▌মুসলিম শাসক বিরোধী প্রচারণা অত:পর বিদ্রোহ :


নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিট করুন https://rasikulindia.blogspot.com/ ইসলামিক বই
▌মুসলিম শাসক বিরোধী প্রচারণা অত:পর বিদ্রোহ :
জিহবা ও অস্র দ্বারা! 

  • মানুষের কাছে সরকারের দোষ ঘোষণা করার মাধ্যমে তাদেরকে শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, তাদের সমালোচনা করা, এবং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার শরয়ী বিধানঃ

  • 🔸আশ শাইখুল আল্লামাহ, উস্তাযুল আলেম,ইমাম আব্দুল আযিয ইবনু বায [রাহিমাহুল্লাহ]-কে, লন্ডনে ছাপা হওয়া মুহাম্মাদ আল-মাস’আরী এর-কিছু লিফলেটের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। প্রশ্নকারী বলেন যে, তারা [প্রশ্নকারীরা] কয়েকজন আলিমের বক্তব্য শুনেছেন কিন্তু তারা এর বিধান বিশেষভাবে ইবনু বায [রাহিমাহুল্লাহ]-র কাছ থেকে জানতে চান যাতে করে তারা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন।
  • .
  •  উত্তর: 

  • এই সমস্ত লিফলেট এবং বইপত্র, যেগুলো আল মাস’আরী এবং তার সতীর্থরা ছাপায় এই সরকার এবং এই ভূমির (সৌদি আরব) বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি এবং ভুল ধারণা তৈরি করার জন্য, আমরা ইতিমধ্যেই একাধিকবার এই কথা বলেছি যে এগুলো বিতরণ করা উচিৎ নয় এবং এগুলো খুজে পাওয়া গেলে ধ্বংস করে ফেলা উচিৎ। এগুলোর কারণে ফিতনা, বিভক্তি, এবং ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। সুতরাং এগুলো অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলা উচিৎ এবং এসব মুসলিমদের মধ্যে ছড়ানো উচিৎ নয়। এর পরিবর্তে মুসলিমদের উচিৎ রাজনৈতিক বিষয়ে তাদের উপর দায়িত্বপ্রাপ্তদের সুপথপ্রাপ্তি, সঠিক পথে থাকা এবং তাদের সততার জন্য দু’আ করা। এবং তাদের [ বিরুদ্ধবাদীদের] আরও দু;আ করা উচিৎ যাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাদেরকে [ শাসকদেরকে] প্রত্যেক ভালো কাজে সাহায্য করেন এবং যাতে তিনি তাদের [শাসকদের ] ভুলগুলোকে দূরীভূত করেন আর তিনি যাতে তাদের [ সংস্কারপন্থীদের ] জন্য ন্যায়বান উপদেষ্টা নিযুক্ত করে দেন। এই দু’আ গুলি ছালাতের মধ্যে এবং অন্যান্য সময়ে করা উচিৎ। লোকদের উচিৎ সিজদায় গিয়ে, সলাতের পরে, এবং রাত্রের শেষভাগে, মুসলিমদের এবং তাদের শাসকদের সঠিক পথ প্রাপ্ত হওয়া, তাদের হেদায়েত হওয়া, তাদের নিষ্ঠাবান হয়ে যাওয়া, এবং তাদের জন্য আন্তরিক উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ার জন্যে তাদের রবের কাছে দু’আ করা।
  • .

  • প্রকাশ্যে (একজন শাসকের) দোষত্রুটি ঘোষণা করা ও তাকে গালমন্দ করার ব্যাপারে যদি বলতে হয়, এটি হচ্ছে মন্দ পরিনতি ও ফিতনা সৃষ্টির পথ। উসমান [রাদিআল্লাহু আনহু]- এর শাসনামলে খারেজীরা যখন প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করতে শুরু করেছিল, তখন তাদের অজ্ঞতা এবং অন্যায় আচরণের প্রবণতা শেষ পর্যন্ত তাদেরকে উসমান [রাদিআল্লাহু আনহু]-কে, এবং পরবর্তীতে আলী [রাদিআল্লাহু আনহু]-কে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করে – আর এর সবকিছু হয়েছিল শুধুমাত্র প্রথমদিকে তাদের [শাসকদের] দোষ বর্ণনা করে বেড়ানো এবং ঘৃণ্য চর্চার কারণে। তারা সত্য,মিথ্যা [ বা এর মাঝখানের কিছু ] যাই বলে থাকুক, তাতে করে এটা বৈধ হয়ে যায় না যে রাজনৈতিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হবে। বরঞ্চ এখানে দরকার তাদের হেদায়াত এবং সংশোধনের জন্য দু’আ করা।

  • এই ধরণের কাজ [ যেগুলো আল-মাস’আরী এবং তার মতো লোকেরা করে থাকে ] এগুলো হচ্ছে ওই একই ধরণের কাজ যেগুলো উসমান [রাদিআল্লাহু আনহু]
  • এবং আলী [রাদিআল্লাহু আনহু]-এর সময়ে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ এবং তার মতো লোকেরা এতো বেশী পরিমাণে করেছিল যে, তারা শেষ পর্যন্ত মুসলিম জাতির মধ্যে ভাঙন ধরিয়ে দিয়েছিল, ফিতনা ডেকে এনেছিল, এবং উসমান আর আলী এবং তাদের সাথে আরও কয়েকজন সাহাবীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। 

  • গৃহীতঃ
  • 📚[হুকুম আল-হামালাত আল-ই’ল্মিয়্যাহ ‘আলা বিলাদ আল-হারামাইন” শীর্ষক ক্যাসেট থেকে] 
  • .

  • আশ শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ-কে আরো জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে :

  • "কিছুলোক বিশ্বাস করে যে মুসলিমদের সমাজগুলোতে অনৈতিকতা এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে একমাত্র বলপ্রয়োগ করা, লোকদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা এবং শাসকদের দোষত্রুটি প্রকাশ্যে ঘোষণা করে জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেয়া ব্যতীত এসব অনৈতিকতার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়! দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই লোকগুলি অন্যদেরও তাদের এই মতবাদের দিকে ডাকে এবং এমনটা করতে উৎসাহ দেয়। সুতরাং শ্রদ্ধেয় শায়খ এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি" ? 
  • .

  •  উত্তর: 
  • এমন কার্যপদ্ধতির কোন সমর্থন ইসলামের বিধিবিধানে নেই কেননা এটা ওইসব দলীলের বিরুদ্ধে যায় যেগুলোতে ভালো আদেশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্তদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এবং [এই ধরণের কথা] এর ফলে ভীষণ ফিতনা, অরাজকতা এবং শান্তি আর নিরাপত্তার লঙ্ঘন হতে পারে।

  • যখন মন্দ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন আবশ্যক হলো সেগুলোকে এমন উপায় দিয়ে প্রতিহত করা যেগুলো ইসলামে বৈধ এবং কঠোরতা বা অসহনশীলতা না দেখিয়ে এগুলোর শরয়ী বিধান ব্যাখ্যা করা। কারও জন্য এসব পরিস্থিতি বলপ্রয়োগ করে পরিবর্তন করা বৈধ নয়, শুধুমাত্র তারা ব্যতীত যাদেরকে সরকার এই কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছে (সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ)। এটা এজন্যই যাতে করে শান্তি এবং নিরাপত্তা বজায় থাকে এবং যাতে করে অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়। 
  • রাসূলুল্লাহ ﷺ-থেকে আগত সহীহ হাদিস এই কথারই ইঙ্গিত দেয়, যেমন তিনি [রাসূলুল্লাহ ﷺ-] বলেছেন:

