▌জনাব আবুল কালাম আজাদ সাহেবের মিথ্যাচারের জবাবে কিছু কথা!
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, "ধ্বংস প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের জন্য।” [সূরাহ জাছিয়াহ: ৭]
অন্যত্র বলেছেন, “বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়...।” [সূরাহ আম্বিয়া: ১৮ ]
শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর প্রতি। যিনি বলেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষ এমন কথাও বলে, যাতে সে কোন ক্ষতি আছে বলে মনে করেনা; অথচ এর জন্যই সে ৭০ বছরের পথ জাহান্নামে অধঃপতিত হয়।” [তিরমিযী, হা/২৩১৪]
.
🔸প্রারাম্ভিকা,
দ্বীনের কল্যানের জন্য শরী’আহ্ বিরোধীদের সমালোচনা করা শার’ঈ মানহাজের (মেথাডোলজি) অন্তর্ভুক্ত। এটা আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত মানহাজ, তাঁর রসূলের (স্বল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহয় বর্ণিত মানহাজ, যুগ যুগ ধরে চলে আসা ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ ও তাঁদের সত্যিকারের অনুসারীদের মানহাজ। হক্বপন্থী সালাফীদের কাছে এই মানহাজ অবিদিত কোন বিষয় নয়, বরং সুবিদিত ও অতি পরিচিত বিষয়। তারা এটাকে শরী’আহ্ হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু কিছু শৈথিল্যেপন্থী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি পর্বতের চেয়েও ভারী এবং লৌহের চেয়েও কঠিন। তাই তাদের অনেকেই বিষয়টি মেনে নিতে পারেনা। কথিপয় বিভ্রান্ত ব্যক্তি এই দ্বীনী মানহাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মস্তিষ্কপ্রসূত বাত্বিল ক্বাইদাহ্ উপস্থাপন করে। যুগে যুগে আমাদের ‘আ-লিমগণও সেই বাত্বিল শর্ত ও উসূলকে খণ্ডন করে তাদের দাবির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং এখনও করছেন।
ফালিল্লা-হিল হামদ।
.
পর-সমাচার এই যে, গত কিছুদিন পূর্বে ফেসবুকে আবুল কালাম আজাদ বাশার নামে একজন স্বনামধন্য জামাতি বক্তা তার লিখিত "ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির সাপোর্টারগণ সহীহ আক্বীদার লোক হয় কি করে" শিরোনামে একাধিক মিথ্যাচার সম্বলিত একটি স্ট্যাটাস প্রসব করেছেন! যেখানে এদেশীয় "আহলে হাদিস,সালাফী দ্বায়ীগণের উপর মারাত্মক কিছু অপবাদ চাপিয়ে দিয়েছেন, সেই সাথে একাধিক মিথ্যাচার ও খেয়ানত করেছেন! একজন দ্বায়িত্বশীল ব্যক্তি কি করে সচারাচর এতগুলো খেয়ানত, মিথ্যাচার করতে পারেন তা আমাদের বোধগম্য হল না! যাহোক, তিনি যে অভিযোগ গুলো তুলেছেন তা নিম্নরুপ :
১. আহলে হাদিসরা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির অংশীদার!
২. আহলে হাদিসরা সেক্যুলারদের সার্পোটার!
৩. এরা ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের পাইকারী ভাবে "খারেজী" বলে গালি দেয়!
৪. আহলে হাদিসরা বলেছিল "রাস্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম লাগবেনা" পরে রজু করেছে!
৬. আহলে হাদিস /সালাফীরা "র" কিংবা "মোসাদ" কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত আলিম!
► [ কমেন্ট বক্সে স্কিন শট দ্রস্টব্য ]
.
■ পর্যালোচনা :
🔸এক,
সর্বকালে , সর্ব যুগেই একদল লোক আহলে হাদিসদের
দ্বীনদ্বারিত্ব, আমানতদ্বারিতার ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ, সংশয় ঢুকিয়ে দিতে মিথ্যাচারে লিপ্ত ছিল এবং তা আজ অব্দি চলমান রয়েছে !
