Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

🎉ঈদুল আযহার দিনের করণীয় কাজ, ৩০ মত 🎉PDF generated rasikul islam ২০২৫

 
সময়ের অভাবে সুন্দর করে সাজাতে পারেনি। সময়ে হলে করে দিব সুন্দর করে

🕋 ঈদুল আযহার দিনের করণীয় কাজসমূহ:

🎉 ঈদুল আযহার দিনের করণীয় কাজ 🎉

ঈদের দিনের প্রস্তুতির জন্য তাড়াতাড়ি ওঠা/ সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া/অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে ওঠা।

*যদিও সরাসরি হাদিসে নেই যে "অন্য দিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে ওঠো", তবে ঈদের দিনের জন্য যে সমস্ত সুন্নাহ আমল রয়েছে (যেমন গোসল করা, উত্তম পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, ঈদগাহে যাওয়া), এই সব কাজ সম্পাদন করার জন্য স্বাভাবিকভাবেই সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়।

 

📚 রেফারেন্স: [(বায়হাকি -৬১২৬), (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৬০৬)(জাদুল মাআদ: /২৪১), সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৮২; বায়হাকীশুআবুল ঈমান, হাদিস: ৩৭১১)(সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ৬৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং: ৬৫১)। জামে তিরমিযী, হাদিস নং: ১২১২)। ]


🕋 ফজরের নামাজ জামা‘আতের সঙ্গে আদায় করা। 

📖 কুরআন:

·        নিশ্চয়ই ফজরের সালাতে ফেরেশতারা উপস্থিত থাকে।
📚 রেফারেন্স:— [সূরা আল-ইসরা, ১৭:৭৮]

📝ব্যাখ্যা:

ü  ঈদের দিনের যাত্রা শুরু হয় ফজরের নামাজ দিয়ে। এই নামাজে আত্মিক শক্তি জোগায়, কারণ ফেরেশতারা এতে সাক্ষী হন। ঈদের ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগেই ফজরের জামাআত মানে দিনটিকে আল্লাহর স্মরণে শুরু করা।

 

সুন্নাহ: ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। এটি মুসলিমদের জন্য একটি সাধারণ সুন্নাহ, যা প্রতিটি ভালো দিনের শুরুতে উৎসাহিত করা হয়।

 📘 শিক্ষণীয় দিক:

·       যেহেতু ঈদের দিন ফজর নামাজ আদায় করতে হয় এবং এরপরই ঈদের নামাজের প্রস্তুতি শুরু হয়, তাই সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা অপরিহার্য।

·       ঈদের আনন্দের আগে আমরা আল্লাহর ইবাদতের গুরুত্ব বুঝে নিই।

·       ঘুম বা অলসতা দূর করে সালাতের মাধ্যমে দিন শুরু করা মুমিনের পরিচয়।

 


🕋 ২. গোসল করা, আতর ব্যবহার করা ও সুন্দর পোশাক পরা/ মিসওয়াক করাঃ

📚 হাদীস:

রাসূলুল্লাহঈদের দিন গোসল করতেন।

📚 রেফারেন্স:— (ইবনু মাজাহ, হাদীস: ১৩১৫)

নবীঈদের দিন সুন্দর জামা পরতেন।

📚 রেফারেন্স:— (ইবনু খুযাইমা, হাদীস: ১৭৬৫)

‘’ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। যদিও এটি ঈদুল ফিতর সম্পর্কিত, উলামাগণ ঈদুল আযহার ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগকে সুন্নাহ হিসেবে গণ্য করেন।‘’

📚 রেফারেন্স: (মুয়াত্তা ইমাম মালিক /১৭৭) , (ইবনে মাজাহ ১৩১৫)।


  উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নাহ:

শরিয়তসম্মত সাজসজ্জা করা এবনং সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন বা উত্তম পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা।

📚 রেফারেন্স:  (বুখারি ৯৪৮, মুস্তাদরাকে হাকেম ৭৫৬০) , (মুস্তাদরাকে হাকেম ৭৫৬০)

ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেছেন: "উত্তম পোশাক পরিধান করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা ঈদের সুন্নাহ।" (ফাতহুল বারী)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এর দুটি জুব্বা ছিল, যা তিনি ঈদ ও জুমার দিন পরিধান করতেন।

📚 রেফারেন্স: (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, ৬১৩২)

ü 📝ব্যাখ্যা:
গোসল করা পরিচ্ছন্নতার পরিচায়ক এবং এটি ঈদের নামাজের জন্য মানসিক আত্মিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে। ঈদ শুধু আত্মিক নয়, বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রকাশও বটে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সুগন্ধি ব্যবহার ভাল পোশাক পরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ এবং অন্যের প্রতি সম্মান।

ü ঈদ আনন্দ খুশির দিন। এই দিনে নিজেকে সুসজ্জিত করা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উৎসবের আমেজকে বাড়িয়ে তোলে। এটি আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি শুকরিয়া আদায়েরও একটি রূপ।

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        ইসলাম সৌন্দর্য পছন্দ করে; পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই ঈমানের অঙ্গ।

