রাষ্ট্রীয় সম্পদ
আত্মসাৎ ও জোরপূর্বক মানুষের সম্পদ হরণ, কী বলে ইসলাম?
[] রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ। এর ফলে কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারীকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
সাহাবি হজরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে
রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার জানাযা পড়াননি।
বরং বললেন, তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথের সম্পদ আত্মসাৎ
করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাসী করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেলাম,
যার মূল্য হয়তো দুই দিরহাম হবে।” (মুয়াত্তা, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা)
[] জবর দখল করা ইসলামী আইন নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধ কাজটি
সমাজে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জোরপূর্বক মানুষের সম্পদ হরণ, জোরপূর্বক অন্যের সম্পদ
ছিনিয়ে নেয়া, মানুষকে প্রহার করা, গালিগালাজ করা, বিনা উস্কানিতে কারো ওপর আক্রমণ চালানো
এবং আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন এবং দুর্বলদের ওপর নৃশংসতা চালানো ইত্যাদিকে
জবর দখল বলে। এটি ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ।
অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করলে কিয়ামতের দিন কঠিন পরিস্থিতির
মুখোমুখি হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, কেউ অন্য
ভাইয়ের ওপর জুলুম করলে সে যেন তার কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। কারণ তা থেকে
মুক্তিতে দিনার বা দিরহাম কোনো কাজে দেবে না। সে যেন ওই দিন আসার আগে তা করে নেয়,
যেদিন তার ভালো কাজ কেটে নেওয়া হবে।
আর কোনো
ভালো কাজ না থাকলে সেই মজলুম ভাইয়ের গুনাহ নিয়ে তার ওপর ছুড়ে ফেলা হবে।
(বুখারি, হাদিস : ৬৫৩৪,২৪৪৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, সায়িদ বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ
করেন, যে ব্যক্তি এক বিঘাত পরিমাণ জমি জোরজবস্তি করে দখল করবে তাকে সাত স্তর
পর্যন্ত বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে।
(বুখারি, হাদিস : ৩১৯৮,২৪৫২)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকো। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল, তা কী? তিনি বলেন, এক. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা। দুই. জাদু করা। তিন. আল্লাহ যাদের হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন এমন কাউকে হত্যা করা। চার. সুদ খাওয়া। পাঁচ. এতিমের সম্পদ খাওয়া।
ছয়. যুদ্ধের সময়ে পালিয়ে যাওয়া। সাত. সতীসাধ্বী মুমিন
নারীকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া।
(বুখারি, হাদিস : ২৭৬৬)
[] আল্লাহ বলেন ‘জালিমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে উদাসীন মনে করো না। আল্লাহ তাদেরকে শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা নিচু করে দৌঁড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়সমূহ দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আযাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও।
[] সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প কিছুদিন আমাদের সময় দিন তাহলে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করবো এবং রাসূলদের অনুসরণ করবো। তোমরা কি ইতঃপূর্বে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করেছ এবং সেই সব জালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।
(আল-কুরআন, ১৪: ৪২-৪৫)
0 Comments