রমযান মাসে মুসলমানদের একই ভুল করা ও এর কারন বলুন


ডাঃ জাকির নায়েক, রমযান মাসে  মুসলমানদের একই ভুল করা ও এর কারন বলুন

আলহামদুলিল্লাহ। এর প্রধান কারন,  মহান আল্লাহর বানীগুলো কুরআন/ হাদীস বুঝে পড়েনা।
“যারা আমার জন্য সংগ্রাম- সাধনা করবে তাদেরকে আমি আমার পথ দেখাবো৷ আর অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশালীদেরই সাথে আছেন
সুরা-আন-কাবুত-  ২৯/৬৯

যে ব্যাক্তি আল্লাহর পথে চলার চেষ্টা করছে, সে আসলে আল্লাহর পথে জেহাদ করছে। এই অবস্থায় আল্লাহর অহী সব জেহাদকারীদের জন্য পথপ্রদর্শন করে। এই মানদন্ডটি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের প্রয়োজন।
“হে মুহাম্মাদ!তোমার আগে আমি যখনই রসূল পাঠিয়েছি, মানুষই পাঠিয়েছি,যাদের কাছে আমি নিজের অহী প্রেরণ করতাম৷যদি তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো তাহলে জ্ঞ্যানীদের জিজ্ঞেস করো৷     সুরা নাহল-৪৩/৩৯
আমরা এমন এক জাতি যেখানে অগনিত ধর্ম-বিশেষজ্ঞ আছেন।সুতরাং ধর্মের যেটা আমাদের জানা নাই, সেটা তাদের থেকে জেনে নেয়া আমাদের পালনীয় দায়িত্ব। মূলতঃ এই জানার ব্যাপারে গাফিলতি ও অসাবধানতা মুসলমানদের একই ধরনের ভুলের মধ্যে রাখছে। ভুলগুলোকে ৪টি শ্রনীতে ভাগ করা যায়ঃ-
প্রথম শ্রেনীঃ
১)     রোযার নিয়তঃ-  রোযাদার রোযা রাখার জন্য নিয়ত করেনা। নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ন।এটা ছাড়া রোযা গ্রহনযোগ্য হবেনা।
২)     সেহেরীঃ-  অনেক সময় মুসলমানরা ফজরের আজান শুরু হলে এমনকি আজানের পরও খেতে থাকে,যদিও তারা আজানের আগে খাবার সময় পেয়েছিল। তারা মনে করে, আজান শেষ হওয়া পর্য্যন্ত  খাবার সময় থাকবে। কিন্তু আজান শুরু হবার সাথে সাথেই, খাবার সময় শেষ হয়ে যায়।
৩)     যাকাত/ফিতরাঃ-  এগুলো  দিতে অযথা সময় নষ্ট করে। কেউ কেউ এটা ঈদের নামাযের পরে দেয়। পরবর্তীতে এটা নিয়মে পরিনত হয়ে যায়।
দ্বিতীয় শ্রেনীঃ
৪)      সেহরীঃ-   কিছু লোক আছে যারা সেহরী গ্রহন করেনা। কিছু সময়ের অনেক আগেই সাহরী গ্রহন করে। যতটা সম্ভব দেরী করে সাহরী খেতে হবে এবং এটা অবশ্যই ফজরের আজান শুরু হবার আগেই করতে হবে।
৫)    ইফতারঃ-    কিছু রোযাদার আছে যারা ইফতার করতে দেরী করে।অবহেলা করে যদিও সময় আসন্ন।
“ ওই ব্যাক্তি উত্তম যে যথাসময়ে ইফতার করে”।
৬)   অশুদ্ধ দোয়াঃ-   অনেক রোযাদার অশুদ্ধ দোয়া পড়ে। সবচেয়ে শুদ্ধ দোয়াঃ-
“যাহাবা জাম’আ ওয়া ইয়াবতাল্লালাতি রুকু ওয়াসাবাতিল আরয ইনশাআল্লাহ”।
অর্থঃ-  “আমার পিপাসা নিবারিত হয়েছে।আমার ক্ষুধা নিবারিত হয়েছে”।
কিছু  লোক আছে, ইফতারের আগেই এটা পড়ে ফেলে। আগে পড়া দোয়ার বিরুদ্ধে চলে যায়।  কারন ইফতার না করার আগে তো পিপাসা কিংবা ক্ষুধা কোনটাই নিবারন হবেনা। তাই সামান্য পানি, খেজুর কিংবা ইফতারের শেষে দোয়া পড়া উচিত।
৭)     ইফতারের পরিমানঃ-   কিছু রোযাদার আছে যারা ইফতারের সময় অতিরিক্ত খায়। এটাকে রাতের খাবার হিসাবে বিবেচনা করে।
৮)      তারাবীঃ-    অনেক রোযাদার তারাবীর নামাজকে অবহেলা করে, যেহেতু এটা ফরয নয়।কিন্তু এটা ‘সুন্নতে মুয়াক্কাদা’। জরুরী নয় এই চিন্তা থেকে সে অনেক বড় পুরস্খার থেকে বন্চিত হোল।