  • نْ رَأَى مِنْ أَمِيْرِهِ شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهُ مَا يَأتِي مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ وَلا
  • يَنْزِعَنّ يَدًا مِنْ طَاعَةِ.
  • “কেউ যদি তার শাসককে দেখে আল্লাহর অবাধ্য হতে, তাহলে সে যেন আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধে করা ওই পাপকাজকে অপছন্দ করে, কিন্তু সে যেন তাকে আনুগত্য প্রদান করা থেকে এক বিঘত পরিমাণও সরে না আসে [বা সম্পূর্ণভাবে আনুগত্য গুটিয়ে না নেয়]”।

  • এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ-আরো বলেছেন -

  • عَلَى المَرْءِ السّمْعُ وَالطّاعَةُ فِيْمَا أَحَبّ وَكَرِهَ فِي المُنَشّطِ وَالمُكْرَهِ مَا لَمْ يُؤْمَرْ
  • بِمَعْصِيَةِ اللهِ
  • “এটা হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির উপর দায়িত্ব যে তাকে যা বলা হয় তার সবকিছু সে শুনবে এবং পালন করবে, [সেই আদেশ] তার পছন্দ হোক আর না হোক, যতক্ষণ না তাকে এমন কিছু করতে বলা না হয় যা করার দ্বারা আল্লাহর অবাধ্যতা করা হবে”।

  • ছাহাবীগণ (রাদিআল্লাহু আনহুম) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তারা শুনবেন এবং পালন করবেন, ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, এবং তারা কোনদিনও তাদের আনুগত্যের ওয়াদা ফিরিয়ে নিবেন না, যতদিন না তারা তাদের [শাসকদের] কাছ থেকে এমন পরিষ্কার এবং সুস্পষ্ট কুফর দেখতে পান যার ব্যাপারে তাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে আগত প্রমাণ আছে। এবং এই একই অর্থ বহন করে এমন আরও অনেক হাদিস রয়েছে।

  • এসব ক্ষেত্রে যা করতে আদেশ করা হয়েছে তা হচ্ছে - আন্তরিকভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সদুপদেশ দেয়া, এবং যতদিন না ভালোর আধিক্য তৈরি হয় এবং মন্দের পরিমাণ কমে আসে ততদিন তাদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করে যাওয়া এবং তারা যাতে সুপথে থাকে সেজন্য দু’আ করা। 

  • আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করছি যেন তিনি সকল মুসলিম শাসককে সংশোধন করে দেন, তিনি যাতে তাদের [ জনগণের ] জন্য ন্যায়পরায়ণ উপদেষ্টা নিযুক্ত করেন, তাদেরকে এবং তাদের যারা সাহায্য করে তাদের সকলকে ভালো কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি করে দেন, এবং আল্লাহর বিধান দ্বারা আল্লাহর গোলামদেরকে শাসন করার ক্ষেত্রে তিনি যেন তাদেরকে [ শাসকদেরকে ] সফলতা দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি দানশীল ও উদার। [ আ- মী- ন ]
  • .

  • 🔸যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ছালিহ আল উছাইমীন [রাহিমাহুল্লাহ ] বলেছেন:

  • "এবং এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, সে (যুল খুয়াইসারাহ, যে কিনা খারেজীদের পূর্বপুরুষ) সরাসরি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সমালোচনা করেছিল। সে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলেছিল -“ন্যায়বিচার করো!” এবং “(সম্পদের) এই বণ্টনের উদ্দেশ্য আল্লাহর মুখ (সন্তুষ্টি) ছিল না”। সে এই কথা সরাসরি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলেছিল। রাসূলুল্লাহ ﷺ- তখন উত্তর দিয়েছিলেন:
  • يَخْرُجُ مِنْ ضِئِّْئِ هَذَا الرّجُلِ مَنْ يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاتَهُ عِنْدَ صَلاتِهِمْ.
  • “এই লোকের উত্তরসূরিদের থেকে এমন কিছু লোক বের হবে যাদের ছালাতের তুলনায় তোমরা [সাহাবী ও পরবর্তীদের] নিজেদের ছালাতকে তুচ্ছ মনে করবে”। 

  • এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রমাণগুলোর একটি যে 'শাসকের বিরুদ্ধাচারণ এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ' তলোয়ার অথবা জিহ্বা, উভয় মাধ্যমে হতে পারে। কেননা এই ব্যক্তি (যুল খুয়াইসারা) রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বিরুদ্ধে তার তলোয়ার বের করেনি, কিন্তু তারপরও সে নাবিজীর বিরোধিতা এবং তার সমালোচনা করেছে। এবং আপনি আহলে সুন্নাহর লোকদের লেখা কোন কোন বইতে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্পর্কে যা দেখেন, যে তারা প্রায়ক্ষেত্রেই বিদ্রোহ বলতে তলোয়ারের (সহিংস) বিদ্রোহকে বুঝান; এর দ্বারা তারা বুঝাতে চান চূড়ান্ত এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট পর্যায়ের বিদ্রোহকে। 

  • একইভাবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ- উল্লেখ করেছেন যে, 
  • যিনা (ব্যভিচার) সংঘটিত হতে পারে চোখের দ্বারা, কানের দ্বারা, হাতের দ্বারা, বা এমনকি পায়ের দ্বারাও। কিন্তু চূড়ান্ত পর্যায়ের যিনা হচ্ছে যিনার মূল কর্মটি যা লজ্জাস্থানের মাধ্যমে করা হয় । এই কারণেই, তিনি বলেছেন যে, লজ্জাস্থান এই চূড়ান্ত কাজ (যিনা) করা থেকে বিরত থাকে অথবা নাও থাকতে পারে! 
  • সুতরাং যখন কোন কোন আলিম এই জাতীয় শব্দ ব্যবহার করেন (বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান), তখন তারা এটাই বোঝাতে চান যে এটি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত । 

  • আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানি, বিশেষ করে স্বাভাবিক অবস্থার বিবেচনায়, তলোয়ারের বিদ্রোহ এবং বিরোধিতা ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হয় না, যতক্ষণ না এর আগে জিহ্বা এবং কথার ব্যবহার করা হয়। কিছু না কিছু অবশ্যই তাদেরকে [বিদ্রোহীদেরকে] উস্কানি দেয়, এবং তা অবশ্যই কোন একজনের কথা দ্বারা! 

  • অতএব, শাসকদের বিরোধিতা করা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কাজটি কথার দ্বারাও হতে পারে, যেমনটা সুন্নাহর পাশাপাশি আমাদের প্রত্যক্ষ করা বাস্তবতা থেকেও প্রমাণিত হয়। 

  • সুন্নাহর ব্যাপারে যদি বলতে হয়, তাহলে আমরা এগুলোর ব্যাপারে জানি (যা কিছু হয়ে গেছে); আর যা কিছু আমরা আমাদের সামনে হতে দেখি, তার ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত যে, সশস্ত্র বিদ্রোহ কেবলমাত্র জিহ্বার দ্বারা বিদ্রোহের মাধ্যমেও হতে পারে; কেননা মানুষ হঠাৎ করে একদিন তাদের শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয় না; কোন না কোন পূর্বশর্ত অবশ্যই পুরণ হতে হয়। কোন এক শক্তির দ্বারা শাসকদের বদনাম হওয়া লাগে এবং তাদের ভালো অবদানগুলিকে হেয় প্রতিপন্ন করা লাগে। এভাবে, মানুষদের হৃদয়ে ক্রোধ এবং ঘৃণায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়, এবং শেষ পর্যন্ত বিপর্যয় এবং দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসে। 

  • গৃহীতঃ
  • 📚[তা‘লীক্বাতু ইবনি ‘উসাইমীন ‘আলা রাফ‘ইল আসাত্বীন লিশ শাওকানী, পৃষ্ঠা: ৬৫; গৃহীত: শাইখ মুহাম্মাদ রাসলান (হাফিযাহুল্লাহ), শারহু উসূলিস সুন্নাহ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৮২৬; দারুস সাহাবাহ, তবরুক (লিবিয়া) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৪ হি./২০১৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

