এই প্রসঙ্গে উত্তর দিচ্ছেন শায়খ আবদুল আজিজ ইবন বায رحمه الله; শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন رحمه الله; শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
📖নূর আলা দারব— অডিও ফতোয়া👤শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহঃ ও👤শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
উৎস:binbaz.org.sa
📖নূর আলা দারব— অডিও ফতোয়া👤শেখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহঃ ও👤শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
উৎস:binbaz.org.sa
📜 প্রশ্নের সারমর্ম:
ভারতের এক তরুণ ছাত্র (মুহাম্মদ আকরাম হুসাইন) জিজ্ঞাসা করেন —
ভারতে সুফিবাদ, বিদআত ও শিরক ব্যাপকভাবে প্রচলিত। সুফিরা লোকদের কাছ থেকে "বায়আত" নেয় এবং মানুষ মনে করে যে, যে বায়আত দেয়নি সে মুসলমান নয়।
তিনি ভাবলেন, যদি আমি তাদের কাছ থেকে এমন একটি বায়আত নিই — যেমন সাহাবারা রাসুল ﷺ-কে দিতেন, তবে আমি তাতে বুঝিয়ে দেব যে এর উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ থাকা, নববী সুন্নাহ মানা এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা। এতে মানুষ সুফিদের কাছে না গিয়ে আমার কাছেই আসবে।
তিনি জানতে চান — এটা কি শরীয়তসম্মত হবে?
💬 শায়খ ইবন বায (رحمه الله)-এর উত্তর:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আল্লাহর প্রশংসা, নবী ﷺ, তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের প্রতি দরূদ ও সালাম।
1️⃣ বায়আতের মূল উদ্দেশ্য ও সীমা
শরীয়তে যে বায়আত প্রমাণিত, তা কেবল ওলি আল-আমর (খলিফা বা শাসক)-এর জন্য।
যেমন সাহাবারা নবী ﷺ-কে বায়আত দিতেন — ইসলামের আইন মানা, আনুগত্য করা, ন্যায়ের ওপর অটল থাকা ইত্যাদি বিষয়ে।
তাই এই বায়আত কেবল শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈধ।
2️⃣ সুফিদের পারস্পরিক বায়আত অবৈধ
সুফিদের একে অন্যের প্রতি বায়আত গ্রহণের কোনো ভিত্তি শরীয়তে নেই।
এতে বিপদ আছে, কারণ এতে মানুষ ভাবে, বায়আত দেওয়ার পর তাকে সেই ব্যক্তির সব আদেশ মানতে হবে — এমনকি যদি সে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথাও বলে!
এটি নিষিদ্ধ এবং মারাত্মক বিভ্রান্তির কারণ।
3️⃣ দাওয়াতের সঠিক পদ্ধতি
দাঈ বা আহ্বায়ককে মানুষের কাছ থেকে বায়আত নেওয়ার দরকার নেই।
বরং মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করবে, কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা জানাবে, শিরক ও বিদআত থেকে সতর্ক করবে।
কাউকে “আমাকে বায়আত করো” বলার প্রয়োজন নেই, কারণ এতে গোঁড়ামি, বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়।
4️⃣ বায়আত শুধু শাসকদের জন্য
নবী ﷺ-এর পর যারা মুসলমানদের নেতৃত্ব দিয়েছেন (আবু বকর, উমর, উসমান, আলী رضي الله عنهم), তাদের বায়আত নেওয়া হতো নেতৃত্বের নিশ্চয়তার জন্য।
সাধারণ আলেম বা দাঈ-এর জন্য এ ধরনের বায়আতের কোনো প্রয়োজন বা অনুমতি নেই।
5️⃣ যে দেশে এ রকম রীতি আছে
যদি কোনো দেশে এইরকম বায়আতের সংস্কৃতি প্রচলিত থাকে, তবুও তা “মানুষকে খুশি করার” জন্য গ্রহণ করা বৈধ নয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে এ ধরনের বায়আত কেবল রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধি নিতে পারেন।
⚖️ সারসংক্ষেপে ফতোয়ার রায়:
🔹 ওলি আল-আমর ছাড়া অন্য কাউকে বায়আত দেওয়া শরীয়তে বৈধ নয়।
🔹 দাওয়াত ও সংশোধনের জন্য বায়আত নেওয়া অনুমোদিত নয়; বরং তা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
🔹 দাঈ বা আহ্বায়ক শুধুমাত্র মানুষকে কুরআন ও সুন্নাহর পথে আহ্বান করবে, বায়আতের শর্তারোপ ছাড়া।
🔹 ইসলামে প্রকৃত বায়আত কেবল খলিফা বা শাসকের জন্যই নির্ধারিত।
📚 সূত্র:ফাতাওয়া আশ-শায়খ ইবন বায
(সংগ্রহিত ফতোয়া ও প্রবন্ধসমূহ, খণ্ড–৮, অধ্যায়: বায়আত ও আনুগত্য সম্পর্কিত বিধান)
ভারতের এক তরুণ ছাত্র (মুহাম্মদ আকরাম হুসাইন) জিজ্ঞাসা করেন —
ভারতে সুফিবাদ, বিদআত ও শিরক ব্যাপকভাবে প্রচলিত। সুফিরা লোকদের কাছ থেকে "বায়আত" নেয় এবং মানুষ মনে করে যে, যে বায়আত দেয়নি সে মুসলমান নয়।
তিনি ভাবলেন, যদি আমি তাদের কাছ থেকে এমন একটি বায়আত নিই — যেমন সাহাবারা রাসুল ﷺ-কে দিতেন, তবে আমি তাতে বুঝিয়ে দেব যে এর উদ্দেশ্য শুধু আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ থাকা, নববী সুন্নাহ মানা এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা। এতে মানুষ সুফিদের কাছে না গিয়ে আমার কাছেই আসবে।
তিনি জানতে চান — এটা কি শরীয়তসম্মত হবে?
এটি হলো শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন رحمه الله–এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া, যেখানে তিনি “সংগঠন বা দলের নেতাকে বায়আত দেওয়া”—এর শরীয়তসম্মত অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। নিচে এর মূল বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা দেওয়া হলো 👇
📜 প্রশ্ন:
“একজন নেতাকে বায়আত দেওয়া — যে বায়আত ইসলামের খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের বায়আতের বাইরে — এর শরীয়তি হুকুম কী?
যেমন কোনো ইসলামি দেশে একটি সংগঠন (জামা‘আত) গঠিত হয়েছে, আর এর সদস্যরা তাদের সংগঠনের দায়িত্বশীলের কাছে সুনির্দিষ্ট বায়আত দেয় ‘সমস্ত বিষয়ে সুনতে ও আনুগত্যে থাকার’ অঙ্গীকার করে। এটা কি শরীয়তে বৈধ?”
💬 শায়খ আল-উছাইমীন رحمه الله এর উত্তর:
“এটি হারাম।
এমন বায়আত করা কোনোভাবেই বৈধ নয় — বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে ইতিমধ্যে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের (ওলি আল-আমর) প্রতি বায়আত রয়েছে।
তবে যদি তারা শুধু একজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করে — অর্থাৎ, কোনো ‘নেতা নির্বাচন’ করে কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য, কিন্তু তার প্রতি পূর্ণ সুনতে-ও-আনুগত্যের বায়আত না দেয় — তাহলে সেটা জায়েজ।
যেমন সফরে (ভ্রমণে) থাকলে নবী ﷺ বলেছেন:
“إذا كنتم ثلاثة في سفر فليؤمر أحدكم”
অর্থাৎ, “তোমরা তিনজন ভ্রমণকারী হলে, তোমাদের মধ্যে একজনকে আমির বানাও।”
— যাতে মতবিরোধ হলে সিদ্ধান্ত তার হাতে থাকে।
কিন্তু এটা বায়আতের মতো নয়; বরং এটি শুধুই প্রশাসনিক দায়িত্ববণ্টন।
আর দেশের ভেতরে এভাবে বায়আত করা শরীয়তসম্মত নয়।
এমনকি শুধু বলেও — “আমি তোমাকে বায়আত করলাম”— এটা করা নিষিদ্ধ, এমনকি সফরের সময়ও না।”
🔍 উপসংহার:
শায়খ ইবন উছাইমীন (رحمه الله) স্পষ্ট বলেছেন —
“রাষ্ট্রপ্রধান ব্যতীত কোনো নেতা বা সংগঠককে বায়আত করা হারাম; এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং খারেজি ধাঁচের কার্যকলাপের দ্বার খুলে দেয়।
দাওয়াত, শিক্ষা বা সংগঠনের জন্য প্রশাসনিক নেতৃত্ব নির্ধারণ করা বৈধ, কিন্তু ‘বায়আত’ আকারে নয়।”
শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন (রহ.)–এর ফতোয়া(খোলা সাক্ষাৎকার সিরিজ, পর্ব নং ৮ — প্রশ্ন: সংগঠনসমূহে বায়আত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা)


0 Comments