আহলেহাদীসদেরকে ‘"সেক্যুলারদের সমর্থক" তকমা দেওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। ইতঃপূর্বে এসব ভয়ানক মিথ্যা তকমা দেওয়া হয়েছে। আসলে যারা আহলে হাদিসদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারাই মূলত এসব মিথ্যা কথা বলে পাবলিক টেরিটোরিতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ছুপা আহলে হাদিস বিদ্বেষীরাও সুযোগ বুঝে এ জাতীয় উদ্ধত কথাবার্তা প্রকাশ করে। অথচ বর্হিরবিশ্বে আহলেহাদীসরাই সেক্যুলারদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি তৎপর। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি ও বক্তৃতার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা আহলেহাদীসদেরই বেশি।
ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী যুগ থেকেই আমাদের‘ আলিমগণ বক্তব্য দিয়ে আসছেন। যেহেতু আজাদ সাহেব দেশীয় আহলে হাদিসদের উপর এই জঘন্য অপবাদ দিয়েছেন তাই আমরা দেশীয় আহলে হাদিস দাঈদের কিছু লেকচার ও বইয়ের কথাই আলোচনা করি।
.
বাংলাদেশে আহলেহাদীস আন্দোলনের অগ্রবর্তী সেনানায়ক প্রথিতযশা সাহিত্যিক সাবেক পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশ-শাইখ আল-‘আল্লামাহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কুরায়শী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৯৬০ খ্রি.] প্রণীত একটি ঐতিহাসিক পুস্তিকার নাম—‘ আল ইসলাম বনাম কম্যুনিজম"। এই পুস্তিকায় ‘আল্লামাহ কুরাইশী
ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ, সেক্যুলারিজম এবং কমিউনিস্টদের মতাদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এছাড়াও আরেক কিংবদন্তি আলিমেদ্বীন আল্লামাহ আবূ মুহাম্মদ আলিমুদ্দিন [ রাহিমাহুল্লাহ'র ] রচিত "মুসলিম বিশ্বে ইয়াহুদী চক্রান্ত ও সমাজতন্ত্রের রূপরেখা" শীর্ষক বিখ্যাত বইটিতেও এসকল কুফুরি বিশ্বাসের 'কবর' রচনা করা হয়েছে! আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।
.
এবার বর্তমান সময়কার বাংলা ভাষায় কিছু মৌলিক রচনার কথা যদি বলি, তাহলে এদেশীয় স্বনামধন্য দাঈ ড. আসাদুল্লাহ আল গালিব [ হাফিয্বাহুল্লাহ'] কর্তৃক রচিত ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের ব্যাপারে চমৎকার দুটি মৌলিক গ্রন্থ "ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ" ও "তিনটি মতবাদ" বইগুলোর কথা বলতেই হয়! এছাড়াও ড. মুযাফফর বিন মুহসিন [হাফিয্বাহুল্লাহ'র ] ‘ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন’ বইটিতেও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে!
.
আহলেহাদীস দা‘ঈগণ অনেক আগে থেকেই বক্তব্য ও সেমিনারের মাধ্যমে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের মত কুফরি মতবাদের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করে আসছেন। এখন কথা হলো, কেউ নিজেকে আহলে হাদিস দাবী করল আর ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদের দিকে মানুষকে আহবান করল তাতে কি ঢালাওভাবে একথা বলা সমীচীন হবে যে, আহলে হাদিসরা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী বা সেক্যুলারিস্টদের সার্পোট করে ! আল-‘ইয়াযু বিল্লাহ।
.
