❑আল-মুগনি: কুরবানির গোশত বন্টনের বিধান (রেফারেন্স সহ)
ইমাম মুওয়াফফাক আদ-দীন আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি (মৃত্যু ৬২০ হিজরী) তার বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ আল-মুগনি (المغني)-তে কুরবানির গোশত বন্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আপনার প্রদত্ত অনুচ্ছেদটি আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫-তে বিদ্যমান।
❑১. সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি: এক-তৃতীয়াংশ করে তিন ভাগ করা
ইমাম ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন: "والاستحباب أن يأكل ثلث أضحيته، ويهدي ثلثها، ويتصدق بثلثها" (উত্তম হলো, কুরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ নিজে খাওয়া, এক-তৃতীয়াংশ উপহার দেওয়া এবং এক-তৃতীয়াংশ সদকা করা)।
❑এই মতের স্বপক্ষে দলিলসমূহ:
❑ইমাম আহমদ (রহ.)-এর অভিমত: "قال أحمد: نحن نذهب إلى حديث عبد الله: يأكل هو الثلث، ويطعم من أراد الثلث، ويتصدق على المساكين بالثلث।" (ইমাম আহমদ বলেছেন: আমরা আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ)-এর হাদিস অনুসরণ করি: "সে (কুরবানিদাতা) এক-তৃতীয়াংশ খাবে, এক-তৃতীয়াংশ যাকে ইচ্ছা খাওয়াবে এবং এক-তৃতীয়াংশ অভাবীদের (মিসকিনদের) সদকা করবে।")
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
❑আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর আমল: "قال علقمة: بعث معي عبد الله بهدية، فأمرني أن آكل ثلثا، وأن أرسل إلى أهل أخيه عتبة بثلث، وأن أتصدق بثلث।" (আলকামা বলেছেন: আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) আমার সাথে হাদিয়া (উপহার) পাঠালেন এবং আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, আমি এক-তৃতীয়াংশ খাই, এক-তৃতীয়াংশ তার ভাই উতবা-এর পরিবারের কাছে পাঠাই এবং এক-তৃতীয়াংশ সদকা করি।)
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
❑আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর অভিমত: "وعن ابن عمر قال: الضحايا والهدايا ثلث لك، وثلث لأهلك، وثلث للمساكين।" (ইবনে উমর থেকে বর্ণিত: তিনি বলেছেন: "কুরবানি ও হাদিয়া (উপহার) এক-তৃতীয়াংশ তোমার জন্য, এক-তৃতীয়াংশ তোমার পরিবারের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ মিসকিনদের জন্য।")
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
❑ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস: "ولنا، ما روي عن ابن عباس، في صفة أضحية النبي صلى الله عليه وسلم قال: يطعم أهل بيته الثلث، ويطعم فقراء جيرانه الثلث، ويتصدق على السؤال بالثلث. رواه الحافظ أبو موسى الأصفهاني، في الوظائف، وقال: حديث حسن।"
(আমাদের দলিল হলো, ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরবানির বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: "তিনি তার পরিবারের সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়াতেন, তার দরিদ্র প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ খাওয়াতেন এবং ভিক্ষুকদের এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন।" এটি হাফেজ আবু মুসা আল-আসফাহানি "আল-ওয়াজাইফ" গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন: "হাদিসটি হাসান (উত্তম)।") - সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)। এই হাদিসটি অন্যান্য হাদিস গ্রন্থেও পাওয়া যায়, যেমন: বায়হাকি, সুনান আল-কুবরা, হাদিস ১৯২৩৭।
❑কুরআনের আয়াতের ইঙ্গিত: "ولأن الله تعالى قال: {فكلوا منها وأطعموا القانع والمعتر}." (কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: "তোমরা তা থেকে খাও এবং অভাবগ্রস্ত ও সাহায্যপ্রার্থীদের খাওয়াও।" - সূরা হজ্জ: ৩৬) ইবনে কুদামা ব্যাখ্যা করেন: "আল-কানি'" হলো যে চায়, আর "আল-মু'তার" হলো যে খাবারের জন্য আসে কিন্তু সরাসরি চায় না। যেহেতু আল্লাহ তিনটি শ্রেণীর উল্লেখ করেছেন (খাওয়াদাতা, কানি' এবং মু'তার), তাই গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করাই যুক্তিযুক্ত।
