▌জান্নাত লাভের কতিপয় উপায় পর্ব-৪।
__________________________
সংকলনঃ-ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম।হাফিয্বাহুল্লাহ
সূত্রঃ-মাসিক আত-তাহরিক।
পোষ্টার ডিজাইনার-মুহাম্মাদ ফাহিম।
__________________________
.
১৭. জিহাদ করা :
জিহাদের অশেষ গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। এর বিনিময় জান্নাত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيْمٍ، تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ وَتُجَاهِدُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِيْ جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ-
‘হে ঈমানাদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের কথা বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি। আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। এর ফলে তিনি তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার নিম্নদেশ দিয়ে নহর সমূহ প্রবাহিত এবং তা এমন মনোরম আবাসগৃহ যা অনন্তকাল বসবাসের জন্য, এটাই মহা সাফল্য’ (ছফ ৬১/১০-১২)।
.
.
আল্লাহ আরো বলেন,وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ- ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদেরকে মৃত ভেবো না। বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট হ’তে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়’ (আলে ইমরান ৩/১৬৯)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন,
إِنَّ اللهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُوْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَيَقْتُلُوْنَ وَيُقْتَلُوْنَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيْلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللهِ فَاسْتَبْشِرُوْا بِبَيْعِكُمُ الَّذِيْ بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ-
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মাল খরিদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে। অতঃপর তারা হত্যা করে অথবা নিহত হয়। এর বিনিময়ে তাদের জন্য (জান্নাত লাভের) সত্য ওয়াদা করা হয়েছে তওরাত, ইনজীল ও কুরআনে। আর আল্লাহর চাইতে নিজের অঙ্গীকার অধিক পূরণকারী আর কে আছে? অতএব তোমরা এই ক্রয়-বিক্রয়ের বিনিময়ে (জান্নাতের) সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমরা তাঁর সাথে করেছ। আর এটাই হ’ল মহান সফলতা’ (তওবা ৯/১১১)।
.
.
জিহাদের গুরুত্ব ও ফযীলত এবং মুজাহিদ ও শহীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় হাদীছ এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَبِرَسُوْلِهِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَصَامَ رَمَضَانَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ جَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ جَلَسَ فِيْ أَرْضِهِ الَّتِيْ وُلِدَ فِيْهَا فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نُبَشِّرُ النَّاسَ قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللهَ فَاسْأَلُوْهُ الْفِرْدَوْسَ فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الْجَنَّةِ وَأَعْلَى الْجَنَّةِ أُرَاهُ فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الْجَنَّةِ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনল, ছালাত আদায় করল ও রামাযান মাসের ছিয়াম পালন করল, সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মস্থানে বসে থাকুক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা কি লোকদের এ সুসংবাদ পৌঁছে দিব না? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ১০০টি মর্যাদার স্তর প্রস্ত্তত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দূরত্বের সমান। তোমরা আল্লাহর নিকট চাইলে জান্নাতুল ফিরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হ’ল সর্বোত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। এর উপরিভাগে করুণাময় আল্লাহর আরশ। সে স্থান হ’তে জান্নাতের নদী সমূহ প্রবাহিত হচ্ছে’।[21]
.
.
তিনি আরো বলেন,
مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَإِنَّ لَهُ مَا عَلَى الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ الشَّهِيْدُ فَإِنَّهُ يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ لِمَا يَرَى مِنَ الْكَرَامَةِ-
‘কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করার পর পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসতে চাইবে না, যদিও পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ তাকে প্রদান করা হয়, একমাত্র শহীদ ব্যতীত। শহীদগণ শাহাদত বরণের মর্যাদা দেখে আবার দুনিয়াতে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা করবে, যাতে সে আরো দশ বার শহীদ হ’তে পারে’।
.
.
[22]
আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, বারার কন্যা রুবাইয়্যা যিনি হারেছা ইবনু সুরাকার মাতা হিসাবে পরিচিত (আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর ফুফু) তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর খিদমতে এসে বললেন,
يَا نَبِيَّ اللهِ أَلاَ تُحَدِّثُنِيْ عَنْ حَارِثَةَ وَكَانَ قُتِلَ يَوْمَ بَدْرٍ أَصَابَهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَإِنْ كَانَ فِي الْجَنَّةِ صَبَرْتُ وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ اجْتَهَدْتُ عَلَيْهِ فِي الْبُكَاءِ قَالَ يَا أُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِي الْجَنَّةِ وَإِنَّ ابْنَكِ أَصَابَ الْفِرْدَوْسَ الْأَعْلَى-
‘হে আল্লাহর নবী! আপনি হারেছা সম্পর্কে কিছু বলুন। হারেছা বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছে। এক অদৃশ্য তীর এসে তার শরীরে বিঁধেছিল। সুতরাং সে যদি জান্নাতবাসী হয়ে থাকে তাহ’লে আমি ধৈর্যধারণ করব। অন্যথা তার জন্য অঝোরে কাঁদতে থাকব। উত্তরে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে হারেছার মা! জান্নাতে অসংখ্য বাগান আছে। তোমার পুত্র সেখানে সর্বোচ্চ জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করেছে’।[23]
.
.
শহীদদের মর্যাদা সম্পর্কে বহু বর্ণনা এসেছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
لِلشَّهِيْدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِيْ أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الْأَكْبَرِ وَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوْتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَيُزَوِّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِنْ الْحُوْرِ الْعِيْنِ وَيُشَفَّعُ فِيْ سَبْعِيْنَ مِنْ أَقَارِبِهِ-
‘আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। (১) শরীরের রক্তের প্রথম ফোঁটা ঝরতেই তাকে মাফ করে দেওয়া হবে এবং প্রাণ বের হওয়ার প্রাক্কালে জান্নাতের মধ্যে তার অবস্থানের জায়গাটি চাক্ষুষ দেখানো হবে। (২) কবরের আযাব হ’তে তাকে নিরাপদে রাখা হবে। (৩) ক্বিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা হ’তে তাকে নিরাপদে রাখা হবে। (৪) তার মাথায় সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। তার একটি ইয়াকূত দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সমস্ত কিছু হ’তে উত্তম। (৫) জান্নাতের বাহাত্তর জন হূরের সাথে তার বিবাহ দেওয়া হবে। (৬) তার নিকটাত্মীয়দের মধ্য হ’তে ৭০ জনের জন্য তার সুফারিশ কবুল করা হবে’।[24]
.
.
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,
لَيْسَ شَيْءٌ أحَبَّ إِلَى اللهِ تَعَالَى مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأثَرَيْنِ قَطْرَةُ دُمُوْعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطْرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ. وَأَمَّا الأَثَرَانِ فَأَثَرٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالَى، وَأَثَرٌ فِيْ فَريْضَةٍ مِّنْ فَرَائِضِ الله تَعَالَى-
‘আল্লাহর নিকট দু’টি ফোঁটা ও দু’টি চিহ্নের চাইতে কোন জিনিস এত প্রিয়তম নেই। দু’টি ফোঁটার একটি হ’ল আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে চক্ষু হ’তে নির্গত অশ্রুর ফোঁটা। আর দ্বিতীয়টি হ’ল আল্লাহর পথে প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা। আর চিহ্ন দু’টির একটি হ’ল আল্লাহর রাস্তায় শরীরে আঘাত বা ক্ষতের চিহ্ন এবং দ্বিতীয়টি হ’ল আল্লাহর ফরয সমূহের কোন একটি ফরয আদায় করার চিহ্ন’।[25] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু মূসা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوْفِ فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ، فَقَالَ يَا أَبَا مُوْسَى أأنْتَ سَمِعْتَ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ هَذَا؟ قَالَ نَعَمْ، فَرَجَعَ إِلَى أصْحَابِهِ، فَقَالَ أقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلاَمَ، ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَألْقَاهُ، ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى العَدُوِّ فَضَربَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ-
‘জান্নাতের দরজা সমূহ মুজাহিদের তলোয়ারের ছায়াতলে রয়েছে। এ কথা শুনে একজন জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আবু মূসা! আপনি কি রাসূল (ছাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন? আবু মূসা উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি তার সাথীদের নিকট এসে বলল, আমি তোমাদেরকে শেষ সালাম জানাচ্ছি। এ কথা বলে সে তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেলল এবং তলোয়ার নিয়ে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হ’ল। তা দ্বারা অনেক শত্রুকে হত্যা করল এবং শেষে নিজেও শত্রুদের আঘাতে শহীদ হ’ল’।[26]
.
.
১৮. আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া :
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়ার অত্যধিক গুরুত্ব ও ফযীলত রয়েছে। এর জন্য অশেষ ছওয়াব রয়েছে এবং এর সর্বোচ্চ বিনিময় হ’ল জান্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,رِبَاطُ يَوْمٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا- ‘আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারা দেওয়া সমস্ত দুনিয়া ও তার উপরের সমস্ত সম্পদ হ’তে উত্তম’।[27]
.
.
তিনি আরো বলেন,لَغَدْوَةٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَوْ رَوْحَةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا- ‘আল্লাহর পথে একটা সকাল কিংবা একটা সন্ধ্যা ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সমস্ত কিছু হ’তে উত্তম’।[28]
.
.
আল্লাহর রাস্তার প্রহরীর আমল মৃত্যুর পরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ الَّذِيْ مَاتَ مُرَابِطًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَإِنَّهُ يُنْمَى لَهُ عَمَلُهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَيَأْمَنُ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ- ‘মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেক ব্যক্তির আমলের সমাপ্তি ঘটে। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় পাহারারত অর্থাৎ দ্বীন হিফাযতের দায়িত্বে নিয়োজিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত তার আমল বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরের ফিৎনা হ’তেও সে নিরাপদে থাকবে’।[29]
.
.
কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় প্রহরারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে, সে জাহান্নামে যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,ما اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ- ‘যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না’।[30]
.
.
তিনি আরো বলেন,
لاَ يَلِجُ النَّارَ مَنْ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُوْدَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ، وَفِي أخْرَى فِي مَنْخِرَيْ مُسْلِمٍ أَبَدًا وَفِي أُخْرَى فِيْ جَوْفِ عَبْدٍ أَبَدًا وَلَا يَجْتَمِعُ الشُّحُّ وَالْإِيْمَانُ فِيْ قَلْبِ عَبْدٍ أَبَدًا-
‘আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে ক্রন্দনকারী জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ঢুকে না যায়। অর্থাৎ দোহনকৃত দুধ যেমন তার পালানে ঢুকানো অসম্ভব তেমনি আল্লাহর (আযাবের) ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া অসম্ভব। আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালি এবং জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হ’তে পারে না। অর্থাৎ মুজাহিদ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’।[31]
.
.
অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘আল্লাহর রাস্তার ধূলাবালি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোন মুসলমানের নাকের ছিদ্রের মধ্যে কখনো একত্র হবে না’। অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘ঐ দু’টি জিনিস কোন মুসলিমের পেটের মধ্যে একত্র হ’তে পারে না। অনুরূপভাবে কৃপণতা ও ঈমান কখনো কোন বান্দার অন্তরের মধ্যে একত্র হ’তে পারে না’।[32]
.
.
১৯. ছবর বা ধৈর্যধারণ করা :
রোগ-ব্যাধি, বিপদাপদ, দুঃখ-শোক প্রভৃতি ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা অশেষ ছওয়াব ও জান্নাত লাভের মাধ্যম। তবে বিপদের প্রথম পর্যায়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে। নিম্নে ছবরের কয়েকটি ক্ষেত্র ফযীলত সহ উল্লেখ করা হ’লো।-
.
.
(ক) সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণ :
__________________________
.
.
কোন মুসলিম ব্যক্তির শিশু সন্তান-সন্ততি মারা গেলে সে যদি ধৈর্যধারণ করে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يَمُوْتُ لِمُسْلِمٍ ثَلاَثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ، فَيَلِجُ النَّارَ- ‘যে কোন মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যাবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না’।[33]
.
.
এক হাদীছে এসেছে, একদিন রাসূল (ছাঃ) কতক আনছারী মহিলাকে বললেন,لَا يَمُوْتُ لِإِحْدَاكُنَّ ثَلَاثَةٌ مِنْ الْوَلَدِ فَتَحْتَسِبَهُ إِلَّا دَخَلَتِ الْجَنَّةَ فَقَالَتْ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ أَوْ اثْنَيْنِ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ أَوْ اثْنَيْنِ- ‘তোমাদের মধ্যে যার তিনটি সন্তান মারা যাবে আর সে ধৈর্যধারণ করবে এবং নেকীর আশা রাখবে নিশ্চয়ই সে জান্নাতে যাবে। এসময় তাদের মধ্যেকার একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দুইজন মারা যায়? রাসূল (ছাঃ) বললেন, দু’জন মারা গেলেও সে জান্নাতে যাবে’।[34]
.
.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার একটি পুত্র সন্তান মারা গেছে। তার জন্য আমি অত্যন্ত শোকার্ত হয়ে পড়েছি। আপনি কি আপনার দোস্ত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন, যা আমাদের মৃতব্যক্তিদের সম্পর্কে আমাদের সান্ত্বনা হ’তে পারে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,صِغَارُهُمْ دَعَامِيْصُ الْجَنَّةِ يَلْقَى أَحَدُهُمْ أَبَاهُ فَيَأْخُذُ بِنَاحِيَةِ ثَوْبِهِ فَلاَ يُفَارِقُهُ حَتَّى يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ- ‘মুসলমানদের ছোট সন্তানরা জান্নাতের প্রজাপতি হবে। তাদের কেউ যখন তার পিতাকে পাবে, তখন তার কাপড়ের পাশ ধরে টানতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সে পৃথক হবে না’।[35]
.
.
অন্য এক হাদীছে এসেছে, একদা জনৈক মহিলা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পুরুষরা আপনার নিকট থেকে হাদীছ শুনার সুযোগ লাভ করেছে। আমাদের জন্যও আপনার পক্ষ হ’তে একটি দিন নির্ধারিত করে দিন, যেদিন আমরা আপনার নিকট আসতে পারি এবং যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা আমাদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা অমুক দিন অমুক স্থানে সমবেত হও। সুতরাং তারা সমবেত হ’লেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের নিকট উপস্থিত হ’লেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দিলেন, যা তাকে আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন। অতঃপর বললেন,
مَا مِنْكُنَّ امْرَأَةٌ تُقَدِّمُ بَيْنَ يَدَيْهَا مِنْ وَلَدِهَا ثَلَاثَةً إِلَّا كَانَ لَهَا حِجَابًا مِّنَ النَّارِ فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِّنْهُنَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَوْ اثْنَيْنِ قَالَ فَأَعَادَتْهَا مَرَّتَيْنِ ثُمَّ قَالَ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ وَاثْنَيْنِ-
‘তোমাদের মধ্যকার যে মহিলা তার সন্তানদের মধ্য হ’তে তিনটি সন্তান আল্লাহর নিকট পাঠিয়েছে, তারা তার জন্য জাহান্নামে প্রবেশে প্রতিবন্ধক হবে’ (অর্থাৎ তারা তাকে জাহান্নামে যেতে দিবে না)। এ সময় একজন মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কেউ যদি দু’জন সন্তান পাঠায়? সে বাক্যটি দু’বার বলল, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, দু’জন পাঠালেও, দু’জন পাঠালেও দু’জন পাঠালেও।[36]
.
.
অন্য হাদীছে এসেছে, কুররা আল-মুযানী হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসত এবং তার সাথে তার একটি ছেলেও থাকত। একদিন নবী করীম (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে (ছেলেকে) ভালবাস? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পর আপনাকে ভালবাসার মতই আমি তাকে ভালবাসি। অতঃপর একদিন নবী করীম (ছাঃ) ছেলেটিকে দেখতে পেলেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, অমুকের ছেলেটি কোথায় গেল? ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সে মারা গেছে। তখন তার পিতাকে রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَمَا تُحِبُّ أَنْ لاَّ تَأْتِيَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلاَّ وَجَدْتَهُ يَنْتَظِرُكَ فَقَالَ الرَّجُلُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَهُ خَاصَّةً أَمْ لِكُلِّنَا قَالَ بَلْ لِكُلِّكُمْ- ‘ওহে তুমি কি এটা ভালবাস না যে, তুমি জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে যাও না কেন, সেখানে তাকে (ছেলেকে) তোমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখবে? এসময় এক ব্যক্তি বলল, এই সুযোগ শুধু তার জন্য, না আমাদের সকলের জন্য? রাসূল (ছাঃ) বললেন, বরং তোমাদের সকলের জন্য’।[37] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِيْ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ فَيَقُوْلُوْنَ نَعَمْ فَيَقُوْلُ مَاذَا قَالَ عَبْدِيْ فَيَقُوْلُوْنَ حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ فَيَقُوْلُ اللهُ ابْنُوْا لِعَبْدِيْ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَسَمُّوْهُ بَيْتَ الْحَمْدِ-
‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ফিরিশতাদের বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানকে উঠিয়ে নিলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি তার অন্তরের ধনকে কেড়ে নিলে? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করেন, তখন তারা কি বলল? ফিরিশতারা বলেন, তখন তারা বলল, الْحَمْدُ للهِ এবং إِنَّا للهِ وَإِنَّ إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখ বায়তুল হাম্দ’।[38]
.
.
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেছেন,مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَمُوْتُ لَهُمَا ثَلاَثَةٌ مِّنَ الْوَلَدِ لَمْ يَبْلُغُوا الْحِنْثَ إِلاَّ أَدْخَلَهُمَا الْجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إِيَّاهُمْ- ‘কোন মুসলমানের সন্তান যুবক হওয়ার পূর্বে মারা গেলে আল্লাহ তার বিশেষ রহমতের মাধ্যমে তাকে
জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[39]
.
.
(খ) বিপদে ধৈর্যধারণ :
______________________
বিপদে ছবর করা অত্যন্ত কঠিন। অথচ বিপদে ধৈর্যধারণ করাই প্রকৃত ধৈর্য। এর পুরস্কারও অগণিত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
عَجَبٌ لِلْمُؤْمِنِ، إِنْ أصَابَهُ خَيْرٌ حَمِدَ اللهَ وَشَكَرَ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ مُصِيْبَةٌ حَمِدَ اللهَ وَصَبَرَ، فَالْمُؤْمِنُ يُؤْجَرُ فِيْ كُلِّ أَمْرِهِ حَتَّى يُؤْجَرَ فِيْ اللُّقْمَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى فِيْ امْرَأَتِهِ-
‘মুমিনদের বিষয় আশ্চর্যজনক, যদি তার প্রতি কোন কল্যাণ বর্তায় সে আল্লাহর প্রশংসা করে ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। আর যদি কোন বিপদ আপতিত হয়, তবুও সে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং ধৈর্যধারণ করে। সুতরাং মুমিন তার প্রত্যেক কাজেই নেকী অর্জন করে। এমনকি স্ত্রীর মুখে খাদ্যের লোকমা তুলে দিলেও নেকী পায়’।[40]
.
.
(গ) রোগ-ব্যাধিতে ধৈর্যধারণ :
__________________________
.
.
অসুখ-বিসুখে ধৈর্যধারণ করলে অশেষ ছওয়াব লাভ করা যায় এবং গোনাহসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। উম্মুল ‘আলা (রাঃ) বলেন, আমি একদা অসুস্থ হ’লে নবী করীম (ছাঃ) আমাকে দেখার জন্য আসলেন এবং বললেন,أَبْشِرِيْ يَا أُمَّ الْعَلَاءِ فَإِنْ مَرِضَ الْمُسْلِمُ يُذْهِبُ اللهُ بِهِ خَطَايَاهُ كَمَا تُذْهِبُ النَّارُ خَبَثَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ- ‘হে উম্মুল ‘আলা! তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা কোন মুসলিম অসুস্থ হ’লে আল্লাহ তার দ্বারা তার গুনাহ দূর করে দেন যেমন আগুন সোনা-রূপার মরিচা দূর করে দেয়’।[41]
অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উম্মু সায়েব অথবা উম্মুল মুসাইয়েতের নিকটে প্রবেশ করে বললেন, হে সায়েব বা মুসাইয়েবের মা! তোমার কি হয়েছে, কাঁপছ কেন? তিনি বললেন, জ্বর হয়েছে, আল্লাহ তার ভাল না করুন। এতদশ্রবণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لاَ تَسُبِّي الْحُمَّى فَإِنَّهَا تُذْهِبُ خَطَايَا بَنِيْ آدَمَ كَمَا يُذْهِبُ الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ- ‘জ্বরকে গালি দিও না। কারণ সে আদম সন্তানের গোনাহ সমূহকে দূর করে দেয়, যেমন হাপর লোহার মরিচা দূর করে’।[42]
.
.
বান্দাকে অসুখ দিয়ে আল্লাহ তার গোনাহ মাফের ব্যবস্থা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,اِنَّ اللهَ لَيَبْتَلِىَ عَبْدَهُ بِالسَّقْمِ حَتَّى يُكَفِّرَ عَنْهُ ذَلِكَ كُلَّ ذَنْبٍ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর বান্দাকে অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এভাবে আল্লাহ তার সমস্ত গুনাহ
মুছে দেন’।[43]
.
.
বিপদগ্রস্ত কোন মুমিন ভাইকে সান্ত্বনা দিলে অশেষ ছওয়াব অর্জিত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَزِّيْ أَخَاهُ بِمُصِيْبَةٍ إِلَّا كَسَاهُ اللهُ مِنْ حُلَلِ الْكَرَامَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘কোন মুমিন যদি কোন বিপদগ্রস্ত মুমিনকে সান্ত্বনা দেয়, তাহ’লে আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন সম্মানিত পোশাক পরাবেন’।[44]
.
.
উল্লেখ্য যে, বিপদের প্রথম অবস্থাতেই ধৈর্যধারণ করতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ابْنَ آدَمَ إِنْ صَبَرْتَ وَاحْتَسَبْتَ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُوْلَى لَمْ أَرْضَ لَكَ ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةِ- ‘হে আদম সন্তান! যদি তুমি বিপদের প্রথমেই ধৈর্যধারণ কর এবং নেকীর আশা রাখ, তাহ’লে আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন নেকীতে সন্তুষ্ট হব না’।[45]
.
.
(ঘ) চোখ হারিয়ে ধৈর্যধারণ :
__________________________
.
.
মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ। এ চোখ বিনষ্ট হ’লে কিংবা এতে দৃষ্টি শক্তি না থাকলে মানুষ দুনিয়ার কোন কিছুই দেখতে পায় না। পার্থক্য করতে পারে না ভাল-মন্দ। কাজেই এ চোখ মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত এক অনুপম নে‘মত। এ চোখ কারো বিনষ্ট হ’লে এবং সে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,قَالَ اللهُ تَعَالى إِذَا قَبَضْتُ مِنْ عَبْدِيْ كَرِيْمَتَهُ وَهُوَ بِهَا ضَنِيْنٌ لَمْ أَرْضَ لَهُ ثَوَابًا دُوْنَ الْجَنَّةَ- ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দা থেকে তার সম্মানিত বস্ত্ত তথা চোখ কেড়ে নিলে যদি সে তাতে ধৈর্যধারণ করে, তাহ’লে আমি তাকে একমাত্র জান্নাত দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু প্রদানে সন্তুষ্ট নই’।[46]
.
.
২০. আল্লাহর নাম মুখস্থ করা :
__________________________
.
.
নবী করীম জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নামসমূহ মুখস্থ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন,لِلَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُوْنَ اسْمًا مِائَةً إِلاَّ وَاحِدَةً لاَ يَحْفَظُهَا أَحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ- ‘আল্লাহর নিরানববইটি এক কম একশতটি নাম রয়েছে। যে তা মুখস্থ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[47]
.
.
২১. উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া :
__________________________
.
.
চরিত্রবান লোক সকলের নিকটে সম্মানিত ও সমাদৃত। তিনিই সর্বোত্তম ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنْ أَخْيَرِكُمْ أَحْسَنَكُمْ خُلُقًا ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম, যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম’।[48] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ‘পূর্ণ মুমিন সে, যার চরিত্র উত্তম’।[49]
.
.
তিনি আরো বলেন, إنَّ أثْقَلَ شَيْئٍ يُوْضَعُ فِيْ مِيْزَانِ الْمُؤْمِنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ خُلُقٌ حَسَنٌ. ‘ক্বিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশী ভারি হবে তা হচ্ছে উত্তম চরিত্র’।[50]
.
.
উত্তম চরিত্রের অধিকারী লোকই অধিক হারে জান্নাতে প্রবেশ করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ فَقَالَ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ، أتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ فَقَالَ الْفَمُ وَالْفَرْجُ- ‘তোমরা কি জান কোন জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হচ্ছে আল্লাহর ভয় বা তাক্বওয়া ও উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায় কোন জিনিস? একটি হচ্ছে মুখ ও অপরটি লজ্জাস্থান’।[51]
__________________________
.
.
21]. বুখারী হা/২৭৯০; মিশকাত হা/৩৭৮৭।
[22]. বুখারী হা/২৮১৭; মুসলিম হা/১৮৭৭।
[23]. বুখারী হা/২৮০৯; তিরমিযী হা/৩১৭৪; মিশকাত হা/৩৮০৯।
[24]. তিরমিযী হা/১৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/২৭৯৯; মিশকাত হা/৩৮৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২১৩।
[25]. তিরমিযী হা/১৬৬৯; মিশকাত হা/৩৮৩৭, সনদ ছহীহ।
[26]. মুসলিম হা/১৯০২; মিশকাত হা/৩৮৫২।
[27]. বুখারী হা/২৮৯২; মুসলিম হা/১৯১৩; মিশকাত হা/৩৭৯১।
[28]. বুখারী হা/২৭৯২; মুসলিম হা/১৮৮০; মিশকাত হা/৩৭৯২।
[29]. তিরমিযী হা/১৬২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৫৬২; মিশকাত হা/৩৮২৩।
[30]. বুখারী হা/২৮১১; মিশকাত হা/৩৭৯৪।
[31]. নাসাঈ হা/৩১১০; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ।
[32]. নাসাঈ হা/৩১১০-১২; মিশকাত হা/৩৮২৮, সনদ ছহীহ।
[33]. বুখারী হা/১২৫১; মুসলিম হা/২৬৩২; মিশকাত হা/১৭২৯।
[34]. মুসলিম হা/২৬৩২; মিশকাত হা/১৭৩০।
[35]. মুসলিম হা/২৬৩৫; মিশকাত হা/১৭৫২।
[36]. বুখারী হা/৭৩১০; মুসলিম হা/২৬৩৩; মিশকাত হা/১৭৫৩।
[37]. আহমাদ, মিশকাত হা/১৭৫৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪১৬।
[38]. তিরমিযী হা/১০২১, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪০৮।
[39].বুখারী হা/১০২; মুসলিম হা/২৬৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩০৬।
[40]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/১৭৩৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৮৬।
[41]. আবু দাউদ হা/৩০৯২; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২১৪/৭১৪।
[42]. মুসলিম হা/২৫৭৫।
[43]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/১২৮৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩৯৩।
[44]. ইবনু মাজাহ হা/১৬০১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৩০৫/১৯৫; ইরওয়া হা/৭৬৪।
[45]. ইবনু মাজাহ হা/১৫৯৭; মিশকাত হা/১৭৫৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৪৩।
[46]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯২০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০১০।
[47]. বুখারী হা/৬৪১০; মুসলিম হা/২৬৭৭; মিশকাত হা/২২৮৭।
[48]. বুখারী হা/৩৫৫৯।
[49]. আবুদাউদ হা/৪৬৮২; তিরমিযী হা/১১৬২;মিশকাত হা/৫১০১; সনদ হাসান ছহীহ।
[50]. তিরমিযী হা/২০০২; মিশকাত হা/৫০৮১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৭৬; সনদ হাসান।
[51]. তিরমিযী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৬; মিশকাত হা/৪৬২১, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭৭।
পোস্টার ডিজাইনারঃ-রাজভির হোসেন।
___________________
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
► আপনার যদি পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করুন ও পরবর্তী আপডেট পেতে পেজটি লাইক দিয়ে রাখুন। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকে তার জন্য ঠিক ঐ পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে, যে পরিমাণ পাবে তাকে অনুসরণকারীরা।” [সহীহ মুসলিম/২৬৭৪,৬৮০৪]
► আমাদের পোস্টগুলি কপিরাইট মুক্ত! সুতরাং আপনি চাইলে পেজের কনটেন্টগুলো হুবহু কপি করে ফেসবুক বা যেকোন মাধ্যমে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে প্রচার করতে পারেন বিনা অনুমতিতে।
জায্বাকুমুল্লাহ।
►আলিমদের সাথে,সালাফদের পথে।
►বার্তা-The Massage Of Allah S.W.T
► https://www.facebook.com/
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite
0 Comments