📘.মুসলিম বিবাহে প্রচলিত কিছু কুপ্রথা:

 📘.মুসলিম বিবাহে প্রচলিত কিছু কুপ্রথা:

আমাদের মুসলিম সমাজে বিয়েতে অনেক অনিয়ম বা কুপ্রথা চালু রয়েছে যা ইসলামী শরীয়াহ সমর্থন করেনা। বরং ঐসব কাজ ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই নিন্দনীয়। আমাদের মুসলমানদের বিয়েতে যেসব অনিয়ম বা প্রথা রয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু বিষয় নিয়ে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আলোচনা করছি যা আমাদের উপকারে আসতে পারে।

🌟পাত্রী দেখাঃ

আমাদের সমাজে পাত্রী বা মেয়েকে দেখার যে নিয়ম চালু রয়েছে তা সঠিক নয়। পাত্রীকে দেখতে গেলে ইসলামী নিয়ম মানা হয় না। যিনি বিয়ে করবেন, তার সাথে অনেক পুরুষ লোক দেখতে যান যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ নয়। ইসলামী শরীয়াহ এর নিয়ম হলো, যিনি বিয়ে করবেন শুধু এবং তার মা, বোন, শিশু বাচ্চা এবং যেকোন পাত্রের নিকট আত্বীয় মহিলারা দেখতে পারবে।

মুগিরা ইবন শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত, যিনি বলেন, তিনি একজন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং নবী (সা.) তাকে বলেছিলেন, “তাকে দেখে নাও, কারণ এটি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।

【সুনান আবুদাউদ: 2082, হাসান, ইবনু মাজাহঃ 1880, সহিহ, :( ইরওয়াউল গালীল: ১৭৯৪) ।  】

রাবীঃ মুগিরা ইবন শু’বা (রা.), জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.)

🌟গায়ে হলুদ/পায়ে তেল, হাত/মুখে ভাত খাওয়ানোঃ

বিয়ে-শাদীতে গায়ে হলুদের নিয়ম বর্তমান সময়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ আকার ধারণ করেছে। গায়ে হলুদকে কেন্দ্র করে অনেক আয়োজন, অনুষ্ঠান, গান বাজনা ও বেপর্দা মেলামেশা আমাদের দেশে হয়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে গায়ে হলুদের কোন নিয়ম নেই।

কোনো সহিহ হাদীসে এই রীতি নেই; বরং “যে যে জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই একজন — ইবন উমর (রাঃ)

রেফারেন্সঃ সুনানে আবু দাউদ (৪০৩১), মুসনাদে আহমদ (২/৫০) । শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন।

🔹ভুল: বিয়ে-শাদীতে হলুদের নামে গান, নাচ ও মেলামেশা।

✅ শরীয়াহ নির্দেশনা: শুধু বর, তার মা, বোন, শিশু সন্তান ও কন্যার আইনগত অভিভাবক (মাহরাম)রা পাত্রী দেখতে পারবেন।

বিধান: বিদআত ও অমুসলিম সংস্কৃতির অনুকরণ হওয়ায় পরিত্যাজ্য।

🌟অত্যধিক জৌলুস বা আড়ম্বরঃ

বিয়ে শাদীতে বর্তমানে জাঁকজমক বা আড়ম্বর অনেক বেশী করা হয়। বেশী আড়ম্বরপুর্ণ বিবাহ ইসলাম সমর্থন করে না। অনাড়ম্বর বিয়েটাই বেশী বরকতপূর্ণ। কিন্তু আমাদের এই সমাজে মহা ধুমধাম এর সাথে বিবাহ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। টাকা না থাকলেও ধার-কর্য করে, টাকা সুদের উপর ঋন করে এনেও অনেকে বিয়ের জমকালো আয়োজন করেন। যেটা খুবই অপছন্দনীয় কাজ।

রেফারেন্সঃ【মিশকাত- 3097,

(সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪০৫৭;শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন।】

🔹ভুল: বড় আয়োজন, ঋণ ও সুদের উপর বিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন।