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
❑২. অন্যান্য মাযহাবের মত ও ইবনে কুদামাহর জবাব
❑শাফিঈ মাযহাবের একটি মত: "وقال في الآخر: يجعلها نصفين، يأكل نصفا، ويتصدق بنصف; لقول الله تعالى: {فكلوا منها وأطعموا البائس الفقير}." (আর (শাফিঈ) অন্য মতে বলেছেন: এটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে; অর্ধেক খাবে এবং অর্ধেক সদকা করবে; কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: "তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ অভাবগ্রস্তদের খাওয়াও।" - সূরা হজ্জ: ২৮)
- ❑ইবনে কুদামাহর জবাব: "وأما الآية التي احتج بها أصحاب الشافعي، فإن الله - تعالى - لم يبين قدر المأكول منها والمتصدق به، وقد نبه عليه في آيتنا، وفسره النبي صلى الله عليه وسلم بفعله، وابن عمر بقوله، وابن مسعود بأمره।"
(আর শাফিঈ মাযহাবের অনুসারীরা যে আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেছেন, তাতে আল্লাহ তায়ালা খাওয়া ও সদকা করার পরিমাণ নির্দিষ্ট করেননি। আর আমাদের আয়াতে এর উপরই ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাজ দ্বারা, ইবনে উমর তার কথা দ্বারা এবং ইবনে মাসউদ তার আদেশ দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেছেন।)
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
- ❑ইবনে কুদামাহর জবাব: "وأما الآية التي احتج بها أصحاب الشافعي، فإن الله - تعالى - لم يبين قدر المأكول منها والمتصدق به، وقد نبه عليه في آيتنا، وفسره النبي صلى الله عليه وسلم بفعله، وابن عمر بقوله، وابن مسعود بأمره।"
(আর শাফিঈ মাযহাবের অনুসারীরা যে আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেছেন, তাতে আল্লাহ তায়ালা খাওয়া ও সদকা করার পরিমাণ নির্দিষ্ট করেননি। আর আমাদের আয়াতে এর উপরই ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাজ দ্বারা, ইবনে উমর তার কথা দ্বারা এবং ইবনে মাসউদ তার আদেশ দ্বারা এর ব্যাখ্যা করেছেন।)
❑আহলে রায়ের (হানাফী মাযহাবের) মত: "وقال أصحاب الرأي: ما كثر من الصدقة فهو أفضل; لأن {النبي صلى الله عليه وسلم أهدى مائة بدنة، وأمر من كل بدنة ببضعة، فجعلت في قدر، فأكل هو وعلي من لحمها، وحسيا من مرقها . ونحر خمس بدنات، أو ست بدنات، وقال: من شاء فليقتطع . ولم يأكل منهن شيئا}." (আহলে রায় (হানাফী মাযহাবের অনুসারীরা) বলেছেন: যত বেশি সদকা করা যায়, তত উত্তম; কারণ "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একশটি উট কুরবানি করেছিলেন, আর তিনি নিজে ও আলী (রা.) তার সামান্য অংশ খেয়েছিলেন... এবং তিনি নিজে পাঁচটি বা ছয়টি উট নহর করেছিলেন এবং বলেছিলেন: 'যে চায় সে যেন নেয়।' আর তিনি নিজে তা থেকে কিছুই খাননি।")
- ❑ইবনে কুদামাহর জবাব: "وأما خبر أصحاب الرأي، فهو في الهدي، والهدي يكثر، فلا يتمكن الإنسان من قسمه، وأخذ ثلثه، فتتعين الصدقة بها، والأمر في هذا واسع، فلو تصدق بها كلها أو بأكثرها جاز، وإن أكلها كلها إلا أوقية تصدق بها جاز।"
(আহলে রায়ের খবরটি হাদিয়ার (নফল কুরবানির) বিষয়ে, আর হাদিয়া প্রচুর পরিমাণে হয়, তাই মানুষের পক্ষে তা ভাগ করা এবং তার এক-তৃতীয়াংশ নেওয়া সম্ভব হয় না, ফলে তা সদকা করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। আর এই বিষয়ে ব্যাপকতা রয়েছে; যদি কেউ পুরোটা বা বেশির ভাগ সদকা করে দেয়, তবে জায়েজ। আর যদি পুরোটা খেয়ে ফেলে শুধু এক ওয়াকিয়া (অল্প পরিমাণ) সদকা করে, তবেও জায়েজ।) - সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
- ❑ইবনে কুদামাহর জবাব: "وأما خبر أصحاب الرأي، فهو في الهدي، والهدي يكثر، فلا يتمكن الإنسان من قسمه، وأخذ ثلثه، فتتعين الصدقة بها، والأمر في هذا واسع، فلو تصدق بها كلها أو بأكثرها جاز، وإن أكلها كلها إلا أوقية تصدق بها جاز।"
❑৩. গোশত খাওয়া কি ওয়াজিব?
ইবনে কুদামা আলোচনা করেছেন যে, কিছু আলেম বলেছেন কুরবানির গোশত খাওয়া ওয়াজিব। তবে তিনি অধিকাংশের মত উল্লেখ করেন যে, এটি ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব বা জায়েজ।
- দলিল:
"ولنا، أن النبي صلى الله عليه وسلم نحر خمس بدنات، ولم يأكل منهن شيئا، وقال "من شاء فليقتطع"."
(আমাদের দলিল হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচটি উট নহর করেছিলেন, আর তা থেকে কিছুই খাননি, এবং বলেছিলেন: "যে চায় সে যেন নেয়।")
- সূত্র: আল-মুগনি, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৩৫৫ (মূল অনুচ্ছেদ)।
- তিনি আরও বলেন যে, কুরবানি একটি ইবাদত, তাই এর গোশত খাওয়া আকিকার গোশতের মতো ওয়াজিব নয়। আদেশটি মুস্তাহাব বা ইবাহাতের (বৈধতা) জন্য, যেমন ফল ও ফসল থেকে খাওয়ার আদেশ।
উপসংহার: ইমাম ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি তার আল-মুগনি গ্রন্থে কুরবানির গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে তিন ভাগ করার পদ্ধতিকে সবচেয়ে উত্তম এবং সুন্নাহসম্মত হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশনা দ্বারা সমর্থিত। তবে, তিনি এই বিষয়ে প্রশস্ততাও স্বীকার করেছেন, যেখানে প্রয়োজনে কম বা বেশি সদকা করার সুযোগ থাকে।
দ্রষ্টব্য: এই আলোচনাটি মূলত ইবনে কুদামার আল-মুগনি গ্রন্থের উল্লিখিত অংশ থেকে সংগৃহীত এবং ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
____________________
❑আল-মুগনি: কুরবানির গোশত বন্টনের বিধান
ইমাম মুওয়াফফাক আদ-দীন আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে কুদামা আল-মাকদিসি রচিত 'আল-মুগনি' গ্রন্থে কুরবানির গোশত বন্টন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখানে এর সারমর্ম একটি সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় তুলে ধরা হলো:
কুরবানির গোশত বন্টনের সুন্নাহ ও এর ব্যাখ্যা
অধিকাংশ আলেমের মতে সুন্নাহ পদ্ধতি: কুরবানির গোশত বন্টনের সবচেয়ে উত্তম এবং সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি হলো এটিকে তিন ভাগে ভাগ করা:
- এক-তৃতীয়াংশ কুরবানিদাতা নিজে ও তার পরিবার খাবে।
- এক-তৃতীয়াংশ বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে উপহার হিসেবে দেবে।
- বাকি এক-তৃতীয়াংশ অভাবী ও দরিদ্রদের মাঝে সদকা করবে।
এই মতের স্বপক্ষে বেশ কিছু শক্তিশালী দলিল রয়েছে:
- সাহাবীগণের আমল: বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর আমল ও নির্দেশ থেকে এই তিন ভাগের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। তারা উভয়ই নিজেদের কুরবানিকে তিন ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তো তার পক্ষ থেকে প্রেরিত হাদিয়া (উপহার) বন্টনের ক্ষেত্রেও এই তিন ভাগের নীতি অবলম্বন করেছিলেন।
- হাদিসের সমর্থন: হাফেজ আবু মুসা আল-আসফাহানি তার 'আল-ওয়াজাইফ' গ্রন্থে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কুরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, এক-তৃতীয়াংশ দরিদ্র প্রতিবেশীদের দিতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ ভিক্ষুকদের মাঝে সদকা করতেন। হাদিসটিকে 'হাসান' বা উত্তম বলা হয়েছে।
