📘বিয়ের সময় বরপক্ষের প্রচলিত ভুলসমূহ:

📘বিয়ের সময় বরপক্ষের প্রচলিত ভুলসমূহ:

📝১. প্রথাগতভাবে অনেক লোকের বরযাত্রী হিসেবে যাওয়া।

🔹ভুল: অহেতুক বিশাল বহর নিয়ে যাওয়া যেন এটি এক ধরণের স্ট্যাটাস শো! বরপক্ষ থেকে অতিরিক্ত লোক নিয়ে বরযাত্রী হিসেবে যাওয়া, যা প্রায়শই লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হয়।

📚অর্থ:

সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হলো সেই, যার খরচ সবচেয়ে কম।

 ✅ সুন্নাহ ও সালাফদের নির্দেশনা:

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:

সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪০৫৭; মিশকাত: ৩০৯৭; আলবানী সহীহ বলেছেন।

📌 ব্যাখ্যা:

অতিরিক্ত লোক নিয়ে যাওয়া অহেতুক খরচ ও গর্ব প্রকাশ মাত্র। এতে বরকত কমে।

 

📝২. দাওয়াতকৃত সংখ্যার অধিক লোক নিয়ে যাওয়া।

📝 ভুল: কন্যাপক্ষের দাওয়াতের চেয়ে বেশি লোক নিয়ে যাওয়া, যা তাদের জন্য অসুবিধা ও অপচয়ের কারণ হয়।

📝ইসলামী দৃষ্টিকোণ: ইসলামে অতিথিদের সম্মান করা উৎসাহিত হলেও, অন্যের উপর অযৌক্তিক বোঝা চাপানো নিষিদ্ধ।

📝“মুসলিমের উপর তার ভাইয়ের হক হলো, সে যেন তাকে কষ্ট না দেয়।”

(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ১২৪০)

সালাফদের ব্যাখ্যা: হাসান বসরি (রহ.) বলেন, “মুসলিমের উচিত তার ভাইয়ের সামর্থ্য বিবেচনা করে আচরণ করা। অতিরিক্ত লোক নিয়ে যাওয়া অতিথিপক্ষের জন্য কষ্টের কারণ হতে পারে।”

(আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারি)

মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ১৯৪৮৫; আলবানী হুসন বলেছেন

 

The post was created by Rasikul India 🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম

📝৩.লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কন্যার জন্য যৌতুক পাঠানো এবং এটাকে জরুরি মনে করা।

🔹ভুল: মেয়ের সম্মান বাড়াতে বা লোক দেখাতে যৌতুক দেওয়া।

📚 অর্থ:

তোমরা নারীদের তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাও।

সূরা নিসা: ৪

➡️ যৌতুক নয়, বরং বর কর্তৃক মোহর দেওয়া ফরজ।

                                       🔹 সালাফদের ব্যাখ্যা:

🌟ইমাম শাফি’ঈ (রহ.) বলেন:

❝মোহর নারীর অধিকার; মেয়ের পক্ষ থেকে কিছু দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।❞

আল-উম্ম, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১০২

🌟ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন, “যৌতুক দাবি করা বা প্রদান করা শরিয়াহর দৃষ্টিতে জুলুম এবং অপচয়।”

(আল-মুসনাদ)

📝৪.গাইরে মাহরাম পুরুষ দ্বারা মেয়ের অনুমতি আনা।

🔹ভুল: যিনি মাহরাম নন, তার মাধ্যমে মেয়ের সম্মতি আনা।

📌 অর্থ:

অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সহীহ নয়।

রেফারেন্সঃ — আবু দাউদ: ২০৮৫; তিরমিযী: ১১০১, আলবানী কর্তৃক সহীহ

📚 ব্যাখ্যা:

গায়রে মাহরাম দ্বারা অনুমতি আনা মানে হায়া ভেঙে ফেলা, যা ইসলাম অনুমোদন করে না।

 

📝৫.বেগানা পুরুষদের কন্যার মুখ দেখা এবং দেখানো।মেয়ের মুখ দেখানো ও দেখা (লোকসমক্ষে)

🔹ভুল: মেয়েকে প্রকাশ্যে আনা বা বিয়ের দিন স্টেজে বসানো।

📚অর্থ: তোমরা (নারীরা) নিজ ঘরে অবস্থান করো এবং জাহেলিয়াতের যুগের মত প্রকাশ্যে প্রকাশ পেও না।

রেফারেন্সঃ — সূরা আহযাব: ৩৩

📝৬. নাচ-গান, বাজনা ইত্যাদি করা।

🔹ভুল: ইসলামি অনুষ্ঠানে হারাম কার্যকলাপ করা।

📚অর্থ: রাসুল ﷺ বলেন: আমার উম্মতের কিছু লোক গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে।

সহীহ বুখারী (আল-আদবুল মুফরাদ), হাদীস: ৫৫৯০

📝সালাফদের ব্যাখ্যা:

📝ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, “বিয়ের মতো পবিত্র অনুষ্ঠানে শরিয়াহবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।”

(কিতাবুল উম্ম)

🌟ইমাম মালিক (রহ.) বলেন:

❝গান-বাজনা করা ফাসিকদের কাজ।❞ — তাফসীর কুরতুবী, ১৪/৫৬

 

📝৭.সালামি গ্রহণ করা। 

🔹ভুল: গিফট বা সালামির নামে টাকা আদায় করা।

বিভিন্ন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেটে ফিতা বেধে ফিতা কাইচি দিয়ে কাটার জন্য টাকা দাবি করা যা ইসলাম বিরোধী, অপসংস্কতি।

✅ হাদীস: রাসুল ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি অর্থের প্রতি লোভী, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”

তিরমিযী: ৬১৪, ২৩৭৬,

📚 ব্যাখ্যাঃ লোভ ও দুনিয়াবি স্বার্থে উপহার বা সালামি দাবী করা হারাম ও অশোভনীয়।

 

📝৮. মোহর নির্ধারণ না করা ও বিয়ের সময় তর্কঃ

মোহরানা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পূর্বেই না করা; বরং করাকে দোষের মনে করা। অতঃপর বিয়ের সময় এ নিয়ে তর্কবিতর্কে জড়ানো।

📝“নারীদের তাদের মোহরানা সানন্দে প্রদান করো।”

সূরা নিসা: ২৫

📚ব্যাখ্যা: মোহর নির্ধারণ ফরজ। বিবাহের পূর্বে এটি স্থির না করলে পরবর্তীতে বিরোধ তৈরি হয়। সালাফরা এটিকে ইজ্জতের অংশ মনে করতেন।

ইমাম মালিক বলেছেন, “যে স্বামী মহর ছাড়া মেয়েকর পক্ষ থেকে দাবি করে, সে জালিম।”

The post was created by Rasikul India

🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম

📝৯.লোক দেখানোর জন্য বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান (ওলিমা) করাঃ

লোক দেখানোর জন্য বা গর্বের সঙ্গে ছেলের বাড়িতে অলিমা বা বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান করা।

✅হাদীস:রাসুল ﷺ ওলিমা করেছেন, কিন্তু খুব সাধারণভাবে। যেমন:

📚 অর্থ: নবী ﷺ এক স্ত্রীর সঙ্গে বিয়েতে এক মুদ (আনুমানিক ৭৫০ গ্রাম) যব দিয়ে ওলিমা করেছেন।

সহীহ বুখারী: ৫১৭৪

 

📝রাসুল (সা.) বলেছেন, “ওয়ালিমা করো, এমনকি একটি ছাগল দিয়েও।”

(সহিহ বুখারি, হাদিস নং: ৫১৫৮)

 

📝ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, “ওয়ালিমা সরলভাবে করা উচিত, যাতে এটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।” (তাফসিরে ইবন কাসির)

 

📝১০.মোহরানার বিষয়ে গুরুত্ব না দেওয়া এবং মোহরানা আদায়ে গাফলতি করা।

📝ইসলামী দৃষ্টিকোণ: মোহরানা স্ত্রীর শরিয়াহসম্মত অধিকার।

📝“তাদের মোহরানা প্রদান করো।” (সূরা নিসা: ৪)

 

📝১১.কোনো পক্ষের অদূরদর্শিতা প্রমাণিত হয় অথবা তাদের অস্থিরতার কারণ হয়; আর নিজেদের সুনাম প্রকাশ পায়, ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কর্মকাণ্ড করা।

🔹 ভুল: অন্যকে অপমান করে নিজের মহত্ব দেখানো।

✅ হাদীস:

 

সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮

📚 ব্যাখ্যা:

আত্মপ্রচার, অহংকার— এগুলো শয়তানী বৈশিষ্ট্য। সালাফরা এ থেকে বাঁচতে আত্মগোপন করতেন।

 

📝১২.ফরজ ও শরঈ বিধান থেকে গাফেল থাকাঃ

বিয়ে অনুষ্ঠানের কারণে ফরজ-ওয়াজিবসহ শরিয়তের বিধানের ব্যাপারে উদাসীনতা এবং অনীহা প্রকাশ করা।

🔹ভুল: নামায, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবহেলা।

📚অর্থ: ধ্বংস তাদের জন্য—যারা সালাত থেকে গাফেল।

✅ কুরআন: — সূরা মা'উন: ৪-৫

🔹সালাফদের বাণী:

🌟হাসান বসরী (রহ.) বলেন:

❝বিয়ে ও অনুষ্ঠান মানুষকে যত ব্যস্ত করে, আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয় — তা ইবাদতকে হত্যা করে ফেলে।❞

যুহদ, ইবনু হানবাল, হাদীস: ৩৭১

✅ উপসংহার ও শিক্ষণীয় দিকঃ

বিয়ে একটি সুন্নাত, তা যেন গুনাহের মঞ্চ না হয়।

লোক দেখানো, ব্যয়বহুলতা, শরঈ বিধান লঙ্ঘন থেকে বিরত থাকতে হবে।

সালাফগণ দীন অনুযায়ী বিয়ে করতেন, দুনিয়াবি মর্যাদার উপর নয়।

The post was created by Rasikul India

🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম