খারিজীদের কি ভাবে চিনবেন? ৮ পর্ব,খারিজি চিহ্নিতকরণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য


খারিজীদের কি ভাবে চিনবেন? পর্ব-, খারিজি চিহ্নিতকরণ তাদের বৈশিষ্ট্য" সম্বলিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ

সমস্থ অদিও পেতে- https://salafimp3.blogspot.com/
আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- জন্য এবং অসংখ্য সলাত সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি
ওয়া'বাদ,
প্রিয় দ্বীনী ভাই বোনেরা,
আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি শায়খ ফায়সাল বিন কাজ্জার আল জাসিম হাফিয্বাহুল্লাহ কর্তৃক রচিত "খারিজি চিহ্নিতকরণ তাদের বৈশিষ্ট্য" সম্বলিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের ৮ম পর্ব!
কিছু সন্দেহের নিরসনঃ-------------------------- -----------
সন্দেহঃ

এরকম স্পর্শকাতর সময়ে তারা(খারিজিরা) কি তাদের ধ্বংসাত্মক কাজের মাধ্যমে সৎকাজের আদেশ আর অসৎকাজে নিষেধ করছে? তাদের (খারিজিদের) কাজগুলো কি ইসলামের মূলনীতিগুলো দ্বারা সমর্থিত?

উত্তর: সৎকাজের আদেশ আর অসৎকাজের নিষেধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি আছে

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:

فإن الأمر والنهي وإن كان متضمنا لتحصيل مصلحة ودفع مفسدة فينظر في المعارض له؛ فإن كان الذي يفوت من المصالح أو يحصل من المفاسد أكثر لم يكن مأمورا به، بل يكون محرما إذا كانت مفسدته أكثر من مصلحتهনিশ্চয়ই এটা আবশ্যক যে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধের দ্বারা কল্যাণ অনুসন্ধান করা এবং অকল্যাণ দূর করার প্রচেষ্টা করতে হবে; কিন্তু এর বিপরীতে, যদি এর কল্যাণ হারিয়ে যায় অথবা এর অকল্যাণ (যা আমরা রোধ করতে চাইছি) এর কারণে বৃদ্ধি পায় তাহলে এই কাজ করা আর বাধ্যতামূলক নয়, বরং এমন পরিস্থিতিতে তা করা হচ্ছে নিষিদ্ধ যদি এতে কল্যাণের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশী থাকে

[রেফ: الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر ۱۲۔۱۳]

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,

আহলুস সুন্নাহর উসুল হচ্ছে জামাতের সাথে থাকা, শাসকের সাথে লড়াই না করা, অর্থাৎ: জালিম শাসক, এবং ফিত্নার সময়কালীন লড়াই না করা এবং এর সবকিছু অন্তর্ভুক্ত ওই সাধারন মূলনীতির মধ্যে যে, যদি উপকারিতা এবং ক্ষতি, এবং অকল্যাণ এবং কল্যাণ পরস্পর সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে সবচেয়ে উত্তম পন্থাটি বেছে নিতে হবে এর কারণ হচ্ছে এই যে, যদিও সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ থেকে কিছু কল্যাণ অর্জন করা যায়, এবং কিছু ক্ষতি দূর করা যায়, তবুও এর বিপরীতটাও বিবেচনা করা দরকার যদি, এই আদেশ এবং নিষেধ করার কাজ করতে গিয়ে, অর্জিত কল্যাণের চেয়ে বেশী কল্যাণ হাতছাড়া হয়ে যায়, বা এড়িয়ে যাওয়া ক্ষতির চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়ে যায়, তাহলে এটি সেইসব জিনিসের অংশ নয় যা করতে আল্লাহ্আমাদেরকে আদেশ করেছেন, বরং এমনটা করা হারাম কেননা এর মোট ক্ষতি এর মোট উপকারের চাইতে বেশী যেই একমাত্র মাপকাঠি দিয়ে উপরে উল্লেখিত এই উপকার বা ক্ষতি মাপা হবে তা হচ্ছে শরিয়ার মাপকাঠি যখনই কেউ কোন আয়াত বা হাদিসের সরাসরি অনুসরণ করতে সক্ষম হয়, তখন তার জন্য এটা বৈধ না যে অন্য কোন কিছুর শরণাপন্ন হবে সে যদি তার সামনে আগত সমস্যার হুবহু উত্তর সহ কোন আয়াত বা হাদিস না পায় তাহলে সে তার বিবেচনাশক্তি ব্যবহার করে তুলনার মাধ্যমে এর বিধান বুঝতে চেষ্টা করতে পারে আয়াত এবং হাদিসগুলির ক্ষেত্রে প্রায় সর্বদাই এমন কাউকে পাওয়া যায় যে এগুলোর ব্যাখ্যা জানে এবং যে এগুলো থেকে শরিয়তের বিধান বের করে আনতে পারে

[মাজমু আল-ফাতওয়া খণ্ড ২৮ পৃষ্ঠা ১২৮,]

এর একটি উদাহরণ হচ্ছে যখন আল্লাহ্ রাসুল

আবদুল্লাহ বিন উবাইকে হত্যা করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন - যদিও সে মুনাফিক হিসাবে সুপরিচিত ছিলকেননা তাকে হত্যা করা হলে মুসলিমদের আরও বেশী ক্ষতি এবং আরও বেশী অকল্যাণ হতো

ইমাম আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) রাসুলুল্লাহ

আবদুল্লাহ বিন উবাইকে হত্যা না করার হাদিস সম্পর্কে তার মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন,

এই হাদিস প্রমাণ বহন করে যে কিছু জিনিস পছন্দনীয় হলেও সেগুলো পরে করার জন্য রেখে দেয়া; এবং তীব্র অপছন্দনীয় হলেও কোন ব্যাপারে ধৈর্যধারণ করা, যদি এমন ভয় থাকে যে তা না করা হলে আরও বড় কোন ক্ষতি হবে, এর উভয়টি বৈধ

[রেফ: শারহ আন-নববীআলা সাহিহ মুসলিম, খণ্ড ১৬, পৃষ্ঠা ১৩৯]

শাইখুল ইসলাম, হাফিয ইবনে আল-কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ'লামুল মুওয়াক্কিঈন" কিতাবে বলেছেন (/১২-১৩):

فإنكار المنكر أربع درجات؛ الأولى: أن يزول ويخلفه ضده، الثانية: أن يقل وإن لم يزل بجملته، الثالثة: أن يخلفه ما هو مثله، الرابعة: أن يخلفه ما هو شر منه

অন্যায়ের বিরোধিতা করার চারটি স্তর রয়েছে এর প্রথমটি হচ্ছে যখন সেই অন্যায় নির্মূল হয়ে যায় এবং এর বিপরীত অবস্থা অবশিষ্ট থাকে দ্বিতীয় হচ্ছে যখন সেই অন্যায় দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে যায় না তৃতীয় হচ্ছে এমন কোন অবস্থা যখন এর মতোই আরেকটি অন্যায় এর স্থান এসে দখল করে চতুর্থ হচ্ছে যখন এর চেয়েও খারাপ কোন জিনিস এর স্থলাভিষিক্ত হয়

এরপর তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:

فالدرجتان الأوليان مشروعتان، والثالثة موضع اجتهاد، والرابعة محرمة

প্রথম দুইটি নির্দেশিত এবং তৃতীয়টি বিবেচনাসাপেক্ষ আর চতুর্থটি নিষিদ্ধ

وإذا رأيت الفساق قد اجتمعوا على لهو ولعب أو سماع مكاء وتصدية فإن نقلتهم عنه إلى طاعة الله فهو المراد، وإلا كان تركهم على ذلك خيرا من أن تفرغهم لما هو أعظم من ذلكযখন তুমি দেখতে পাও যে পাপিষ্ঠরা তাদের খেল তামাশা বা ফালতু কথায় মত্ত হয়ে আছে আর তারপর যদি তুমি তাদেরকে আল্লাহ্ আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনতে পার তাহলে সেটাই উত্তম তা না হলে তাদেরকে তাদের গুনাহের মধ্যেই ছেড়ে রাখা, তাদেরকে এর চেয়েও খারাপ কিছু করতে আহ্বান জানানোর চাইতে উত্তম

তিনি এরপর বলেন:

وسمعت شيخ الإسلام ابن تيمية قدس الله روحه ونور ضريحه يقول: مررت أنا وبعض أصحابي في زمن التتار بقوم منهم يشربون الخمر، فأنكر عليهم من كان معي، فأنكرت عليه، وقلت له: إنما حرم الله الخمر لأنها تصد عن ذكر الله وعن الصلاة، وهؤلاء يصدهم الخمر عن قتل النفوس وسبي الذرية وأخذ الأموال فدعهمএবং আমি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্যেন তার আত্মাকে প্রশান্তি দেন এবং তার কবরকে নূর দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন, যে: ‘তাতারিদের দিনগুলিতে একবার আমি এবং আমার এক সাথী এমন কিছু লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যারা মদ্যপান করছিল আমার সাথে যিনি ছিলেন তিনি গিয়ে তাদের থামাতে চাইলেন কিন্তু আমি তাকে থামালাম আমি তাকে বললাম: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্মদকে হারাম করেছেন কেননা এটি আল্লাহ্ স্মরণ এবং সলাত থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে কিন্তু এই লোকগুলির অবস্থা হচ্ছে যে মদ তাদেরকে হত্যা, শিশুদের বন্দি করা, এবং লুঠপাট চালানো থেকে ফিরিয়ে রাখে সুতরাং তাদের এভাবেই রেখে দাও

['লামুল মুওয়াক্কিঈন]

 উপসংহারঃ

খারেজিদের পক্ষ থেকে এটা চরম দ্বিমুখীতা যে তারা নাবী সাঃ এর সুন্নাহের অনুসরণের দাবি করে কিন্তু তিনি মক্কায় ১৩ বছর ধরে যা করে আসছিলেন, মুসলিমরা দুর্বল থাকা অবস্থায়, তার অনুসরণ করে না বরং গত কয়েক বছর ধরে, মাত্র থেকে বছর সময়ের মধ্যে তারা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছে

তারা সুন্নাহের অনুসরণ করার দাবি করে অথচ তাদের শিকার হয় শুধু মুসলিমরাই যখন সুন্নাহ বলছে যে নাবিজী সাঃ ইবনে উবাইয়ের মতো লোককেও হত্যা করেননি, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে মুসলিমদের হত্যা করার বিধান কি?

