❑রুকইয়াহর পরবর্তী পদক্ষেপ:
❑ভূমিকাঃ❑রক্বির রোগীর জন্য রুকইয়াহ তেলাওয়াত করবেন। এক্ষেত্রে যে জ্বিনের ক্ষতির কারণে রোগের সৃষ্টি হয়েছে সেই জ্বিনের উপর প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে রক্বির আল্লাহভীতি(তাকওয়া) ও আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রধান ভূমিকা পালন করে।
ইবনে মুফলিহ
আল হাম্বলি(রহ) তার মাসাইবুল ইনসান মিন মাকাইদুস শায়তান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, মানুষের মতো শয়তানেরও সিজার(seizure)
(অস্বাভাবিক হৃদকম্পন, দেহে
প্রচণ্ড ঝাঁকুনি) হয়, যখন সে ঈমানি চেতনায় পরিপূর্ণ কোনো
মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি আসে। তিনি আরো বলেন:
❑যে হৃদয় ঈমানি চেতনায় পরিপূর্ণ, তা সবসময় আলোকিত থাকে, এতে উত্তাপ আছে, যখনই কোনো শয়তানি প্ররোচনা(ওয়াসওয়াসা)
এ হৃদয়ের কাছাকাছি আসে তখন এটি ছাইয়ে রূপান্তরিত হয়। বর্ণিত আছে, যখন কোনো মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর স্মরণ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন। যদি কোনো শয়তান বা মন্দ জ্বিন এর কাছে আসে, তাহলে
ওই শয়তানেরও মানুষের মতো সিজার (শরীরে প্রচণ্ড ঝাকুনি) হয়। ওই মুহর্তে সব শয়তান
ওই শয়তানকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে এবং বলতে থাকে, “তার কী
হয়েছে?” তখন বলা হয়, মানুষ তাকে
পরাভূত করেছে।” [ইবনে তাইমিয়াহ, মাজমু আল ফাতওয়া, ১৯/৪১]
এখানে উল্লেখ্য যে, জ্বিনের ক্ষতির ক্ষেত্রে তেলাওয়াতকারীর
ঈমানী শক্তির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। অস্ত্রের মালিকের হাতেই অস্ত্র ভালো কাজ
করে।
❑রুকইয়াহ তেলাওয়াত করার পর নিম্নোক্ত
ফলাফল আসতে পারে:
🔘১.রোগী একটি ঝাঁকুনি(সিজার) অনুভব
করবে এবং জ্বিন কথা বলতে শুরু করবে।
🔘২.রোগী কোনো সিজার অনুভব করবে না, তবে অন্য কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হবে যা
দ্বারা বোঝা যাবে, এ সমস্যা জ্বিনের কারণেই হয়েছে।
🔘৩.আর সমস্যা যদি হয় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান
সংশ্লিষ্ট বা মনোবৈজ্ঞানিক, তাহলে কিছুই
ঘটবে না।
❑রোগী
যদি ঝাঁকুনি অনুভব করেন এবং জ্বিন যদি কথা বলে
তাহলে এ ক্ষেত্রে যা যা জিজ্ঞেস
করতে হবেঃ
🔘১.জ্বিনের নাম
🔘২.তার ধর্ম
🔘৩.কী কারণে সে মানুষের উপর ভর করেছে।
❑মানুষের দেহে ভর করার কারণ যদি হয়
এমন কোনো মন্দ উদ্দেশ্যে যা আল্লাহ তা'আলা নিষিদ্ধ করেছেন, তাহলে তাকে বলতে হবে,
এটা। হারাম এবং তার বিরুদ্ধে যত প্রমাণ আছে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তাকে আরো বলতে হবে যে, সে-ও মানুষের মতো আল্লাহ ও তার রাসূল(ﷺ)-এর নিয়মের
অধীন, রাসূল(ﷺ) আল্লাহ তা'আলা প্রেরণ করেছেন মানুষ ও জ্বিন উভয় জাতির
জন্যই।
❑আর জ্বিন যদি এটা করে থাকে মানুষকে
শাস্তি দেয়া বা পুরনো হিসাব মেটানো অর্থাৎ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য, তাহলে তাকে বলতে হবে, এ ব্যক্তি যা করেছে তা না বুঝে করেছে এবং এ ব্যক্তি সুচিন্তিতভাবে এ ক্ষতি
করেনি, যার ফলে তিনি শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত নন। আর ওই
ব্যক্তি যদি এ ত্রুটিপূর্ণ বা জ্বিনের জন্য ক্ষতিকর কাজ তার নিজ বাড়িতে অথবা নিজ
সম্পত্তিতে বসে করে থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে জ্বিনকে বলতে হবে,
এটা মানুষের নিজস্ব সম্পত্তি, তাই নিজ বাড়িতে
তার যে কোনো অনুমোদিত উপায়ে আচরণ করার অধিকার রয়েছে, বরং
তোমার বিনা অনুমতিতে মানুষের বাড়িতে বা ঘরে অবস্থান করার কোনো অধিকার নেই।
রক্বিকে আল্লাহ ও তার রাসূল(ﷺ)-এর নিয়ম-নীতির কথা বলার
ক্ষেত্রে অটল থাকতে হবে, তাদের বিরুদ্ধে
প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তাদেরকে ভালো কাজ করা এবং মন্দ
কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا
❑অর্থঃ আমি ‘আযাব দেই না যতক্ষণ একজন
রসূল না পাঠাই। (সূরা আল ইসরা ১৭:১৫)
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا
❑অর্থঃ ‘হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ
আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং
তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ (সূরা
আল-আনআম ৬:১৩০)
আল্লাহর
রাসূল(ﷺ) বসবাসের গৃহে কোনো সাপ পাওয়া গেলে তা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন, তিনবার চলে যেতে বলার পর সাপটি ঘর এ ছেড়ে
যায়, মুসলিম শরীফে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, কারণ অবৈধভাবে যেমন কোনো মানুষ হত্যা করা ইসলামে বৈধ নয়, তেমনি কোনো জ্বিনকেও অবৈধভাবে হত্যা করা জায়েয নয়। খারাপ কাজ
সর্বক্ষেত্রেই হারাম; কারো ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের খারাপ কাজ
বা ভুল কাজ করা জায়েয নয়, এমনকি সে যদি কাফিরও হয়।
❑জ্বিন যদি রক্বির সনির্বন্ধ অনুরোধে
সাড়া প্রদান করে, তাহলে তো ভালো,
আর যদি সাড়া না দেয়, তাহলে রক্বির জ্বিনকে
ভর্ৎসনা করবেন, হুমকি দিবেন, অভিশাপ
দেবেন এবং তাকে অপমান করবেন, যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সহীহ
মুসলিমে আবু দারদার (রাঃ) সূত্রে। তিনি বলেন:
❑আল্লাহর রাসূল(ﷺ) দাঁড়িয়ে
গেলেন এবং আমরা তাকে বলতে শুনলাম:
أَعُوْذُ بِاللَّهِ مِنْكَ
❑“আমি তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
অতঃপর তিনি বলেন:
“আমি আল্লাহর অভিসম্পাতে তোমাকে
অভিশাপ দিচ্ছি”
❑এভাবে তিনবার বলার পর তিনি কোনো কিছু নেয়ার মতো করে হাত বাড়ালেন। প্রার্থনা শেষ হলে আমরা বললাম:
হে আল্লাহর রাসূল(ﷺ), আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি, যা আমরা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি, এবং আমরা দেখলাম
আপনি আপনার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন: “আল্লাহর শত্রু ইবলিস আগুনের একটি শিখা নিয়ে এসেছে আমার মুখে নিক্ষেপ করবে বলে, এটা দেখেই আমি বললাম, আমি তোমার হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি', তিনবার বলার পর আমি তাকে হাত বাড়িয়ে ধরতে চাইলাম, কিন্তু আল্লাহর শপথ, আমার ভাই সুলাইমানের প্রার্থনা যদি না থাকত, তাহলে এ সকালেই তাকে বেঁধে ফেলতাম এবং মদিনার শিশুরা তাকে নিয়ে খেলা করত।” [সর্বসম্মত রয়েছে। শাইখ আল আলবানি (রহ), সহীহ আল জামি, হাদিস নং-৩১০৮]
❑এ হাদীসে দেখা গেল,কেউ শয়তানের হাত থেকে বাঁচার জন্য।
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন এবং তাকে আল্লাহর অভিসম্পাতে অভিশাপও
দিতে পারেন।
জ্বিনকে
যদি কুরআন তেলাওয়াত, ভালো ও মন্দ
কাজের আদেশ নিষেধ, ভর্ৎসনা ও অভিসম্পাত করার মাধ্যমে
বিতাড়িত করা হয়, তাহলেই লক্ষ্য অর্জিত হবে। আর এর কারণে
যদি ওই জ্বিন অসুস্থ হয়ে পড়ে অথবা মারা যায় তবে তা তার নিজের ভুলের জন্যই হবে,
এজন্য রক্বিকে বরং প্রতিদান দেয়া হবে। কারণ এর মাধ্যমে এমন এক
ব্যক্তির বিষন্নতা দূর করা হয়েছে, যার প্রতি ভুল করা
হয়েছিল। যার প্রতি। ভুল করা হয়েছে যথাসাধ্য তাকে সাহায্য করার কথা ইসলামে বলা
হয়েছে, এবং এটা মুস্তাহাব কাজ। সহীহাইনে আল বারাআ' বিন আযিব(রাঃ) থেকে। বর্ণিত আছে,
আল্লাহর
রাসূল(ﷺ) আমাদেরকে
সাতটি কাজ করার এবং সাতটি কাজ না করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে অসুস্থ রোগীকে
দেখতে যাওয়া, জানাযায় অংশ
নেয়ার, হাঁচি দিলে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলার, শপথ পালন করার, যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে এমন
ব্যক্তির প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার, দাওয়াত
গ্রহণ করা এবং সালাম দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এবং তিনি
আমাদেরকে স্বর্ণের আংটি পরিধান করতে, রূপার পাত্রে পান করতে, সিল্কের তৈরি
ঘোড়ার জিন ব্যবহার করতে, কাসি কাপড়চোপড় পরিধান এবং সিল্ক,
সোনা ও রূপার কারুকাজ করা রেশমি বস্ত্র, ও
বুটিদার রেশমি বস্ত্র পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।
❑আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল(ﷺ), কারো প্রতি অন্যায় করা হলে বা ভুল করা হলে তাকে কিভাবে সাহায্য করতে হয় তা আমরা জানি, কিন্তু সে যদি নিজেই গর্হিত ও অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাকে কিভাবে আমরা সহায়তা করব?” তিনি বললেন: “তাকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখ। এটাই হল তাকে সাহায্য করার উপায়। জ্বিন বিতাড়িত করলে অবিচার বা অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির যন্ত্রণা লাঘব হয়।
সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত
হয়েছে, আল্লাহর রাসূল(ﷺ) বলেন:
❑“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অপর কোনো
মুমিন ভাইয়ের একটি যন্ত্রণা লাঘব করে দেবে, পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ তার একটি যন্ত্রণা লাঘব করে দেবেন।
আর যিনি কঠোর ব্যক্তির সঙ্গে সহজ আচরণ করবেন, দুনিয়াতে ও
আখেরাতে আল্লাহ তার সঙ্গেও সহজ আচরণ করবেন। যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইয়ের
দোষ গোপন করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালে। তার দোষও গোপন
করবেন। আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তার কোনো বান্দাহকে সহায়তা করবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই বান্দাহ তার কোন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করবে।” [মুসলিম
২৬৯৯]
সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির বিন
আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল(ﷺ) রুকইয়া
তেলাওয়াত করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,
❑তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইয়ের
কোনো উপকার করতে চায়, তবে তাকে তা
করতে দাও। [মুসলিম ২১৯৯]
এসব আলোচনা ও বর্ণনা রক্বিকে
উৎসাহিত করার জন্য, তবে রক্বির
জ্বিনকে উদ্দেশ্যবিহীন প্রশ্ন করেই যাবেন না অথবা জ্বিনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি
আলোচনাও করবেন না। তার যে লক্ষ্য তা থেকে তিনি বিচ্যুত হবেন না। নিম্নোক্ত কারণে
এটা করা যাবে না:
🔘১.অতিরিক্ত মাত্রায় প্রশ্ন করার
কারণে রক্বির শয়তানের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন এবং তার নিজের মধ্যে আত্ম-গৌরব ও ঔদ্ধত্য
চলে আসতে পারে।
🔘২.অযথা বেশি প্রশ্ন করার কারণে জ্বিন
মনে করতে পারে, রক্বির মাঝে
অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে, এর ফলে জ্বিন আরো ধূর্ত হয়ে যেতে
পারে এবং আবিভূর্ত হতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।
🔘৩.সিজারের স্থায়িত্ব বেশী হওয়ার
কারণে রোগী চেতনা ফিরে পাওয়ার পর শারীরিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।
এসব চেষ্টার পরও যদি জ্বিনকে
আবির্ভূত হওয়ার ব্যাপারে রাজী করানো না যায়, তাহলে রক্বির যেসব আয়াত জ্বিনকে শাস্তি দেয় সেসব আয়াতসমূহ
তেলাওয়াত করতে পারেন, এর ফলে জ্বিনের উপর একটি প্রভাব পড়বে
এবং এ আয়াত জ্বিনকে শাস্তি প্রদান করবে এবং জ্বিনকে নিদারুণ যন্ত্রণা দেবে।
সম্পূর্ণ কুরআনই মানুষের জন্য নিরাময় ও রহমত। আল্লাহ তা'আলা
বলেন:
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْءَانِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظّٰلِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
অর্থঃ আর আমি কুরআন নাযিল করি
যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়। (আল ইসরা ১৭:৮২)
❑ the author &editor: rasikulindia
website: rasikulindiaa.blogspot.com
প্রচারেঃ রাসিকুল ইসলাম, তাঃ ৩১-০৫-২০২৩ ওয়েবঃ sarolpoth.blogspot.com
রুকিয়াহ ও হিজামাহ
0 Comments