Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল।।

ইমামের পিছনে বা একাকী নামাজ পড়ার সময় তাকবির তাসবীহ কিরাত ঠোঁট নাড়িয়ে না শব্দ করে বলবো ?শাইখ আব্দুল হামীদ আল-ফাইজী মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ)

সালাতের মাসায়েল: মুকতাদি নীরবে তাকবীর বলবেন - শায়খ আব্দুল হামীদ আল-ফাইজী মাদানী

🕌 **সালাতের মাসায়েল**

মুকতাদি আস্তে তাকবির বলবেন, জোরে নয়

🎙️ শায়খ আব্দুল হামীদ আল-ফাইজী মাদানী (হাফিযাহুল্লাহ)

🕌 আলোচিত মাসআলার ভিডিও ক্লিপ:

ভিডিও সচল না হলে, সরাসরি ডাউনলোড লিঙ্ক ব্যবহার করুন।

১. মূল প্রশ্ন ও প্রেক্ষাপট: সালাতের পদ্ধতি কি বর্ণিত?

প্রশ্ন:

বুখারী শরীফে নবী (সা.)-এর একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে: “(তোমরা) সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছো।” (বুখারী, ৬৩১)। আমার প্রশ্ন হলো: ইমামের পেছনে তাকবীরে তাহরীমা থেকে শুরু করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত সালাতের নিয়ম-পদ্ধতি কি বর্ণিত আছে? যদি উত্তর "হ্যাঁ" হয়, তবে সেই প্রমাণটি উল্লেখ করুন যে কেন ইমাম উচ্চস্বরে তাকবীর বলবেন, আর মুমিনের নীরবে তাকবীর বলা উচিত? আপনার উত্তরের সপক্ষে হাদীস থেকে প্রমাণ পেশ করুন।

২. উত্তর: মুকতাদি নীরবে তাকবীর বলবেন - প্রমাণসহ ব্যাখ্যা

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম আল্লাহর রাসূলের প্রতি। অতঃপর:

প্রথমত: সালাতের সাধারণ পদ্ধতি

মুয়াক্কিনের (মুমিনের) সালাতের পদ্ধতি মূলত ইমামের সালাতের পদ্ধতির অনুরূপ। উভয়ের মধ্যে কেবল কয়েকটি সামান্য পার্থক্য রয়েছে। ইমাম এবং মুয়াক্কিন উভয়কেই নবী (সা.)-এর এই হাদীসটি অন্তর্ভুক্ত করে: “(তোমরা) সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছো।” (বুখারী, ৬৩১)।

দ্বিতীয়ত: ইমাম ও মুকতাদির পার্থক্য (তাকবীর)

ইমাম উচ্চস্বরে তাকবীর বলবেন, কিন্তু মুয়াক্কিন নীরবে বলবেন, উচ্চস্বরে নয়। এর সপক্ষে প্রমাণসমূহ:

  • ১. হাদীসের প্রমাণ (আবূ বকরের ঘটনা):
    জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত: "রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন এবং আবূ বকর তাঁর পিছনে ছিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকবীর বলতেন, তখন আবূ বকরও তাকবীর বলতেন আমাদের শোনানোর জন্য।" (সহীহ মুসলিম, ৪১৩)।

    **ব্যাখ্যা:** যদি পিছনের সাহাবীরা উচ্চস্বরে তাকবীর বলতেন, তাহলে আবূ বকর (রা.)-এর একার উচ্চস্বরে তাকবীর বলার প্রয়োজন হতো না, যাতে পিছনের সাহাবীরা শুনতে পান। এটি প্রমাণ করে মুকতাদিরা নীরবে বলতেন।

  • ২. নিরবতা বজায় রাখার নির্দেশনা:
    রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসল্লিকে উচ্চস্বরে কিরাত করতে নিষেধ করেছেন, যদি তা অন্য কোনো সালাত আদায়কারীর মনোযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। তিনি বলেছেন: “সাবধান, যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায়, সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে... আর তোমরা সালাতে একে অপরের উপর উচ্চস্বরে কিরাত করো না।” (আহমদ, 'আল-মুসনাদ', ৮/৫২৩, সহীহ সনদ দ্বারা)।
  • ৩. বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা:

    মুয়াক্কিনের উচ্চস্বরে তাকবীর বলা অন্যান্য মুসল্লিদের জন্য বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

    আল-বুহূতী (রহ.) (হাম্বলী ফকীহ) বলেছেন: "মুয়াক্কিনের জন্য সালাতের কোনো কথা উচ্চস্বরে বলা **মাকরূহ**, কারণ তা অন্যের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়।" (কাশ্‌শাফ আল-কিন্না' ১/৩৩২)।
  • ৪. আলেমদের ঐক্যমত (ইজমা):
    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেছেন: "ইমামদের ঐকমত্য অনুযায়ী, প্রয়োজন ছাড়া ইমামের পেছনে উচ্চস্বরে তাকবীর বলা **শরীয়তসম্মত নয়**।" (মাজমূ' আল-ফাতাওয়া ২৩/৪০২)।
  • ৫. উচ্চস্বরের উদ্দেশ্য:
    ইমামের জন্য উচ্চস্বরে বলার বিধান করা হয়েছে এই জন্য, যাতে মুয়াক্কিনরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারে। মুয়াক্কিনের জন্য উচ্চস্বরে তাকবীর বলার কোনো প্রয়োজন নেই। হানাফী মাযহাব (মারা-কি আল-ফালাহ, পৃ. ৯৭): "ইমামের জন্য তাকবীর ও তাসমী' (সামি'আল্লা-হু লিমান হামিদাহ্) উচ্চস্বরে বলা সুন্নাত... তবে একা সালাত আদায়কারী বা মুয়াক্কিনের সেই প্রয়োজন নেই।"
  • ৬. মালেকী মাযহাবের ব্যতিক্রম (শুধুমাত্র তাকবীরে তাহরীমায়):
    আন-নাফরাবী আল-মালিকী (রহ.) বলেছেন: "প্রত্যেক সালাত আদায়কারীর জন্য তাকবীরে তাহরীমা উচ্চস্বরে বলা মুস্তাহাব... আর মুয়াক্কিন ও একাকী সালাত আদায়কারীর জন্য এটি ছাড়া অন্য সব তাকবীর **নীরবে** বলা মুস্তাহাব।" (আল-ফাওয়াকিহ আদ-দাওয়ানি ১/১৯২)।
    অন্যান্য মাযহাবের মত: আন-নাবাওয়ী আশ-শাফি'ঈ (রহ.) বলেছেন: "ইমাম ছাড়া অন্যদের জন্য... তাকবীর **নীরবে** বলা সুন্নাত।" (আল-মাজমূ' ৩/২৯৫)।
  • ৭. মুসলিমদের কর্মগত ঐক্যমত (ইজমা আমালী):

    মসজিদসমূহে মুসলিমদের কর্মগত ঐক্যমত (আমালী ইজমা) সর্বদা এই বিষয়ে নির্দেশ করে যে, মুয়াক্কিনের উচ্চস্বরে তাকবীরের উপর আপত্তি জানানো হয়।

🎉 **সারসংক্ষেপ:** মুয়াক্কিনের ক্ষেত্রে সুন্নাত হলো নীরবে তাকবীর বলা, এবং উচ্চস্বরে তাকবীর বলা কেবল ইমামের জন্যই নির্দিষ্ট।

Post a Comment

0 Comments