Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

সদাচার সম্পর্কে সালাফদের বাণী উক্তি-২



সদাচার সম্পর্কে সালাফদের বাণী

ভূমিকা:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল বিশ্বের রব। শান্তি ও আশীর্বাদ আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.), তাঁর পরিবার এবং সকল সাহাবার উপর।

হাদিস ১: আবু যার ও মুআয ইবন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যেখানেই থাক, আল্লাহকে ভয় কর। মন্দ কাজের পর ভালো কাজ কর, তা মন্দ কাজকে মুছে দেবে। এবং মানুষের সাথে উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে আচরণ কর।”

N  রেফারেন্স: তিরমিযী, হাদিসটি হাসান।
যাচাই: এই হাদিসটি সহিহ, তিরমিযী (হাদিস নং: ১৯৮৭) এবং আহমাদ (৫/১৫৩) এ বর্ণিত। তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন।

হাদিস ২: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “মুমিনদের মধ্যে সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান তার, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।”

N  রেফারেন্স: আবু দাউদ ও তিরমিযী, হাসান সহিহ।

N  যাচাই: এই হাদিসটি আবু দাউদ (হাদিস নং: ৪৬৮২) এবং তিরমিযী (হাদিস নং: ১১৬২) এ বর্ণিত। এটি হাসান-সহিহ হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

  হাদিস ৩: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “নিশ্চয়ই একজন ব্যক্তি তার উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রোজাদার ও রাতে নামাজ পড়ার মতো মর্যাদা লাভ করে।”

N  রেফারেন্স: আবু দাউদ, আলবানী সহিহ সিলসিলায় সহিহ বলেছেন (নং: ৭৯৫)।

N  যাচাই: এই হাদিসটি আবু দাউদ (হাদিস নং: ৪৭৯৮) এ রয়েছে। আলবানী এটিকে সহিহ বলেছেন।

হাদিস ৪: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আমি কি তোমাদের বলব না কে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে কাছের সঙ্গী হবে? তারা বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।”

N  রেফারেন্স: ইমাম আহমাদ, আহমাদ শাকির বলেছেন, এর সনদ সহিহ।

N  যাচাই: এই হাদিসটি মুসনাদ আহমাদ (৬/৮৯) এ বর্ণিত। আহমাদ শাকির এর সনদকে সহিহ বলেছেন।

  হাদিস ৫: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যার চরিত্র উত্তম, তার জন্য আমি জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি ঘরের জামিন।”

N  রেফারেন্স: আবু দাউদ, আলবানী সহিহ সুনান আবু দাউদে হাসান বলেছেন।

N  যাচাই: এই হাদিসটি আবু দাউদ (হাদিস নং: ৪৮০০) এ রয়েছে। আলবানী এটিকে হাসান বলেছেন।

 সালফের উক্তি:

আলী ইবন আবী তালিব (রা.): উত্তম চরিত্র তিনটি গুণে: হারাম থেকে বেঁচে থাকা, হালালের সন্ধান করা এবং পরিবারের জন্য সচ্ছলতা প্রদান।

N  যাচাই: এই উক্তিটি সাধারণত সালফের বইয়ে (যেমন, ইবন আবী দুনিয়ার “মাকারিমুল আখলাক”) উল্লিখিত।

  ইবন মানসুর: তিনি আবু আবদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি বললেন, “উত্তম চরিত্র হলো ক্রোধ না করা এবং কঠোর না হওয়া।”

N  যাচাই: এটি সাধারণত সালফের উক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য, তবে নির্দিষ্ট সনদের প্রয়োজন হতে পারে

হাসান বাসরী: উত্তম চরিত্রের সারমর্ম হলো ভালো কাজ করা, ক্ষতি থেকে বিরত থাকা এবং হাসিমুখে মানুষের সাথে মেলামেশা করা।

N  যাচাই: এটি হাসান বাসরীর বিখ্যাত উক্তি, যা বিভিন্ন তাফসীর ও আখলাকের কিতাবে পাওয়া যায়।