সম্মানিত পাঠকদের জেনে রাখা আবশ্যক যে,
এদেশীয় আহলে হাদিসরাই যুগ যুগ ধরে বাত্বিল মতবাদ ও ভিবিন্ন ফিরক্বার পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ইত্যাদি কুফুরী মতবাদগুলোর রদ করার পাশাপাশি এসকল বিভ্রান্ত মতবাদ ও ফিরক্বার ব্যাপারে জাতিকে সর্তক ও সংশোধনের চেষ্টা করে করছেন, যা আজ অব্দি চলমান রয়েছে। এ মর্মে আহলে হাদীস আলিমদের লিখিত বই-পুস্তক, আহলে হাদিস আন্দোলন এবং জমঈয়তে আহলে হাদিস এর সাংগঠনিক কর্মপদ্ধতি, গঠনতন্ত্র ইত্যাদি সহ অসংখ্য বই-পুস্তক, লিখনী ও বক্তৃতায় তার প্রমাণ বহন করে! ছোট বড় মিলিয়ে উলামাদের বহু লেকচার রয়েছে! আমি নিন্মে মাত্র কয়েকজন দাঈর দীর্ঘ আলোচনা সম্বলিত কয়েকটি লেকচার এর লিংক দিচ্ছি যা শ্রবণ করলে সম্মানিত পাঠকগন সহজেই বুঝতে পারবেন যে, আমাদের আলিমগণ এসকল মতবাদের ব্যাপারে কতটা কঠোরতা অবলম্বন করেন!
.
⦁ তিনটি মতবাদঃ [ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ,সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ]
আমরা সকলের জ্ঞাতার্থে সুস্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দিতে চাই যে, এদেশীয় আহলে হাদিসদের বার্ষিক অনুষ্ঠানগুলোতে দু'একজন রাজনৈতিক দলের নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং দু'একজনকে উপদেষ্টা পরিষদের "সদস্য" হিসেবে রাখা হয়েছে! তবে তা কেবল দেশীয় বৈরি পরিবেশের কথা চিন্তা করে কৌশলগত কারণে ও দাওয়াতি কাজের স্বার্থে রাখা হয়েছে! তাছাড়া কোন রাজনৈতিক নেতাকে "সদস্য" কিংবা মেহমান হিসেবে রাখলেই যে গোটা একটি জামআত তাদের মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে গেল, এমন দাবি কোন সুস্থ মানুষ করতে পারেনা!
এছাড়াও প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিটি সদস্য বা সকল নেতাকর্মীই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী নয়! যেমন ধরুন, ঢাকার এম পি রহমতুল্লাহ'র কথাই বলি! এই লোকটা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থেকেও দ্বীনের বহুমুখী খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন! হয়ত দুনিয়াবী স্বার্থের কারণে এসব দলের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন কিন্তু সেক্যুলারিজমকে মনে প্রাণে ঘৃনা করেন! তেমনিভাবে আরেকজন হলেন ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ! এই মানুষটি তার জীবনের শেষ সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় ইসলাম ও বিশুদ্ধ আক্বীদাহ নিয়ে অনেক লেখালেখি করতেন।
ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নিয়ে তার একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে যেখানে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে কেউ যদি আমাকে মৌলবাদী ট্যাগ দেয়, তাতেও আমার আপত্তি নেই! তার সেই চমৎকার সাক্ষাৎকারটি শুনতে পারেন -
যদি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বক্তা সাহেব আহলে হাদিসদের উপর এই অপবাদ দেন যে, আহলে হাদিসরা ধর্ম-নিরপেক্ষ রাজনীতির অংশীদার তাহলে আমরা বলবো এদেশীয় সকল দল-সংগঠনই এই দোষে দুষ্ট! এমনকি স্বয়ং বক্তা সাহেবের একাধিক মাহফিলের প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাগণ! তারমানে কি বক্তা সাহেব নিজেও ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতির অংশীদার কিংবা আপোষকামী!?
আমরা বক্তা সাহেবকে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই হাদিসটি একটু স্বরণ করিয়ে দিতে চাই! যেখানে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা পাপী ব্যক্তিদের মাধ্যমেও তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করেন’’। [ সহীহুল বুখারী হাঃ ৩০৬২ ]
.
