▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৩।


▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৩।
_______________________________________
সংকলনঃ-ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।হাফিয্বাহুল্লাহ
সূত্রঃ-মাসিক আত-তাহরিক।
পোষ্টার ডিজাইনার-মুহাম্মাদ ফাহিম।
__________________________________
.
.১২. মসজিদে গমন করা : মসজিদে গমন ছওয়াব লাভের অন্যতম মাধ্যম। মসজিদে গমনকারীর জন্য ফিরিশতারা আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ وَرَاحَ أَعَدَّ اللهُ لَهُ نُزُلَهُ مِنَ الْجَنَّةِ كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ- ‘যে সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে যাবে আল্লাহ তার জন্য তার প্রত্যেক বারের পরিবর্তে একটি করে মেহমানদারী-আপ্যায়ন প্রস্ত্তত করে রাখবেন’।[1]
.
.
তিনি আরো বলেন,
صَلاَةُ الرَّجُلِ فِي الْجَمَاعَةِ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاَتِهِ فِيْ بَيْتِهِ وَفِيْ سُوْقِهِ خَمْسًا وَّعِشْرِيْنَ ضِعْفًا وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الْمَسْجِدِ لاَ يُخْرِجُهُ إِلاَّ الصَّلاَةُ لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ وَحُطَّ عَنْهُ بِهَا خَطِيْئَةٌ فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّيْ عَلَيْهِ مَا دَامَ فِيْ مُصَلَّاَهُ اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ وَلاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلاَةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاَةَ وَفِيْ رِوَايَةٍ فِيْ دُعَاءِ الْمَلاَئِكَةِ: اللَّهُمَّ اغْفِرْلَهُ اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ مَالَمْ يُؤْذِيْ فِيْهِ مَالَمْ يُحْدِثْ فِيْهِ-
‘কোন ব্যক্তির মসজিদে জামা‘আতে ছালাত আদায়ের নেকী তার ঘরে বা বাজারে ছালাত আদায় অপেক্ষা পঁচিশ গুণ বেশী। আর এই নেকী তখনই হয় যখন সে ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ করে আর একমাত্র ছালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে যায়। এমতাবস্থায় সে যত পদক্ষেপ রাখে প্রত্যেক পদক্ষেপের দরুণ তার একটা করে স্তর উন্নত করা হয় এবং একটা করে গুনাহ ক্ষমা করা হয়। অতঃপর যখন সে ছালাত আদায় করতে থাকে ফিরিশতাগণ তার জন্য দো‘আ করতে থাকেন।
.
.
তারা বলেন, اللهُمَّ صَلِّ عَلَيْهِ اللهُمَّ ارْحَمْهُ اللهُمَّ اغْفِرْلَهُ اللهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ- ‘হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি অনুগ্রহ কর, হে আল্লাহ! তুমি তার প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! তুমি তার তওবা কবুল কর’। আর এভাবে তারা বলতে থাকে যে পর্যন্ত সে ছালাত আদায়ের স্থানে থাকে। যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয় এবং ওযূ ভঙ্গ না করে’।[2]
.
.
তিনি আরো বলেন,بَشِّرِ الْمَشَّائِيْنَ فِي الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّوْرِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘যারা অন্ধকারে মসজিদে যায় তাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন তাদের পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ
দাও’।[3]
.
.
১৩. মসজিদ নির্মাণ করা : মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ بَنَى لِلَّهِ مَسْجِدًا بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন’।[4]
.
.

১৪. আযান দেওয়া : আযান দেওয়ার বিনিময় জাহান্নাম হ’তে মুক্তি ও জান্নাত লাভ। ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিন অতীব সম্মানিত হবে। মানুষ, জিন ও পৃথিবীর সকল বস্ত্ত ক্বিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনের জন্য কল্যাণের সাক্ষী দিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنٌّ، وَلاَ إنْسٌ، وَلاَ شَيْءٌ، إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَوْمَ القِيَامَةِ- ‘যে কোন মানুষ ও জিন অথবা যে কোন বস্ত্ত মুওয়াযযিনের কণ্ঠ শুনবে সে ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে’।[5]
.
.
