🔶সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার
ফযীলত:
হাদীস: অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা
সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।:
عن
أبي
سعيد
الخدري
رضي
الله
عنه
عن
النبيِّ
-صَلّى
اللهُ
عَلَيْهِ
وسَلَّم-
قَالَ:
«أفضل
الجهاد
كلمة
عَدْلٍ
عند
سُلْطَانٍ
جَائِر».
🔶আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।”
সহীহ - এটি ইবন মাজাহ বর্ণনা করেছেন।
🔶🔶ব্যাখ্যা:
নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন যে,
অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ। কারণ
হতে পারে এ কারণে সে তার থেকে প্রতিশোধ নেবে এবং তাকে কষ্ট দেবে।
🔶হাদীস: আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় অবস্থানকারী এবং ঐ সীমা
লংঘনকারী উপমা হল এক সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি দ্বিতলবিশিষ্ট পানি-জাহাজে লটারি ক’রে কিছু লোক
উপর তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। সুতরাং পানির প্রয়োজনে নিচের তলার
লোকেরা উপর তলায় যেতে লাগল।
عن
النعمان
بن
بشير
رضي
الله
عنهما
مرفوعًا:
«مَثَلُ
القَائِم
في
حُدُود
الله
والوَاقِعِ
فيها
كمَثَل
قَوم
اسْتَهَمُوا
عَلَى
سَفِينَة
فصارَ
بعضُهم
أَعلاهَا
وبعضُهم
أسفَلَها،
وكان
الذين
في
أسفَلِها
إِذَا
اسْتَقَوا
مِنَ
الماءِ
مَرُّوا
على
من
فَوقهِم،
فَقَالُوا:
لَو
أَنَّا
خَرَقْنَا
فِي
نَصِيبِنَا
خَرْقاً
وَلَم
نُؤذِ
مَنْ
فَوقَنَا،
فَإِنْ
تَرَكُوهُم
وَمَا
أَرَادُوا
هَلَكُوا
جَمِيعاً،
وَإِنْ
أَخَذُوا
عَلَى
أَيدِيهِم
نَجَوا
وَنَجَوا
جَمِيعاً».
🔶নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফু হিসেবে
বর্ণিত,
“আল্লাহর নির্ধারিত সীমায়
অবস্থানকারী (অর্থাৎ সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধাদানকারী) এবং ঐ সীমা লংঘনকারী
(উক্ত কাজ ত্যাগকারীর) উপমা হল এক সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি (দ্বিতলবিশিষ্ট) জাহাজে লটারি ক’রে কিছু লোক উপর
তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। সুতরাং পানির প্রয়োজনে নিচের তলার লোকেরা
উপর তলায় যেতে লাগল। ফলে নিচের তলার লোকেরা বলল, ‘আমরা যদি আমাদের ভাগে (নিচের তলায় কোন স্থানে) ছিদ্র ক’রে
নেই এবং উপর তলার লোকদেরকে কষ্ট না দেই (কত ভালো হয়)। তখন যদি উপর তলার লোকেরা
তাদেরকে নিজ ইচ্ছা ও কর্মের উপর ছেড়ে দেয়, তাহলে সকলেই (পানিতে ডুবে) ধ্বংস হয়ে যায়। আর যদি উপর তলার
লোকেরা তাদের হাত ধরে বাধা দেয়, তাহলে তারা নিজেরাও বেঁচে যায় এবং সকলকেই বাঁচিয়ে
নেয়।”
সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।
🔶🔶ব্যাখ্যা:
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ থেকে
বর্ণিত নু’মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার হাদীস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আল্লাহর
নির্ধারিত সীমায় অবস্থানকারী এবং ঐ সীমা লংঘনকারী উপমা হল। অর্থাৎ, যে আল্লাহর দ্বীনের ওপর অটুট রইল এবং এর ফলে সে তার ওপর
অপির্ত দায়িত্ব পালন করল এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ছেড়ে দিল। তাতে পতিত হওয়ার অর্থ
আল্লাহর সীমায় পতিত হওয়া অর্থাৎ হারাম কাজ করা অথবা অর্পিত ওয়াজিব দায়িত্ব ছেড়ে
দেওয়া। “সে সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি
দ্বিতলবিশিষ্ট জাহাজে লটারি ক’রে”। অর্থাৎ তারা লটারির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান
নির্ধারণ করল যে কে উপরে থাকবে? “ফলে
কিছু লোক উপর তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। সুতরাং নিচের তলার লোকেরা
যখন পানির প্রয়োজন বোধ করত” অর্থাৎ, যখন তারা পান করার জন্য পানি তলব করত। “তখন তারা তাদের
উপরের লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করত”। অর্থাৎ যারা তাদের উপরে। কারণ, উপর থেকে নেওয়া ছাড়া পানি পাওয়া সম্ভব নয়। “তখন নিচের তলার
লোকেরা বলল, ‘আমরা যদি আমাদের ভাগে
ছিদ্র ক’রে দিই, অর্থাৎ,আমরা যদি আমাদের স্থান ছিদ্র করে দেই তাহলে দিব্যি আমরা তা
থেকে পানি ব্যবহার করতে পারব। আর উপর তলার লোকদেরকে কষ্টও দেব না। এ ভাবেই তারা
পরিকল্পনা করল এবং ইচ্ছা ও আশা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
তখন যদি উপর তলার লোকেরা তাদেরকে নিজ ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়
(এবং সে কাজে বাধা না দেয়), তাহলে
সকলেই (পানিতে ডুবে) ধ্বংস হয়ে যাবে। কারণ, যখন নৌকার নিচ দিয়ে ছিদ্র করবে, তখন নৌকায় পানি প্রবেশ করবে। অতঃপর নৌকা সবাইকে নিয়ে ডুবে
যাবে। পক্ষান্তরে উপর তলার লোকেরা যদি তাদের হাত ধরে (জাহাজে ছিদ্র করতে) বাধা দেয়, তাহলে তারা নিজেরাও বেঁচে যায় এবং সকলকেই বাঁচিয়ে নেয়। এরা
এবং তারা সবাই বেঁচে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দৃষ্টান্ত
বর্ণনা করেছেন তাতে রয়েছে একটি উচ্চ অর্থ এবং মহান তাৎপর্য। মানুষ আল্লাহর দীনের
মধ্যে সমুদ্রের মাঝের নৌকার যাত্রীর মতো। তাদেরকে সমূদ্রের টেউ এদিক সেদিক
নাড়াচ্ছে। আর যখন তাদের সংখ্যা বেশি হবে তখন অবশ্যই নৌকার ভারসাম্য রক্ষা এবং যাতে
পরস্পরের কষ্ট না হয় সে জন্য তারা কতক উপরে এবং কতক নিচে অবস্থান নিতে বাধ্য। এতে
বলা হয় যখন নৌকার যাত্রীদের মধ্য হতে কোন যাত্রী যদি নৌকা ছিদ্র করতে চায়, তখন সবার ওপর দায়িত্ব হলো তাকে বিরত রাখা এবং তার হাত ধরা, যাতে সবাই বাঁচতে পারে। যদি তারা এ কাজটি না করে তবে তারা
সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর দীন। যখন জ্ঞানী, আহলে ইলম এবং দ্বীনদার লোকেরা অজ্ঞ, মুর্খদের বাঁধা দেয় তবে সবাই নাজাত পাবে। আর যদি তাদেরেকে
তাদের ইচ্ছানুযায়ী ছেড়ে দেয়া হয়, তারা
সবাই ধ্বংস হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা ভয় কর সেই ফিতনাকে যা শুধু যারা অন্যায় করেছে তাদেরকে
ঘ্রাস করবে না। আর তোমরা জেনে রাখো আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা। [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৫] ইবনে উসাইমীনের রিয়াদুস সালেহীনের ব্যাখ্যা
(৪৩২-২/৪৩১)]
🔶হাদীস: আল্লাহ যখনই কোন নবী প্রেরণ করেন এবং কোন খলীফা
নির্বাচিত করেন, তখনই তাঁর জন্য দু’জন সঙ্গী নিযুক্ত করে দেন। একজন সঙ্গী তাঁকে ভাল কাজের
নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর দ্বিতীয়জন সঙ্গী তাঁকে মন্দ কাজের
নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর রক্ষা পান কেবলমাত্র তিনিই,
যাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।
عن
أبي
سعيد
الخدري
وأبي
هريرة
رضي
الله
عنهما
مرفوعاً:
"ما
بعث
الله
من
نبي
ولا
اسْتَخْلَفَ
من
خليفة
إلا
كانت
له
بطانتان:
بطانة
تأمره
بالمعروف
وتَحُضُّهُ
عليه،
وبطانة
تأمره
بالشر
وتَحُضُّهُ
عليه،
والمعصوم
من
عصم
الله".
🔶🔶ব্যাখ্যা:
নবী ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন যে,
আল্লাহ যাকেই নবী হিসাবে প্রেরন করেন এবং খলীফা হিসাবে
নিযুক্ত করেন, তার জন্য দু’জন করে (একান্ত) সঙ্গী থাকে। একজন ভালো সঙ্গী যে তাকে ভালো কাজের
নির্দেশ দেয় এবং তাকে তৎপ্রতি অনুপ্রাণিত করে। আর একজন খারাপ সঙ্গী যে তাকে মন্দ
কাজের পরামর্শ দেয় এবং তৎপ্রতি উৎসাহিত করে। অকল্যাণকর সঙ্গী থেকে সেই নিষ্পাপ
থাকে যাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।
0 Comments