|
🔘 টীকা-২
🔳 মানহাজ পরিচিতিঃ মানহাজ শব্দের অর্থ চলার স্পষ্ট পথ।
আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর আমরা তাদের সবার জন্যই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিশরীআত ও মিনহাজ-স্পষ্টভাবেচলার পথ।” [সূরাআল-মায়িদাহ:৪৮] সাধারণত স্পষ্ট পথকেই মানহাজ বলা হয়। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরব]
🔘মানহাজ কাকে বলেঃ
→উত্তর:‘মানহাজ’(مَنْهَج)অর্থ: পথ, পন্থা, পদ্ধতি, প্রশস্ত রাস্তা, প্রোগ্রাম, কার্যক্রম, কারিকুলাম ইত্যাদি (মুসলিম হা/২৪৮৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৯২০; মায়েদাহ ৪৮; আহমাদ হা/১৮৪৩০)।
🔘‘একজন মুসলিমের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ইসলামী আদর্শ, রীতি-নীতি বা পদ্ধতি অনুসরণ করে চলে, তাকেই ‘মানহাজ’ বলে। আর একজন মুসলিম ব্যক্তির জীবনের সর্বক্ষেত্রেই যথা, আক্বীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার এবং লেনদেন সবকিছুতেই সালাফী মানহাজ প্রযোজ্য’ (ড. ছালেহ ইবনু ফাওযান, আল-আজওয়াবাতুল মুফীদাহ ‘আন আসইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ, প্রশ্ন নং-৪৪)।
🔘আর ‘সালাফী মানহাজ’-এর পরিচয় হল- ‘সালাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পূর্ববর্তী, পূর্বসূরি, অগ্রবর্তী, পূর্বপুরুষ ইত্যাদি(সূরা আয-যুখরুফ: ৫৬; সূরা আন-নিসা: ২৩; সহীহ বুখারী হা/৬২৮৬)।
🔘পারিভাষিক অর্থে, ছাহাবী, তাবিঈ ও তাবি‘ তাবিঈগণকে ‘সালাফ’ বলা হয়। আর যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণ করেন, তাঁদের পথ ও পদ্ধতির উপর অটল থাকেন, তাঁদেরকে ‘সালাফী’ বলা হয়। যেমন রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
🔘‘আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (ছাহাবীরাগণ)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবিঈগণ)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (তাবি‘ তাবিঈগণ).....’ (সহীহ বুখারী, হা/২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৩)।
এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম আবুল মুযাফফার সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা’ (সাওনুল মানত্বিক, পৃ. ১৫৮)।
🔘অতএব‘সালাফী মানহাজ’ বলতে পূর্বসূরীদের তরীকাকে বুঝায়। অর্থাৎ ছাহাবী ও তাবিঈগণ যে পথ, পন্থা, পদ্ধতি ও রীতি-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তাকেই ‘সালাফী মানহাজ’বলা হয়। আল্লামা সাফ্ফারীনী(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘সালাফদের মানহাজ বলতে উদ্দেশ্য হল- যে আদর্শের উপর ছাহাবায়ে কিরামগণ, তাবিঈগণ ও তাবি‘ তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের মানুষই সাদরে গ্রহণ করেছে। তারা নয়, যাদেরকে বিদ‘আতী আখ্যায়িত করা হয়েছে অথবা যারা অসন্তোষজনক উপাধি নিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছে। যেমন, খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিয়্যাহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, কারামিয়্যাহ প্রভৃতি সম্প্রদায়’ (লাওয়ামিঊল আনওয়ার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০)।