✅শরীয়াহ: অবর্ণনীয় পরিমাণ ব্যয় হারাম; বিয়েতে বরকত–প্রচুরতা আসে সহজভাবে।

🌟বিয়ে শাদীতে বেপর্দার সয়লাবঃ

শরীয়াতের হুকুম অমান্য করে, জাহেলী কুপ্রথা চালু করা হয়েছে বর্তমান সময়ের বিয়েতে। বেপর্দা নারী পুরুষের অবাধ বিচরণ হয়। যুবক যুবতীগণ এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া। আবার আছে পর-পুরুষের বউ দেখা। সেগুলো ভিডিও করে অন্য মানুষকে দেখান। এসবই গর্হিত কাজ যা ইসলাম সমর্থন করে না।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: "কোন পুরুষ যখন কোন নারীর সাথে নির্জনে থাকে, তখন শয়তান হয় তাদের তৃতীয়জন।" এই হাদীসটি সহীহ।

—[রেফারেন্সঃ সুনানে তিরমিযী, হাদীস -2165 , মিশকাত- 3118, শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন। ]

🔹ভুল: বিয়ের সময় পুরুষ ও নারী অযথা মিশ্রণ, ভিডিও, অপ্রমিত মেলামেশা।

✅শরীয়াহ: পুরুষ ও নারীর মধ্যে আতরিক বৈধতা ছাড়া দৈনন্দিন মেলামেশা নিষিদ্ধ।

🌟যৌতুক নেওয়াঃ

যৌতুক নেওয়া একটা জঘন্যতম কাজ। কিন্তু আজকাল বিয়েতে এসব বিষয় মানা হয় না।

লক্ষ লক্ষ টাকা যৌতুক ধার্য হচ্ছে বিয়েতে। বিভিন্ন আসবাবপত্রের জোর দাবী করা হচ্ছে। এভাবে মেয়ে পক্ষ থেকে জোর-জুলুম করে যৌতুক নেওয়া হয়। অথচ ইসলামী শরীয়াহ তে যৌতুক বলে কিছুই নেই। তবে বিয়েতে কনের বাবা বা আত্বীয় স্বজনেরা বরকে বা কনেকে উপহার হিসাবে অনেক কিছুই দিতে পারবেন।

যৌতুক বা পণের প্রথা ইসলামে নিষিদ্ধ।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি পণের মাধ্যমে বিবাহ করে, সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।"

(সূরা নিসা 4:4)

📚মুসনাদ আহমদ: ২/২২০, হাদীস নম্বর: ৭১৪৮, ১৭৪৩২

📚মুসনাদ আহমদ (মুহাক্কাক: আহমাদ শাকির বা শু'আইব আরনাঊত)

শাইখ শু'আইব আরনাঊত এটিকে সহীহ বলেছেন। ✅ সহীহ হাদীস, নির্ভরযোগ্য ।

---

🔹ভুল: মেয়ের পক্ষ থেকে যৌতুকের চাপে দরকারের চেয়েও অধিক দাবি।

✅শরীয়াহ:“যৌতুক” নামে চাহিদা নেই; তবে কন্যার বাবা-ভাই-আত্মীয়রা উপহার দিতে পারেন।

🌟বিয়েতে গান-বাজনাঃ

বিয়ে শাদীর মত পবিত্র অনুষ্ঠানে গান বাজনার সয়লাব। বিভিন্ন ধরনের গান বাজনার আসর বসে আজকালের বিয়েতে। একটা পবিত্র মজলিসকে কলুষিত করা হচ্ছে। গান বাজনা দ্বারা বিয়ের অনুষ্ঠান কখনই ইসলামী শরীয়াতে ছিলনা।

গান-বাজনা ও অশ্লীলতা: বিবাহে অশ্লীল গান-বাজনা নিষিদ্ধ। 

❝যারা অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজে লিপ্ত হয়, তারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করে।"

(সূরা লুকমান, ৩১:৬)

❝ইবনে মাসউদ (রা.) এই আয়াতের তাফসীরে গানকে অপ্রয়োজনীয় কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

(তাফসীর ইবনে কাসীর, ৩১:৬)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

❝আমার উম্মতের কিছু লোক ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্য‑যন্ত্র বৈধ মনে করবে” —

সহীহ বুখারী-হাদীস: 5590

❝ইমাম শাফিঈ (রহ.) ও ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বিবাহে বাদ্যযন্ত্র ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে কঠোর ফতোয়া দিয়েছেন।

(আল-উম্ম, ৫/১২৩; মাজমু ফাতাওয়া, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৫৩৫)

ইদ বা বৈধ আনন্দে শুধু দফ/ফ্রেমহীন ঢোল মেয়েরা ব্যবহার করতে পারে; মিক্সড ডিজে‑ডান্স হারাম।