৯)      তারাবী দ্রুত পড়াঃ-   অনেক মসজিদে তারাবী দ্রুত পড়ায়। তারা অল্প সময়ের ভিতরে শেষ করে, তারাবীর আসল উদ্দেশ্যেকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।এটা মাঝারি গতিতে পড়ানো উচিত।
১০)     ই’তেকাফঃ-    অনেক মুসলিম আছেন যারা মসজিদে এ’তেকাফে বসে সামাজিক কাজে অংশগ্রহন করে। যদিও এই সময়ে লোকজন,বন্ধু,ইথ্যাদির সাথে মেলামেশা সুন্নতের পরিপন্থী।
১১) লাইলাতুল কদরঃ-   অনেক মুসলিম ধরে নেয়, রমযান মাসের ২৭ তারিখের রাতে লায়লাতুল কদর। মহানবী(সঃ) বলেচেন, তোমরা রমযান মাসের শেষের ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে কদর তালাশ কর।
১২)    শুধুই রোজাঃ-   অনেকে রোজা রাখে,কিন্তু আল্লাহর ইবাদত কিংবা তাকে স্মরন না করে, অন্য কাজে সময় নষ্ট করে। তাদের উচিত ফরয নামাজের সাথে সুন্নত,নফল  নামাজগুলো আদায় করা।
১৩)     দোয়া চাওয়াঃ- অনেকে আছেন দোয়া চান না। সকলের উচিত আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া, তওবা করা। কারন এটা রহমতের মাস। যত বেশী সম্ভব কোরআন পাঠ করবে।
তৃতীয় শ্রনীঃ-
১৪)    ফরয কাজঃ-   অনেকে রাত গভীর হবার আগেই সাহরী খেয়ে ফেলে ও ফজরের নামায না পড়েই ঘুমিয়ে যায়।ফজরের নামায না পড়া তাদের জন্য সাধারন ব্যাপার। অনেকে আছেন যারা সারা রাত জেগে থাকেন কিন্তু দিনে নামাজ মসজিদে না পড়ে কিংবা  নামাজ না পড়ে, সারাদিন ঘুমায়। অথচ সালাতসহ প্রতিটা কাজই সঠিক সময়ে করতে হবে।
১৫)  যাকাতঃ-  কেউ আছে যাকাত দেয়না। কেউ আছে, সঠিক হিসাব না করে অনুমানের ভিত্তিতে যাকাত দেয়।
১৬)   ব্যবহারঃ-   রমযান মাসে পরনিন্দা, কুতসা-রটনা, মিথ্যা কথা,গালাগালি করা,বাজে শব্দ ব্যবহার করা, অপব্যাখ্যা,গল্প-গুজব,আড্ডা, ভিত্তিহীন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে।
১৭)   গান-সিনেমাঃ-  অনেকে গান,চলচ্চিত্র, অনৈসলামিক পত্রিকা, বাজে(ধর্মীয় না) ওয়েব সাইট ইত্যাদিতে সময় নষ্ট করে।
১৮)   অনেকে প্রচুর ব্যায় ও ভোগ করে থাকে।
চতুর্থ শ্রেনীঃ
১৯)   খেলা-ধূলাঃ-  বিভিন্ন ধরনের টুর্নামেন্ট খেলা-ধূলা ইত্যাদিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, দুনিয়ামুখী হয়ে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।
২০)   ইফতার পার্টিঃ   বিভিন্ন  জায়গায়  জমকালো  ইফতার পার্টির আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, রমজান মাস থেকে দূরে সরে যায়। আবার দেখানোর জন্যও ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। অনেকে বিভিন্ন ধরনের ইফতার তৈরীর জন্য বলে, বাড়ীর মহিলাদের ব্যস্ত রাখে। ফলে বাড়ীর সবাই ব্যস্ততার ফলে ইবাদত করতে পারেনা।
২১)    শপিং-এঃ-   অনেকে রমজানে বিভিন্ন ধরনের কেনা-কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে রাতে-দিনে নিজের দোকানে ব্যবসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কারন রমজানেই বেশী ব্যবসা হয়।তারাবীর নামাজের পর এক শ্রেনীর মানুষ  গল্প-গুজব করে সময় নষ্ট করে। এভাবে বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত  ব্যস্ততার কারনে রমজান মাস ও আল্লাহ  থেকে দূরে চলে যেতে থাকে। পরবর্তীতে এটাই তাদের লাইফ-স্টাইল হয়ে যায়।

Post a Comment

0 Comments