🔳 মানহাজ ও আক্বীদা’হর মধ্যে পার্থক্যঃ
→শাইখ সালিহ আল-ফাওযান বলেন, মানহাজ শব্দটি আকীদাহ'র চেয়েও ব্যাপক। কারণ মানহাজ আকীদাহ, সুলুক, আখলাক, লেনদেন এবং মুসলিমদের জীবনের প্রতিটি অংশকেই শামিল করে। মুসলিম যেসব পথে চলে সেটাই মানহাজ। কিন্তু আকীদাহ, তা দিয়ে বোঝা যায় ঈমান ও শাহাদাতাইনের অর্থ ও চাহিদাসমূহ। এ হচ্ছে আকীদাহ'র মূল অংশ।
[আল- আজওয়িবাতুল মুফীদাহ, পৃ. ৭৫]
→মানহাজ_আকীদার_ক্ষেত্রে,যেমনি,-রয়েছে_তেমনি_আবার_চাল-চলন,আদব-আখলাক,লেনদেন ইত্যাদি মুসলিম জীবনের প্রতিটি দিক নিয়েই মানহাজ রয়েছে। (আল-আজবিবাতুল মুফিদাহ-১২৫)
🔴আকীদা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঈমানের মূল বিষয়; উভয় শাহাদাতের অর্থ ও তাদের দাবিই হলো আকীদা।সূত্র:- আল আজওয়িবাতুল মুফীদাহ ‘আন আছইলাতিল মানাহিজিল জাদীদাহ- লিশ্শাইখ ড. সালিহ্ ইবনু ফাওযান আল ফাওযানপ্রশ্ন নং- ৪৪ ]
🔴ঈমান আনার পরে মানহাজের গুরুত্ব বোঝা যায় সাহাবায়ে কিরামের পদাঙ্ক অনুসরণের গুরুত্বের মাঝেই।
🔴শুধু আকীদাহ-বিশ্বাসের কথা বললে অনেকে বলতে পারে যে, আমার আকীদাহ তো আমার অন্তরে। তাই সেটার বাস্তবায়ন কীভাবে হচ্ছে, আকীদাহ অনুযায়ী তার জীবনের সবকিছু সঠিকভাবে চলছে কি না? জীবনের সার্বিক অবস্থা ও অবস্থানে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ও সাহাবায়ে কিরামের চলার নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তাই দেখবে মানহাজ। এজন্য সালাফে সালিহীনের দূরদর্শিতা প্রকাশ পায় যখন তারা আকীদাহ'র কিতাবকে ‘সুন্নাহ' নামকরণ করতেন। কারণ এর মাধ্যমে তারা আকীদাহ ও মানহাজ উভয়টিই আলোচনা করতেন।
🔴এজন্য ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ মানহাজের সংজ্ঞায় বলেন, “সে সুন্দর পদ্ধতি যা অনুসরণ করলে আকীদাহ, আমল ও ইবাদাতের মাসআলাসমূহে সঠিক ও বিশুদ্ধ পন্থা নিশ্চিত হয়।”
🔴এর সমার্থবোধক শব্দ হচ্ছে, মানাযিল, মাদারিজ, কাওয়ায়িদ ওয়াল উসূল ইত্যাদি।
সালাফের মানহাজ গ্রহণ করা ফরযে আইন। কারো জন্যই নিজের মনোমতো পথ ও পন্থা গ্রহণ করা ইসলাম অনুমোদন করে না।
🔷যারা সালাফদের মানহাজে চলেন তাদের বলা হয়,
☑১) সাহায্যপ্রাপ্ত গোষ্ঠী ।
☑২) নাজাতপ্রাপ্ত গোষ্ঠী
☑৩) কিয়ামতের আগ পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকা একটি সম্প্রদায়।
☑৪) আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত।
☑৫) আহলুল হাদীস বা আসহাবুল হাদীস।
☑৬) আসহাবুল আসার ।
এসব নামে যারা পরিচিত তারা সবাই এ মানহাজের চলার কারণে এসব নামে পরিচিত হয়েছে।
🔳→সালাফদের মানহাজের মূলকথাঃ
মুসলিম জাতির মত বা পথ একটিই। সেটা হল সহজ সরল সোজা পথ। যে পথ সম্পর্কে বলতে যেয়ে একদিন রাসূল(সঃ) একটা সরল রেখা আঁকলেন এবং তার ডান দিকে দুটি এবং বাম দিকে দুটি রেখা আঁকলেন। অতঃপর তিনি তাঁর হাতকে মধ্য রেখায় রেখে বললেনঃ “এটাই আমার পথ। এটাই আমার সোজা পথ, তোমরা এই পথেরই অনুসরণ কর এবং অন্য পথ সমূহের অনুসরণ করো না। যদি কর তবে তা আল্লাহর সোজা পথ হতে তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করে দিবে।” {ইব্ন মাজাহ/১১}
☑১) দীন দুটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত:
এক. আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদাত করা যাবে না। দুই. আল্লাহ যা শরীআত হিসেবে দিয়েছেন তার বাইরে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ইবাদাত করা যাবে না।
☑২)তারা কেবলে সেসব মাসআলাতেই কথাবলতেন,যাতেতাদের সালাফদের(পূর্বসূরিদের) বিচরণ আছে।
☑৩)শাসকশ্রেনীর হক কথা শোনা ও মানা, আর টা মান্য করার ব্যাপারে হক পদ্ধতি অবলম্বন করা।
☑৪) নিজেকে এবং অপরকে পরিশুদ্ধ করা।। [ এটা সালাফগণের মানহাজ নয় ! পেজ নং- ২১-২৩ ]
🔳সালাফীদের মুলনীতি
☑১। একমাত্র অনুসরনীয় ইমাম ও নেতা হচ্ছেন মোহাম্মদুর রাসু্লুল্লাহ সাঃ।
☑২। সকল প্রকার সমস্যার সমাধানে কোরআন ও সহীহ হাদীস অনুসারে করতে হবে।
☑৩। কোরআন ও সহীহ হাদীসে না পেলে সাহাবাগনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে হবে।
☑৪। সাহাবাগনের সিদ্ধান্তে বা ইজমায় না থাকলে সে সকল বিষয়ে কোরআন ও হাদীস কে ভিত্তি করে আলেমগন ইজতিহাদ (শরীয়ত গবেষণা) করবেন, কোরআন বা সহীহ হাদীস বিরোধী ইজতিহাদ প্রমাণ হলে তা বর্জন করতে হবে।
🔳সালাফী মানহাজ এর মূলনীতি বিষয়ে আল্লামা ডঃ মুহাম্মদ বাযমুল(মক্কা) বলেন, প্রকৃত সালাফিদের মূলনীতি হলো:
☑১। আল ইখলাস।
☑২। সুন্নাহর অনুসরন(আল্লাহর রাসুল(সাঃ) কে আকিদাহ,মিনহাজ,ইবাদতের পদ্ধতি,চরিত্র এর ক্ষেত্রে ইমাম হিসেবে মানা) ।
☑৩। বিদআত এবং বিদআতিদের ব্যাপারে সতর্ক কর।
☑৪। জামাত এর সাথে একতাবদ্ধ থাকা এবং বিভক্ত না হওয়া(এবং বিভক্তি সৃষ্টি না করা)।
→শাইখ ইবনে উসাইমীন(রহ.) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন:
"সালাফদের দিকে নিজেকে সম্পর্কিত করা ওয়াজিব, যেহেতু তাঁরা (সালাফগণ) সেটাই অনুসরণ করেছেন যা রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুসরণ করেছেন। আর নিজেকে সালাফি বলা যদি উদ্দেশ্য হয় এর দ্বারা দল প্রতিষ্ঠা করা, অর্থাৎ কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত করা তাহলে আমরা এসব দলের বিরুদ্ধে লড়াই করি। আমাদের কাছে ওয়াজিব হল মুসলিম উম্মাহকে হতে হবে একই দল রসূলুল্লাহ্ (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের পথ অনুযায়ী। যদি কেউ সালাফি বলে এটা উদ্দেশ্য করে যে 'সালাফদের অনুসরণ, দল প্রতিষ্ঠা নয়' তাহলে এটা হক্ব, সঠিক।"
→শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,
"কেউ যদি তার চলার পথকে স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং নতুন আবিষ্কৃত মতবাদ হতে আলাদা বুঝাতে নিজেকে সালাফী পরিচয় দেয় এতে কোন সমস্যা নেই। তবে মুসলিম জামাত হতে নিজেকে আলাদাভাবে দলীয়করণ নিষেধ।"
আজকের বিষয়ঃ মানহাজ পরিচিতিঃ
☑বইঃ "এটি সালাফগণের মানহাজ নয়!"
☑মুল লেখকঃ শাইখ ড. মুহাম্মাদ ইবন উমার ইবন সালিম বাযমূল।
☑অনুবাদ,সম্পাদনা ও ব্যখ্যাঃ শাইখ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া।
☑Convert Text:- Rasikul Islam (india )
☑My Website: https://sarolpoth.blogspot.com
☑Time of publication: 17-02-2023 ; Time: 09:15
0 Comments