📚হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট সম্পর্কে হাদিস ও এর ব্যাখ্যা..

📚হাদীস:-  হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর সে সন্দেহ যুক্ত বস্তুতে পতিত হলো সে হারামেই পতিত হলো।

عن النعمان بن بشير رضي الله عنه قال: سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: «إن الحلال بيِّن وإن الحرام بين، وبينهما أمور مُشْتَبِهَاتٌ لا يعلمهن كثير من الناس، فمن اتقى الشُّبُهات فقد اسْتَبْرَأ لدينه وعرضه، ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام، كالراعي يرعى حول الحِمى يوشك أن يَرْتَع فيه، ألا وإن لكل مَلِك حِمى، ألا وإن حِمى الله محارمه، ألا وإن في الجسد مُضغة إذا صلحت صلح الجسد كله وإذا فسدت فسد الجسد كله ألا وهي القلب».  

✍ নু‘মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, “হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দু’য়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে - যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকবে, সে তার দীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হল সে হারামেই লিপ্ত হল। যেমন রাখাল, যে তার পশু বাদশাহের সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশংকা রয়েছে। জেনে রাখ যে, প্রত্যেক বাদশাহরই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরো জেনে রাখ যে, আল্লাহর জমীনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ। জেনে রাখ, শরীরে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হলো অন্তর।”

👉প্রমান-সহীহ –[ মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)। তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ। তাখরীজ: বুখারী, ঈমান ৫২; মুসলিম, মাসাকাহ ১৫৯৯। আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৭২১ ও মুসনাদুল হুমাইদী নং ৯৪৩, ৯৪৭ তে]

📚 ব্যাখ্যা:-

🔰সাধারণ নীতিমালা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হালাল করেছেন এবং যা হারাম করেছেন তার প্রত্যেকটিই স্পষ্ট। আর মুসলিমের ওপর আশঙ্কা হচ্ছে সন্দেহজনক বিষয়সমূহের। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহকে পরিত্যাগ করবে, সে হারামে পতিত হওয়া থেকে দূরে রেখে তার দীনকে রক্ষা করতে পারবে। একই সাথে এই সন্দেহজনক কাজ করার কারণে মানুষ তাকে দোষারোপ করার যে সম্ভাবনা তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকবে না, সে নিজেকে হয়তো হারামে পতিত হওয়ার দিকে ধাবিত করল অথবা নিজেকে মানুষের গীবতের লক্ষ্যে পরিণত করল ও তাদেরকে অপমান করার সুযোগ দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির জন্য একটি উদাহরণ দিলেন যে ব্যক্তি সন্দেহ যুক্ত বস্তুতে লিপ্ত থাকে সে ঐ রাখালের ন্যায়, যে তার উট অথবা বকরি বাদশাহের সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, নিকটে হওয়ার কারণে অচিরেই সেগুলোর সেখানে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে, সে এ কারণে স্পষ্ট হারামের নিকটবর্তী হয়ে যাবে। অতঃপর শীঘ্রই সে তাতে পতিত হবে। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, নিশ্চয় প্রকাশ্য আমল অপ্রকাশ্য আমলের প্রমাণ বহন করে ভালো হোক বা মন্দ হোক। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন যে, শরীরে একটি গোশতের টুকরো আছে (তা হচ্ছে কলব), তার সুস্থতায় শরীর সুস্থ থাকে। আর তার অসুস্থতায় শরীর খারাপ হয়ে যায়।

 🔰 ফায়দাসমূহ

✍হালাল কর্ম করা এবং হারাম ও সংশয়যুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে উৎসাহ প্রদান। 

✍সংশয়যুক্ত বিষয়সমূহের রয়েছে বিশেষ বিধান যার ওপর রয়েছে শর‘ঈ দলীল। কতক তা উপলব্ধি করতে পারে যদিও অধিকাংশ মানুষের কাছে তা অজ্ঞাত। 

✍যে তার কামাই-রুজি ও যাবতীয় লেন-দেনের ক্ষেত্রে সংশয় থেকে বেঁচে না থাকে সে নিজেকে তাতে অভিযোগের জন্য পেশ করল। 

✍আত্মার গুরুত্বের অনেক বড় এবং তা সংশোধনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা। কারণ, সেটি হলো শরীরের আমীর। তার সংশোধনের দ্বারা সারা শরীর সংশোধন হয় এবং তার ধ্বংসের দ্বারা সারা শরীর ধ্বংস হয়। 

✍হালাল ও হারামের বিবেচনায় সবকিছু তিনভাগে বিভক্ত। একটি হলো সুস্পষ্ট হারাম, অপরটি সুস্পষ্ট হারাম আর অপরটি সংশয়যুক্ত। 

✍দীনের যাবতীয় বিষয়সমূহের হিফাযত করা এবং মানবতার প্রতি যত্ন নেওয়া। 

✍হারামের দিকে ধাবিত করে এমন সবকিছু দরজা বন্ধ করে দেওয়া। শরী‘আত এর প্রমাণাদি অশংখ্য। 

✍শরীয়াতের আমলী বিষয় স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে দৃষ্টান্ত পেশ করা। 

👉আরও প্রমান- [বুখারী ৫২, ২০৫১, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিযী ১২০৫, নাসায়ী ৪৪৫৩, ৫৭১০, আবূ দাঊদ ৩৩২৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৪, আহমাদ ১৭৮৮, ১৭৯০৩, দারেমী ২৫৩১]