·        ঈদে পোশাকের বাহার যেন অহংকার না হয়ে, হয় কৃতজ্ঞতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক।

·        ঈদ যেহেতু মিলন ও সমাবেশের দিন, তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও অংশ।

·        ঈদ এই গুণটিকে প্রকাশ করার একটি সুযোগ। তবে এই পোশাক যেন শরীয়াহ সম্মত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

 


📘 মিসওয়াক করা: দাঁত পরিষ্কার করা।

"মিসওয়াক মুখ পবিত্রকারী এবং রবের সন্তুষ্টির কারণ।" (নাসায়ী, সহীহ) যদিও এটি ঈদের দিনের সুনির্দিষ্ট বর্ণনা নয়, তবে এটি সকল অবস্থায় সুন্নাহ। 

·  রেফারেন্স:  (তাবয়ীনুল হাকায়েক /৫৩৮)

📝ব্যাখ্যা: 

 মিসওয়াক শুধু মুখ পরিষ্কারই করে না, বরং এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিরও কারণ।


🕋 ৩. ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে কিছু না খাওয়া (ঈদুল আযহায়)

ঈদুল ফিতরে খেজুর খাওয়া সুন্নাত, কিন্তু ঈদুল আযহায় আগে না খেয়ে যাওয়া সুন্নাত — যেন কুরবানির গোশত দিয়ে প্রথম আহার করা যায়।

📚 হাদীস:

রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন। কিন্তু ঈদুল আযহার দিন তিনি নামাজ থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত কিছু খেতেন না, যাতে তিনি তার কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়া শুরু করতে পারেন।

📚 রেফারেন্স: (বুখারী ৯৫৩, সুনানে দারেমী ১৬০৩)— (তিরমিযী, হাদীস: ৫৪২)

📝ব্যাখ্যা:

               ঈদুল আযহার বিশেষত্ব হলো — কুরবানির গোশতই হোক আমাদের প্রথম আহার। এটি কৃতজ্ঞতার প্রতীক এবং সুন্নাতের অনুসরণ।

 

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        সুন্নাত অনুসরণে ছোট ছোট কাজও আল্লাহর নিকট মহত্ব পায়।

·        কুরবানির প্রতি গুরুত্ব বোঝাতে এই আমল আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়।

 

🕋  সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া এবং হেঁটে যাওয়া:

  • সুন্নাহ: সকাল সকাল ঈদগাহের দিকে রওনা হওয়া এবং হেঁটে যাওয়া।
  • আছে যে, নবী (সা.) ঈদগাহে হেঁটে যেতেন।

📚 রেফারেন্স: (আবু দাউদ (১১৪৩, ১১৫৭)

 

📝ব্যাখ্যা:

                সকাল সকাল যাওয়া নামাজের প্রস্তুতি এবং মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ দেয়। হেঁটে যাওয়া বিনয়ের পরিচায়ক এবং প্রতিটি পদক্ষেপে সওয়াব অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

  • শিক্ষণীয়: ঈদের নামাজের গুরুত্ব বোঝাতে এই সুন্নাহটি তাৎপর্যপূর্ণ। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইবাদতের একটি বিশেষ সময়।


🕋 ৪. ঈদের নামাজ আদায় করা (ওয়াজিব/মুয়াক্কাদাহ):

·  পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ জামাআতে আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (বা অনেক ফিকহ মতে ওয়াজিব)

📖 কুরআন:

তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কুরবানি কর।

📚 রেফারেন্স: [সূরা কাওসার, ১০৮:]

📚 হাদীস:

নবীপুরুষ, নারী, পর্দানশীনসবাইকে ঈদের মাঠে নিয়ে যেতেন।

📚 রেফারেন্স: (বুখারী: ৯৭১, মুসলিম: ৮৮৪)

📝ব্যাখ্যা:
ঈদের নামাজ শুধু ইবাদতই নয়, তা মুসলিম উম্মাহর ঐক্য আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। নারীদের ক্ষেত্রেও ঈদের মাঠে অংশগ্রহণ ছিল উৎসাহিত।

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        জামাআত সমাজিক বন্ধন রক্ষার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

·        ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ ঈমানের এক চমৎকার বহিঃপ্রকাশ।

 


🕋 ৫. ঈদের নামাজে যাওয়ার সময় উচ্চ স্বরে তাকবীর বলা:

·  ঈদুল আযহার অন্যতম সুন্নাত: তাকবীর বলা।

📖 দলীল:

🌿  “..যেন তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে (তাকবীর দেয়)

📚 রেফারেন্স: [সূরা আল-হাজ্জ, ২২:২৮]

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর যেন তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো তোমাদেরকে পথ দেখানোর জন্য।
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)

 

📖 হাদীস:

🌿ইবনে ওমর আবু হুরায়রা (রাঃ) জিলহজের দশ দিনে বাজারে গিয়ে উচ্চ স্বরে তাকবীর দিতেন, এবং তাদের তাকবীর শুনে লোকেরাও তাকবীর দিত।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত:
"নবী করীমঈদের দিন (ঈদুল ফিতর) তাঁর ঘর থেকে বের হওয়ার মুহূর্ত থেকেই ঈদের নামাজের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত উচ্চ স্বরে তাকবীর দিতেন।"

