Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

প্রশ্ন: তাবিজ দ্বারা রোগ মুক্তি হলে তা ব্যবহার করা বৈধ হবে কি?

প্রশ্ন: তাবিজ দ্বারা রোগ মুক্তি হলে তা ব্যবহার করা বৈধ হবে কি?

উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে তাবিজ ব্যবহার হারাম। এর দ্বারা উপকার হোক বা না হোক সেটা ধর্তব্য নয়। যুক্তি দিয়ে ইসলাম চলে না। বরং ইসলামের ভিত্তি হল, দলীল।
তাবিজ ব্যবহার বৈধ হলে রাসূল সা. তা করতেন, সাহাবীগণ করতেন। কিন্তু তারা তা করেন নি। সুতরাং আমাদের জন্য কোনভাবেই তা বৈধ হতে পারে না।

সুতরাং দলীলের আলোকে আমরা বলি, তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা, তামা বা পিতলের আংটি ইত্যাদি জিনিসগুলো ব্যবহার নিষিদ্ধ।

ইসালামে কুরআনের কিছু সূরা ও বিভিন্ন দুআ দ্বারা রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) দ্বারা চিকিৎসা করা উত্তম। অনুরূপভাবে বিভিন্ন ধরণের মেডিসিন ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।

এগুলো এ জন্যই বৈধ যেহেতু রাসুল সা. এর পক্ষ থেকে এগুলোর অনুমোদন রয়েছে। কেননা, তিনি ঝাড়ফঁকের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন এবং নিজেই বিভিন্ন রোগ-ব্যাধীর প্রেসকিপশন দিয়েছেন। (এ বিষয়ে ইবনে কাইয়েম রা. রচিত ত্বিব্বে নববী কিতাবটি প্রসিদ্ধ)

উপরোক্ত শরীয়ত সম্মত কোন চিকিৎসায় ফায়দা না হলে সবর করবে এবং আখিরাতে তার বিনিময়ের আশা করবে। কিন্তু কোনভাবেই হারামের দিকে পা বাড়ানো যাবে না। ঈমান বিধ্বংসী কাজ করা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। 
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।

পড়ুন:
প্রশ্নঃ তাবীজ লটকানো, রিং, তাগা পরিধান করা, হাতে লোহা বা রাবারের আংটা লাগানো, সুতা, পুঁতির মালা বা অনুরূপ বস্তু ব্যবহারের হুকুম কি? 

উত্তরঃ 

উপরোক্ত জিনিষগুলো ব্যবহার করা হারাম। নিন্মে রেফারেন্স সহ দলীল সমূহ পেশ করা হল:

1) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(من علق شيئا وكل إليه)

“যে ব্যক্তি কোন জিনিষ লটকাবে, তাকে ঐ জিনিষের দিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবে”।[১]

2) কোন এক সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন লোক পাঠিয়ে বলে দিলেন যেঃ

أَنْ لاَ يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلاَدَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلاَدَةٌ إِلاَّ قُطِعَتْ

“কোন উটের গলায় ধনুকের রশি বা গাছের ছাল দিয়ে তৈরী হার ঝুলানো থাকলে অথবা যে কোন মালা থাকলে সেটি যেন অবশ্যই কেটে ফেলা হয়।”[2]

3) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ)

“ঝাড়-ফুঁক করা, তাবীজ লটকানো এবংস্বামী বা স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা সৃষ্টির জন্যে যাদুমন্ত্রের আশ্রয় নেয়া শির্ক”।[3]

4) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য এক হাদীছে বলেনঃ

(مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فلا أتم الله له ومن علق ودعة فلا ودع الله له)

“যে ব্যক্তি তাবীজ লটকালো, আল্লাহ্‌ যেন তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না করেন। আর যে ব্যক্তি রুগমক্তির জন্যে শামুক বা ঝিনুকের মালা লটকালো, আল্লাহ্‌ যেন তাকে শিফা না দেন”।[৪]

5) তিনি অন্য এক হাদীছে বলেনঃ

(مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَقَدْ أَشْرَكَ)

“যে ব্যক্তি তাবীজ লটকালো সে শির্ক করল”।[৫]

6) নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির হাতে পিতলের একটি আংটা দেখে বললেনঃ এটি কী? সে বললঃ এটি দুর্বলতা দূর করার জন্যে পরিধান করেছি। তিনি বললেনঃ

(انْزِعْهَا فَإِنَّهَا لَا تَزِيدُكَ إِلَّا وَهْنًا فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا)

“তুমি এটি খুলে ফেল। কারণ এটি তোমার দুর্বলতা আরো বাড়িয়ে দিবে। আর তুমি যদি এটি পরিহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর, তাহলে তুমি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারবে না”।[৬]

7) হুজায়ফা (রাঃ) দেখলেন এক ব্যক্তির হাতে একটি সুতা বাঁধা আছে। তিনি তা কেটে ফেললেন এবং কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

)وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إلاَّ وَهُمْ مُشْرِكُونَ(

“তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে”। (সূরা ইউসুফঃ ১০৬)

৮) সাঈদ বিন জুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মানুষের শরীর থেকে একটি তাবীজ কেটে ফেলল, সে একটি গোলাম আযাদ করার ছাওয়াব পেল। সাঈদ বিন জুবায়েরের এই কথাটি নবী (সাঃ) হতে বর্ণিত মারফু হাদীছের পর্যায়র্ভূক্ত।

[১] -তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্‌ তিব্ব। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রঃ) হাসান বলেছেন। ( দখুনঃ সহীহুত্‌ তিরমিযী হা নং- ২০৭২ )
[২] – বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্‌ তিব্ব।
[৩] – আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্‌ তিব্ব। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী হাদীছ সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- (৬/১১৬১)। এখানে যে ঝাড়ফুঁক করাকে শির্ক বলা হয়েছে, তা দ্বারা শির্কী কালামের মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক উদ্দেশ্য। তবে ঝাড়ফুঁক যদি আল্লাহর কালাম, আল্লাহর সিফাত বা সহীহ হাদীছে বর্ণিত কোন বাক্যের মাধ্যমে হয়, তাতে কোন অসুবিধা নেই।
[৪] – হাকেম, (৪/২১৯। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, (৩/৪২৭)
[৫] – মুসনাদে আহমাদ, (৪/১৫৬) ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- (১/৮০৯)
[৬] – মুসনাদে আহমাদ, দেখুনঃ আহমাদ শাকেরের তাহকীক, (১৭/৪৩৫) তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹🔹
উত্তর দিয়েছেন:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Post a Comment

0 Comments