  • 🔸 বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ শাইখুল আল্লামাহ, আল ইমাম ড.সালিহ আল - ফাওযান [হাফিয্বাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে :

  • "শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং অভ্যুত্থান কি শুধুমাত্র তলোয়ারের দ্বারাই হয়ে থাকে (জোর খাটিয়ে)। নাকি তাদের সমালোচনা করা ,অপবাদ দেয়া এবং জনগণকে তাদের বিরোধিতা ও অবাধ্যতা করতে উস্কানী দেয়াও এর মধ্যে পড়বে" ?
  • .

  •  উত্তর:
  • আমরা এই কথা আগেও আপনাদের বলেছি। আমরা বলেছি যে, শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হতে পারে তলোয়ারের দ্বারা এবং এটা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার এবং এটা কথার দ্বারাও হতে পারে [ যেমন তাদেরকে গালমন্দ করা বা গালিগালাজ করার দ্বারা ]। 

  • এটা হতে পারে একান্ত গোপনে [ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার মাধ্যমে ] অথবা প্রকাশ্যে মিম্বর থেকে [মসজিদগুলোতে খুতবা প্রদানের সময়]। এরফলে লোকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, আর এতে করে তারা রাজনৈতিক ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উৎসাহ পায় এবং এভাবে লোকদের কাছে নেতৃত্বের অবস্থানের মর্যাদাই হালকা হয়ে যায়। 
  • সুতরাং কথাও হচ্ছে (এক ধরণের) বিদ্রোহ।
  • .

  • আশ শাইখুল আল্লামাহ আল্লামাহ ড. সালিহ আল ফাওযান [হাফিয্বাহুল্লাহ ] খারেজীদের সম্পর্কে আরও বলেন:

  • আমাদের সময়ে -"কেউ যদি যেসব কাজ করলে গুনাহ হবে না" এমন সবক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের আনুগত্য করায় বিশ্বাস করে, তাহলে তাকে “সরকারের দালাল” বা “তৈলবাজ” বা “মাথামোটা” বলে উপাধি দেয়া হয়। আসলে কিছু লোক [ যারা বিদ্রোহের দিকে আহ্বান করে ] তাদের মজলিশগুলিতে মিম্বারের উপর দাঁড়ায় এবং তাদের উপর দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে গালাগাল করে! তাদের [ ওই গালমন্দকারীদের ] কমতির জন্য তাদেরকে [শাসকদেরকে] মানুষের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করে, যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ- বলেছেন:

  • مَنْ أَرَادَ أَنْ يَنْصَحَ لِسُلْطَانٍ بِأَمْرٍ؛ فَلا يَبْد لَهُ عَلانِيّةً وَلَكِنْ لَيَأْخُذْ بِيَدِهِ، فَيَخْلُوْا
  • بِهِ، فَإِنْ قَبِلَ مِنْهُ فذّاك،َ وَإِلاّ كَانَ قَدْ أدّى الّذِي عَلَيْهِ.
  • “কেউ যদি একজন শাসককে কোন ব্যাপারে পরামর্শ দিতে চায় তাহলে তার দোষ প্রকাশ্যে বেড়ানো তার জন্যে উচিৎ নয়। বরং তার উচিৎ হবে সেই শাসকের হাতে ধরে গোপনে তাকে উপদেশ দেয়া। যদি সে (তার উপদেশ) তার কাছ থেকে গ্রহণ করে তাহলে তা (হবে কল্যাণকর), আর না হলে ওই ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন করেছে”। [আহমাদ,আল সুন্নাহ - ২/৫২২]
  • .

  • যদি রাজনৈতিক নেতারা তাদের কাউকে চুপ করতে বাধ্য করা সমীচীন মনে করেন অথবা প্রকাশ্য জনসম্মুখে তাকে কথা বলতে বাধা দেন, তাহলে আপনি দেখবেন যে তারা [বিদ্রোহীরা ] একসাথে জড়ো হয়ে মিছিল করে এবং আন্দোলন করে। তারা তাদের অজ্ঞতার [জাহালতের] কারণে মনে করে যে, " তাদের কোন একজনকে বন্দি করা হলে অথবা তাকে চুপ করিয়ে দেয়া হলেই বিদ্রোহ করা তাদের জন্য বৈধ হয়ে যায়"! 

  • তারা কি আওফ ইবনে মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসে 
  • রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর এই বক্তব্য শোনেনি (যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বৈধ কিনা) 
  • لا، مَا أَقَامُوْا فِيْكُمُ الصّلاةَ.
  • “না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত প্রতিষ্ঠা করে” [ সহীহ মুসলিম- ১৮৫৫)

  • এবং সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে উবাদাহ ইবনে সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিস:
  • إِلاّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ فِيْهِ مِنَ اللهِ بُرْهَانٌ.
  • যতক্ষণ না তোমরা স্পষ্ট, পরিস্কার কুফর দেখতে পাও (তাদের কাছ থেকে) যার জন্য তোমাদের কাছে আল্লাহর কাছ থেকে আগত প্রমাণ থাকবে”।

  • এগুলো ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ- কয়েকটি উত্তর যখন তার সাহাবীরা অত্যাচারী শাসকদের সাথে যুদ্ধ করার বৈধতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন।

  • এই লোকগুলি [যারা শাসক বিরোধী প্রোপাগাণ্ডা চালায়] কি জানে না যে, আহলিস সুল্লাহ-র ইমাম আহমেদ বিন হাম্বল [রাহিমাহুল্লাহ ] কত কাল যাবৎ কারাগারে ছিলেন? এবং বিখ্যাত আলিম, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [রাহিমাহুল্লাহ ] কোথায় মারা গিয়েছিলেন? ইমাম আহমাদকে কি বহু বছর ধরে কারাগারে রাখা হয়নি যাতে তিনি এই কথা বলতে বাধ্য হন যে কুরআন সৃষ্ট? তাহলে কেন তিনি লোকদের জন্য শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বৈধ বললেন না? 

  • এবং তারা কি জানে না যে, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ [রাহিমাহুল্লাহ ] কারারুদ্ধ ছিলেন যতদিন না তিনি মৃত্যুবরণ করেন? তিনি কেন লোকদের জন্য শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বৈধ বললেন না, অথচ ইবনে তাইমিয়্যাহ ছিলেন এতো নিষ্ঠাবান, এতো জ্ঞানী এবং এতো সম্মানিত একজন ব্যক্তি? তাহলে যারা তার চেয়ে নীচের স্তরের [ নিষ্ঠা,ইল্ম,সম্মানের দিক থেকে ] তাদের [ এহেন কর্মকান্ডের ] ব্যাপারটা কি ?

  • নিঃসন্দেহে, এইসব ধারণা এবং কাজকর্ম আমাদের কাছে ততদিন পর্যন্ত আসেনি যতদিন না তরুণরা তাদের ইলম অমুক “আধুনিক-চিন্তাবিদ” এবং অমুক “সুদক্ষ কবি” এবং অমুক “ইসলামী লেখক” এর কাছ থেকে নেয়া শুরু করে! তারা এই লোকগুলির কাছ থেকে এসব গ্রহণ করেছে আর আলিমদেরকে এবং সালাফদের কিতাবাদিকে পরিত্যাগ করেছে, অত:পর সেগুলোকে নিজেদের পিঠের পেছনে ছুড়ে ফেলেছে।নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা সর্বশক্তিমান।না'আম।

  • গৃহীতঃ 
  • 📚[ইমাম ছালিহ আল ফাওযানের দেয়া এক লেকচার থেকে গৃহীত, যা তিনি দিয়েছিলেন তাইফ শহরের কিং ফাহাদ মসজিদে, ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাসে]
  • .
ভাষান্তর : আবু আবরার। 
সম্পাদনা : আখতার বিন আমীর।

Post a Comment

0 Comments