🔹ভুল: বিয়েতে গান, নাচ, মাইক–পান্ডেলসহ সভিত আয়োজন।

✅শরীয়াহ: গান–বাজনা, মেলামেশা–বিশেষ করে পুরুষ–নারী মিলিত হলে হারাম।

🌟উকিল পিতা বানানোঃ

বিয়েতে উকিল বাপ পিতা বর্তমান থাকার পরও অন্যকে বানানো হয় যা শরীয়াত সন্মত নয়। শরীয়াতের নিয়ম হলো, উকিল বাপ হবে মেয়ের বাপ নিজেই বা অভিভাবকদের মধ্যে থেকে কোন মাহরাম ব্যক্তি যার সাথে দেখা দেওয়া জায়েজ আছে। ইসলামী বিয়েতে মেয়ের আইনগত অভিভাবকের অনুমতি অবশ্যই প্রয়োজন।

যেসব মেয়ের বাবা বর্তমান আছেন তাদের বাবাই অভিভাবক, আরবীতে যাকে উকিল বলে। বাবার অবর্তমানে যিনি মেয়ের আইনগত অভিভাবক তিনি হলেন মেয়ের চাচা, মামা, ফুফা ইত্যাদি যিনি মেয়ের উকিলের দায়িত্ব পালন করবেন। আইনগত অভিভাবক ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে উকিল বানানো যাবেনা।

🔹ভুল: মেয়ের বাবা থাকা সত্ত্বেও অন্য গায়রে মাহরাম উকিল নিযুক্ত করা।

✅শরীয়াহ: কনের উকিল হলেন একমাত্র তার বাবাই বা অনুপস্থিতিতে মাহরাম আত্মীয়।

---

🔖বিয়েতে উকিল পিতা বানানো। কতটা সঠিক?

❝বিয়েতে উকিল পিতা বানানো❝ বা ❝উকিল আব্বা” নিজের বাবা বা পিতা থাকতে, করার প্রচলিত রীতি ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে কতটা সঠিক—তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, কুরআন, সহীহ হাদীস ও সালাফদের বক্তব্য:

---

❓ উকিল পিতা বানানো – এর প্রচলন কী?

🔹আমাদের সমাজে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতের কিছু অঞ্চলে দেখা যায়:

🔸বর-কনের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক পুরুষকে “উকিল পিতা”বানানো হয়।

🔸 তিনি মাঝে বিয়ের কিছু কথাবার্তা বলেন।

🔸 বিয়ের অনুষ্ঠানেও তাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

🔸 অনেকে এটাকে ইসলামের বিধান বলে ধরে নেয়।

---

✅ ইসলামে "উকিল পিতা" বলে কিছু আছে কি?

🔹 না, ইসলামে “উকিল পিতা” নামে কোনো সম্পর্ক, দায়িত্ব বা নামকরণ নেই।

🔹 শরিয়তের দৃষ্টিতে বিয়েতে শুধু তিনটি প্রধান পক্ষ থাকতে হয়:

বর, কনে,

ওয়ালী (অভিভাবক)– কনের পক্ষ থেকে,

গোয়াহ (সাক্ষী) – কমপক্ষে ২ জন মুসলিম পুরুষ।

📚 দলীলসমূহ ও বিশ্লেষণঃ

🌟১. ❝বিয়ে শুধুমাত্র ওয়ালী ও সাক্ষীর মাধ্যমে সঠিক হয়❞

হাদীস: “ওয়ালী এবং দুই ন্যায়বান সাক্ষী ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়।”

📚 সুনান আবু দাউদ (হাদীস: ২০৮৫), তিরমিযী (১১০১), ইবন মাজাহ (১৮৮১)

🔍 শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ (ইরওয়াউল গালীল: ১৮৩৯)

✅এই হাদীসে "উকিল পিতা" বলে কিছু নেই, শুধুমাত্র ওয়ালী ও সাক্ষীর কথা আছে।

🌟২.❝উকিল পিতা নামে কোনো বৈধ সম্পর্ক নেই ❞।

📗 ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন:

“নবী ﷺ কোনো ব্যক্তিকে উকিল পিতা বানাতে বলেননি, বা এমন কোনো সম্পর্ককে বৈধ বলেননি।”

📚মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, আল-মুসান্নাফ (খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৪৫)-(৩/৩৪৫) – বিয়ের শর্তাবলি অধ্যায়

✅ সালাফদের যুগে এ ধরনের কোনো নামকরণ বা সম্পর্কের বিধান নেই।

❌ “উকিল পিতা” শব্দটির সমস্যা কী?