ইমাম আহমাদ (ইবন রজব উদ্ধৃত): উত্তম চরিত্র হলো মানুষের থেকে যা আসে তা সহ্য করা।

N  যাচাই: ইবন রজবেরজামিউল উলুম ওয়াল হিকাম এটি উল্লিখিত

ইমাম গাযালী: উত্তম চরিত্রের লক্ষণ হলো লজ্জাশীলতা, কম ক্ষতি করা, সৎ কাজে ব্যস্ত থাকা, সত্য কথা বলা, কম কথা বলা, বেশি কাজ করা, ভুল কম করা, কৌতূহল কমানো, ন্যায়পরায়ণতা, সহানুভূতিশীলতা, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, সন্তুষ্টি, নম্রতা, সংযম, দয়াশীলতা, অভিশাপ না দেওয়া, গীবত না করা, তাড়াহুড়ো না করা, হিংসা না করা, হাসিখুশি থাকা, এবং আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও ঘৃণা করা।

N  যাচাই: এটি ইমাম গাযালীর “ইহইয়া উলুমুদ্দীন” থেকে উদ্ধৃত, যা উত্তম চরিত্রের বর্ণনা হিসেবে প্রসিদ্ধ।

শায়খ সাদ আল-শাথরী: উত্তম চরিত্রের চারটি দিক: অন্যকে কষ্ট না দেওয়া, অন্যের প্রতি ইহসান করা, অন্যের কষ্ট সহ্য করা, এবং হাসিমুখে ও মধুর ভাষায় মানুষের সাথে মেলামেশা করা।
যাচাই: এটি সমসাময়িক আলিমদের ব্যাখ্যা হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

উত্তম চরিত্রের ফযীলত:

আনাস ইবন মালিক (রা.): উত্তম চরিত্রের কারণে একজন বান্দা জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারে, যদিও সে বেশি ইবাদত না করে।

N  যাচাই: এটি সালফের উক্তি হিসেবে পরিচিত,

ইয়াহইয়া ইবন মুআয: উত্তম চরিত্রে রিযিকের ভাণ্ডার রয়েছে।

যাচাই: এটি সালফের উক্তি হিসেবে সুপরিচিত।

ইবন কুতাইবা: উত্তম চরিত্র সর্বোত্তম সঙ্গী, এবং আদব সর্বোত্তম উত্তরাধিকার।

N  যাচাই: ইবন কুতাইবার কিতাবে এটি উল্লিখিত।

ইবন রজব: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উক্তি “মানুষের সাথে উত্তম চরিত্রে আচরণ কর” তাকওয়ার অংশ।

N  যাচাই: ইবন রজবের “জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম” থেকে সঠিক।

আল্লামা সা’দী: উত্তম চরিত্র মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন, হৃদয় ও শরীরের শান্তি, এবং কলহ থেকে মুক্তির কারণ।

N  যাচাই: এটি তাফসীরে সা’দীতে পাওয়া যায়।

ইবন কাইয়্যিমের মতে উত্তম চরিত্রের চারটি স্তম্ভ:

ধৈর্য: ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতি থেকে বিরত থাকা, নম্রতা ও ধীরতা।

সংযম: পাপাচার থেকে দূরে থাকা, লজ্জাশীলতা, কৃপণতা ও গীবত থেকে মুক্তি।

সাহস: আত্মমর্যাদা, উত্তম চরিত্রের প্রতি ঝোঁক, উদারতা।

ন্যায়বিচার: চরিত্রে মধ্যমপন্থা, অতিরিক্ত ও কমতির মধ্যে ভারসাম্য।

N  যাচাই: ইবন কাইয়্যিমের “মাদারিজুস সালিকীন” এ উল্লিখিত।

ইমাম গাযালীর মতে উত্তম চরিত্র অর্জনের উপায়:

ঐশ্বরিক দান: কেউ জন্মগতভাবে উত্তম চরিত্র নিয়ে জন্মায়।

প্রচেষ্টা ও অনুশীলন: নিজেকে উত্তম কাজে বাধ্য করা।

সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গ: ভালো মানুষের সাথে থাকলে চরিত্র ভালো হয়।

N  যাচাই: ইহইয়া উলুমুদ্দীন থেকে সঠিক।

ইমাম গাযালীর মতে উত্তম চরিত্রের লক্ষণ:

উত্তম চরিত্রই ঈমান। কুরআনে মুমিনদের গুণাবলী উল্লেখিত, যা উত্তম চরিত্রের অংশ। নিজেকে এই গুণাবলীর সাথে মিলিয়ে দেখলে চরিত্রের অবস্থা জানা যায়।

N  যাচাই: ইহইয়া উলুমুদ্দীন থেকে সঠিক।

  

Post a Comment

0 Comments