📘3. বিয়ের সময় কন্যাপক্ষের ভুল:

📘বিয়ের সময় কন্যাপক্ষের ভুল:

(সুন্নাহভিত্তিক বিশুদ্ধ দৃষ্টিকোণ, হাদীস, কুরআন ও সালাফদের ব্যাখ্যাসহ)

📝১. বরযাত্রার চাহিদা করা।

ভুল: কন্যাপক্ষের পক্ষ থেকে বরযাত্রার জন্য অতিরিক্ত লোকের চাহিদা করা, যা প্রায়শই লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে হয়। সামাজিক মর্যাদার অজুহাতে বড় বরযাত্রার দাবি।

✅ ইসলামের নির্দেশনা:

অতিরিক্ত বরযাত্রার চাহিদা করা অপচয় ও রিয়া (লোক দেখানো) বা চাপ সৃষ্টি করা নিরুৎসাহিত।

“আর অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।”

(সূরা আন’আম: ১৪১)

রাসুল (সা.) বলেছেন, “সরলতা ঈমানের অংশ।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং: ৪১৬১)

📘 তাহকীক:

সূত্র: মুস্তাদরাক হাকিম ২৭৮৪; বায়হাকী ৭/২৩৫

সনদ: সহীহ বলেছেন: ইমাম হাকিম, যাহাবী, আলবানী (সহীহুল জামে’ ১৬২৪)

ইবনু হিব্বান: ৪০৫৭; সহীহ বলেছেন আলবানী।

📝 সালাফদের ব্যাখ্যা:

ইমাম ইবন তাইমিয়া (রহ.) বলেন, “বিয়ের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে অপ্রয়োজনীয় ভিড় ও চাহিদা এড়ানো উচিত, কারণ এটি শরিয়াহর সরলতার পরিপন্থী।”

(মাজমু ফাতাওয়া, ইবন তাইমিয়া, খণ্ড ৩২)।)

📚 ব্যাখ্যা:

চাহিদা করে বরযাত্রী বাড়ানো হলো অহংকার ও কষ্ট দেওয়ার শামিল — যা বরকত হ্রাস করে।

 

📝২.উপঢৌকন বা যৌতুক পাঠানো ও পছন্দ করাঃ

📝ভুল: ছেলের জন্য উপঢৌকন বা যৌতুক প্রকাশ্যে পাঠানো, পছন্দ করা বা জরুরি মনে করা।

🔹ভুল: মেয়ের পক্ষ থেকে ছেলের জন্য মূল্যবান উপহার, টাকা-পয়সা বা আসবাব পাঠানো।

📝ইসলামী দৃষ্টিকোণ: ইসলামে যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ। এটি জাহেলি প্রথার অংশ এবং জুলুম হিসেবে গণ্য হয়।

রাসুল (সা.) যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।

“একজনের উপর অপরজনের বোঝা বহন করতে হবে না।”

(সূরা ফাতির: ১৮)

✅ কুরআনের নির্দেশনা:

📚অর্থ: নারীদের তাদের মোহর তাদের ইচ্ছায় দাও।

সূরা নিসা: ৪

🔸সালাফদের মত:

🌟 ইমাম শাফি’ঈ (রহ.) বলেন:

❝মোহর হচ্ছে বর পক্ষের দায়িত্ব; কন্যা পক্ষ থেকে কিছু দেওয়া আবশ্যক নয়।❞

আল-উম্ম, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১০২

🌟ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন, “যৌতুক প্রদান বা দাবি করা শরিয়াহর দৃষ্টিতে জুলুম এবং অপচয়।”

(আল-মুসনাদ)

মন্তব্য: যৌতুক প্রথা ইসলামে নিষিদ্ধ এবং এটি কন্যাপক্ষের উপর অযৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করে।

 

📝৩.প্যান্ডেল সাজিয়ে বড় আয়োজন করাঃ

আত্মীয়-স্বজন ও মহল্লাবাসীদের জন্য প্রথাগতভাবে বাড়িতে প্যান্ডেল সাজিয়ে বা কমিউনিটি সেন্টারে দাওয়াত এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা।

🔹ভুল: আত্মীয় ও গোষ্ঠীর ভিড় সাজানো, বড় আয়েরের আয়োজন করা। প্রথাগত খাবারদাবার ও আমন্ত্রণের বিশাল আয়োজন।

✅ ইসলামের নির্দেশনা:

