যে কোন ধরনের
আত্মসাৎ বা বিশ্বাসঘাতকতা
যে কোন ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা, আত্মসাৎ বা খেয়ানত
আরেকটি কবীরা গুনাহ্ এবং হারাম কাজ।
ü চাই সে
বিশ্বাসঘাতকতা আল্লাহ্ তা‘আলা এবং তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সাথেই হোক অথবা ধর্মের সাথে।
ü চাই সে খেয়ানত জাতীয়
সম্পদেই হোক অথবা কারোর ব্যক্তিগত সম্পদে।
ü চাই তা যুদ্ধলব্ধ
সম্পদেই হোক অথবা সংগৃহীত যাকাতের মালে।
ü চাই তা কারোর কথার
আমানতেই হোক অথবা ইয্যতের আমানতে ইত্যাদি ইত্যাদি। ……….
Ø [ নিজেদের আমানত বলতে সে সব
দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে, যা কারো প্রতি আস্থা স্থাপন করে তার উপর ন্যস্ত করা হয়। তা
ওয়াদা পূরনের দায়িত্ব হতে পারে, সামগ্রিক সামাজিক চুক্তি হতে পারে, কোন সংস্থার আভ্যন্তরীণ
গোপন তথ্য হতে পারে, ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ধন-সম্পদ হতে পারে। কারো প্রতি বিশ্বাস
করে জনসমাজ যদি তাকে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করে তবে তাও এর মধ্যে শামিল মনে করতে হবে।
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে
নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত
ü (১) তার হকদারকে ফিরিয়ে
দিতে।(২) তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে
বিচার করবে(৩)। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট(৪)! নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা,
সর্বদ্ৰষ্টা।(৫) (৪:৫৮)
বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আন- নিসার ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন।]
………তাই তো আল্লাহ্ তা‘আলা ঈমানের দোহাই পূর্বক সকল ঈমানদারদেরকে এমন করতে বারণ করেছেন।
আল্লাহ্ তা‘আলা
বলেন:
«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَخُوْنُوْا اللهَ وَالرَّسُوْلَ، وَتَخُوْنُوْا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ»
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে
আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত খেয়ানত করো না’’।
(আনফাল : ২৭)
আল্লাহ্ তা‘আলা আমানতে খেয়ানতকারীকে
কখনোই ভালোবাসেন না। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ، إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْـخَائِنِيْنَ»
‘‘তুমি কোন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে
বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করলে তুমি তাদের সাথে কৃত চুক্তি তাদের মুখেই ছুঁড়ে মারো
যেমনিভাবে তারাও তা তোমার সঙ্গে করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা খেয়ানতকারীদেরকে
কখনোই ভালোবাসেন না’’।
(আনফাল : ৫৮)
খেয়ানতকারীদের ষড়যন্ত্র কোনভাবেই সফলকাম হবে না।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَأَنَّ اللهَ لَا يَهْدِيْ كَيْدَ الْـخَائِنِيْنَ»
‘‘আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা
বিশ্বাসঘাতকদের ষড়যন্ত্র কখনোই সফল করেন না’’।
(ইউসুফ : ৫২)
আনাস্ ও আবূ উমামাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত
তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا إِيْمَانَ لِـمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ.
’’সে ব্যক্তির ঈমান নেই যার কোন
আমানতদারি নেই’’।
(আহমাদ ১২৩৮৩,
১২৫৬৭, ১৩১৯৯ বায্যার, হাদীস ১০০ ত্বাবারানী/কবীর, হাদীস ৭৭৯৮)
কোন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে কোন কাজ উদ্ধারের জন্য অথবা তাঁর নৈকট্যার্জনের জন্য জনগণ তাঁকে যে হাদিয়া বা উপঢৌকন দিয়ে থাকে তাও সরকারী সম্পদ হিসেবেই গণ্য। তা নিজের জন্য গ্রহণ করা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার শামিল।
আবূ ’হুমাইদ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
اسْتَعْمَلَ رسُوْلُ اللهِ رَجُلًا عَلَى صَدَقَاتِ بَنِيْ سُلَيْمٍ يُدْعَى ابْنَ اللُّتْبِيَّةِ، فَلَمَّا جَاءَ حَاسَبَهُ، قَالَ: هَذَا مَالُكُمْ، وَهَذَا هَدِيَّةٌ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : فَهَلاَّ جَلَسْتَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْكَ وَأُمِّكَ حَتَّى تَأْتِيَكَ هَدِيَّتُكَ إِنْ كُنْتَ صَادِقًا، ثُمَّ خَطَبَنَا، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّيْ أَسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ مِنْكُمْ عَلَى الْعَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِيَ اللهُ فَيَأْتِيْ فَيَقُوْلُ: هَذَا مَالُكُمْ وَهَذَا هَدِيَّةٌ أُهْدِيَتْ لِيْ، أَفَلَا جَلَسَ فِيْ بَيْتِ أَبِيْهِ وَأُمِّهِ حَتَّى تَأْتِيَهُ هَدِيَّتُهُ، وَاللهُ لَا يَأْخُذُ أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ إِلاَّ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক
ব্যক্তিকে বনু সুলাইম গোত্রের সাদাকা উঠানোর জন্য দায়িত্ব দিয়ে পাঠালেন। যার নাম
ছিলো ইব্নুল্ লুত্বিয়্যাহ্। সে সাদাকা উঠিয়ে ফেরৎ আসলে তার হিসাব-কিতাব নেয়া হয়।