🔴 উকিল পিতা বলতে বোঝানো হয় —

🔹 এমন একজন ব্যক্তি যাকে পিতা সুলভ দায়িত্ব দেওয়া হয়,

🔹 অনেক সময় কনে তাকে "আব্বা" ডাকে,

🔹 কেউ কেউ বলে — “তিনি ইসলামের দৃষ্টিতে আপনার দ্বিতীয় পিতা”।

➡এই ধারনা হারাম, বিদআত।

➡ইসলামে "পিতা, আব্বা" বানানো নিষেধ, যদি সে আপনার পিতা না হয়। যে আপনাকে জন্ম দিয়েছেন সেই তো আপনার রক্তের পিতা। অন্য কে কি ভাবে পিতা বানান এটা আদও কি সম্ভব? নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করুন।

📖 আয়াত:“তাদের (দত্তক সন্তানদের) নিজ পিতার নামে ডাকো – এটাই আল্লাহর নিকট ন্যায়সংগত।”

📚সূরা আহযাব: ৫

🔍তাফসীর ইবন কাসীর, কুরতুবি – কেউ পিতার নাম ছাড়া অন্য নামে নিজেকে পরিচয় দেওয়া বা ডাকা — এটি মিথ্যা, হারাম।

 

সংক্ষেপে শিক্ষা:

“উকিল পিতা” নামে কোনো ইসলামী সম্পর্ক নেই।

এটি একটি বিদআত ও সমাজ-প্রচলিত ভুল।

বরং ওয়ালী বা শরয়ি প্রতিনিধি নিয়োগ করাই যথেষ্ট।

মেয়ের জন্য তার প্রকৃত ওয়ালী (পিতা, ভাই, চাচা) থাকলে তার মাধ্যমেই বিয়ে হবে।

"উকিল পিতা" বলা ও তাকে পিতা বলা শরিয়তে নিরুৎসাহিত ও বিদআতমূলক।

---

🌟খাদ্যের অপচয়ঃ

🔹ভুল: অতিরিক্ত, অপচয়মূলক খাবারের আয়োজন।

কিছু মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে খাদ্যের অপচয় ঘটায়। প্রচুর পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়।

📝"খাও এবং পান করো, তবে অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।"

📚রেফারেন্সঃ (সূরা আল-আ’রাফ, ৭:৩১)

মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল বলেন,

“নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।”

📚রেফারেন্সঃ (বনী ইসরাঈল-২৭).

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"সর্বোত্তম বিবাহ হলো যা সবচেয়ে সহজ।"

📚রেফারেন্সঃ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৮৪২; সহীহ, আলবানী)

এই হাদিস বিবাহে সরলতার উপর জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, হযরত আলী (রা.) ও ফাতিমা (রা.)-এর বিবাহ ছিল অত্যন্ত সাধারণ, যেখানে মোহর হিসেবে হযরত আলী তার বর্ম বিক্রি করেছিলেন।

📚রেফারেন্সঃ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৮৮৭; সহীহ)

---

✅ ব্যাখ্যা:

এই আয়াত বিবাহে অতিরিক্ত ব্যয়, আড়ম্বর এবং ঋণের বোঝা গ্রহণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে। এই আয়াত সরাসরি অপচয়ের বিরুদ্ধে। বিবাহ উপলক্ষে অপ্রয়োজনীয় খরচ, লোক দেখানো আয়োজন, সোনার অলঙ্কারে প্রতিযোগিতা, অনর্থক খাবার অপচয় — সবই এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে।

📚রেফারেন্সঃ তাফসীর ইবন কাসীর, দারুস সালাম সংস্করণ অনুযায়ী।

📌 মন্তব্য: প্রয়োজন ও পরিমানে খাবার প্রস্তাব— বরকত ও দ্বীনি সম্মান বৃদ্ধি পাবে।

🌟ছেলের হাতে সোনার আংটিঃ

ভুল: বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের হাতে সোনার আংটি না পরালে মান সম্মান থাকেনা,

✅ শরীয়াহ: পুরুষদের জন্য সোনা ব্যবহার হারাম।

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ): নবী ﷺ এক পুরুষের হাত থেকে সোনার আঙটি খুলে নিক্ষেপ করে বললেন—“তুমি যেন জাহান্নামের আগুন হাতে পরেছ” 

