▌সংবাদ
প্রচারে সতর্কতা ও সচেতনতাই কাম্য!.
🔸এক,
সাংবাদিকরা হল সমাজের দর্পন! তাঁরা আয়নার ন্যায় কাজ করবেন
সমাজে এটাই কাম্য! তারা সঠিক ও সত্য সংবাদের অনুবাদক মাত্র! অর্থাৎ যা সঠিক পাবেন তাই
সমাজকে সময়মত জানিয়ে দেয়ার মহান দ্বায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
কিন্তু এই পেশায় নিয়োজিত
অধিকাংশ লোকই দাজ্জাল স্বভাবের! দেশীয় টিভি চ্যানেল কিংবা নিউজ পেপারগুলো দেখলেই বুঝা
যায় দ্বায়ীত্বশীলগন কতটা ভয়ংকর জন্ডিস রোগে আক্রান্ত! এক কথায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুসয্যায়
উপনীত হয়ে দিব্যি লাফাচ্ছে!
বর্তমান সময়ে আমার নিজ অভিজ্ঞতা থেকে দেশীয় নিউজ পেপার গুলোকে যতটুকু অবজার্ভ করেছি
তাতে একটা বিষয় অন্তত ক্লিয়ার হয়েছি যে, আমাদের দেশের সাংবাদিকের শতকরা ৫০ শতাংশ কোন
না কোনভাবে সেক্যুলারপন্থী এবং এরা বাহিরের ইন্দনে তথ্য সন্ত্রাসীর ভুমিকা পালন করছে।
বাকিরা ভারতীয়দের দালালী এবং সরকারী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত! উপরিউক্ত এই দুই ক্যাটাগরির
সাংবাদিকরা ডাইরেক্টলি অথবা ইনডাইরেক্টলি একটি প্রভাবশালী গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় লালিত-পালিত
হচ্ছে।
তবে এর অর্থ এটা নয় যে, সবগুলোই অসৎ! বরং সৎ ও সত্যবাদীদের সংখ্যা এতটাই অপ্রতুল যে,
আমার বিবেচনায় তা হয়ত পারসেন্টিজে উঠে আসবে না!
.হাইস্যকর কথা হল আজকাল
সাংবাদিক হতে হলে অভ্রতে টাইপ করতে জানলে হয়, কোন সার্টিফিকেট লাগে না! যেহেতু ইতর
প্রাণীর প্রজনন ক্ষমতা বেশী, তাই আমাদের দেশের নিউজ পেপার আর টিভি চ্যানেলগুলোর দিকে
তাকালে বুঝতে পারবেন এরা কতটা হাইব্রিড প্রজাতির ইতর প্রানী!
আবার জনতারও প্রচণ্ড আবেগী!
নিরামিষ কিংবা আমিষ কোনকিছুরই তোয়াক্কা করে না, যা পায় তা ই খায়! এ যেন জনতার রুচির
ভিত্তিতে সাংবাদিকতা!
.🔸দুই,
অনলাইন জগৎটা কিছু সত্য
নিউজ জানার মাধ্যম হলেও বেশীর ভাগ মানুষকেই এরা ইন্ডাইরেক্টলি মিথ্যাবাদী বানিয়ে দেয়!
অতিমাত্রায় আনকোরা অনলাইন পোর্টালের উপর ডিফেন্ড করলে সেটা আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ
করে ফেলবে।
ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে
উঠা পত্রিকাগুলোর দিকে তাকান, সাংবাদিক বিহীন, ঠিকানাবিহীন, অন্য পত্রিকা ও পেজ হতে
কপিকৃত হাজার পার হওয়া নামসর্বস্ব অনলাইন পত্রিকায় মনে হচ্ছে শীগ্রই বাংলাদেশ বিশ্বরেকর্ড
গড়বে !
তার উপরে নিজেদের পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে হাভিজাবী খবরের পাশাপাশি এখন যৌনসূড়সূড়িমুলক ভিডিও, ছবি, গল্প দিতেও দ্বিধাবোধ করছেনা! এমনকি দেশের প্রথম সারির নামকরা কিছু পত্রিকাও এই অসৎ কাজের প্রতিযোগিতায় নেমেছে! এরা নিজেদের পত্রিকা, চ্যানেলের প্রতি মানুষকে আকৃস্ট করানোর জন্য সবসময় আজিব কিসিমের সব তথ্য- উপাত্ত দিয়ে মগজ ধোলাই করে!
.যেহেতু দেশের প্রথমশ্রেণীর
জাতীয় পত্রিকাগুলো পশ্চিমা, সেক্যুলার, শিয়া কিংবা ভারতীয় দাদাবাবুদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত!
যারফলে আন্তর্জাতিক পলিসির অংশ হিসেবে আরব বিদ্বেষী খবরগুলো সবসময় ফলাও করে ছাপে! এক্ষেত্রে
তারা কিছু মশলা নেয় পার্সটুডে, মিডেলইস্ট মনিটর, আল জাজিরার মত ইহুদি নিয়ন্ত্রিত হলুদ
মিডিয়াগুলো থেকে !
.সুপ্রিয় সতীর্থবৃন্দ, এমতাবস্থায়
আপনার, আমার করনীয় কি? আমরা কি এসব ফ্বাসেক মিডিয়ার নিউজগুলো চোখ বন্ধ করে গ্রহন করব?
একজন ঈমানদার ব্যক্তি কি অথেনটিক সোর্স ছাড়া কোন ফ্বাসেকের কথার উপর নির্ভর করতে পারে?
আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু
ওয়া তাআ'লা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
- হে ঈমান গ্রহণকারীগণ,
যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ৷ এমন যেন
না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের
জন্য লজ্জিত হবে৷
--- [সূরা হুজুরাত - ৬]
.🔸তিন,
অাজকাল ফেসবুকে একটা আইডি,
পেজ বা নিজের নামে ব্লগ বানানো অনেকটা মামুলি ব্যাপার! অার নিজের নাম ,যশ-খ্যাতি, পরিচিতি
লাভের অাশায় সত্য, মিথ্যা, গুজব কিংবা শুনা কথা যাচাই বাচাই না করেই কিছু একটা খবর
বা ধর্মীয় লেখা পেলে তা প্রচার করে বেড়ায় কিছু জ্ঞানহীন যাহিল (মূর্খ) মানুষজন! অথচ
খবরটি মিথ্যাও হতে পারে! কিংবা তার দেওয়া ইনফরমেশনে চরম গোমরাহ করতে পারে কিছু অবুঝ
মানুষকে! ঈমানহারা হতে পারেন নিজেও! কিন্তু তারপরেও ঈমানের দাবীদার এইলোকগুলি নূন্যতম
যাচাই-বাছায়ের প্রয়োজনই বোধ করেনা! আল ইয়াযু বিল্লাহ।
যাইহোক মুল কথা হচ্ছে -
না জেনে, শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে কোনো ব্যাপারেই কথা বলা ঠিক না; এবং যে প্রচারণায় অংশ
নিলে মক্কা-মদীনার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
আবশ্যক।
অন্তত মিথ্যাবাদী কাকে বলে
এই সংজ্ঞাটা জানা থাকলে কারো পক্ষে এমন গর্হিত কাজে অংশগ্রহণ করা সম্বব নয়! কেননা প্রিয়নবী
মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ﻛَﻔَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤَﺮْﺀِ ﻛَﺬِﺑًﺎ ﺃَﻥْ ﻳُﺤَﺪِّﺙَ ﺑِﻜُﻞِّ ﻣَﺎ ﺳَﻤِﻊَ
কোন ব্যক্তি মিথ্যাবাদী
হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (বিনা যাচাই-এ) তাই বলে বেড়ায়।
--- [মুসলিম ভুমিকা হা/৫]
🔸চার,
ইদানীং কিছু ভাইকে দেখা
যাচ্ছে, অনুমান নির্ভর লিখালিখি করে নিজের পাণ্ডিত্য যাহির করেন! নিজ অন্তরের বিদ্বেষীভাব
ছড়িয়ে দেন অনেকের মাঝে!
আমরা সেসকল ভাইদের স্বরণ
করিয়ে দিতে চাই যে, অথেনটিক সোর্স ছাড়া অনুমান নির্ভর কথা, কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কারন এই কাজটিও
মিথ্যার নামান্তর!
প্রিয়নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟﻈَّﻦَّ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻈَّﻦَّ ﺃَﻛْﺬَﺏُ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚ
-তোমরা ধারণা-অনুমান থেকে
বেঁচে থাক কারণ ধারণা-অনুমান সর্বাপেক্ষা মিথ্যা কথা!
--- [সহীহুল বুখারী হা/৬০৬৬,
৬৭২৪, সহিহ মুসলিম হা/৬৪৩০]
.অতএব সাবধান৷ হউন। কারো
ব্লগে, পেজে, আইডিতে কোনো লেখা পাওয়া মাত্রই তা হুট করে কপি কিংবা শেয়ার না করে আগে
জানুন তা কাদের ব্লগ, পেজ, আইডি এবং লিখাটা কতটুকু অথেণ্টিক কিংবা অধো এর কোন অথেনটিক
সোর্স রয়েছে কিনা?
কনফিউজড হলে প্রচার না করাই
উত্তম! নিজেও বাঁচবেন, অন্যকেও বাঁচাতে পারবেন কিংবা আপনার দ্বারা আরেকজন লোক বিভ্রান্ত
হল না! যেকোন ব্যাপারে সন্দিহান থাকলে ধার্মিক ব্যক্তি, বিশ্বস্ত সাইট, সিনিয়র দ্বায়ী,
অালিম, জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করুন! পাশাপাশি নিজেও একটু স্টাডি করুন।
.প্রখ্যাত তাবে'য়ী বাকার
বিন আবদুল্লাহ আল মুযানী [ রাহিমাহুল্লাহ ] বলতেন -
"এমন মন্তব্য থেকে
বেঁচে থাকুন যা সঠিক হলেও সওয়াব পাবেন না, অথচ ভুল হলেই গুনাহ হবে। যেমন কারো প্রতি
'খারাপ ধারণা'।
--- [তাবাকাতে ইবনে সা'দ
৭/১৫৭]
.পরিশেষে, শেষ জামানার ফিতনা
সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস দিয়েই
ইতি টানছি।
আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেছেন,
"অচিরেই ধোঁকাপূর্ণ
কিছু বছর উপস্থিত হবে, যখন মিথ্যাবাদীকে সত্য মনে করা হবে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যা মনে
করা হবে। খিয়ানতকারীকে বিশ্বাস করা হবে এবং আমানতদার বিশ্বস্থকে খেয়ানতকারী মনে করা
হবে। আর সে সময় রুওয়াইবিদারা কথা বলা শুরু করবে।
প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর
রাসূল! রুওয়াইবিদা কি?
তিনি বললেন, রুওয়াইবিদা
হল সেই নির্বোধ শ্রেণীর লোকেরা, যারা জনগনের বড় বড় বিষয় নিয়ে কথা বলবে।"
--- ] হাদীছটি বর্ণনা করেছেন
ইমাম ইবনে মাজাহ, হা/৪০৩৬। আল্লামা আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, সিলসিলা সহীহা হা/১৮৮৭
]
.ফিতনাহ চরম আকার ধারণ করেছে!
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা-যেন আমাদেরকে এই দুনিয়াহ হক্কের উপরে থাকা অবস্থায় নিয়ে
যান, অতপর নাবীদের সাথে, ন্যায়পরায়ণদের সাথে এবং শহীদদের সাথে আমাদেরকে একত্রিত করেন,
কেননা তারাই হচ্ছেন সব থেকে শ্রেষ্ঠ সঙ্গী। [আ-মী-ন]
.আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী,
আখতার বিন আমীর।
0 Comments