তখন সে বললো: এগুলো আপনাদের তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর
এগুলো আমাকে দেয়া হাদিয়া। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন:
তুমি কেন নিজ বাড়িতে বসে থাকোনি? তা হলে হাদিয়াগুলো তোমার কাছে এমনিতেই এসে যেতো।
যদি তুমি এতোই সত্যবাদী হয়ে থাকো।
অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা
দিলেন। খুতবায় আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করার পর বললেন: আমি তোমাদের কাউ কাউকে আমার
প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কোন দায়িত্ব দিয়ে পাঠাই। অতঃপর সে ফিরে এসে বলে: এগুলো
আপনাদের তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আর এগুলো আমাকে দেয়া হাদিয়া।
সে কেন নিজ বাড়িতে বসে থাকেনি? তা হলে হাদিয়াগুলো তার
কাছে এমনিতেই এসে যেতো। আল্লাহ্ তা‘আলার কসম খেয়ে বলছি, তোমাদের কেউ কোন বস্ত্ত
অবৈধভাবে গ্রহণ করলে কিয়ামতের দিন সে তা বহন করেই আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ
করবে। তা যাই হোক না কেন’’।
(বুখারী
৬৯৭৯; মুসলিম ১৮৩২)
বন্টনের পূর্বে যুদ্ধলব্ধ কোন সম্পদ আত্মসাৎ করা হলে
তা কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারীর উপর আগুন হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
خَرَجْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ يَوْمَ خَيْبَرَ، فَلَمْ نَغْنَمْ ذَهَبًا وَلَا فِضَّةً إِلاَّ الْأَمْوَالَ وَالثِّيَابَ وَالْـمَتَاعَ، فَأَهْدَى رَجُلٌ مِنْ بَنِيْ الضُّبَيْبِ يُقَالُ لَهُ رِفَاعَةُ بْنُ زَيْدٍ لِرَسُوْلِ اللهِ غُلَامًا يُقَالُ لَهُ مِدْعَمٌ، فَوَجَّهَ رَسُوْلُ اللهِ إِلَى وَادِيْ الْقُرَى، حَتَّى إِذَا كَانَ بِوَادِيْ الْقُرَى بَيْنَمَا مِدْعَمٌ يَحُطُّ رَحْلًا لِرَسُوْلِ اللهِ إِذَا سَهْمٌ عَائِرٌ فَقَتَلَهُ، فَقَالَ النَّاسُ: هَنِيْئًا لَهُ الْـجَنَّةُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : كَلاَّ، وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ، إِنَّ الشَّمْلَةَ الَّتِيْ أَخَذَهَا يَوْمَ خَيْبَرَ مِنَ الْـمَغَانِمِ لَمْ تُصِبْهَا الْـمَقَاسِمُ لَتَشْتَعِلُ عَلَيْهِ نَارًا.
‘‘একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
সঙ্গে খাইবার যুদ্ধে বের হলাম। সেখানে আমরা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ হিসেবে কোন স্বর্ণ বা
রূপা পাইনি। তবে পেয়েছিলাম কিছু অন্যান্য সম্পদ, কাপড়-চোপড় ও ঘরের আসবাবপত্র।
ইতিমধ্যে বনুয্ যুবাইব্ গোত্রের রিফা‘আহ্ বিন্ যায়েদ নামক জনৈক ব্যক্তি মিদ্‘আম
নামক একটি গোলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাদিয়া দিলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্-ক্বুরা
উপত্যকার দিকে রওয়ানা করে সেখানে পৌঁছুলে গোলামটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর উটের পিঠের আসনটি নিচে রাখছিলো এমতাবস্থায় একটি বিক্ষিপ্ত তীর তার
গায়ে বিঁধে সে মারা গেলো। সকলে বলে উঠলো: গোলামটি কতইনা ধন্য; তার জন্য প্রস্ত্তত
রয়েছে জান্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; তা কখনোই নয়।
সে সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার জীবন! খাইবারের যুদ্ধে
বন্টনের পূর্বে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে সে যে চাদরটি আত্মসাৎ করেছিলো তা আগুন হয়ে
(কিয়ামতের দিন) তার উপর দাউ দাউ করে জ্বলবে।
(বুখারী ৬৭০৭, ৪২৩৪;
মুসলিম ১১৫)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমানতে
খেয়ানতকারীকে মুনাফিক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
حَدَّثَنَا قَبِيصَةُ بْنُ عُقْبَةَ، قَالَ حَدَّثَنَا
سُفْيَانُ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُرَّةَ، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ
" أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا، وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ
خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنَ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا
اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ، وَإِذَا خَاصَمَ فَجَرَ
". تَابَعَهُ شُعْبَةُ عَنِ الأَعْمَشِ.
‘‘চারটি চরিত্র কারোর মধ্যে পাওয়া গেলে সে খাঁটি মুনাফিক হিসেবেই বিবেচিত
হবে। আর যার মধ্যে সেগুলোর একটি পাওয়া গেলো তার মধ্যে তো শুধু মুনাফিকীর একটি
চরিত্রই পাওয়া গেলো যতক্ষণ না সে তা ছেড়ে দেয়।
উক্ত
চরিত্রগুলো হলো:
ü
১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
ü
২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
ü
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
ü
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি দেয়।
[(সহীহ বুখারী ৩৪; (২৪৫৯,৩১৭৮; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৮, আহমাদ ৬৭৮২) (আধুনিক
প্রকাশনীঃ ৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৩)]
Writer: “মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী“
প্রচারেঃ “rasikulindia“
0 Comments