🌿 📚 রেফারেন্স:

·        সহিহ বুখারী : ৯৭০]

  • দারাকুতনী (2/44,55)
  • আল-হাকিম (1105)
  • বায়হাকি (6350)
  • সূত্র: সহীহ আল-জামি (5004), মুহাদ্দিস: আলবানী (রহ.), হুকুম: সহীহ

📝ব্যাখ্যা: শিক্ষণীয় দিক:

🔹 তাকবীর বলা ঈদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ আমল:

🌿 এই হাদীসে ঈদের দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহকে তুলে ধরা হয়েছেতা হলো, ঘর থেকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় থেকেই তাকবীর বলা শুরু করা এবং তা নামাজের স্থানে পৌঁছা পর্যন্ত অব্যাহত রাখা।

·       ঈদুল আযহার দিন মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করার দিন। তাকবীর হচ্ছে সেই উচ্চারণ, যার মাধ্যমে মুমিন তাঁর অন্তরের ঈমান তাওহীদকে জাগ্রত করে। এই তাকবীর রাসূলএবং সাহাবাগণ মসজিদে, পথে ঈদগাহে উচ্চস্বরে বলতেন।

·       এই হাদীসটি ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে মুআল্লাক রূপে উল্লেখ করেছেন, যা সাহাবীদের আমল হিসেবে প্রমাণিত। এই আমল থেকে বোঝা যায় যে, জিলহজের প্রথম দশ দিনে আল্লাহর স্মরণে তাকবীর পাঠ করা এবং অন্যদের উৎসাহিত করা একটি প্রশংসনীয় আমল।

📌 উপসংহার:

📘 এই হাদীস আমাদের শিখায়:

·        ঈদের দিন তাকবীর বলা শুধু নামাজের সময় নয়, বরং ঘর থেকে বের হওয়া থেকেই শুরু করা সুন্নাহ।

·        এটি ঈদের দিনের আনন্দ, আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা এবং ইসলামের প্রকাশ্য পরিচয়ের অংশ।

🌿 আমলযোগ্য বিষয়:
ঈদের দিন (ফিতর আযহা উভয়েই) তাকবীর বলা সুন্নাহ। মুসলিম হিসেবে এই সুন্নাতকে জীবন্ত রাখা আমাদের দায়িত্ব।

 


📌 তাকবীরের বাণী:

📘 "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।"

🌿 অর্থ:

  • "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার" - আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
  • "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু" - আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই।
  • "ওয়াল্লাহু আকবার" - আর আল্লাহ মহান।
  • "আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ" - আল্লাহ মহান, আর সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য।

 📚 হাদীসের রেফারেন্স:

·        গ্রন্থ: মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা

·        হাদীস নম্বর: 5697

·        সনদ: সহীহ (বিশ্বস্ত সনদে বর্ণিত)

 

📝ব্যাখ্যা:  এই তাকবীরের রূপটি সাহাবায়ে কেরামদের আমল হিসেবে প্রমাণিত। তাদের অনুসরণে মুসলিম উম্মাহ ঈদের দিনে এই রূপে তাকবীর পাঠ করে থাকে।

·       তাকবীর হলো ঈদের দিনের বিশেষজিকর আল্লাহর মহানত্ব প্রকাশের এই ধ্বনি ঈমানকে জাগিয়ে তোলে এবং চারপাশে ঈদের বারতা ছড়িয়ে দেয়।

🌿 https://dorar.net/hadith/sharh/123337


🕋 ৬. পায়ে হেঁটে ঈদের নামাজে যাওয়া (যদি সম্ভব হয়)

📚 হাদীস:

রাসূলুল্লাহঈদের নামাজে পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরতেন।

📚 রেফারেন্স: (ইবনু মাজাহ, হাদীস: ১২৯৫, (আবু দাউদ ১১৪৩)

🔍 ব্যাখ্যা:
এটি রাসূলএর একটি বিশেষ সুন্নাত। ঈদের নামাজে হেঁটে যাওয়া ভিন্ন পথে ফিরে আসাএতে আল্লাহর স্মরণ, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ এবং পথজুড়ে তাকবীর ছড়িয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত আছে।

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        যতটুকু সম্ভব সুন্নাত অনুসরণ করা আমাদের অন্তরকে রাসূলএর নিকটে নিয়ে যায়।

·        হেঁটে যাওয়ায় ঈদে বিনয় প্রকাশ হয় এবং রিয়ার আশঙ্কা কমে।

 


🕋  ৭. ঈদের নামাজে একপথে গিয়ে অন্যপথে ফিরে আসাঃ

·  সুন্নাহ: যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া হবে, সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা ব্যবহার করা।

📚 হাদীস:

জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত: "নবী করীম (সা.) ঈদের দিন (ঈদগাহে) যাওয়ার জন্য একটি পথ ব্যবহার করতেন এবং ফেরার জন্য অন্য একটি পথ ব্যবহার করতেন।"   