🔸তিন,
আহলে হাদিস'রা পাইকারীভাবে তথাকথিত কোন ইসলামীক দলের লিডারকে "খারেজী" ফাতওয়া দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই! তবে নিদিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গকে (যেমন সাইয়েদ কুতুব) যুগশ্রেষ্ঠ উলামাগন রদ করেছেন এবং তাদেরকে "আধুনিক খাওয়ারিজদের গুরু" বলে অভিহিত করেছেন! আমরা কেবল উলামাদের সেই ফাতওয়াগুলোই নকল করি!
সাইয়েদ কুতুবের আক্বীদহ-,মানহাজ এবং তার সম্পর্কে আলিমদের ফাতাওয়া সম্বলিত এই আর্টিকেলটি পড়ুন যাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে !
তাছাড়া পোস্টদাতার দাবি অনুযায়ী কোন চরমপন্থী বক্তা বা লিখককে (যার মাঝে খাওয়ারিজদের বৈশিস্ট্য বিদ্যমান রয়েছে) "খারেজী" বলা নাকি গালির শামিল
এবং এতে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃস্টি হয়!
তাহলে আমরা বলবো, মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃস্টিকারী এবং এক নাম্বার গালিদাতা হিসেবে প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আসামী করা উচিত! [ নাঊযুবিল্লাহ ]
কেননা তিনি সরাসরি কথিপয় ব্যক্তিবর্গকে "খারেজী" বলে ইংগিত করেছেন এবং তাদের বৈশিস্ট্যগুলো বিশদভাবে আলোচনা করেছেন যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
.🔸চার,
লেখক তার উক্ত লিখনিতে দাবি করেছেন "আহলে হাদিসরা নাকি বলেছিল "রাস্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম লাগবেনা!পরে তাদের বক্তব্য শুনে রজু করেছে"!
[ লা-নাতুল্লাহি আলাল কাযিবীন। আমীন ]
জবাব :
যে সমস্ত না-লায়েক দাবী করে আহলুল হাদিসেরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম চায় না কিংবা ইসলাম কায়েমের বিপক্ষে আমি ওইসকল কাজ্জাবদের জিজ্ঞেস করছি - কবে, কখন, কোথায় কোন আহলে হাদিস আলিম,দাঈ বলেছিল রাস্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের দরকার নেই!?
.
রাস্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েমের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে পূর্ববর্তী যুগ থেকেই ‘আলিমগণ বক্তব্য দিয়ে আসছেন। আমরা পূর্ব যুগের ও বর্তমানের কিছু বিখ্যাত লিখনের কথা আলোচনা করি।
হিজরী ৮ম শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুজাদ্দিদ শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ্ আল হার্রানী (রহিমাহুল্লাহ্) [মৃতঃ ৭২৮ হিঃ], যিনি হলেন সালাফীদের চোখের মণি। তাঁর একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম
"শরীয়তী রাষ্ট্রব্যবস্থা"! এই বিখ্যাত বইটি বেশ কয়েক৷ বছর আগে বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
.
আরবের বিখ্যাত আলিমেদ্বীন, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ ড.রাবী বিন হাদী আল মাদখালী ( হাফিয্বাহুল্লাহ-র
আরেকটা বিখ্যাত বইয়ের নাম " নবীদের দাওয়াতি নীতি"। এই বিখ্যাত বইটিও কয়েক বছর আগে বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
.
এছাড়াও এ-যুগের আরেক মশহুর আলিমেদ্বীন শাইখ
মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত্ব-তুওয়াইজিরী (রাহিমাহুল্লাহ)-র রচিত "খিলাফাত ও বাই'য়াত" বইটিও একটি চমৎকার সংকলন যা বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে! আগ্রহীরা বইগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
.
এবার বাংলা ভাষায় কিছু মৌলিক রচনার কথা যদি বলি, তাহলে ড. মুযাফফর বিন মুহসিন সাহেবের ‘ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন’ বইটির কথা বলতে হয়। যে বইটির অন্তস্থ প্রবন্ধ মাসিক আত-তাহরীকে পর্বাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই প্রবন্ধ বই আকারে আত্মপ্রকাশ করে। অনুরূপভাবে দ্বীন কায়েমের দিক-নির্দেশনা ও পদ্ধতি সম্বলিত দুইটি চমৎকার মৌলিক গ্রন্থ হলো "বাংলাদেশ আহলে হাদিস আন্দোলন" নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড.