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الْمُؤَذِّنُ يُغْفَرُ لَهُ مَدَّ صَوْتِهِ وَيَشْهَدُ لَهُ كُلُّ رَطْبٍ وَيَابِسٍ وَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ صَلَّى وَشَاهِدُ الصَّلَاةِ يُكْتَبُ لَهُ خَمْسٌ وَّعِشْرُوْنَ صَلَاةً وَيُكَفَّرُ عَنْهُ مَا بَيْنَهُمَا- ‘মুওয়াযযিনের কণ্ঠের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করা হবে এবং (ক্বিয়ামতের দিন) তার কল্যাণের জন্য প্রত্যেক সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত সাক্ষ্য দিবে এবং এই আযান শুনে যত লোক ছালাত আদায় করবে সবার সমপরিমাণ নেকী মুওয়াযযিনের হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাত আদায়ের জন্য উপস্থিত হবে তার জন্য পঁচিশ ছালাতের নেকী লেখা হবে এবং তার দুই ছালাতের মদ্যকার গুনাহ ক্ষমা করা হবে’।[6]
.
.

রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَذَّنَ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِيْنِهِ فِيْ كُلِّ مَرَّةٍ سِتُّوْنَ حَسَنَةً وَبِإِقَامَتِهِ ثَلاَثُوْنَ حَسَنَةً- ‘যে বার বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার প্রত্যেক আযানের বিনিময়ে ষাট নেকী এবং এক্বামতের বিনিময়ে ত্রিশ নেকী অতিরিক্ত লেখা হয়’।[7]
.
.
উল্লেখ্য, সাত বছর আযান দিলে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ।[8].
.
.
১৫. আযানের উত্তর দেওয়া : আযানের উত্তর দেওয়া ও তৎপরবর্তী দো‘আ করলে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত অবধারিত হয়ে যায়। তেমনি পরকালে জান্নাত লাভ করা যায়।
.
.রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا سَمِعْتُمْ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ ثُمَّ صَلُّوْا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوا اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لِي الْوَسِيْلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِيْ إِلاَّ لِعَبْدٍ مِّنْ عِبَادِ اللهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ اللهَ لِي الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ- ‘যখন তোমরা মুওয়াযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন তার জওয়াবে বল মুওয়াযযিন যা বলে। অতঃপর আমার উপর দরূদ পড়। কেননা যে আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও।
.
.
আর তা হচ্ছে জান্নাতের একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন স্থান। যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মাত্র একজন বান্দার জন্য উপযোগী। আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’ চাইবে তার জন্য আমার শাফা‘আত যরূরী হয়ে যাবে’।[9]
.
.
তিনি আরো বলেন,
إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ فَقَالَ أَحَدُكُمْ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ قَالَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ قَالَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، ثُمَّ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ قَالَ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ-
‘যখন মুওয়াযযিন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ যদি তোমাদের কেউ বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’, অতঃপর যখন মুওয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, মুওয়াযযিন বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ সেও বলে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’, এরপর মুওয়াযযিন বলে, ‘হাইয়া আলাছ ছালাহ’ সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, পুনরায় যখন মুওয়াযযিন বলে ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ সে বলে ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, পরে যখন মুওয়াযযিন বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’ সেও বলে ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার’।
.
.
অতঃপর যখন মুওয়াযযিন বলে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ সেও বলে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’। আর এই বাক্যগুলি মনে-প্রাণে ভয়-ভীতি নিয়ে বলে তাহ’লে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[10]
.
.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন, এক লোক বলল,إِنَّ الْمُؤَذِّنِيْنَ يَفْضُلُوْنَنَا بِأَذَانِهِمْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْ كَمَا يَقُوْلُوْنَ فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَ- ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! মুওয়াযযিনগণ আমাদের চেয়ে অধিক মর্যাদা লাভ করছেন। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমিও বল যেরূপ তারা বলে এবং যখন আযানের জওয়াব দেয়া শেষ হবে তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা কর, তাহ’লে তোমাকেও প্রদান করা হবে’।[11]
.
