▌ধর্মের জন্য রাজনীতি নাকি রাজনীতির জন্য ধর্ম?

    ▌ধর্মের জন্য রাজনীতি নাকি রাজনীতির জন্য ধর্ম?

    .ধর্মের জন্য রাজনীতি হলে সেটা ইসলামী রাজনীতি আর রাজনীতির জন্য ধর্ম হলে সেটা ডিজিটাল ধর্ম! অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সব কিছুতেই ডিজিটালের ছোয়া লেগেছে, তাহলে ধর্মটা আর বাদ যাবে কেন? অতি ধার্মিকদের আচরণে অন্তত এটাই প্রতীয়মান হয়। 
  • সাম্প্রতিক শেষ হয়ে যাওয়া হিন্দু ধর্মলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনুষ্ঠান দূর্গাপুজায় ডিজিটাল ধর্মের অনেক নেতাদেরকে দেখা গেছে। যারা আনুষ্ঠানিকভাবে দলবল নিয়ে পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেছেন। তাদের খোজখবর নিয়েছেন। কেউ কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। টুপি-পাঞ্জাবী পরিহিত অবস্থায় তাদেরকে দেখা গেছে প্রতিমার সামনে। অনেকে প্রতিমার সাথে ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন হাস্যজ্জলভাবে। চেহারায় দায়িত্ব পালনের গর্বিত অভিব্যক্তি।
  • এই ডিজিটাল ধার্মিকরা, চুড়ান্ত সীমার ধর্মীয় উদারতা দেখাতে গিয়ে ধর্মীয় নীতিবাক্য আওড়ান, যথা : 
  • “ইসলাম সার্বজনীন ধর্ম"!
  • "ইসলাম সকল ধর্মকে স্বাধীনভাবে তার ধর্ম পালনের সুযোগ দিয়েছে"!
  • "ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল অন্যান্য ধর্মালম্বীদের নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের ব্যবস্থা করে দেওয়া"!

  • সুতরাং ইসলামী নেতৃত্বের কর্তব্য হল, সুষ্টভাবে তাদেরকে পূজা উদযাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। তারা নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারছে কি না, সেটা পরিদর্শনের জন্যে আমরা পূজামন্ডপে যাই! 
  • এটা ধর্মীয় বিধান ! ইত্যাদি ইত্যাদি...! 
  • .
  • আবার অনেক ডিজিটাল ইসলামী দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা দিতেও দেখা গেছে। পুজার জন্য নারিকেল দানও চলেছে হরধমে! কেউ কেউ দেখলাম নিজ কর্মের বৈধতা দিতে "সরকারী অনুদান ছিল, আমরা শুধু বিলি করেছি" ইত্যাদি হেনতেন অজুহাতে "গা" বাঁচাতে চাইছেন! অবশ্য তাদের এসব চল-চাতুরী নতুন নয়! অতীতেও দলের হেভিওয়েট নেতা ও আন্তর্জাতিক বক্তা এবং সাবেক এম।পি সাহেব স্ব দল-বল ও সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মন্দির সংস্কারের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিতে পেরে বেশ গর্ভবোধ করেছিলেন! 

  • যাহোক, এসব ডিজিটাল ইসলামী দল ও নেতাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর একটি সতর্কবাণী শোনাই! 
  • ত্বারেক বিন শিহাব ((رضى الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :

  • : ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﺠَﻨَﺔ ﺭَﺟُﻞٌ ﻓﻲ ﺫُﺑﺎﺏ، ﻭَﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭَ ﺭَﺟﻞ ﻓﻲ ﺫُﺑﺎﺏ "، ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻛﻴﻒ ﺫﻟﻚ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪ؟
  • ﻗﺎﻝ : "ﻣَﺮَّ ﺭﺟُﻼﻥِ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﻡ ﻟﻬﻢ ﺻَﻨَﻢٌ ﻻ ﻳُﺠﺎﻭِﺯُﻩُ ﺃﺣﺪ ﺣﺘﻰ ﻳُﻘَﺮِّﺏَ ﻟَﻪُ ﺷَﻴﺌﺎ، ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟَﻪُ : ﻗَﺮِّﺏْ
  • ﻭَﻟَﻮْ
  • ﺫُﺑﺎﺑﺎ ، ﻓَﻘَﺮَّﺏَ ﺫﺑﺎﺑﺎ، ﻓَﺨَﻠَّﻮﺍ ﺳﺒﻴﻠَﻪ، ﻓَﺪَﺧَﻞَ ﺍﻟﻨّﺎﺭَ، ﻭﻗﺎﻟﻮﺍ ﻟﻶﺧﺮِ : ﻗَﺮِّﺏْ، ﻗﺎﻝ : ﻣﺎ ﻛﻨﺖُ ﺃﻗﺮِّﺏُ
  • ﺷَﻴْﺌًﺎ
  • ﻷﺣَﺪٍ ﺩﻭﻥَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ، ﻓَﻀَﺮﺑﻮﺍ ﻋُﻨﻘﻪُ، ﻓَﺪَﺧَﻞَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔ / ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ
  • "এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে যাবে আর এক ব্যক্তি মাছির কারণে জাহান্নামে যাবে। সাহাবীগণ বললেন তা কি ভাবে? উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন : এক কওমের একটি ভাষ্কর্য বা মূর্তি ছিল। ওটার পাশ দিয়ে যেই যেত সেই উক্ত ভাষ্কর্যে কোন কিছু উৎসর্গ না করে যেতে পারতো না। সেখান দিয়ে একবার দু’জন লোক যাচ্ছিল। তাদের একজনকে মূর্তিওয়ালারা বলল কিছু দান করে যাও। সে বলল, আমার কাছে দান করার মত কোন কিছুই নেই। তারা বলল, একটি মাছি হলেও তোমাকে উৎসর্গ করতে হবে। সুতরাং সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তার পথ ছেড়ে দিল। এভাবে সে যাহান্নামে প্রবেশের ফয়সালা নিশ্চিৎ করল। 

  • এবার অপর জনকেও বলল: কিছু দান করে যাও । সে জবাবে বলল, আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে কোন কিছুই দান করব না। ফলে তারা তরবারী দিয়ে তার গর্দান উড়িয়ে দিল। কিন্তু সে জান্নাতের ফয়সালা লাভ করল।
  • গৃহীত :
  • [ইমাম আহমাদ, আয-যুহুদ ১/১৫; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৩৪৩, ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৩০৩৮]
  • .প্রখ্যাত সাহাবী মুয়ায বিন জাবাল ((رضى الله عنه) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বলেছেন : 
  • তুমি শিরক করোনা, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় কিংবা আগুণে পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়া হয়।
  • [তিরমিযী]
  • .উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা স্প্ষ্টভাবে বলতে চাই, ওটা ইসলাম ধর্মের বিধান নয়, ডিজিটাল ধর্মের বিধান। ইসলাম অন্যান্য ধর্মালম্বীদেরকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুযোগ ও অধিকার দিয়েছে, এতে আমাদের কোন দ্বিমত নেই। বিপত্তি অন্য জায়গায় :
  • .এক,

  • ভিন্ন ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় কার্যাবলী নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার সুযোগ ইসলাম দিলেও এই অজুহাতে কোন ধর্মীয় নেতা কিংবা নুন্যতম কোন মুসলমানকে ভিন্ন ধর্মলম্বীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিদর্শন করার বৈধতা দেয়নি। সুতরাং কোন আলেম, ইসলামী নেতা কিংবা সাধারণ মুসলমানের জন্য পরিদর্শন বা তামাশা দেখতে পূজামন্ডপে যাওয়া জায়েজ নয়।

  • উমার ইবনে খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, "তোমরা মুশরিকদের উপাসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করো না। কারণ সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে।" 
  • [ ইবনুল ক্বাইয়্যিম(রাহিঃ) তাঁর 'আহকামুল জিম্মাহ ১/৭২৩-৭২৪ এ সহিহ সনদে বায়হাক্বী থেকে এই রেওয়ায়েত বর্ণনা করেছেন ]
  • .
  • দুই,
  • রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগ, সাহাবা (রা) এর যুগ, তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ী (রা) এর যুগেরও ভিন্ন ধর্মালম্বীরা ছিল। তারাও ভিন্ন ধর্মালম্বীদেরকে নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের সুযোগ দিয়েছেন, কিন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার কোন সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী কোন দিন তাদের ধর্মী অনুষ্ঠান পরিদর্শন, অভিনন্দন জানানো, টাকা কিংবা মালামাল দিয়েছেন- এমন একটি দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবেন না। তাই যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে পূজামন্ডপে যান, তারা কি তাবেয়ী, সাহাবী এমনকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) 
  • থেকেও বেশী ধার্মিক!?
  • .
  • তিন,

  • যদি ইসলামী রাষ্ট্র হয় এবং অমুসলিমরা জিযিয়া (ট্যাক্স) দিয়ে বসবাস করে, তবেই তাদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনের সুযোগ ইসলাম দেয়। যেখানে ইসলামী রাষ্ট্রই নেই সেখানে ইসলামী আইন........? তাহলে অন্যান্য ইসলামী বিধান বাস্তবায়নে ঐসকল ডিজিটাল ধার্মিক নেতারা নিরব কেন? ডালমে কুছ কালা হায়!

  • আমরা দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই, এসবই ডিজিটাল ধর্মের বিধান। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ধর্মকে অপব্যবহার মাত্র। নিজেদের ভোট ব্যাংক বাড়ানোর অপকৌশল ছাড়া কিছুই নয়! এগুলো হল নব্য প্রকাশিত ইসলামের বিকৃত রূপ। অতএব এরাই হল রিয়েল মুক্তমনা! 

  • তাই এই সকল ধর্মব্যবসায়ী, ডিজিটাল ধার্মিকদের হাত থেকে ধর্মকে রক্ষা করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, যেভাবে ভিন্ন ধর্মালম্বীদের ধর্ম পালনে বাধা প্রদান কিংবা বিঘ্ন ঘটানো ইসলামে জায়েজ নয়, ঠিক তেমনিভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কোনরুপ আর্থিক সহযোগিতা, যত্রতত্র পরিদর্শন,খানাপিনা,শুভেচ্ছা জানানো কিংবা একাগ্রতা প্রকাশ করাও জায়েজ নয়।
  • .
  • নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে। এই আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমার সীমাবদ্ধতা!

  • বিঃদ্র : [ নিবন্ধটি ২০১৭ সালে পুজা উপলক্ষে সরকারী দলের একাধিক নেতার মন্তব্য ও জামাতে ইসলামী কর্তৃক পুজামন্ডপে "নারিকেল" দান নিয়ে লিখিত, যা আজ পুন:পোস্ট করা হল ]
  • .
  • আপনাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, 
  • আখতার বিন আমীর।

Post a Comment

0 Comments