📚 রেফারেন্স: (বুখারী, হাদীস: ৯৮৬)

 

📝ব্যাখ্যা:
ভিন্ন পথে ফিরে আসার মধ্যে রয়েছে দাওয়াহ, নতুন লোকদের সাথে সাক্ষাৎ, তাকবীর ছড়িয়ে দেওয়া, এবং ফেরেশতাদের সাক্ষা পরিবর্তনের রহস্য।

এটি অধিক সওয়াব অর্জনের জন্য, কারণ প্রতিটি পথে হেঁটে যাওয়াতে সওয়াব হয়।

 

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        ছোট ছোট সুন্নাতগুলোকে গুরুত্ব দিলে জীবন হয়ে ওঠে ইবাদতময়।

·        সমাজে আল্লাহর নাম ছড়িয়ে দেওয়ার এক বাস্তব কৌশল এটি।

·        এই সুন্নাহ মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করার এবং ইসলামের মহিমাকে প্রকাশ করার একটি সুন্দর মাধ্যম।

 


🕋  ৮. ঈদের নামাজের পর কুরবানির পশু জবাই করা

📖 কুরআন:

তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কুরবানি কর।

📚 রেফারেন্স: [সূরা কাওসার, ১০৮:]

s
📚 হাদীস:

বর্ণনা: বারাআইবন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি ঈদের আগে যবেহ করল, তার উচিৎ তার জায়গায় আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করেনি, তার উচিৎ এখন কুরবানি করা।

যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে কুরবানি করল, সে যেন তা পুনরায় করে।

 

📚 রেফারেন্স: [ (বুখারী, হাদীস: ৯৮৪, ৯৫১, ৫৫৫৬, ৫৫৫৭, ৭৩৮৯, মুসলিম, কিতাবুল আযাহী, অধ্যায়: কুরবানী, হাদিস নং: ১৯৬১) , সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং: ২৮০৬)।, ২৮০৭ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।

 📝ব্যাখ্যা:

এই হাদিস থেকে আমরা নিম্নলিখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিখতে পারি:

  1. কোরবানির সঠিক সময়: কোরবানির সঠিক সময় হলো ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার পর থেকে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন (১৩ই জিলহজ্ব) সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে তা কোরবানি হিসেবে গণ্য হয় না, বরং সাধারণ গোশত হিসেবে বিবেচিত হয়।

2.     ·  কোরবানির গুরুত্ব: এটি ইবাদত, যার জন্য শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত সময় পদ্ধতি রয়েছে। নিজের খেয়াল-খুশি মতো তা আদায় করা যায় না।

3.     ·  আদেশ পালনের তাৎপর্য: আবু বুর্দা (রাঃ) ভুলবশত ঈদের নামাজের আগেই কোরবানি করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে দ্বিতীয়বার কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা আনুগত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

4.     বিশেষ অনুমতির ক্ষেত্র: আবু বুর্দা (রাঃ)-এর ক্ষেত্রে যেহেতু তিনি ইতিমধ্যেই কোরবানি করে ফেলেছিলেন এবং তার কাছে অন্য কোনো উপযুক্ত পশু ছিল না, তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে একটি ছোট ভেড়ার বাচ্চা (যা সাধারণত কোরবানির জন্য যথেষ্ট হয় না) কোরবানি করার বিশেষ অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে এর সাথে এটিও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এই অনুমতি তার জন্যই নির্দিষ্ট ছিল এবং ভবিষ্যতে অন্য কারো জন্য এটি প্রযোজ্য হবে না। এটি প্রমাণ করে যে, শরীয়তের নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণীয়, তবে বিশেষ প্রয়োজনে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে ব্যতিক্রমের অনুমতি আসতে পারে, যা কেবল সেই বিশেষ ক্ষেত্রটিতেই সীমাবদ্ধ।

সুতরাং, হাদিসের মূল বক্তব্য হলো, কোরবানির সময় নির্ধারিত এবং এর আগে কোরবানি করলে তা কোরবানি হিসেবে কবুল হয় না। যে ব্যক্তি এমন ভুল করে ফেলে, তার উপর দ্বিতীয়বার কোরবানি করা ওয়াজিব।

 

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        কুরবানি আমাদের ত্যাগ আত্মনিয়োগ শেখায়।

·        তাৎপর্যপূর্ণ সময় নিয়ম অনুযায়ী আমল না করলে তা বাতিল হয়ে যেতে পারে।


🕋 ৯. কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা (আত্মীয়, গরীব, নিজ পরিবার)

📚 আছারে সাহাবা:

তারা (সাহাবাগণ) কুরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ নিজেরা খেতেন, এক-তৃতীয়াংশ গরীবদের দিতেন, আর এক-তৃতীয়াংশ সংরক্ষণ করতেন।
📚 রেফারেন্স: (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, /৫৩৪)

📝ব্যাখ্যা:
                  কুরবানির উদ্দেশ্য কেবল নিজের জন্য আহার নয়; বরং সমাজের দরিদ্র আত্মীয়দের অংশীদার করা। এতে সমাজিক ভ্রাতৃত্ব দয়াবোধ তৈরি হয়।

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        গোশতের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন সমাজে সাম্য আনয়ন করে।

·        দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতি ঈমানের অন্যতম নিদর্শন।


🕋 ১০. ঈদের দিন রোজা না রাখা

📚 হাদীস:

তোমরা ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহার দিন রোজা রেখো না।
📚 রেফারেন্স: (বুখারী, হাদীস: ১৯৯০)

📝ব্যাখ্যা:


ঈদ আনন্দ কৃতজ্ঞতার দিন। আল্লাহর পক্ষ থেকে উৎসবের পুরস্কার হিসেবে তা নির্ধারিত। সেদিন রোজা রাখা আনন্দের পরিপন্থী এবং সুন্নাতের বিরুদ্ধ।

📘 শিক্ষণীয় দিক:

·        ধর্মীয় আনন্দ উদযাপনও ইবাদতের অংশ।

·        আল্লাহ যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই ইবাদত করতে হবেনিজের যুক্তি দিয়ে নয়।

 

🕋 11. একাধিক পশু কুরবানি করলে একটিকে সবার পক্ষ থেকে উৎসর্গ করা (নিয়্যত)

·        📚 হাদীস:

জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদুল আযহার দিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। তিনি খুৎবা শেষে মিম্বার থেকে নামলেন। একটি বকরী আনা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা নিজ হাতে যবাহ করেন এবং বলেনঃ ’’আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহ মহান। এই কুরবানী আমার ও আমার উম্মাতের যারা কুরবানী করতে অক্ষম তাদের পক্ষ থেকে।’’

এটি আমার এবং আমার উম্মতের পক্ষ থেকে যারা কুরবানি করেনি।
📚 রেফারেন্স: (সুনান আবু দাউদ: ২৮১০)


🕋 11. আনন্দ ভাগাভাগি করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক জোরদার করা

·        ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা খুশি ভাগ করে নেওয়া ইসলামের শিক্ষা।

·        📖 কুরআন:

আল্লাহ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে আদেশ করেন।
📚 রেফারেন্স: [সূরা আন-নাহল, ১৬:৯০], [সূরা আন-নিসা, আয়াত: (:৩৬) ]

🎉 ঈদের দিনে করণীয়ঃ

ü  ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া এবং সদাচরণ করা সুন্নাত। এই দিনে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, উপহার আদান-প্রদান, এবং একে অপরের খোঁজখবর নেওয়া ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী প্রশংসনীয়।

 


🕋 ১২. কুরবানির পশুকে সদয়ভাবে জবাই করা

📖 হাদীস:
আল্লাহ প্রত্যেক কাজে উত্তম আচরণ বিধান করেছেন। যখন তোমরা জবাই করো, তখন উত্তমভাবে জবাই করো।

📚 রেফারেন্স: [সহীহ মুসলিম: 1955]

 📝ব্যাখ্যা:

পশুকে কষ্ট না দিয়ে জবাই করাই সুন্নাহর আদর্শ। ছুরি ধারালো হওয়া পশুকে না ভয় দেখানো অন্যতম নিয়ম।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
দয়াশীলতা শুধু মানুষের জন্য নয়, পশুর জন্যও জরুরি।


🕋  ১৩. নিজ হাতে কুরবানি করা বা কুরবানির সময় পাশে থাকা

📖 হাদীস:

তোমার কুরবানির পশুর পাশে দাঁড়াও এবং তা প্রত্যক্ষ করো।

📚 রেফারেন্স:সহীহ ইবনে মাজাহ: 3127

 📝ব্যাখ্যা:

   যদি নিজে জবাই করতে না পারো, তাহলে উপস্থিত থাকো এবং তাকবীর বলো।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
নিজ দায়িত্বের কাজ নিজ হাতে করা শ্রেয় এবং এতে ঈমান দৃঢ় হয়।


🕋 ১৪. ঈদের দিন গুনাহ ও রিয়া (প্রদর্শন) থেকে বেঁচে থাকা

📖 কুরআন:
যে দুনিয়ার প্রতিদান চায়, আমি তা তাকে দেই; আর যে আখিরাতের চায়, আমি তা তাকে দেই। আমি কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দিব।
📚 রেফারেন্স: (সূরা আলে ইমরান: ১৪৫)

📝ব্যাখ্যা:

     অনেকেই ঈদের দিনে রিয়া করে (লোক দেখানো) কুরবানি বা পোশাক যেন লোক দেখানো না হয়।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
আমল শুদ্ধতা ইখলাসই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য।


🕋 ১৫. ঘরে দোয়া কুরআন তিলাওয়াত করা

📖 হাদীস:
তোমরা তোমাদের ঘরকে কবর বানিয়ো না, শয়তান সেই ঘর থেকে পালিয়ে যায় যেখানে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়।

 📚 রেফারেন্স:সহীহ মুসলিম: 780

📝ব্যাখ্যা:

    ঈদের খুশিতে গান-বাজনা না করে বরং কুরআন দোয়ার মাধ্যমে ঘর আলোকিত করো।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ঈদ শুধু বাহ্যিক আনন্দের দিন নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তিরও সময়।