📝ইসলামে অপচয় ও লোক দেখানো নিষিদ্ধ। বিয়ের দাওয়াত সরলভাবে হওয়া উচিত।

📚 অর্থ: আল্লাহ তিনটি জিনিস অপছন্দ করেন: কথার পেছনে কথা, অর্থ অপচয় এবং অনর্থক প্রশ্ন।

সহীহ বুখারী: ১৪৭৭; সহীহ মুসলিম: ১৭১৫

📝রাসুল (সা.) বলেছেন,

“খাবারের মধ্যে বরকত আছে যখন তা সরলভাবে পরিবেশন করা হয়।”

(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৩৩৩৫ তাহকীক: হাদীসটি সহীহ, আলবানী)

 

📝সালাফদের ব্যাখ্যা:

🌟হাসান বসরি (রহ.) বলেন, “বিয়ের দাওয়াতে অপচয় ও প্রদর্শনী এড়ানো উচিত। সরলতাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে।” (আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)

 

📝৪. বিয়ের সরঞ্জাম, অলঙ্কারাদি প্রকাশ্যে দেখা এবং অন্যদেরকে দেখানো। আর তা নিয়ে পর্যালোচনা করা।

 

🔹ভুল: বিয়ের পোশাক, গহনা, সাজসজ্জা প্রকাশ্যে এনে লোকদের দেখানো।

✅ কুরআনঃ

📘অর্থ: “তোমরা আগেকার জাহেলি যুগের মতো সাজসজ্জা প্রকাশ করো না।”

সূরা আহযাব: ৩৩

📝“তোমরা যা কিছু পেয়েছ, তা পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।”

(সূরা আল-ইমরান: ১৪)

📝রাসুল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার কাজ প্রকাশ করে দেবেন।”

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ২৯৮৬)

📝সালাফদের ব্যাখ্যা:

🌟ইবন উমার (রা.) বলেন, “সম্পদ প্রকাশ্যে প্রদর্শন করা ঈমানের দুর্বলতার লক্ষণ।”

ইবন হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি।

🌟 ইমাম কুরতুবী বলেন:

❝গহনা প্রদর্শন ও সৌন্দর্য জাহির করা জাহেলিয়াত।❞

তাফসীর কুরতুবী (আয়াত ৩৩:৩৩)

📌 ব্যাখ্যা: অপ্রয়োজনীয় দেহ–গয়না প্রকাশ ইসলামীতা পছন্দ করে না।

 

📝৫.বরের জন্য শরবত ইত্যাদি খাওয়ানো, বিয়ের পর বরকে শরবত পান করানো।

🔹ভুল: বিয়ের পর কন্যা বা অন্য নারী দ্বারা বরকে শরবত পান করানো। লোক দেখানো ভালোবাসা প্রদর্শনের জন্য বরকে মিষ্টি, শরবত খাওয়ানো।

 

✅ ইসলামের দৃষ্টিকোণ:

📘হাদীস: এটি প্রথাগত রীতি, যা শরিয়াহর দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় এবং পর্দা লঙ্ঘনের কারণ।

📝“মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে।”

(সূরা নূর: ৩১)

📝আয়েশা (রা.) বলেন, “নারীর সম্মান রক্ষার জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রথা এড়ানো উচিত।”

"নারীদের মাঝে প্রবেশ করো না।"

এটা সুন্নাহ নয়, বরং কুসংস্কার ও লোক দেখানোর একটি অংশ। শরিয়তের নির্দিষ্ট কিছু নেই। নির্দিষ্ট না থাকা আমলকে ইবাদতের রূপ দিলে তা বিদ’আত।                                    

সহীহ বুখারীঃ ৫১৮৯, ৫২৩৩, সহীহ মুসলিম ২১৭২

📝৬.বেগানা নারীদের বরের সামনে আসা।

📝ভুল: বিয়ের সময় বেগানা নারীদের বরের সামনে আসা।

📝“মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।”

(সূরা নূর: ৩১)

✅ হাদীস:

অর্থ: নারীদের কাছে (গায়রে মাহরাম) প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকো।

সহীহ বুখারী: ৫২৩৩; সহীহ মুসলিম: ২১৭২

📝উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, “নারী ও পুরুষের মধ্যে পর্দা বজায় রাখা ঈমানের দাবি।”

(ফাতহুল বারি)

📌 ব্যাখ্যা:

বিয়ের দিন বেগানা নারীদের বরের সামনে আনা ফিতনার দ্বার খুলে দেয়।

 

📝৭.সালামি গ্রহণ করাকে জরুরি মনে করা এবং আদান-প্রদান করা।

🔹ভুল: সামাজিক চাপে সালামি বাধ্যতামূলক করা।

✅হাদীস:

📝“যে ব্যক্তি অর্থের প্রতি লোভী, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং: ৬১৪, ২৩৭৬)

📚ব্যাখ্যা: ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, “বিয়ের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য থাকা উচিত নয়।” (তাফসিরে ইবন কাসির)

জোর করে কিছু আদায় করাকে ইসলাম সুনজরে দেখে না। সালাফরা এমন প্রথা বর্জন করতেন।

 📝৮.মহল্লায় প্রসিদ্ধি লাভের আশায় গেট সাজিয়ে কিংবা মাইক বাজিয়ে ইচ্ছাকৃত ঢাকঢোল করা।

🔹ভুলটি: নিজেকে বড় করে দেখানোর মানসিকতা।

📝ভুল: মহল্লায় প্রসিদ্ধি লাভের আশায় গেট সাজিয়ে বা মাইক বাজিয়ে ঢাকঢোল করা।

📝ইসলামী দৃষ্টিকোণ: লোক দেখানো ও প্রদর্শনী ইসলামে নিষিদ্ধ।

📝“যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার কাজ প্রকাশ করে দেবেন।”

(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ২৯৮৬)

✅কুরআনের নির্দেশনা:

📚অর্থ: আল্লাহ অহংকারী ও আত্মগর্বিতকে পছন্দ করেন না।

সূরা লুকমান: ১৮

📝সালাফদের ব্যাখ্যা:

🌟 ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, “বিয়ের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শনী ও অপচয় থেকে বিরত থাকা উচিত।”

(কিতাবুল উম্ম)

🌟 ইবনুল মুবারক (রহ.) বলেন:

❝যে লোক তার দীন নয়, বরং খ্যাতি প্রকাশের জন্য আমল করে— সে

মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত।❞

যুহদ, হাদীস: ১৩৪৫

The post was created by Rasikul India 🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম

 📝৯. ফরজ-ওয়াজিব ইত্যাদি বিষয়ে উদাসীন হওয়া।

🔹ভুল: বিয়ের ব্যস্ততায় নামায, পর্দা ও অন্যান্য ফরজ ইবাদতে গাফিল হওয়া।

✅ কুরআনের নির্দেশনা:

📝“তোমরা আল্লাহর বিধান মেনে চলো।”

(সূরা আল-ইমরান: ২০০)

📚 অর্থ:সালাত থেকে গাফিলদের জন্য ধ্বংস।

সূরা মাউন: ৪–৫

🌟সালাফদের দৃষ্টিতে:

📝আবু বকর (রা.) বলেন, “বিয়ের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে শরিয়াহর প্রতি উদাসীনতা ক্ষমার অযোগ্য।”

(ফাতহুল বারি)

❝আসল বিপদ হচ্ছে, যখন অনুষ্ঠান দীনকে ধ্বংস করে দেয়।❞

হাসান আল-বাসরী (রহ.)

📝১০.বিয়ে উপলক্ষে যুবক-যুবতীদের অবাধ মেলামেশা করা।

 

✅ কুরআনের নিষেধাজ্ঞা:

📌অর্থ: মু’মিন পুরুষদের বল, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে।

সূরা নূর: ৩০–৩১

📝“যখন কোনো পুরুষ ও নারী নির্জনে থাকে, তখন তৃতীয়জন হয় শয়তান।”

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং: ২১৬৫)

📝সালাফদের ব্যাখ্যা:

🌟ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, “বিয়ের অনুষ্ঠানে পর্দা ও পৃথকীকরণ বজায় রাখা উচিত।”

(আল-মুদাওয়ানা)

📚ব্যাখ্যা:

মিশ্র পরিবেশ, বিশেষত বিয়েতে যুবক-যুবতীর মেলামেশা→ ফিতনার উৎস।

 

The post was created by Rasikul India 🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম

📝১১. অপচয় ও অপব্যয় করা।

✅ কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা:

📚অর্থ: নিঃসন্দেহে অপচয়কারী শয়তানের ভাই।

সূরা ইসরা: ২৭

🔸সালাফদের ব্যাখ্যা:

উমার (রাঃ) বলেন:

❝যে বেশি খরচ করে, তার মধ্যে অহংকার ঢুকে পড়ে।❞

মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা: ৩৪১৩৮

📝১২. অহেতুক ছবি তোলা এবং ভিডিও ইত্যাদি করা।

📝ইসলামী দৃষ্টিকোণ: শরিয়াহ অনুযায়ী, ছবি তোলা ও ভিডিও করা যদি পর্দা লঙ্ঘন করে বা প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে হয়, তবে তা নিষিদ্ধ।

রাসুল (সা.) বলেছেন, 

✅ হাদীস:

অর্থ: কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে চিত্রাঙ্কনকারীদের।

সহীহ বুখারী: ৫৯৫০, ৫৯৫৪; সহীহ মুসলিম: ২১০৯

📌 ব্যাখ্যা:

যেখানে ছবি তোলার প্রয়োজন নেই, সেখানে ফ্যাশনের কারণে ভিডিও ও ছবি করা – হারাম ও অনুচিত।

✅ উপসংহার ও শিক্ষণীয় দিক:

কন্যাপক্ষের উচিত বিয়েকে সহজ, শরিয়তসম্মত ও বরকতময় করা।

সামাজিক লোকলজ্জা ও দুনিয়াবি মর্যাদার পরিবর্তে দ্বীনি শিক্ষার আলোকে বিয়ের আচার-আচরণ নির্ধারণ করা।

সালাফদের মতো বিনয়, সরলতা ও তাকওয়ার সঙ্গে বিয়ে সম্পাদন করতে হবে।

 

📘7.বিয়েতে ইসলামে ভিত্তিহীন সামাজিক কিছু কুসংস্কার:

📝১.মেয়ের অনুমতি আনার জন্য ছেলেপক্ষের সাক্ষী পাঠানো।

🔹ভুল: মেয়ের অভিভাবকের পরিবর্তে ছেলেপক্ষ নিজের লোক পাঠিয়ে অনুমতি আনে।

✅ শরঈ বিধান:

রাসুল ﷺ বলেন:                                     

জামে তিরমিযী: ১১০১; আবু দাউদ: ২০৮৫; ইবনু মাজাহ: ১৮৮১; সহীহ আলবানী

📌 ব্যাখ্যা:

মেয়ের অনুমতি নেওয়া তার অভিভাবক বা অভিভাবকের নিযুক্ত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কেউ করতে পারে না। গায়রে মাহরাম বা ছেলের লোক পাঠানো সুন্নাহবিরোধী এবং অনির্ভরযোগ্য।

 

📝২.বিয়ের সময় বর-কনের দ্বারা তিনবার ইজাব-কবুল পাঠ করানো এবং পরে তাদের দ্বারা ‘আমিন’ বলানো।

🔹ভুল: ইজাব-কবুল তিনবার পড়ানো ও ‘আমিন’ বলানোকে আবশ্যিক মনে করা।

✅ হাদীস বিশ্লেষণ:

কোনো হাদীস বা সালাফি আমলে তিনবার ইজাব-কবুল বা ‘আমিন’ বলার প্রথা পাওয়া যায় না।

📌ইসলামী দৃষ্টিকোণ:

একবার ইজাব (মেয়ের অভিভাবকের পক্ষ থেকে প্রস্তাব) এবং একবার কবুল (বরের সম্মতি) যথেষ্ট — এটিই সুন্নাহ।

(ফিকহ: আল-মাবসূত, সারাখসী; আল-মুঘনি, ইবন কুদামাহ)

🌟ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন:

❝ইজাব-কবুলের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা বা বিশেষ নিয়ম বানানো বিদআত।❞

মাজমূ’ফাতাওয়াঃ ৩২/১২৫

📝৩.ইজাব-কবুলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর উপস্থিতিদের লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে হাত তুলে বরের সালাম করা।

🔹ভুল: ইজাব-কবুল শেষ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে দাঁড়িয়ে সালাম করে।

✅ সুন্নাহর দৃষ্টিতে:

এ ধরণের পদ্ধতির কোনো দলিল নেই। রাসুল ﷺ বা সাহাবায়ে কিরামের মাঝে এমন পদ্ধতি পাওয়া যায় না।

📌 ব্যাখ্যা:

ইবাদত বা আনুষ্ঠানিকতা বিষয়ক নতুন কোনো কাজ সুন্নাহ ছাড়া করলে তা বিদআত হয়।

📚 অর্থ:🔸 নবী ﷺ বলেন:

যে ব্যক্তি এই দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু সৃষ্টি করে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় — তা প্রত্যাখ্যাত।

সহীহ বুখারী: ২৬৯৭; সহীহ মুসলিম: ১৭১৮

 

📝৪.ঝগড়া-ফাসাদের আশঙ্কা থাকাসত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে জরুরি মনে করা।

অথচ এ সম্পর্কিত হাদিসকে মুহাদ্দিসিনে কেরাম সনদের বিবেচনায় দুর্বল বলেছেন।

🔹ভুল: ঝগড়া-ফাসাদের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে আবশ্যক ভাবা।

✅ হাদীস বিশ্লেষণ:

“বিয়েতে খেজুর ছিটানো” নামে কোনো সহীহ হাদীস নেই। যে বর্ণনাগুলি আছে, সেগুলোর অধিকাংশ (দ্বঈফ) বা (মূলহীন)।

🌟 আল্লামা শাওকানী (রহ.) বলেন:

❝যে হাদীসের কোনো ভিত্তি নেই এবং তা প্রচলিত লোকধারণা থেকে এসেছে — তাকে ইবাদতের অংশ বানালে তা বিদআত।❞

ফাতহুল কাদীর, সূরা নূর তাফসীর

📝৫.বিয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে এলাকার প্রসিদ্ধ মাজার জেয়ারত করা।

🔹ভুল: বর রওয়ানা হওয়ার আগে মাজার বা দরগায় গিয়ে দোয়া চাওয়া বা মাথা নোয়ানো।

✅ কুরআনের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা:

📚অর্থ: তোমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ডাকো না।

সূরা জিন: ১৮

🔸রাসুল ﷺ বলেন:

মুয়াত্তা মালিক: ৩৫৯; সহীহ হাদীস

📌 ব্যাখ্যা:

মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে বরকত চাওয়াকে আল্লাহর সাথে শিরক বা বিদআত মনে করা হয়, যদি নিয়ত বা বিশ্বাস থাকে যে ওলি কিছু দিতে পারেন।

📝৬.বরের কাছে কনেপক্ষের লোকদের হাত ধোয়ানোর টাকা, পানপাত্রের পানের সঙ্গে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা জোর করে আদায় করা।

🔹ভুল: পানপাত্রে বা নানা অজুহাতে বরপক্ষের কাছ থেকে টাকা আদায় করা।

✅ শরঈ দৃষ্টিকোণ:

এটি প্রতারণা, গর্ব, লোভ ও চাঁদাবাজির শামিল।

📚অর্থ:

যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ দখল করে তা নষ্ট করার ইচ্ছা রাখে, আল্লাহ তাকেও ধ্বংস করেন।

সহীহ বুখারী: ২৩৮৭

📝৭.গেটে বরকে আটকে দেওয়া এবং টাকা না দেওয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

ভুল: বরকে 'শাস্তি' বা ‘মজা’ দেওয়ার নামে টাকা আদায় করা।

✅ শরীয়তের দৃষ্টিকোণ:

এটা স্পষ্ট যুলুম ও হয়রানি। ইসলামে কাউকে তার হক থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করানো হারাম।

📚 অর্থ:

তোমার ভাই যদি যুলুম করে কিংবা যুলুমের শিকার হয়, তাকে সাহায্য কর।

সহীহ বুখারী: ২৪৪৪

🌟ইবনু হজর (রহ.) বলেন:

❝বরকে আটকে রাখা — মজা নয়, বরং অন্যায় অপমান এবং তা সুন্নাহের পরিপন্থী।❞

ফাতহুল বারী, ৫/১০৯

✅ উপসংহার ও নির্দেশনা:

এই সকল কুসংস্কার ও লোকাচার ইসলামে বিদআত, গর্হিত প্রথা ও ফিতনার দরজা।

সালাফগণ (ইবনু উমর, ইবনু মাসউদ, হাসান বসরী প্রমুখ) যেসব আমল কুরআন-সুন্নাহে নেই, তা থেকে সাবধান করতেন।

বিয়েকে হালাল, সহজ ও সুন্নাহভিত্তিক করার জন্য সকল ভিত্তিহীন প্রথা পরিহার করা ফরজ নয়, বরং তা দ্বীন রক্ষার অংশ।

The post was created by Rasikul India

🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম