**গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া ও মাসআলা**
ইসলামিক সংগঠনে বায়াত নেওয়া কি জায়েজ?
শায়খ ইবন বায ও শায়খ আল-উছাইমীন (رحمهما الله)
ভিডিও: শায়খ ইবন বায ও শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
ভিডিও সচল না হলে, নেটওয়ার্ক সংযোগ পরীক্ষা করুন।
অডিও ১: শায়খ ইবন বায (রহ.) - নূর আলা দারব
অডিও ২: শায়খ মতিউর রহমান মাদানী
প্রশ্নের সারমর্ম:
ভারতে সুফিবাদ, বিদআত ও শিরক ব্যাপকভাবে প্রচলিত। সুফিরা লোকদের কাছ থেকে "বায়আত" নেয় এবং মানুষ মনে করে যে, যে বায়আত দেয়নি সে মুসলমান নয়। প্রশ্নকর্তা জানতে চান, যদি তিনি সুফিদের থেকে মানুষকে সরাতে সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিতে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ থাকা ও সুন্নাহ মানার শর্তে বায়আত নেন, তবে তা শরীয়তসম্মত হবে কি না?
💬 উত্তর:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। আল্লাহর প্রশংসা, নবী ﷺ, তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের প্রতি দরূদ ও সালাম।
- বায়আতের মূল উদ্দেশ্য ও সীমা: শরীয়তে যে বায়আত প্রমাণিত, তা কেবল **ওলি আল-আমর (খলিফা বা শাসক)**-এর জন্য। যেমন সাহাবারা নবী ﷺ-কে বায়আত দিতেন — ইসলামের আইন মানা, আনুগত্য করা, ন্যায়ের ওপর অটল থাকা ইত্যাদি বিষয়ে। তাই এই বায়আত কেবল শাসক বা রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেই বৈধ।
- সুফিদের পারস্পরিক বায়আত অবৈধ: সুফিদের একে অন্যের প্রতি বায়আত গ্রহণের কোনো ভিত্তি শরীয়তে নেই। এতে বিপদ আছে, কারণ এতে মানুষ ভাবে, বায়আত দেওয়ার পর তাকে সেই ব্যক্তির সব আদেশ মানতে হবে — এমনকি যদি সে **শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের** কথাও বলে! এটি নিষিদ্ধ এবং মারাত্মক বিভ্রান্তির কারণ।
- দাওয়াতের সঠিক পদ্ধতি: দাঈ বা আহ্বায়ককে মানুষের কাছ থেকে বায়আত নেওয়ার দরকার নেই। বরং মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করবে, কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা জানাবে, শিরক ও বিদআত থেকে সতর্ক করবে। কাউকে “আমাকে বায়আত করো” বলার প্রয়োজন নেই, কারণ এতে **গোঁড়ামি, বিভেদ ও সংঘাত সৃষ্টি হয়**।
- যে দেশে এ রকম রীতি আছে: যদি কোনো দেশে এইরকম বায়আতের সংস্কৃতি প্রচলিত থাকে, তবুও তা “মানুষকে খুশি করার” জন্য গ্রহণ করা **বৈধ নয়**। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ ধরনের বায়আত কেবল রাষ্ট্রপ্রধান বা তার প্রতিনিধি নিতে পারেন।
📚 সূত্র: ফাতাওয়া আশ-শায়খ ইবন বায (সংগৃহিত ফতোয়া ও প্রবন্ধসমূহ, খণ্ড–৮, অধ্যায়: বায়আত ও আনুগত্য সম্পর্কিত বিধান)
📜 প্রশ্ন:
“একজন নেতাকে বায়আত দেওয়া — যে বায়আত ইসলামের খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধানের বায়আতের বাইরে — এর শরীয়তি হুকুম কী? যেমন কোনো ইসলামি দেশে একটি সংগঠন (জামা‘আত) গঠিত হয়েছে, আর এর সদস্যরা তাদের সংগঠনের দায়িত্বশীলের কাছে সুনির্দিষ্ট বায়আত দেয় ‘সমস্ত বিষয়ে সুনতে ও আনুগত্যে থাকার’ অঙ্গীকার করে। এটা কি শরীয়তে বৈধ?”
💬 শায়খ আল-উছাইমীন (رحمه الله) এর উত্তর:
“এটি হারাম। এমন বায়আত করা কোনোভাবেই বৈধ নয় — বিশেষ করে এমন দেশে যেখানে ইতিমধ্যে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের (ওলি আল-আমর) প্রতি বায়আত রয়েছে।”
- প্রশাসনিক নেতৃত্ব বনাম বায়আত: যদি তারা শুধু একজন দায়িত্বশীল নিযুক্ত করে — অর্থাৎ, কোনো ‘নেতা নির্বাচন’ করে **কাজের ব্যবস্থাপনার জন্য**, কিন্তু তার প্রতি পূর্ণ সুনতে-ও-আনুগত্যের বায়আত না দেয় — তাহলে সেটা জায়েজ।
- সফরের আমির: যেমন সফরে (ভ্রমণে) থাকলে নবী ﷺ বলেছেন: “إذا كنتم ثلاثة في سفر فليؤمر أحدكم” (অর্থাৎ, “তোমরা তিনজন ভ্রমণকারী হলে, তোমাদের মধ্যে একজনকে আমির বানাও।”)। — **কিন্তু এটা বায়আতের মতো নয়; বরং এটি শুধুই প্রশাসনিক দায়িত্ববণ্টন।**
- নিষেধাজ্ঞা: দেশের ভেতরে এভাবে বায়আত করা শরীয়তসম্মত নয়। এমনকি শুধু বলেও — “আমি তোমাকে বায়আত করলাম”— এটা করা নিষিদ্ধ, এমনকি সফরের সময়ও না।
📚 সূত্র: শায়খ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উছাইমীন (রহ.)–এর ফতোয়া (খোলা সাক্ষাৎকার সিরিজ, পর্ব নং ৮)


0 Comments