- কুরআনের নির্দেশনা: আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন: "তোমরা তা থেকে খাও এবং অভাবগ্রস্ত ও সাহায্যপ্রার্থীদের খাওয়াও।" (সূরা হজ্জ: ৩৬)। এই আয়াতে আল্লাহ তিনটি শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন: যারা খাবে (কুরবানিদাতা ও পরিবার), 'কানি'' (অভাবগ্রস্ত ও সাহায্যপ্রার্থী) এবং 'মু'তার' (যারা সাহায্যপ্রার্থী, কিন্তু সরাসরি মুখ ফুটে চায় না)। এই তিনটি শ্রেণীর উল্লেখ থেকে বোঝা যায় যে, গোশতকে তিন ভাগে ভাগ করাই যুক্তিযুক্ত।
অন্যান্য মত ও তার বিশ্লেষণ
শাফিঈ মাযহাবের একটি মত: ইমাম শাফিঈ (রহ.)-এর একটি মতে কুরবানির গোশতকে দুই ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে – অর্ধেক নিজে খাওয়া এবং অর্ধেক সদকা করা। এর দলিল হিসেবে আল্লাহ তায়ালার বাণী: "তোমরা তা থেকে খাও এবং দুঃস্থ অভাবগ্রস্তদের খাওয়াও।" (সূরা হজ্জ: ২৮) পেশ করা হয়।
ব্যাখ্যা: এই আয়াতটি যদিও খাওয়ার ও সদকা করার নির্দেশ দিয়েছে, তবে তা নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করেনি। বরং পূর্বোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ এর একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করে, যা তিন ভাগের পদ্ধতিকে সমর্থন করে।
আহলে রায়ের (হানাফী মাযহাবের) মত: আহলে রায় বা হানাফী মাযহাবের অনুসারীরা মনে করেন যে, যত বেশি সম্ভব সদকা করা উত্তম। তাদের দলিল হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০০টি উট কুরবানি করেছিলেন, যার সামান্য অংশ তিনি নিজে খেয়েছিলেন এবং বেশিরভাগই সদকা করে দিয়েছিলেন। এমনকি কিছু বর্ণনা অনুযায়ী তিনি কিছু উট থেকে কিছুই খাননি।
ব্যাখ্যা: এই ঘটনাটি যদিও হাদিয়ার (নফল কুরবানি/হজ্জের কুরবানি) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, যেখানে বিপুল পরিমাণ পশুর গোশত হয় এবং সেগুলোর পুরোটা নিজের জন্য রাখা কঠিন হয়। তাই এক্ষেত্রে বেশি সদকা করাটা যুক্তিযুক্ত। তবে সাধারণ কুরবানির ক্ষেত্রে তিন ভাগের নীতিই অধিকতর প্রযোজ্য, যেখানে নিজের প্রয়োজন পূরণ, সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা (উপহার) এবং অভাবীদের সহায়তা – এই তিনটি দিকই প্রতিফলিত হয়।
সারকথা ও প্রশস্ততা
কুরবানির গোশত বন্টনের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করা। যদিও তিন ভাগের পদ্ধতিটি সবচেয়ে উত্তম এবং সুন্নাহসম্মত, তবে এই বিষয়ে ব্যাপকতা রয়েছে।
- যদি কেউ পুরো কুরবানির গোশতই সদকা করে দেন, তবে তা জায়েজ।
- যদি কেউ সামান্য অংশ সদকা করে বাকিটা নিজে রাখেন, তবে তাও জায়েজ।
- যদি কেউ প্রায় পুরোটাই নিজে রেখে দেন এবং সামান্য অংশ সদকা করেন (যেমন, এক ওয়াকিয়া বা অল্প পরিমাণ), তবে সেটাও জায়েজ।
তবে সর্বোত্তম ও বরকতপূর্ণ পদ্ধতি হলো সেই তিনটি ভাগে বন্টন করা, যা কুরবানির মূল উদ্দেশ্য—নিজের ভোগ, আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং দরিদ্র ও অভাবীদের অধিকার নিশ্চিত করা—সবকিছুকেই পূর্ণ করে।
এই আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে কুরবানির গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে একটি সুন্দর ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে, যেখানে ব্যক্তির অধিকার, সামাজিক দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ—সবকিছুরই খেয়াল রাখা হয়েছে।
[1] (মুসলিম ১৯৭১নং)
[2] (তফসীর ইবনে কাষীর ৩/২৯২, ৩০০, মুগনী ১৩/৩৮০, মুমতে ৭/৫২৫)
[3] (মুগনী ১৩/ ৩৮১, ফাতহুল বারী ১০/৪৪২)
[4] (ফাতহুল বারী ১০/২৮, ইনসাফ ৪/১০৭)
[5] (সালাতুল ঈদাইন, আলবানী ৪০পৃঃ)
https://m.islamqa.info/bn/answers/36532/কোরবানির-গোশত-কতটুকু-খাওয়া-যাবে-কতটুকু-বণ্টন-করতে-হবে?traffic_source=main_islamqa
0 Comments