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল গালীব হাফিয্বাহুল্লাহ
বিরচিত "সমাজ বিপ্লবের ধারা" এবং "ইক্বামাতে দ্বীনঃ পথ ও পদ্ধতি"! এই বই দুইটি বেশ কয়েকবছর আগে হাদিস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়াও রাস্ট্রে দ্বীন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত আরও দুইটি মৌলিক গ্রন্থ হলো কামাল আহামেদ হাফিয্বাহুল্লাহ'র রচিত ,"আন আক্বীমুদ দ্বীন" সংশয় নিরশন" এবং
আব্দুস ছবুর চৌধুরী হাফিয্বাহুল্লাহ'র রচিত
"দ্বীন কায়েমের প্রথম ধাপ"! এই বইটিগুলো অনেক আগে থেকেই ইন্টারনেটে সহজলভ্য এবং বছর কয়েক আগে বেরও হয়েছে।
এতদ্ব্যতীত, রাস্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বীন কায়েমের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে গতবছর উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ'র ঘন্টাব্যাপী লেকচার প্রকাশিত হয়েছে!
আমরা পাঠকদের অনুরোধ করবো ইক্বামাতে দ্বীন সম্পর্কে আহলে হাদিস উলামাদের মানহাজ (কর্ম পদ্ধতি) জানার লক্ষ্যে উস্তায মতিউর রাহমান মাদানী হাফিয্বাহুল্লাহ-র ঘন্টাব্যাপী লেকচার ও ঈমাম নাছিরূদ্দীন উদ্দিন আল আলবানী রাহিমাহুল্লাহ-র ফাতাওয়া সম্বলিত নিম্নোউল্লেখিত আর্টিকেল দুইটি পড়ার জন্য!
একজন দাঈ কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া আর মিথ্যুক হলে " অলিপুরী স্টাইলে" এমন উদ্ভট কথা বলতে পারেন, তার বিবেচনা ভার পাঠকদের হাতে ন্যাস্ত করলাম! একটা ব্যানারে সরকারের একজন এম.পি-কে অতিথি হিসেবে দাওয়াত করার কারণে জনাব বাশার সাহেব পুরো একটা জামাতকে "তাগুতের সহচর" বলে তোহমত লাগিয়ে দিলেন অথচ উনার একাধিক মাহফিলের প্রধান অতিথি ছিল যুবলীগের সভাপতি, যুবলীগের চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অনেক গন্যমান্য নেতাগন! যদি সরকারী দলের নেতা অতিথি থাকার কারণে আহলে হাদিসরা ত্বাগুতের এজেন্ট, সেক্যুলারদের সহচর হয়ে যায় তাহলে একই কাজ করে বাশার সাহেবরা কেন ত্বাগুত, সেক্যুলারদের সহচর নন?
পোস্টদাতার ভাষায় আহলে হাদিস'রা ত্বাগুত সহচর, যদিও সেই ৯৬ থেকে নিজেরাই ত্বাগুতের একনিষ্ঠ মিত্র! পোস্টদাতার দৃষ্টিতে সরকার পতনের জন্য বিদ্রোহ না করা,জ্বালাও-পোড়াও না করা, তাদের দলে যোগ না দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দলীয় নেতার ভ্রান্ত দর্শনের রদ করার অর্থই নাকি ত্বাগুতের গোলামী করা!
.
আচ্ছা কোন সরকার তাগুত এটা আগে পরিষ্কার হওয়া জরুরী! আওয়ামী সরকার নাকি বিএনপি সরকার? কেননা, আমার জানা মতে উভয়ই সেকুল্যার রাজনৈতিক দল, তারা কেউই ইসলামীক দল নয়!
যদি উভয় দলই ত্বাগুত অথবা সেক্যুলার বলয়ে গঠিত হয়ে থাকে, তাহলে আপনার দল যখন বি.এন.পির সাথে যৌথভাবে সরকার গঠন করেছিলো, এম.পি, মন্ত্রী হয়েছিলো, তখন কারা তাগুত ছিল? বর্তমান সেকুল্যার সরকার নাকি আপনাদের মিত্র ঈমাম খালেদার বি.এন পি সরকার? আবার,যখন ৯৬তে এই বর্তমান আওয়ামীলীগের সাথেই জোট করে ভোটের রাজনীতি করেছিলেন তখন ইমাম হাসিনা কোন মসজিদের খতিব ছিলেন? তখন কি উনি ত্বাগুত ছিলেন না? মিত্র হলে "ঈমাম" আর শত্রু হলে "ত্বাগুত" এই দৈতনীতি কেন?
পরিশেষে বলি - সতর্ক হোন। আহলে হাদিসদের উপর এমনসব মিথ্যা অপবাদ সুন্নাহপন্থী কোন দাঈ দিতে পারেনা কেবলমাত্র বিদ'আতী ব্যক্তিবর্গ ছাড়া! তাইতো বহুদিন পূর্বে হাদীছশাস্ত্রের হাফিয্ব ইমাম আবূ হাতিম (রহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ২৭৭ হি.] বলেছেন,
«علامة أهل البدع الوقيعة في أهل الأثر».
“বিদ‘আতীদের নিদর্শন হল আহলুল আছার তথা সালাফীদের আক্রমণ করা (বা তাদের নামে কুৎসা রটানো)।”
আমরা ওই বক্তা সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলবো - ঢালাওভাবে আহলে হাদিসরা ধর্ম-নিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী কিংবা সেক্যুলারদের সাথে আপোষকামী ও ধর্ম নিরপেক্ষ রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে কিংবা ধর্ম-নিরপেক্ষ রাজনীতির অংশীদার অথবা মোসাদ বা "র" এর এজেন্ট ইত্যাদি অপবাদ লাগিয়ে দিয়ে অন্তরিস্থ বিদ্বেষ জাহির করার মাধ্যমে নিজেকে বিদ‘আতী বলে প্রদর্শন করবেন না।
.
ওহে হক্বকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহারকারী কাজ্জাব! আর কতদিন চলবে তোমাদের এহেন জঘন্য দুষ্কর্ম ? তোমাদের অন্তরে কি এতটুকু আল্লাহর খওফ নেই ? অন্তরে যদি নূন্যতম আল্লাহর ভয় থাকে, তবে এসব মিথ্যাচার ছেড়ে দিয়ে ভালো হও। নচেৎ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে আল্লাহপ্রদত্ত ভয়াবহ শাস্তি। ঐ শুনুন, মহান আল্লাহর হুশিয়ারি— “যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু’মিনদের (অর্থাৎ, সালাফদের) পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরিয়ে দিব, যে পথে সে ফিরে যায় এবং তাকে দগ্ধ করব জাহান্নামে। আর তা কতই না মন্দ আবাসস্থল!” [সূরাহ নিসা: ১১৫]
হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সালাফী মানহাজ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দিন এবং অসাধু বক্তাদের বক্তব্য ও লিখনীর ফিতনাহ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন, ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
.আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর।
Post a Comment
0
Comments
Total Pageviews
Social Plugin
salat prayer
যে সমস্থ বিষয়াদি পাবেন আলহামদুলিল্লাহ্
আসসালামু আলাইকুম সন্মনিত ভিজিটর বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন 👇🎤এখানে পাবেন হাদিসের ব্যাক্ষা,বিষয় ভিত্তিক কুরানের আয়াত, ইসলামিক পিকচার গ্যালারী,
👉বিষয় ভিত্তিক আর্টিকেল, শায়খ ভিত্তিক বই, বিষয় ভিত্তিক বই, অডিও শায়খ ভিত্তিক ও বিষয় ভিত্তিক📲
0 Comments