.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, একদা আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম তখন বেলাল (রাঃ) দাঁড়িয়ে আযান দিতে লাগলেন। যখন বেলাল (রাঃ) আযান শেষ করলেন, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, مَنْ قَالَ مِثْلَ هَذَا يَقِيْنًا دَخَلَ الْجَنَّةَ- ‘যে অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে এর অনুরূপ বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[12]
.
.
আবু ইয়া‘লা আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন রাসূল (ছাঃ) এক রাত্রি যাপন করলেন। তখন বেলাল আযান দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,مَنْ قَالَ مِثْلَ مَقَالَتِهِ، وَشَهِدَ مِثْلَ شَهَادَتِهِ فَلَهُ الْجَنَّةُ. ‘যে ব্যক্তি তার (বেলালের) কথার অনুরূপ বলবে এবং তার সাক্ষ্য দানের মত সাক্ষ্য দিবে তার জন্য জান্নাত’।[13]
.
.
১৬. দো‘আ ও তাসবীহ-তাহলীল :
তাসবীহ-তাহলীল, যিকর-আযকার, পাপ মোচন, জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাই মুমিনকে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত দো‘আ, যিকর-আযকার ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হবে। নিম্নে কিছু দো‘আ, তাসবীহ ফযীলত সহ উল্লেখ করা হ’ল।-
.
.

(ক) সকল গোনাহ মাফ হয় : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ- ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়’।[14]
.
.
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سَبَّحَ الله فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثاً وَّثَلاثِيْنَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلاَثاً وَّثَلاَثِيْنَ، وَكَبَّرَ الله ثَلاَثاً وَّثَلاَثِيْنَ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَّتِسْعُوْنَ وقال تَمَامَ المِئَةِ : لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ- ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আল-হামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলল, তা হচ্ছে মোট ৯৯ বার। অতঃপর একশত পূর্ণ করার জন্য বলল,لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريْكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হ’লেন সর্বশক্তিমান’। ঐ ব্যক্তির সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, তার গুনাহের পরিমাণ সমুদ্রের ফেনার সমান হ’লেও।[15]
.
.
(খ) জান্নাতের ভান্ডার : আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন, আমরা এক সফরে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। লোকেরা উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বলতে লাগল। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতি রহম কর এবং নীরবে তাকবীর পাঠ কর। তোমরা বধিরকে ডাকছ না এবং অনুপস্থিতকেও ডাকছ না, তোমরা ডাকছ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টাকে, তিনি তোমাদের সাথে আছেন।
.
.
যাকে তোমরা ডাকছ তিনি তোমাদের বাহনের ঘাড় অপেক্ষাও তোমাদের অধিক নিকটে আছেন। আবু মূসা (রাঃ) বলেন, আমি তখন রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে চুপে চুপে বলছিলাম, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। অর্থাৎ আমার কোন উপায় নেই, কোন শক্তি নেই আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ قَيْسٍ، ألاَ أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مَّنْ كُنُوْزِ الجَنَّةِ؟ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ. ‘হে আব্দুল্লাহ ইবনু কায়েস! আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সমূহের একটি ভান্ডারের সন্ধান দিব না? আমি বললাম, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তা হচ্ছে- ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।[16]
.
.
(গ) জান্নাতে বৃক্ষ রোপণ : জাবির (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهِ غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ- ‘যে ব্যক্তি বলবে ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’ অর্থাৎ মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সাথে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে’।[17]
.
.
(ঘ) ছওয়াব লাভ, মর্যাদা বৃদ্ধি ও জান্নাতে গৃহ লাভ : আবদুর রহমান ইবনু গানাম (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
مَنْ قَالَ قَبْلَ أَنْ يَنْصَرِفَ وَيَثْنِىَ رِجْلَهُ مِنْ صَلاةِ الْمَغْرِبِ وَالصُّبْحِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ، يُحْيِىْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ، عَشْرَ مَرَّاتٍ كُتِبَ لَهُ بِكُلِّ وَاحِدَةٍ عَشْرُ حَسَنَاتٍ، وَمُحِىَ عَنْهُ عَشْرُ سَيِّئَاتٍ، وَرُفِعَ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ، وَكَانَتْ حِرْزًا مِّنْ كُلِّ مَكْرُوْهٍ، وَحِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، وَلَمْ يَحِلَّ لِذَنْبٍ يُدْرِكُهُ إِلاَّ الشِّرْكَ، وَكَانَ مِنْ أَفْضَلِ النَّاسِ إِلاَّ رَجُلاً يَقُوْلُ أَفْضَلَ مِمَّا قَالَ-
‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের ছালাতের পর দশবার বলবে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكُ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তারই রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা, তাঁর হাতেই সমস্ত কল্যাণ, তিনি সকলকে জীবিত করেন এবং মৃত্যু ঘটান, তিনি সমস্ত বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান’। এমন ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক শব্দের পরিবর্তে দশটি নেকী লেখা হবে, তার দশটি গুনাহ মুছে দেয়া হবে, তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।
.
.
এছাড়াও এ দো‘আটি তার জন্য প্রত্যেক মন্দ কাজ হ’তে রক্ষক হবে এবং বিতাড়িত শয়তান হ’তেও রক্ষাকবয হবে। এর বদৌলতে কোন গুনাহ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। (অর্থাৎ শিরক ব্যতীত) কোন কিছুই তাকে ধ্বংস করতে পারবে না। ঐ ব্যক্তি হবে সমস্ত মানুষ অপেক্ষা উত্তম আমলকারী। তবে যে এর চেয়েও উত্তম কথা বলবে সে অবশ্য এর চেয়ে উত্তম হবে’।[18]
.
.
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,
مَنْ دَخَلَ السُّوقَ فَقَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكُ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ حَسَنَةٍ وَمَحَا عَنْهُ أَلْفَ أَلْفِ سَيِّئَةٍ وَرَفَعَ لَهُ أَلْفَ أَلْفِ دَرَجَةٍ.
‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে বলবে, لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ ... شَىْءٍ قَدِيرٌ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁর। তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ।
.
.
তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)। আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী লিখবেন, দশ লক্ষ গোনাহ মোচন করবেন এবং তার দশ লক্ষ মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন’।[19]
.
.
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে বলবে,لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ (আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁর।
.
.
তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)। আল্লাহ তার জন্য দশ লক্ষ নেকী লিখবেন, দশ লক্ষ গোনাহ মোচন করবেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করবেন’।[20]
___________________
[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৮।
[2]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭০২।
[3]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৭২১, হাদীছ ছাহীহ।
[4]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৬৯৭।
[5]. বুখারী, মিশকাত হা/৬৫৬।
[6]. আবু দাউদ হা/৫১৫, নাসাঈ হা/৬৬৭, সনদ ছহীহ।
[7]. ইবনু মাজাহ, হাদীছ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭২৭।
[8]. তিরমিযী হা/২০৬; ইবনু মাজাহ হা/৭২৭; মিশকাত হা/৬৬৪; যঈফা হা/৮৫০।
[9]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৭।
[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৮।
[11]. আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৬৭৩, হাদীছ ছাহীহ।
[12]. নাসাঈ, মিশকাত হা/৬৭৬, হাদীছ ছহীহ।
[13]. আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৭৬, হাদীছ হাসান।
[14]. বুখারী হা/৬৪০৫, মুসলিম হা/৫৯৭; মিশকাত হা/২২৯৬।
[15]. মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭।
[16]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০৩।
[17]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২৩০৪ হাদীছ ছহীহ।
[18]. তিরমিযী, ছহীহ আত-তারগীব হা/৪৭৭; মিশকাত হা/৯৭৫।
[19]. তিরমিযী হা/৩৪২৮; সনদ ছহীহ।
[20]. তিরমিযী হা/৩৪২৯; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৪৩১, সনদ ছহীহ।
___________________
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]

► আমাদের পোস্টগুলি কপিরাইট মুক্ত! সুতরাং আপনি চাইলে পেজের কনটেন্টগুলো হুবহু কপি করে ফেসবুক বা যেকোন মাধ্যমে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে পারেন বিনা অনুমতিতে।
জায্বাকুমুল্লাহ।

►আলিমদের সাথে,সালাফদের পথে।
►বার্তা-The Massage Of Allah S.W.T
► https://www.facebook.com/Barta.4u
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments