সিয়াম কি, আভিধানিক ও পরিভাষা,
ও কুরআন হাদিসে সিয়াম সিয়াম; আভিধানিক অর্থ,
নয়!
🔷সিয়াম:
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য বিশেষ কিছু কল্যাণময় মরশুম নির্ধারণ করে
তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। সেসময় তাদের সৎকর্মের পুরস্কার বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া
হয়, অসৎকর্মগুলিকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, মানুষের মর্যাদা উঁচু করা হয়
এবং ঈমানদারদের হৃদয় স্বীয় প্রভুর প্রতি নিবিষ্ট হয়। যারা নিজেদেরকে পবিত্র ও
পরিশুদ্ধ করে নিতে পারে তারা সাফল্য লাভ করে আর যারা নিজেদের দূর্নীতিগ্রস্ত রাখে
তারা ব্যর্থ হয়। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে নিজের ইবাদতের জন্য সৃষ্টি
করেছেন। তাঁর মহত্বপূর্ণ ইবাদতগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত সিয়াম (রোযা)।
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য সিয়ামকে বাধ্যতামূলক করেছেন।
🔷সিয়ামের
আভিধানিক অর্থ:
আরবি শব্দ “সিয়াম”-র আভিধানিক অর্থ পরিহার করা, বিরত
থাকা।
🔷ইস্লামি
পরিভাষা:
এর অর্থ: সওম পালনের সংকল্প (নিয়ত) করে ভোর থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্তওই সমস্ত জিনিস থেকে বিরত থাকা, যা সিয়ামকে ভেঙে দেয়, নষ্ট
করে দেয়।
🔷কুর্আন:
“হে ঈমানদারগণ ! তোমাদের ওপর সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্যরূপে নির্ধারিত করা হলো
যেরূপ নির্ধারিত করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে
তোমরা আত্মসংযমী হতে পার”। [সূরা বাকারা ২:১৮৩]
আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বান্দাদের সিয়াম পালনের প্রতি উৎসাহ দিচ্ছেন : “… তোমরা যদি
বুঝে থাকো তাহলে সিয়াম পালনই তোমাদের জন্য কল্যাণকর”। [সূরা
বাকারা ২:১৮৪]
তিনি সিয়ামকে মানবজাতির জন্য প্রিয় ও সহজ করেছেন, যেন
তাদের অভ্যাস এবং যার প্রতি তারা অভ্যস্ত, সেটা পরিত্যগ করতে তাদের
কোনো প্রকার কষ্ট না হয়। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন: “… নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য …”। [সূরা বাকারা ২:১৮৪]
তিনি তাদের ওপর করুণা করেন এবং তাদেরকে যাবতীয় কষ্ট ও অনিষ্ট হতে রক্ষা করেন।
যেমন তিনি বলছেন : “… তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্যদিনে এই
সংখ্যা পূরণ করে নেবে …”। [সূরা বাকারা ২:১৮৪]
🔷হাদিস:
আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করছেন, রসূলুল্লাহ্ ﷺবলেন : “তোমাদের নিকট এসে গেছে রমযান মাস, একটি কল্যাণময় মাস। আল্লাহ্
তাআলা তোমাদের জন্য এর সিয়ামকে অপরিহার্য করেছেন। এই মাসে আকাশের দরজাগুলি খুলে
দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বিতাড়িত অহংকারী শয়তানের পায়ে
শিকল পরিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ্র শপথ ! এর মধ্যে এমন একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার
মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এই রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত থাকবে সে সর্বতোভাবে
বঞ্চিত থাকবে”। (মুস্নাদে আহ্মাদ ও নাসায়ি। দেখুন:
আলবানির “সহি সুনানে নাসায়ি”, হাঃ ১৯৯২ এবং “সহি
তারগিব ওয়া তারহিব”,
হাঃ ৯৮৫)
আবু হুরাইরা(রাঃ) বর্ণনা করছেন, রসূলুল্লাহ্ ﷺবলেন: “রমযানের প্রথম রাতেই শয়তান ও অহংকারী জিনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়।
জাহান্নামের দরজাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়, অতঃপর তার কোনো দরজা
উম্মুক্ত করা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলি খুলে দেওয়া হয়, অতঃপর
তার কোনো দরজা বন্ধ করা হয় না। একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকেন: হে
কল্যাণকামী ! সামনে অগ্রসর হও। হে অনিষ্টকামী ! ক্ষান্ত হও। আল্লাহ্ তাআলা
মানুষকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দেন আর এমনটা প্রত্যেক রাত্রেই হয়”। (আল্বানির সহি তিরমিযি : ৫৪৯)
🔷সিয়ামের
বিধান:
এবিষয়ে সমগ্র মুস্লিম উম্মাহ একমত যে, রমযান মাসের সিয়াম
অপরিহার্য। কুর্আন ও হাদিসে এর প্রমাণ বিদ্যমান। আল্লাহ্ তাআলা বলছেন : “হে
ঈমানদারগণ ! তোমাদের ওপর সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্যরূপে নির্ধারিত করা হলো যেরূপ
নির্ধারিত করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা
আত্মসংযমী হতে পার”। [সূরা বাকারা ২:১৮৩]
রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন : “ইস্লাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত”। তার
মধ্যে তিনি ﷺরমযানের সিয়ামের উল্লেখ
করেছেন। (সহি বুখারি ১:৮)
0 Comments