🕋 ১৬. পরিবারকে খুশি ও সন্তুষ্ট রাখা

📖 হাদীস:
এবং প্রত্যেকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জবাবদিহি করবে।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 893
সহীহ মুসলিম: 1829

 

📝ব্যাখ্যা:

                ঈদের খুশিতে যেন স্ত্রী-সন্তান পরিবারের অধিকার উপেক্ষিত না হয়।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য পরিবারের মুখে হাসি ফুটানোতে নিহিত।

 


🕋  ১৭. তাকবীরের প্রচারঅন্যকে উদ্বুদ্ধ করা

📖 হাদীস:
ইবনে ওমর আবু হুরায়রা (রাঃ) জিলহজের দশ দিনে বাজারে গিয়ে তাকবীর দিতেন, ফলে লোকেরাও তাকবীর দিত।

📚 রেফারেন্স:

·        [সহীহ আল-বুখারী: দুই ঈদের কিতাবের একটি নির্দিষ্ট ভাষ্য]

·        [আস-সুনানুল কুবরা' হলো ইমাম বাইহাকী (রহ.) : খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩১৬ 3/315]

·        [আল-মুসান্নাফ' হলো ইমাম ইবনে আবী শাইবা (রহ.) ৫৬৪৫ ]

 📝ব্যাখ্যা:

                 উচ্চস্বরে তাকবীর দেওয়া তা প্রচার করা সুন্নাহ সাহাবাদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
একজন ঈমানদার মুসলিম সমাজে নেক আমল ছড়িয়ে দিতে সচেষ্ট হয়।

 


🕋  ১৮. কুরবানির পশুকে নিজে জবাই করার আগে দোয়া পাঠ করা

📖 হাদীস:
বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। হে আল্লাহ! এই কুরবানি আপনার পক্ষ থেকে এবং আপনার উদ্দেশ্যে।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ মুসলিম: 1966
তিরমিযী: 1521
আবু দাউদ: 2795

 📝ব্যাখ্যা:

              এই দোয়ার মাধ্যমে পশু জবাই শুধু সামাজিক রীতি নয় বরং আল্লাহর উদ্দেশ্যে একটি ইবাদত রূপ নেয়।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
প্রতিটি ইবাদতের আগে নিয়ত আল্লাহর স্মরণ ইবাদতকে আরও পবিত্র করে তোলে।


🕋 ১৯. ঈদের দিন অভাবীদের সহযোগিতা করা

📖 কুরআন:
তোমরা তা থেকে নিজে খাও এবং দরিদ্রদের খাওয়াও।
📚 রেফারেন্স: (সূরা হজ্জ: ২৮)

 

📝ব্যাখ্যা:

                ঈদের দিনে নিজের আনন্দ অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব প্রকাশ পায়।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ঈদের প্রকৃত খুশি তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন গরিব, এতিম দরিদ্ররাও অংশ নিতে পারে।

 


🕋 ২০. পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা (ঈদের সালাম)

·  সুন্নাহ/মুস্তাহাব: ঈদের দিন পরস্পরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা।

📖 আছার (সাহাবিদের বর্ণনা):

ঈদের দিন সাহাবিরা একে অপরকে বলতেন: "তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা" আল্লাহ আমাদের তোমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।’”

📚 রেফারেন্স:
শায়খ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী (রহ.) রচিত ইরওয়াউল গালিল: খণ্ড , পৃষ্ঠা ১২৫(3/125)
আল-ফাতহুল কাবীর ফী যিয়াদাতিল জামি' আস-সাগীর, আল-ফাতহুল কাবীর: খণ্ড , পৃষ্ঠা ৪৪৬(2/446)
ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী' : খণ্ড , পৃষ্ঠা ৪৪৬(2/446)
বাইহাকী তাঁর 'আস-সুনানুল কুবরা' গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন: খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩১৬(3/115)]

  ইবনে আবী শাইবা তাঁর 'আল-মুসান্নাফ' গ্রন্থে (হাদিস নম্বর) ৫৬৪৫ বর্ণনা করেছেন।]

 

📝ব্যাখ্যা:

                    এটি মুসলিমদের মধ্যে ভালোবাসা সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।  এটি একটি ভালো দুআ এবং ঈমানদারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের চিহ্ন।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
পরস্পর আন্তরিকতা সম্মান বৃদ্ধি পায় সুন্দর দুআভিত্তিক শুভেচ্ছায়। ইসলাম শান্তি ভালোবাসার ধর্ম। ঈদ এই মূল্যবোধগুলোকে আরও শক্তিশালী করার একটি সুযোগ।


🕋 ২১. ঈদের দিনে রাসূলুল্লাহএর আদর্শ অনুসরণ করে উম্মতের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসা

📖 হাদীস:
আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাদের প্রতি দয়া করেন, যারা দয়ালু।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 1284
সহীহ মুসলিম: 2319

📝ব্যাখ্যা:

                ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য শুধু আনন্দে নয়, বরং অন্যকে আনন্দে শরিক করার মধ্যেই নিহিত।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
অসহায় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোও এক বড় ইবাদত।


🕋 ২২. ঈদের দিন পরিবারকে সময় দেওয়া আনন্দে শরিক করা

📖 হাদীস:
তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই, যে তার পরিবার-পরিজনের প্রতি উত্তম।

📚 রেফারেন্স:
তিরমিযী: 3895
ইবনু মাজাহ: 1977

 

📝ব্যাখ্যা:

     ঈদের সময় পরিবারকে ভালোবাসা, সময় হাস্যরস দেওয়া নববী সুন্নাহর একটি দিক।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
পরিবারে ভালো ব্যবহার ঈদের আনন্দ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।


🕋 ২৩. ঈদের দিন প্রতিবেশীদের খোঁজ নেওয়া শুভেচ্ছা জানানো

📖 হাদীস:
জিবরীল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে এত বেশি করে وصية করতেন যে আমি ভাবতাম, তিনি তাকে উত্তরাধিকারীই বানিয়ে দেবেন।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 6014
সহীহ মুসলিম: 2624

📝ব্যাখ্যা:

               ঈদের দিনে প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণ শুভেচ্ছা ইসলামের সৌন্দর্য।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ভ্রাতৃত্ববোধ সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় ঈদের শুভ আচরণের মাধ্যমে।


🕋 ২৪. ঈদের নামাজে যাওয়ার পথে এক রাস্তায় যাওয়া এবং ফেরার পথে অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা

📖 হাদীস:
নবী (ﷺ) ঈদের দিন এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, আর অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 986

 

📝ব্যাখ্যা:

               এটি আল্লাহর জমিনে ইসলামের নিদর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার একটি পন্থা।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ঈদের প্রতিটি কাজ সুন্নাহ অনুযায়ী করলে তা ইবাদতে পরিণত হয়।


🕋 ২৫. ঈদের দিনের জামাত শেষে খুতবা শ্রবণ করা

📖 হাদীস:
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজ আদায় করতেন এবং খুতবা দিতেন।  আমরা খুতবা দেই; যার ইচ্ছা সে বসে শুনবে।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 957
সহীহ মুসলিম: 889]

. সহীহ বুখারী থেকে:

  • হাদিস নং: ৯৬২ (আন্তর্জাতিক নম্বর) / হাদিস নং: ৯১১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংস্করণ)
    • বর্ণনাকারী: ইবনু আব্বাস (রাঃ)
    • হাদিসের অংশ: ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বকর, উমার, এবং উসমান (রাঃ) এর সঙ্গে সালাতে হাযির ছিলাম। তারা সবাই খুতবার আগে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন।"
    • অধ্যায়: কিতাবুল ইয়াদাইন (দুই ঈদ), পরিচ্ছেদ: ৬০৯. ঈদের সালাতের পর খুতবা।
    • গুরুত্ব: এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে বলে যে, ঈদের নামাজ খুতবার আগে আদায় করা সুন্নাহ, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীন (রা.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত। এর মাধ্যমে ইমামের নামাজের পর খুতবা দেওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • হাদিস নং: ৯৭৬ (আন্তর্জাতিক নম্বর) / হাদিস নং: ৯২৫ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংস্করণ)
    • বর্ণনাকারী: আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ)
    • হাদিসের অংশ: আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহার দিন ঈদগাহে গিয়ে সর্বপ্রথম সালাত আদায় করতেন, তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ায করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন অথবা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন।"
    • অধ্যায়: কিতাবুল ইয়াদাইন (দুই ঈদ), পরিচ্ছেদ: ৬১৩. আযানের পূর্বে ঈদের সালাত পরে খুতবা।
    • গুরুত্ব: এই হাদিসটি সরাসরি নির্দেশ করে যে, ঈদের নামাজ আদায়ের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিতেন এবং তাতে উপদেশ দিতেন।

. সহীহ মুসলিম থেকে:

  • হাদিস নং: ৮৮৯ (আন্তর্জাতিক নম্বর) / হাদিস নং: ১৫৬৭ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংস্করণ)
    • বর্ণনাকারী: আব্দুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ)
    • হাদিসের অংশ: আব্দুল্লাহ ইবনে সায়িব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, "আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ঈদের দিন সালাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার পূর্বে প্রথমে সালাত আরম্ভ করলেন। তাতে আযান ইকামত ছিল না। তারপর তিনি (খুতবার জন্য) দাঁড়ালেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে তাকওয়া অবলম্বন করার আদেশ দিলেন..."
    • অধ্যায়: কিতাব সালাতিল ঈদাইন (দুই ঈদের সালাত), পরিচ্ছেদ: ঈদের আগে পরে কোন সালাত নেই।
    • গুরুত্ব: এই হাদিসটি নিশ্চিত করে যে, ঈদের নামাজ প্রথমে এবং তার পরে খুতবা দেওয়া হতো।

. অন্যান্য প্রাসঙ্গিক হাদিস:

  • সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ১১৫৫ এবং ১১৫৬: এই হাদিসগুলোতেও ঈদের নামাজ খুতবার পরম্পরা এবং খুতবার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে।

এই হাদিসগুলো থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের নামাজ আদায় করার পর খুতবা দিতেন। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।

📝ব্যাখ্যা:

                 যদিও ঈদের খুতবা ওয়াজিব নয়, তবে তা ইসলামী নির্দেশনা উপদেশশূন্য হওয়া উচিত নয়।

খুতবা মুসলিমদের জন্য শিক্ষামূলক এবং দিকনির্দেশনামূলক হয়।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
খুতবা শ্রবণ ঈদের দিনের শিক্ষামূলক পরিবেশ গঠনে সহায়ক।

 


🕋 ২৬. কোরবানির হুকুম অনুযায়ী কোরবানী করাঃ

সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের উপর কোরবানি করা ওয়াজিব।

"আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। অতএব তোমার রবের জন্য সালাত আদায় কর এবং কোরবানি কর।"

📚 রেফারেন্স: (সূরা কাউসার: -)

📖 হাদিস:
মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে যে অন্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছে না আসে।" (ইবনে মাজাহ)

"যে ব্যক্তি ঈদের আগে যবেহ করল, তার উচিৎ তার জায়গায় আরেকটি কুরবানি করা। আর যে এখনো কুরবানি করেনি, তার উচিৎ এখন কুরবানি করা।"

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী (স্বয়ং নবী করতেন কোরবানী)
মুসনাদ আহমদ: 26935

📝ব্যাখ্যা:

                কোরবানী ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নবী রাসূল ﷺ-এর সুন্নাহ।

কোরবানি হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য এবং ত্যাগের প্রমাণ। এটি ইব্রাহিম (.)-এর মহান ত্যাগের স্মারক।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং দরিদ্রদের জন্য খাদ্য যোগান।

কোরবানি মানুষকে আল্লাহর জন্য সর্বস্ব ত্যাগের মানসিকতা তৈরি করে। এটি সমাজে ধনীদের প্রতি দরিদ্রদের অধিকার স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি করে।


🕋  ২৭. কোরবানীর গোশত গরিব-দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা

  আল্লাহ তায়ালা বলেন: "অতএব তোমরা তা থেকে আহার কর এবং অভাবগ্রস্ত, দরিদ্রকে আহার করাও।"

📚 রেফারেন্স: (সূরা হজ্ব: ২৮)

📖 হাদিস:
যে দয়া করে না, তার প্রতি কেউ দয়া করে না।

সুন্নাহ/মুস্তাহাব: কোরবানির গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারকে খাওয়ানো, আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা। মুস্তাহাব হলো, কোরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করা: এক ভাগ নিজের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশীদের জন্য, এবং এক ভাগ দরিদ্র অভাবীদের জন্য।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: 6015
সহীহ মুসলিম: 2318

📝ব্যাখ্যা:

                 কোরবানীর গোশত ভাগ করে দিয়ে সমাজে দয়াশীলতা সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়।

এটি সামাজিক সংহতি ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করে। এর মাধ্যমে অভাবীরাও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো ঈদের মূল বার্তার অন্যতম। কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও। এটি সহানুভূতি, দানশীলতা এবং অপরের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার শিক্ষা দেয়।



🕋 ২৮. ঈদের দিন সঠিক ও পরিষ্কার জামাতের জামাকাপড় পরিধান করা

📖 হাদিস:
আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্য পছন্দ করেন।

📚 রেফারেন্স:
সহীহ মুসলিম: 2626
মুসনাদ আহমদ: 1485

📝ব্যাখ্যা:

                   পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সুগন্ধ ঈদের আনন্দকে আরও বৃদ্ধি করে।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
নিজেকে সজ্জিত করা ঈদ উপলক্ষ্যে ইবাদতের একটি অংশ।


🕋 ২৯. ঈদের দিন সকলে যেনো একত্রে মিলিত হয় ও ভাইচারা বৃদ্ধি পায়

📖 হাদিস:
বিশ্বাসী বিশ্বাসীর জন্য যেনো এক নির্মিত ভবনের অংশ, যার একেকটি অংশ অন্যটিকে শক্তি দেয়।

📚 রেফারেন্স:
[•
সহীহ মুসলিম: 2588]

📝ব্যাখ্যা:

                   ঈদুল আযহার দিনে সমাজের সবাই যেনো মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি করে।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:
ঈদ সামাজিক বন্ধন ঐক্যের উৎস।


🕋 ৩০. ঈদের দিন শিশুদের জন্য উপহার ও আনন্দের ব্যবস্থা করা

📖 হাদিস:
যে করুণা প্রদর্শন করে না, তার প্রতি করুণা করা হবে না।

📚 রেফারেন্স:
• [সহীহ বুখারী: 6015]

📝ব্যাখ্যা:

                  শিশুদের হাসি ঈদের আনন্দ পূর্ণ করে এবং নবীএর সুন্নাহ।

🎓 শিক্ষণীয় বিষয়:

                পরিবারে সমাজে শিশুর প্রতি দয়াশীল হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 



PDF generated রাসিকুল ইসলাম



Post a Comment

0 Comments