আল্লাহ্ রাসুলএবং তার সাহাবীগণ রাত-দিন অভুক্ত থেকে পরিখা কেটেছেন যাতে করে আরব মুশরিকরা মদিনায় প্রবেশ করে মুসলিমদের ক্ষতি করতে না পারে সেই একই নবি মুনাফিক এবং ইহুদিদের সাথেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন শুধু যাতে মুসলিমরা নিরাপদে থাকতে পারে তিনি এর সবকিছু করেছিলেন যাতে মদিনায় বসবাসকারী মুসলিমরা নিরাপদ থাকতে পারে আর এই খারেজিরা যা করে তা হচ্ছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত

আবু শুরাইহ বর্ণনা করেছেন: “রাসুলুল্লাহ

বলেছেন,

إِنَّ مِنْ أَعْتَى النَّاسِ عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مَنْ قَتَلَ غَيْرَ قَاتِلِهِ

নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কাছে সবচেয়ে অত্যাচারী লোক সেই ব্যক্তি যে এমন লোকদের হত্যা করে যারা তার সাথে লড়াই করেনি

[রেফ: মুসনাদ আহমাদ ১৫৯৪৩; হাইসামি একে সহিহ বলেছেন]

আল-আজুরী (মৃত্যু: ৩৬০ হিজরি) বলেন:

পুরাতন অথবা নতুন, কোন আলেম কখনো খারেজিদের ব্যাপারে মতভেদ করেননি তারা তাদেরকে পাপিষ্ঠ লোকজন হিসাবে গণ্য করতেন যারা আল্লাহ্ তার রাসুলের অবাধ্য, যদিও তারা সলাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে এবং কঠোর পরিশ্রম করে ইবাদতের স্বার্থে, এবং এই সবকিছু তাদের কোন কাজে আসেনি, যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হতো যে তারা সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করছে, কিন্তু তা তাদের কোন কাজে আসতো না কারণ তারা ছিল এমন কিছু লোক যারা কুরআনকে তাদের খেয়াল-খুশির অনুসারে ব্যাখ্যা করতো

[রেফ: কিতাব উশ-শারিয়াহ খণ্ড /৩২৫]

  মুলঃ শাইখ ফায়সাল বিন কাজ্জার আল জাসিম
অনুবাদঃ আবু আবরার

সম্পাদনাঃ আখতার বিন আমীর
http://sahih-akida.simplesite.com/431336957?overview=1 

 ► ১ম পর্বঃ বা ব্লগে পড়ুন

খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্ pa-1
► ২য় পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্ pai 2
► 
৩য় পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্pa-3
► 
৪র্থ পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্pa-4
► 
৫ম পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্pa-5
► 
৬ষ্ঠ পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্pa-6
► 
৭ম পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্ pa-7
► 
৮ম পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্ pa-8
► 
৯ম পর্বঃ
খারিজি চিহ্নিতকরণ  তাদের বৈশিষ্ট্য ৯ম  শেষ পর্ব!
■ আরও পড়তে 
সকল পর্ব পেতে লিঙ্কে ক্লিক -

খারেজীদের বিভ্রান্তির মুল কারণসমুহঃ
লিংকঃ ►https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1026321017528650&id=100004522838130
► 
আত্নঘাতি বোমা হামলা কি জায়েজ?
আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল উছাইমিন রাহিমাহুল্লাহ -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1110488659111885&id=100004522838130
► 
আত্নঘাতি হামলার বিধানঃ
আল্লামাহ সালিহ আল ফাউজান হাফিয্বাহুল্লাহ -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1110113882482696&id=100004522838130
► 
নিজেকে বিস্ফোরিত করে দেয়ার বিধানঃ
শাইখ ছলেহ আল মুনাজ্জিদ হাফিয্বাহুল্লাহ -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1112068558953895&id=100004522838130

বল,এটিই আমার পথস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে আহবান করি নিয়মিত আপডেট পাবেন- Important সমস্থ অদিও পেতেhttps://salafimp3.blogspot.com/  Knowledge= নির্ভেজাল জ্ঞান পেতে ভিজিট করুন এই সাইটেhttps://sarolpoth.blogspot.com আলাদা আলাদা সাজানো আছে... আপনি চাইলে ওয়েবসাইটটি এবং লেখাগুলি,বা অন্যান্য জিনিস গুলি শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিতে পারেন এতে আপনার  আমার ইনশাআল্লাহ সাদকায়ে জারিয়া হবে.ইসলামিক বই পেতে-রাসিকুল ইন্ডিয়া serch rasikulindia

Post a Comment

0 Comments