, ‘আল্লামাহ সালিহ আল-আত্বরাম (রাহিমাহুমুল্লাহু ওয়া হাফিযাহুমুল্লাহ)।
শাইখ হাজিরী দা‘ওয়াতী কাজে যেসব ‘আলিমদের সাথে কানেক্টেড ছিলেন এবং এখনও আছেন, তাঁরা হলেন—ইমাম আলবানী, ইমাম জামী, ইমাম ‘উবাইদ, ‘আল্লামাহ ওয়াসিউল্লাহ ‘আব্বাস প্রমুখ (রাহিমাহুমুল্লাহু ওয়া হাফিযাহুমুল্লাহ)।
শাইখ হাজিরী অসংখ্য মৌলিক কিতাবের দারস দিয়েছেন। তিনি একাধারে তাফসীর, উসূলে তাফসীর, হাদীস, উসূলে হাদীস, ফিক্বহ, উসূলে ফিক্বহ, ‘আক্বীদাহ, মানহাজ, ফারাইদ্ব, সীরাত প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য কিতাবের দারস দিয়েছেন।
ইমাম আহমাদ আন-নাজমী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ব্যাপারে বলেছেন, “তিনি আহলুস সুন্নাহ’র শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত।”
একবার মাদীনাহ’র মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ ইমাম ‘উবাইদ আল-জাবিরী (হাফিযাহুল্লাহ)’র সাথে জুবাইলের এক ভাই যোগাযোগ করে কোনো এক মাসআলাহ’র ব্যাপারে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করেন। ইমাম ‘উবাইদ তখন ব্যস্ত ছিলেন। তিনি ওই ভাইকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কোথা থেকে বলছেন?’ ভাইটি বলেন, ‘জুবাইল থেকে।’ তখন ইমাম ‘উবাইদ বলেন, “আপনাদের কাছে শাইখ মুহাম্মাদ বিন রমাযান আছেন। আপনি তাঁর সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাঁকে প্রশ্ন করুন।”
আল্লাহ তাঁর অমূল্য খেদমতকে কবুল করুন এবং তাঁকে উত্তমরূপে হেফাজত করুন। আমীন। সংগৃহীত: আজুর্রি (ajurry) ডট কম।
·
শাইখ মুহাম্মাদ হাজিরী’র বক্তব্য:
ফাদ্বীলাতুশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন রমাযান আল-হাজিরী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্মসাল জানা যায়নি] বলেছেন,
والذي أحيا عقيدة الخوارج في هذا العصر جماعة الإخوان المصرية، جماعة الإخوان المسلمين المصرية هي من أحيا فكر الخوارج، وعلى رأسها مؤسسها البنا.
“যারা এই যুগে খারিজীদের ‘আক্বীদাহ জিন্দা করেছে, তারা হলো ইজিপশিয়ান ব্রাদারহুড। ইজিপশিয়ান মুসলিম ব্রাদারহুডই খারিজীদের (মৃত) আদর্শ জিন্দা করেছে। আর তাদের শীর্ষে রয়েছে ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা আল-বান্না।” [দ্র.: https://ar.alnahj.net/audio/3081.]
·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
পরিবেশনায়: www.facebook.com/SunniSalafiAthari(সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে)
0 Comments