পুরুষের জন্য সোনা নিঃসন্দেহে নিষিদ্ধ।

【রেফারেন্স: সহিহ মুসলিম 2090】

🌟মোহরানাঃ

আমাদের দেশে স্বামী মোহরানা না দিয়ে বাসর রাত্রে স্ত্রীর নিকট ক্ষমা চায়। অথচ ইসলামী বিধান মতে স্ত্রীরা মোহরানার হক্বদার যা অবশ্যই প্রদান করতে হবে।

“নারীদের তাদের মোহর খুশিমনে দাও।, হাদীসে “লোহা‑এর আঙটি হলেও দাও”।

✅ শরীয়াহ: মোহর দ্বীনের অধিকার; তা পূর্ণভাবে দেওয়া জরুরি।

সূরা নিসা:  4:4, (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫১৪৫) ।

🌟বিয়ের গোসল দেয় ভাবিরাঃ

আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে বরকে বিয়ের গোসল দেয় ভাবিরা যা সম্পুর্ন গুনাহের কাজ এবং নিষিদ্ধ।

🔹 ভুল: গ্রামে শ্যালিকা বা ভাবিরা বরকে গোসল করায় বা হাত ধোয়ায়।

✅ শরীয়াহ: ফরজ অমাহতব্য; গায়রে মাহরাম দ্বারা স্পর্শ নিষিদ্ধ।

সূরা নূর: ৩১ এবং তিরমিযী: ২১৬৫

 

🌟হাত ধুয়ে দিবে শ্যালিকাঃ

বিয়ে করলেন আপনি, আর বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনার হাত ধুয়ে দিবে আপনার শ্যালিকা। অথচ শ্যালিকার সাথে দেখা দেওয়া, কথা বলা জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত যায়েজ নেই।

 

The post was created by Rasikul India 🌟 প্রচারে- রাসিকুল ইসলাম

🌟নির্দিষ্ট দিন তারিখ দেখে বিয়ে করাঃ

চান্দ্র বর্ষের কোন মাসে বা কোন দিনে অথবা বর/কনের জন্ম তারিখে বা তাদের পূর্ব পুরুষের মৃত্যুর তারিখে বিয়ে-শাদী হওয়া যাবেনা- এরূপ চিন্তা ভাবনা করা ইসলাম সমর্থন করেনা। দিন‑তারিখকে অশুভ/শুভ ধরে বিয়ে এড়ানো শির্কিয় কুসংস্কার।

🔹ভুল: খাস দিন, জন্ম–মৃত্যুর তারিখ দেখে বিয়ে।

✅শরীয়াহ: কোনো নির্দিষ্ট দিন–তারিখে বিয়ে বাধ্যতামূলক নয়; সুন্নাহ নয়।

“দিন–তারিখ নির্ধারণ হাদীস–বিহীন; সব দিন পবিত্র হিসাবে বিবেচিত”।

রেফারেন্স: সহিহ বুখারি- 5316, 5753,মুসলিম- 2224

🌟হিন্দুয়ানী প্রথাঃ

বাঁশের কুলায় চন্দন, মেহদি, হলুদ, কিছু ধান-দুর্বা ঘাস কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির চাটি নেয়া হয়। মাটির চাটিতে তেল নিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। স্ত্রী ও বরের কপালে তিনবার হলুদ লাগায় এমনকি মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন জ্বালানো চাটি বর-কনের মুখের সামনে ধরা হয় ও আগুনের ধোঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-দুলিয়ে বাতাস দেয়া হয়। এসব হিন্দুয়ানী প্রথা ও অনৈসলামিক কাজ।

হাদীস: “যে একটি জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই একজন।”

(আবু দাউদ- 4031, শায়খ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন।)

🌟কদমবুসি করাঃ

বর ও কনের মুরব্বিদের কদমবুসি করা একটি মারাত্মক কু-প্রথা। বিয়েতো নয় এমনকি যেকোনো সময় পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা রাসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার সাহাবীদের (রাযি আল্লাহু আনহুম) দ্বারা প্রমাণিত নয়। কদমবুসি করার সময় সালাতের রুকু-সিজদার মত অবস্থা হয়। বেশি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে হিন্দুয়ানী প্রণামকে প্রথা হিসেবে নিয়ে আসা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য নয়। 

“যে একটি জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদের মধ্যেই যাবে”…।

[সহিহ, সুনানে আবু দাউদ, (৪০৩১), সুনানে তিরমিযী, হাদীস ১১৫৯]

🔹ভুল: হিন্দু মূর্তিপূজা অনুকরণে কদমবুসি ও আগুন জ্বালানো।

✅ শরীয়াহ: শিরকের সান্নিধ্য বা বিদআত।