Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

হাদিস বিষয়ক পার্ট ০৩


প্রশ্নঃ মুসলিম ২১৪২ নং হাদীছ থেকে বুঝা যায় আত্ম প্রশংসামূলক নাম রাখাকে রাসূল (ছাঃ) অপসন্দ করতেন। এক্ষণে অধিক পরহেযগার, দানশীল ইত্যাদি অর্থবোধক নাম রাখা যাবে কি?
ANSWER
🎤 উক্ত হাদীছ অনুযায়ী জনৈকা মহিলার নাম ছিল বাররাহ, যার অর্থ গুনাহমুক্ত। রাসূল (ছাঃ) তা পরিবর্তন করে যয়নব (সুন্দর ও সুগন্ধিযুক্ত বৃক্ষ) রেখে বললেন, তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তোমাদের মধ্যে কে সর্বাধিক সৎ আমলকারী সে সম্পর্কে আল্লাহই সম্যক অবগত (মুসলিম হা/২১৪২; মিশকাত হা/৪৭৫৬)। অতএব আব্দুল্লাহ (আল্লাহর দাস), আব্দুর রহমান ইত্যাদি নাম রাখাই উত্তম। কেননা ‘এ নামগুলিই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়’ (মুসলিম হা/২১৩২; মিশকাত হা/৪৭৫২)।

উল্লেখ্য যে, নিজের নাম ঐরূপ রাখাকে আত্মপ্রশংসামূলক বলা হয়, যা নিষিদ্ধ। কিন্তু আক্বীক্বার সময় শিশু সন্তানের নাম ঐরূপ রাখা তার জন্য আত্মপ্রশংসা নয়। বরং পিতা ও অভিভাবকদের পক্ষ হ’তে তার জন্য শুভ কামনা বা দো‘আ স্বরূপ। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর নাম তার দাদা রেখেছিলেন ‘মুহাম্মাদ’ ও মা রেখেছিলেন ‘আহমাদ’ (প্রশংসিত)। অনুরূপভাবে রাসূল (ছাঃ) মুতার যুদ্ধবিজয়ী সেনাপতি খালেদকে দো‘আ করে অশ্রুসজল নেত্রে বলেছিলেন, এবারে ঝান্ডা হাতে নিয়েছে ‘আল্লাহর তরবারি সমূহের অন্যতম ‘তরবারি’। অতঃপর আল্লাহ তাদের হাতে বিজয় দান করেন’ (বুখারী হা/৪২৬২)। অর্থাৎ খালেদ নিজে ঐ নাম অর্থাৎ ‘সায়ফুল্লাহ’ নাম গ্রহণ করেননি, বরং তাঁর অভিভাবক রাসূল (ছাঃ) তাকে ঐ লকব দিয়েছিলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর নিজের ছেলে আব্দুল্লাহর লকব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহির (পবিত্র)। অতএব পিতা-মাতা তার সন্তানের জন্য দো‘আ হিসাবে উক্ত গুণবাচক নাম সমূহ রাখতে পারেন। তবে তা যেন অহংকার প্রকাশক না হয়।

জাবের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইয়া‘লা, বারাকাহ, আফলাহ, ইয়াসার, নাফে‘ প্রভৃতি নাম নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি চুপ হয়ে যান। অতঃপর তার মৃত্যু হয়, কিন্তু এগুলো থেকে আর নিষেধ করেননি। পরে ওমর (রাঃ) এসব নাম নিষেধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে বাদ দেন’ (মুসলিম হা/২১৩৮; মিশকাত হা/৪৭৫৪)। এতে বুঝা যায় যে, এই নামগুলি হারামের পর্যায়ে ছিল না। তবে অপসন্দনীয় ছিল।

ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পরে চুপ হয়ে যান উম্মতের উপরে রহমত স্বরূপ। যাতে ঝগড়া ও ফিৎনা ব্যাপকতা লাভ না করে। কারণ অধিকাংশ মানুষ ভাল-মন্দ নামের মধ্যে তারতম্য করতে পারে না (মিরক্বাত ৯/১০৭)।

বস্ত্ততঃ নাম রাখার উদ্দেশ্য হ’ল তার ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয় তুলে ধরা। অতএব বাংলাদেশ সহ যেকোন অনারব দেশে আরবীতে ইসলামী নাম রাখাই কর্তব্য।
প্রশ্নঃ বেদানা জান্নাত থেকে পরাগায়িত ফল এবং তা খেলে ৪০ দিনের জন্য হৃদয় আলোকিত হয় এবং শয়তান নির্বাক হয়ে যায় মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহ কি ছহীহ?
ANSWER
🎤 উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছসমূহ মওযূ‘ বা জাল, যার অধিকাংশ রাফেযী শী‘আদের তৈরী মিথ্যা বর্ণনা মাত্র (যঈফ আত-তারগীব হা/২২১০; যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৯/৩৯২-৯৩; সৈয়ূতী, আল-লাআলি আল-মাছনূ‘ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ ২/১৭৭)।
প্রশ্নঃ বুখারী হা/৩১-এ বর্ণিত হয়েছে, আহনাফ বিন ক্বায়েস (রাঃ) ছিফফীনের যুদ্ধে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে আবু বাকরাহ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তিনি তার যাত্রার কারণ শুনে বললেন, তুমি বাড়ি ফিরে যাও। কারণ রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন দু’জন মুসলমান পরস্পর মুখোমু

ANSWER
🎤 এ বিষয়ে চুপ থাকতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আমার ছাহাবীদের ব্যাপারে তোমরা চুপ থাকো (ত্বাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪)। ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,تِلْكَ دِمَاءٌ طَهَّرَ اللَّهُ مِنْهَا يَدَيَّ، فَمَا لِي أُخَضِّبُ لِسَانِي مِنْهَاসেটি ছিল রক্তাক্ত ইতিহাস, আল্লাহ তা থেকে আমার হাতকে মুক্ত রেখেছেন। তাহ’লে এ বিষয়ে কথা বলে খামাখা কেন আমি আমার জিহবাকে রঞ্জিত করব? (ইবনু তায়মিয়াহ, মিনহাজুস সুন্নাহ ৬/২৫৪)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালি দিও না। যার হাতে আমার প্রাণ, সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তথাপিও সে তাঁদের কোন একজনের পূর্ণ এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ দান সমপরিমাণও পৌঁছতে পারবে না’ (বুখারী, হা/৩৬৭৩)। তিনি বলেন,

দ্বিতীয়তঃ ছাহাবায়ে কেরাম ক্ষমাপ্রাপ্ত। আল্লাহ বলেন, মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যে যারা অগ্রবর্তী ও প্রথম দিককার এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছে নিষ্ঠার সাথে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন জান্নাত, যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর এটাই হ’ল মহা সফলতা (তওবা ১০০)।

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল, তারা ছাহাবায়ে কেরামের ব্যাপারে তাদের হৃদয় ও জিহবাকে সংযত রাখেন, তাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণকারী ও গালিদানকারী রাফেযীদের পথ থেকে দূরে থাকেন এবং তাদের মাঝে মতভেদগত বিষয়ে চুপ থাকেন (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩/১৫৪-৫৫)।

এক্ষণে ‘হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামী’ কথাটি সম্পর্কে মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণের ব্যাখ্যা হ’ল এই যে, এটি হ’ল ধমকিমূলক হাদীছ (من باب الوعيد)যেমন বলা হয়েছে, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকী এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী (বুখারী হা/৪৮; মুসলিম হা/৬৪; মিশকাত হা/৪৮১৪)। এর দ্বারা ধমকি বুঝানো হয়েছে। কেননা এর দ্বারা সে প্রকৃত কাফের হয় না। যেরূপ খারেজী চরমপন্থীরা বলে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদা মতে কেবল নবীগণ নিষ্পাপ, অন্যেরা নন। তাছাড়া এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, ছাহাবীগণ পরস্পরে ইছলাহের জন্য বের হয়েছিলেন, হত্যার জন্য নয়। অতএব উপরোক্ত ধমকি ছাহাবীগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাঁদের অন্তরের খবর রাখতেন। আর তিনি তাদের উপর রাযী হয়েছেন এবং তাদের জন্য জান্নাত প্রস্ত্তত রেখেছেন (তওবা ৯/১০০)। অতএব ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে তাঁদের বিষয়ে কোন মন্তব্য করা অন্যায় কাজ হবে।
প্রশ্নঃ ছহীহ বুখারীতে ‘যাব’ নামক প্রাণী খাওয়া হালাল বলা হয়েছে। এর দ্বারা কোন প্রাণী বুঝায়?
ANSWER
🎤 যাব’ (الضَّبُّ) সরীসৃপ জাতীয় বুকে ভর দিয়ে চলা একটি প্রাণী। যার শরীরের চামড়া পুরু ও অমসৃণ। লেজ চওড়া, খসখসে ও অধিক গিটবিশিষ্ট। আরব মরু অঞ্চলে এটি অধিকহারে পাওয়া যায় (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)। এটি দেখতে গুই সাপের ন্যায়, তবে গুইসাপ নয়। গুই সাপ আরবী ‘ওয়ারাল’ (الوَرَلُ) নামক প্রাণীর সাথে হুবহু মিলে যায়। যা পানিতে ও স্থলে উভয় স্থানে বসবাস করে এবং বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ, সাপ ইত্যাদি ভক্ষণ করে। আরবরা এটি খায় না (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)। তবে যাব-এর সাথে সাদৃশ্যের কারণে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম যাব-এর ন্যায় ওয়ারাল বা গুইসাপ খাওয়াও জায়েয বলেছেন। সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রহঃ)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একে হালাল বলেন (মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৮৭৪৭)। এছাড়া ইবনু হাযম (রহঃ) এটিকে হালাল প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন (মুহাল্লা ৫/২৫০)। এসব প্রাণী রুচি হ’লে খাবে, না হ’লে খাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) খাননি (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪১১০-১১)। যদিও তিনি প্রথমে নিষেধ করেছিলেন (আবুদাঊদ হা/৩৭৯৬; , আওনুল মা‘বূদ)।
প্রশ্নঃ খেলাফতের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আবুবকর (রাঃ) কর্তৃক জনৈকা বৃদ্ধার পরিচর্যার ঘটনাটি কি সত্য?
ANSWER
🎤 ঘটনাটি প্রসিদ্ধ কিন্তু বিশুদ্ধ নয়। এ মর্মে একাধিক ঘটনা বর্ণিত হ’লেও এর কোনটি ভিত্তিহীন, কোনটির সনদ অত্যন্ত যঈফ। যেমন ইবনু আসাকির তার ইতিহাস গ্রন্থে আবু ছালেহ গেফারীর বর্ণনাসূত্রে এ ঘটনাটি সংকলন করেছেন (তারীখু ইবনু আসাকির ৩০/৩২২)। অথচ তিনি আবুবকর বা ওমর (রাঃ) এমনকি আলী (রাঃ)-এর যুগও পাননি (তাহযীবুত তাহযীব ৪/৫৯)। আরেক বর্ণনাকারী হাজ্জাজ বিন শাদ্দাদ অপরিচিত। ইবনু কাত্ত্বান বলেন, হাজ্জাজ-এর অবস্থা জানা যায় না (তাহযীবুত তাহযীব ২/২০২)। অপর বর্ণনাকারী রিশদীন বিন সা‘দ অত্যন্ত যঈফ। ইমাম নাসাঈ, আহমাদ, ইবনু সা‘দ, আবু হাতেম, আবু যুর‘আ প্রমুখ তাকে যঈফ বলেছেন (তাহযীবুত তাহযীব ৩/২৪০-২৪১)। এছাড়া ইবনু সা‘দ তার ত্বাবাকাতে অনুরূপ একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেটি নিতান্তই যঈফ (ত্বাবাকাতে কুবরা ৩/১৩৮, ৩০/৩২৪; তাহযীবুত তাহযীব ৩/৩২৩-৩২৬)। অতএব আবুবকর (রাঃ) থেকে এরূপ কোন ঘটনার সত্যতা নেই।
প্রশ্নঃ মাযহাব সাব্যস্ত করার জন্য মাযহাবপন্থী ভাইগণ একটি হাদীছ পেশ করে থাকেন যেখানে বলা হয়েছে যে, ‘তোমরা বড় জামা‘আতের অনুসরণ কর’। অর্থাৎ চার মাযহাবের অনুসরণ কর। এ হাদীছের সত্যতা জানিয়ে বাধিত করবেন।
ANSWER
🎤 প্রথমতঃ প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীছটি নিতান্তই যঈফ (ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫০, সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮৯৬; বিস্তারিত দ্রঃ আলবানী, মিশকাত হা/১৭৪-এর টীকা ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘কিতাব ও সন্নাহকে আঁকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ পৃঃ ৩০)। দ্বিতীয়তঃ হাদীছটি পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের বিরোধী, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে। কারণ তারাতো শুধু কল্পনার অনুসরণ করে এবং অনুমানভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১১৬)। তৃতীয়তঃ চার মাযহাব একটি দল নয়; বরং চারটি দল। হিজরী ৪র্থ শতাব্দীর নিন্দিত যুগের পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিল না (শাহ অলিউল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ১/১৫২-৫৩ ‘৪র্থ শতাব্দী ও তার পরের লোকদের অবস্থা বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)। এর অনেক পূর্বেই ছাহাবায়ে কেরামের স্বর্ণযুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। প্রকৃত অর্থে ছাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত ছিল বড় জামা‘আত। এ সম্পর্কে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমার উম্মতের ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে আর একটিমাত্র দল জান্নাতে যাবে। সেটিই হ’ল বড় জামা‘আত’(আবুদাঊদ হা/৪৫৯৭, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৭২)। উক্ত বড় জামা‘আতের অর্থ আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘হক-এর অনুসারী দলই জামা‘আত। যদিও তুমি একাকী হও’ (ইবনু আসাকির, তারীখু দেমাশক্ব ১৩/৩২২ পৃঃ; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/১৭৩-এর টীকা নং (৫)।

অতএব হক-এর অনুসারী একজন ব্যক্তি হ’লেও তিনি বড় জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত। সংখ্যায় অধিক হ’লেই সেটি বড় জামা‘আত নয়। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃশর্ত অনুসারীগণই প্রকৃত অর্থে হকপন্থী। আর তারা হ’লেন ছাহাবায়ে কেরাম, সালাফে ছালেহীন ও তাদের যথাযথ অনুসারী সকল যুগের আহলেহাদীছগণ। সুতরাং যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), খুলাফায়ে রাশেদীন ও ছাহাবায়ে কেরামের যথাযথ অনুসরণ করবেন, তারাই বড় জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত হবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ আদাবুল মুফরাদ ও তারীখুল কাবীর ইমাম বুখারী (রহঃ) কর্তৃক সংকলিত হওয়া সত্ত্বে্ও এর মধ্যে যঈফ বর্ণনা থাকার কারণ কি?
ANSWER
ইমাম বুখারী ছহীহ বুখারী সংকলনের ক্ষেত্রে যেসব কঠিন শর্তসমূহ আরোপ করেছিলেন, আল-আদাবুল মুফরাদ ও তারীখুল কাবীর গ্রন্থে সেসব শর্ত আরোপ করেননি। ফলে সেখানে অনেক দুর্বল বর্ণনা স্থান পেয়েছে, যা পৃথক করা তাঁর জীবদ্দশায় সম্ভব হয়নি। তাই তিনি নিজ থেকে সেগুলির ছহীহ-যঈফ হওয়ার ব্যাপারে কোন হুকুম পেশ করেননি। বরং প্রত্যেকটি হাদীছ সনদ সহ বর্ণনা করেছেন। যাতে পরবর্তী মুহাদ্দিছগণ সনদের উপর গবেষণা করে ছহীহ-যঈফ বাছাই করে নিতে পারেন।
প্রশ্নঃ প্রতি হাযারে একজন জান্নাতে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।
ANSWER
🎤 হাদীছটির ব্যাখ্যা হাদীছের মধ্যেই রয়েছে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন হে আদম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হ’তে জাহান্নামীদের বের করে দেন। আদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন।... এ বক্তব্য লোকদের জন্য খুবই কঠিন হ’ল। এমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, দেখ ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় থেকে হবে ৯৯৯ জন। আর তোমাদের মধ্য থেকে হবে ১ জন। তারপর বললেন, মানুষের মধ্য হ’তে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে একটি সাদা গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি কালো পশম অথবা একটি কালো গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি সাদা পশমের মত।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি আশা করি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একথা শুনে ‘আল্লাহ আকবার’ বললাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবে। আমরা আবারো ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম। আর অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের তিন ভাগ হবে। তখন আমরা ‘আল্লাহু আকবার’ বললাম (বুখারী হা/৪৭৪১; মিশকাত হা/৫৫৪১ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ)। সুতরাং জাহান্নামীদের মধ্যে প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায়ের হবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদী জান্নাতের তিন চতুর্থাংশ হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন।
প্রশ্নঃ ছহীহ হাদীছের আলোকে মৃত ব্যক্তিকে গোসল, কাফন-দাফন ও খাটিয়া বহনের ফযীলত সম্পর্কে জানতে চাই।
ANSWER
🎤 মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফন-দাফনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করাবে, অতঃপর তার গোপনীয়তা সমূহ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করবে, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন’ (হাকেম হা/১৩০৭; ছহীহ তারগীব হা/৩৪৯২; আলবানী, আহকামুল জানায়েয হা/৩০, ১/৫১, সনদ ছহীহ)।

দাফনের উদ্দেশ্যে মাইয়েতের খাটিয়া বহন নিঃসন্দেহে নেকীর কাজ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় কোন জানাযায় শরীক হ’ল এবং দাফন শেষে ফিরে এলো, সে ব্যক্তি দুই ‘ক্বীরাত’ সমপরিমাণ নেকী পেল। প্রতি ‘ক্বীরাত’ ওহোদ পাহাড়ের সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি কেবলমাত্র জানাযা পড়ে ফিরে এলো, সে এক ‘ক্বীরাত’ পরিমাণ নেকী পেল’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৬৫১)। তবে ‘জানাযার খাটিয়া বহন করলে তা চল্লিশটি কবীরা গোনাহের কাফফারা হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মুনকার বা যঈফ (ত্বাবারাণী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১৮৯১)। এছাড়া বহনের সময় ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্ল¬াহ’, ‘আল্ল¬াহু আকবার’ ইত্যাদি বলে যিকির করার কোন বিধান নেই।
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি বলে, যে ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত টুপী পরিধান করবে, ক্বিয়ামতের দিন সূর্যের তাপ ঐ ব্যক্তির শরীরে লাগবে না। এ বর্ণনার কোন সত্যতা আছে কি?
ANSWER
🎤 কথাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। উল্লেখ্য যে, মাথা ঢাকা বা টুপী পরা শিষ্টাচারমূলক পোষাকের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে তাক্বওয়ার পোশাক হিসাবে গণ্য করা হয় (দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ৪৭)।
প্রশ্নঃ ছহীহ বুখারীতে এসেছে ‘যদি হাওয়া খেয়ানত না করতেন, তবে যুগে যুগে কোন নারী তার স্বামীর সাথে খেয়ানত করত না’। হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই।
ANSWER
🎤 রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এখানে নারীর ফিৎরাতের কথা বলেছেন, তার কর্মকে দায়ী করেন নি। যেমন অন্য হাদীছে আদম তার আয়ুষ্কালকে অস্বীকার করেছিলেন বলে মানুষ অস্বীকার করে বলা হয়েছে (তিরমিযী হা/৩০৭৬, মিশকাত হা/১১৮)। এর অর্থ এটা নয় যে, বনু আদমের অস্বীকারের জন্য আদম (আঃ) দায়ী হবেন। কারণ একজনের পাপের বোঝা অন্যে বইবে না (আন‘আম ১৬৪ ও অন্যান্য)। আল্লাহ নিজেও হাওয়াকে এককভাবে এ বিষয়ে দায়ী করেননি। বরং কুরআনে শয়তান ‘আদম’কে এবং ‘আদম ও হাওয়া’ উভয়কে প্রতারিত করেছিল বলে বর্ণিত হয়েছে (ত্বোয়াহা ১২০, আ‘রাফ ২০)।

অতএব আলোচ্য হাদীছ সহ অন্যান্য হাদীছে ‘হাওয়া আদমকে উৎসাহিত করেছিলেন’ মর্মে যা কিছু বলা হয়েছে সবটারই উদ্দেশ্য হ’ল, নারীর স্বাভাবিক প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করা। যাতে মুমিন নারী ও পুরুষ স্ব স্ব মন্দ প্রবণতাকে সংযত রাখে।
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, বিদায়কালে মুছাফাহা করতে হবে না, কেবল সালাম দিতে হবে। কারণ মুছাফাহা করার হাদীছ যঈফ। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান জানতে চাই।
ANSWER
🎤 বিদায় বেলায় মুছাফাহা করা যাবে। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন কোন ব্যক্তিকে বিদায় দিতেন, তখন তার হাত ধরতেন এবং বিদায় হওয়া ব্যক্তি তাঁর হাত না ছাড়া পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ) তার হাত ছাড়তেন না। অতঃপর তিনি দো‘আ করে দিতেন...’ (তিরমিযী হা/৩৪৪২, মিশকাত হা/২৪৩৫)।
প্রশ্নঃ বেলাল (রাঃ) আযান দেওয়ার সময় ‘শীন’-কে ‘সীন’ উচ্চারণ করায় কারু আপত্তির জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, إن سين بلال عند الله شينবেলালের সীন উচ্চারণই আল্লাহর নিকটে শীন। এ ঘটনার সত্যতা জানতে চাই।
ANSWER

🎤 এটি মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত কথা মাত্র। ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন, ঘটনাটির কোন ভিত্তি নেই (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/১০২)। ‘আজলূনীও তাই বলেছেন (কাশফুল খাফা ‘আম্মাশতাহারা মিনাল আহাদীছ ফী আলসিনাতিন নাস হা/১৫২০)। এছাড়া মোল্লা আলী ক্বারী, ‘আমেরী, মুহাম্মাদ তারাবলেসী, আলী হারাবী, সাখাবী সহ বহু মুহাদ্দিছ তাদের মওযূ‘আত তথা জাল হাদীছের সংকলন গ্রন্থসমূহে বর্ণনাটি সংকলন করেছেন।

আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite

Post a Comment

0 Comments